থামো, গতিটা কমাও

কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য যত বই দেখেছি প্রায় সবখানে একটা ছবি দেখতে পাই — ব্রিফকেস হাতে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে স্যুটেড বুটেড মানুষ। এটাই সাফল্যের চিত্র অনেকেই কাছে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা। শুধু ওঠা নয় একরকম দৌড়ে ওঠা। আমরা প্রতিনিয়ত এরকম কর্মক্ষেত্রে দৌড়াচ্ছি, সব পেশায়, সবখানে। এই দৌড় কবে শেষ হবে বলা যাচ্ছে না — যদি না আমরা নিজেরা উপলব্ধি করি যে এটি কাজের কিছু না। দৌড়ানোর মধ্যেই সাফল্য নেই, সাফল্য হলো ফল লাভে। কচ্ছপের গতিতেও গন্তব্যে পৌঁছানো যায়, কখনও কখনও খরগোশকে পেছনে ফেলে দিয়ে।

আপনি কি কখনো লক্ষ্য করেছেন যখন অনেক চাপের মধ্যে থাকেন, ছুটতে থাকেন, ডেসপারেট হয়ে যান কিছু করার জন্য তখনই বড় বড় ভুলগুলো ঘটে থাকে? আমার এমনও হয়ত হয়েছে কেউ আপনাকে চাপ দিচ্ছে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য কিংবা তার সিদ্ধান্ত কিংবা যুক্তি মেনে নেয়ার জন্য? তখন আপনি কি করেন? আপনি যদি সাফল্যের পেছনে দৌড়াতে অভ্যস্ত হন তাহলে হয়ত দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন। কিন্তু তাতে বড় ধরনের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এই ঘোড় দৌড় বন্ধের জন্য আপনাকে দুটো কৌশল নিতে হবে। প্রথমত, আপনি দৌড়ানোর গতি কমাতে পারেন। একটু স্থির হোন তারপর দেখুন বুঝুন কী ঘটছে। সব বোঝার পর আপনার সিদ্ধান্ত দিন। ধরুন আপনি সাইকেলে চড়ে বেশ দ্রুতই এগুচ্ছেন। রাাস্তার পাশ থেকে কেউ চিৎকার করে উঠল আপনার নাম ধরে। তখন কী করবেন? যদি জানতে চান বুঝতে চান কে আপনাকে ডাকছে তাহলে আপনাকে থামতে হবে। জোরে সাইকেল চালানোর সময় হুট করে ব্রেক কষলে বিপদও হতে পারে, তাই গতিটা কমিয়ে দিয়ে তারপর থামাতে হবে। থামানোর পর হয়ত আপনাকে একটু পেছনে ফিরে আসতে হবে সেই লোককে দেখার জন্য যে আপনার নাম ধরে ডাকছে। তাকে দেখে চিনতে পারেন, নাও চিনতে পারেন। না চিনলে তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে তার পরিচয়। তার পরিচয় পাওয়ার পর বুঝতে পারবেন সে আপনাকে কেন ডাকছে। তার সেই উদ্দেশ্য জানলে তখন আপনি কোনো উত্তর দিতে পারবেন। হতে পারে এই ডাক নিছক কুশল বিনিময়ের জন্য, কিংবা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। তাকে যদি কোনো তথ্য দিতে চান, সিদ্ধান্ত দিতে চান, সাহায্য করতে চান তাহলে এভাবে আপনাকে থামতে হবে। আপনার গতি কমাতে হবে। যেকোনো সময় প্রয়োজনে যাতে থামতে পারেন সেজন্যই আপনার গতিকে রাখা উচিত নিয়ন্ত্রনের মধ্যে।

আবার এমনওতো হয়, আপনি বিপুল বিতর্কের মধ্যে আছেন। তুমুল উত্তেজনার সাথে কথা বলছে কেউ। কেউ এসে হয়ত আপনাকে বলল, ‘বাংলাদেশের কোনো উন্নতিই হয়নি গত দশ বছরে।’ আপনি জানেন এটি আবেগের কথা, যুক্তির কথা নয়। কিন্তু এই উত্তেজনার মুহূর্তে আপনি যুক্তি দিয়ে সেই ব্যক্তিকে বোঝাতে পারবেন না। আপনি যতই উন্নতির নজির উপস্থাপন করবেন ততই তার বিরোধিতা পাবেন। এরকম ক্ষেত্রে কী করতে পারেন? গতি কমানো। একটু পেছনে ফিরে আসা। বলুন, ‘আমি এ বিষয়ে এখন কথা বলতে চাচ্ছি না। বাংলাদেশের যে উন্নতি হয়নি তার প্রমাণপত্র নিয়ে একসময় আসুন, বসে আলোচনা করা যাবে।’ এভাবে আপনি সেই মুহূর্তে পিছিয়ে আসলে সেটিই আপনাকে এগিয়ে রাখবে। দেখবেন সেই ব্যক্তির উত্তেজনা প্রশমিত হলে এটি নিয়ে আর বিতর্ক করতে আসবে না। আসলেও সব প্রমাণপত্র দেখাতে পারবে না।

জীবনের কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের গতি কমাতে হয়; থামতে হয়। সবসময় আমরা একই বেগে ছুটে চলতে পারি না। এই গতি কমানোটা জরুরী, না কমালে বিপদ হতে পারে। আাপনি সবকিছু তুচ্ছ করে প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে গিয়ে হয়ত দেখলেন ভুল জায়গায় চলে গেছেন। কিংব এমন কিছু ফেলে গেছেন যার জন্য আবার পেছনে ফিরে আসতে হচ্ছে।

--

--