বৈশাখী রঙিন শুভেচ্ছা বিনিময় এবং হারানো সেই পোস্ট কার্ড

একেক অফিসের একেক ধরণের একেক রঙের বৈশাখী পোস্ট কার্ড। পিয়ন যাচ্ছে-আসছে, তার মুখ ভর্তি হাসি। পোস্ট অফিস এ ব্যাপক ব্যাস্ততা !

Muzahedul Islam
3 min readApr 20, 2017

পহেলা বৈশাখ আর বাঙ্গালীর গল্প বহুকাল পুরোনো। দিনকে দিন এই সার্বজনীন উৎসব এখন আরও পরিণত, আনন্দ ঘন। বাঙ্গালী মন মুখিয়ে থাকে বর্ষ বরনে। ঘরে বাইরে কর্মক্ষেত্রে, কোন না কোন ভাবে ছোট বড় আঙ্গিকে চলে বর্ষ বরণের প্রস্তুতি। সেসব নতুন করে বাঙ্গালীকে বলে বোঝানোর কিছু নেই।

তো ঠিক এভাবেই কয়েকদিন আগে আমাদের অফিসে এবারের বৈশাখ নিয়ে কথা উঠল। খুব সাধারণ আলোচনা । সাধারণত অফিস আলারা যেমন অনলাইনে, অফলাইনে এখানে ওখানে শুভেচ্ছা কার্ড-বানী, বার্তা পাঠিয়ে শান্ত থাকেন, তেমন। জাস্ট অফিস কালচার।

আমরা মুটামুটি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, একটা শুভেচ্ছা কার্ড ছেপে তা বিলিয়ে দেবো ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় মানুষ বা অফিসগুলোতে। প্রতি বছরের মতোই সাধারণ কথা বার্তা হচ্ছিলো। কিন্তু এই সাধারণ কথা বার্তা কে অসাধারণ করে তুললেন আমাদের সি ই ও ভাই বললেন ' এসো একটা কাজ করি- এসব শুভেচ্ছা কার্ড তো সবাই পাঠায়, ধরো যদি আমরা একটাকে পোস্ট কার্ড করি ! ধরো, একপিঠে তোমার বৈশাখী ভিজুয়ালটা থাকলো আর অন্যপিঠে সরকারি স্ট্যাম্প, ঠিকানা- শুভেচ্ছা বানী। তারপর দিয়ে দাও এগুলো পোস্ট অফিসে।

আমি নড়ে চড়ে বসলাম। উনি বড্ড ভালো কথা বলেছেন। আমাকে চেপে ধরে ১ মাস বসে থাকলেও এ আইডিয়া আমার মাথায় আসতো না। বৈশাখী শুভেচ্ছাও দেয়া হলো আর পুরনো পোস্ট কার্ডের চল আবার ফিরে এলো। পোস্ট কার্ড ! আবার মানুষ পিয়ন দেখবে। হয়তো আমাদের দেখে আরো ১০টা অফিস পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বৈশাখী কার্ড দেয়া শুরু করলো, তাদের দেখে আরো ১০ এবং আরো। এভাবে সবাই। আবার পোস্ট অফিস গরম হবে। অন্তত বৈশাখে আবার বাঙালী মন পুরোনো পোস্ট কার্ড হাতে পাওয়ার আনন্দ-অনুভূতি ফিরে পাবে। হতে পারে এরপর থেকে যে কোন বাঙালীআনা আচার-অনুষ্ঠান, আয়োজনে শুরু হয়ে যাবে এই প্রথা, আজ থেকে- এবার থেকে। ভয়ানক রকমের একটা ভালো কিছু হয়ে যেতে পারে !

অনেক উদ্দীপনা নিয়ে কাজে বসে পড়লাম। বার বার মনে হতে থাকলো- নতুন একটা ধারা তৈরী হতে যাচ্ছে। যেন দেখতে পারছি - সবাই বৈশাখী পোস্ট কার্ড বিতরণ করছে, সবার হাতে হাতে বৈশাখী কার্ড। ছাপাখানা এলাকা সরগরম। একেক অফিসের একেক ধরণের একেক রঙের বৈশাখী পোস্ট কার্ড। পিয়ন যাচ্ছে-আসছে, তার মুখ ভর্তি হাসি। পোস্ট অফিস এ ব্যাপক ব্যাস্ততা ! সে এক অন্য ভুবনে ঢুকে পড়েছি আমি।

ভেতর ভেতর চ্যালেঞ্জ অনুভব করছি। উচিৎ এমন কিছু করা যাতে আমার তৈরী কার্ড দেখে আরো ১০ জন আলোড়িত হয়। অনুপ্রাণিত হয় পরবর্তী বৈশাখের জন্য। চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললাম। মনে মনে ঘাটতে লাগলাম সে সব জায়গা গুলো, যেখান থেকে ডিজাইনাররা লোকজ ফর্ম, প্যাটার্ন, মোটিফ তুলে এনে- একটু নতুন মাত্রা জুড়ে দেয়। যাকে বলে আধুনিকতার ছোঁয়া।
আমিও পেয়ে গেলাম। ঐতিহ্য ঘেটে টেরাকোঠার ফর্ম, অঙ্কন শৈলীই ঠিক মনে হলো। মনস্থির করলাম টেরাকোঠার স্টাইলই হবে আমার এবারের বৈশাখী পোস্ট কার্ডের স্টাইল। বেশ কিছু টেরাকোঠা দেখলাম। বিষয় গুলোকে আত্মস্থ করার চেষ্টা করলাম। এবার সেগুলো মাথায় নিয়ে ৭ ইঞ্চি বাই ৪.৫ ইঞ্চি সাইজের একটা সারফেসে- এটা ওটা এঁকে, বৈশাখী রং চং মাখিয়ে দিলাম। প্রচুর ডার্ক স্ট্রোক লাইন রাখলাম সেগুলোতে।

কাজ শেষ হলো। সেটা দেখলাম আমাদের হেড অফ ডিজাইন দেব দা কে। দাদা চমৎকার একজন মানুষ। বললো - “ভালো। সুন্দর। শুধু স্ট্রোক লাইন গুলো সাদা করে দে, দ্যাখ মালটা জমে যাবে।”

সাদা করে ফেললাম। সত্যিই মালটা জমে গেলো। এরপর অফিসের সবাইকে ডেকে ডেকে দেখলাম।

এবার তা ছাপার পালা। এবং ছাপা হলো। অফিসে একটা মিষ্টি আনন্দের বাতাস বইছে, হৈচৈ -চিল্লা পাল্লা। কার্ডের পেছনে প্রাপকের নাম লিখতে শুরু করেছে অফিসের এক ঝাঁক টাটকা তরুণ শুভ, ফাহাদ, জয়, মাসুদ, শয়ন, তানভীর, তৌসিফ। হাজার খানেক ঠিকানা ছু মন্তরের মতো শেষ করে ফেলল এক বসাতেই। পোস্ট অফিস থেকে ১ টাকা মূল্যের প্রচুর স্ট্যাম্প নিয়ে আসা হয়েছে। একটার পর একটা সেটে দেয়া হচ্ছে কার্ডের পেছনে। আরেকটু পরেই সব কার্ড পোস্ট অফিসে চলে যাবে।

চোখে স্বপ্ন, সামনে বার থেকে নতুন ধারা বইবে - বৈশাখী পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে চলবে বৈশাখী শুভেচ্ছা বিনিময়।

সবার জন্য শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। শুভ নববর্ষ।
১৪২৪

--

--