এখানেই? নাকি সামনে?

প্রথম সাইকেল চালাতে শিখছি। কয়েক পাড়াতুতো ভাই শেখাচ্ছে। সিটের উপর বসে প্যাডেল ঘুরাতে হবে। সিট আমার মাপেই। ওঠার পর প্যাডেলও পায়ের নাগালে পাচ্ছি। এখন কাজ হলো প্যাডেলে চাপ দেয়া। কিন্তু যেই প্যাডেলে চাপ দিতে যাই ওমনি পড়ে যাই। এভাবে বেশ কয়েকবার। তারপর সবাই আমাকে ধরল। বলল, সামনে তাকাও — যখন প্যাডেলে চাপ দিচ্ছ তখন প্যাডেলের দিকে তাকিও না। তারপর অনেক কষ্টে দৃষ্টি সামনের দিকে দিতে শিখলাম। বারবার পায়ের দিকে তাকানো বন্ধ করার পরই দিব্যি সাইকেল চালানো শিখে গেলাম।

এই সাইকেল চালানো শেখার মতোই এখনকার ব্যস্ত জীবনে এক বড় ধন্ধের মধ্যে পড়ি সবাই — কাছে তাকাব নাকি দূরে? এই যে আমাদের জীবন সেখানে আমরা কেবল আজকের দিনকে নিয়েই সুখী থাকব নাকি ভবিষ্যতের চিন্তা করব? এটা তো জানা কথা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে গেলে আমরা ভয় পাই, দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হই। ডেল কার্নেগি তাই দুশ্চিন্তামূক্ত জীবন যাপনে জন্য এক পদ্ধতি বাতলেছেন, বলেছেন: একটি একটি করে দিন বাঁচুন। আপনার কাছে একটি নূতন দিন আসছে — শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেটি উপভোগ করেছেন। গতকাল কি করেছেন আর করতে পারেন নি তা নিয়ে আফসোস, কিংবা আগামীকাল কিছ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। হাতের কাছে যা আছে তাই উপভোগ করুন। আপনার বারান্দায় টবে যদি একটি ফুলগাছ থাকে আর তাতে এককটি ফুল ফটে — তাহলে সেটিই উপভোগ করুন। এর বদলে জানালা দিয়ে দূরের বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকলে কিংবা কল্পনা করলে আপনি সেই ফুলের সৌন্দর্য ও সৌরভ কোনোটিই উপভোগ করতে পারবেন না।

একার্ট টোলে একালের এক প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক গুরু। তাঁর লেখা পাওয়ার অব নাউ ইতোমধ্যে আলোড়ন সষ্টি করেছে। তাঁর কথাও হলো একইরকম: আমাদেরকে বাঁচতে হবে বর্তমানে। এই মুহূর্তকে উপভোগ করতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে।

তবে সবসময় বর্তমানে থাকা যায় না। কখনো কখনো সামনে তাকাতে হয়। যেমন আপনি যখন গাড়ি চালাচ্ছেন তখন সামনেই তাকাতে হবে; যতদূর দৃষ্টি যায় দেখতে হবে এবং সেই অনুসারে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রেও তাই। কেবল আজকের কাজ নিয়ে থাকলে হবে না, আগামীকাল, আগামী মাস, আগামী বছর নিয়েও আমাদের পরিকল্পনা করতে হয় — সেসব দিনের কথা ভাবতে হয়। তবে এসব ভাবতে গিয়ে অনেকেই বেশি ভাবি, নেতিবাচক ভাবনা ভাবি ; সেটি ক্ষতিকর।

একার্ট টোলে বর্তমানে বাস করতে বলেন; তার মানে এই নয় যে আপনি ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে পারবেন । ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করবেন, তবে সেই পরিকল্পনা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবেন না; সেটি বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি না তা নিয়ে ভীত হবেন না। তাহলেই আগামীদিনকে আপনি পরিষ্কার দেখতে পাবেন এবং একইসাথে বর্তমানকে উপভোগ করতে পারবেন।

৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

Originally published at সুহৃদ সরকার.

--

--