কোন কাঁটা — ঘড়ি নাকি কম্পাস?
সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি এফেক্টিভ পিপল এর লেখক স্টিভেন আর কোভে দুটি কাঁটার কথা বলেছেন: একটি ঘড়ির কাঁটা, আরেকটি কম্পাসের কাঁটা। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে অনবরত — সময়কে প্রকাশ করছে। সেকেন্ড মিনিট ঘন্টা হিসেবে আমরা মহাকালে হারিয়ে যাচ্ছি, ঘড়ির কাঁটা সেটিই প্রকাশ করছে। আমরা এই ঘড়ির কাঁটার গতিবিধি দেখে চঞ্চল হই, নিজেকে এই কাঁটার তালে মেলানোর চেষ্টা করি। ঘড়ির কাঁটা দেখে নির্ধারণ করি কখন কাজ করব, কখন বিশ্রাম নেব, আর কখন ঘুমাব।
কম্পাসের কাঁটার কাজটা আলাদা। সেটি দিক নির্দেশ করে। কাঁটার একপ্রান্ত উত্তর, আরেক প্রান্ত দক্ষিণ নির্দেশ করে। আপনি কোন দিকে যেতে চান সেটি বুঝতে সাহায্য করবে এই কাঁটা। অচেনা জায়গায় যেতে দিক বুঝতে কম্পাসের ব্যবহার। কম্পাসের কাঁটা আপনাকে এই দিক বোঝাবে। আমরা জীবনে কী করতে চাই কোনদিকে যেতে চাই সেটি যদি জানি তাহলে সেখানে যাওয়ার পথ বের করতে পারি। সেই পথকে নির্দেশ করতে পারে কম্পাসের কাঁটা।
কোভে সাবধান করে দিয়েছেন আমরা যেন কম্পাসের কাঁটার চেয়ে ঘড়ির কাঁটাকে প্রাধান্য না দিই। ঘড়ির কাঁটা ধরে দ্রুততার সাথে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি — কিন্তু সেটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নাও নিয়ে যেতে পারে।
একবার ঈদের ছুটিতে নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। যমুনা ব্রিজ পার হয়ে রেস্টুরেন্টে থামলাম। তারপর গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। রাস্তাটা চমৎকার। এই চমৎকার রাস্তায় গাড়িরও তেমন ভিড় নেই — তাই গাড়ির স্পিড ক্রমেই বাড়ছিল; খুশিও হচ্ছিলাম এই গতিতে গাড়ি চালাতে পেরে। কিন্তু একসময় গিয়ে মনে হলো আমি অন্য কোথাও চলে গেছি। থামলাম। আমার মোবাইলের জিপিএস চালু করলাম। দেখলাম আমি হাটিকুমরুল থেকে বগুড়ার দিকে না গিয়ে যাচ্ছি বনগাঁও-নাটোরের দিকে। আমি স্পিডের দিকে নজর দিয়েছিলাম; পথের দিকে না। নাটোর আমার গন্তব্য নয়; আমার গন্তব্য বগুড়া হয়ে নওগাঁ। তাই আবার উল্টোপথে ফিরে আসা। তখনই মনে পড়েছিল কম্পাসের প্রয়োজনীয়তা। কত দ্রুত যাচ্ছি তার চেয়েও বড় কোন দিকে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে থেমে যাচাই করে নেয়া দরকার যেখানে যেতে যাচ্ছি আসলে সেই পথে আছি কি না।
স্টিফেন কোভের কথাটা মনে রাখতে হবে; ঘড়ির কাঁটার দিকে নজর দিতে গিয়ে আমরা যেন কম্পাসের কাঁটা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাই। কত দ্রুত যাচ্ছি তার চেয়েও জরূরী হলো কোথাই যাচ্ছি সেটি জানা। কোভের এরকমই আরেকটি কথা হলো: ‘মই বেয়ে উপরে ওঠার আগে দেখে নিন মইটি কাঙ্ক্ষিত দেয়ালে লাগানো আছে কি না।’ বড়ই সত্য কথা, ভুল মই বেয়ে উপরে উঠে ভুল জায়গায় পৌঁছে যাবেন, সেখান থেকে ফেরার সময় আর নাও পেতে পারেন। দ্রুততার জন্য আমরা যেন লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হই।
১৪.০৫.২০১৬ / কফিওয়ার্ল্ড, ধানমন্ডি
Originally published at সুহৃদ সরকার.