API কী এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে API

ডারউইনের তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের পূর্বপুরুষ বানর ছিলেন। কিন্তু বানরের পূর্বপুরুষ কী ছিলেন তা কিন্তু ডারউইন সাহেব আমাদের বলে যান নি। 😜 তো যাই হোক। এবারে আসল কথায় আসা যাক। প্রতিটা প্রাণীই একজন অন্যজনের কাছে নিজস্ব ভাষা দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে। আমরা যখন গুহামানব ছিলাম তখনো আমাদের নিজস্ব ভাষা ছিলো। আমরা ইঙ্গিতে ইশারায় হলেও নিজেদের ভাব প্রকাশ করেছি। তারপর ভাষা আবিষ্কারের পর আমরা আমাদের নিজস্ব ভাষায় নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করি।

তাহলে এ থেকে বলা যায় যে, ভাষা স্রেফ মনের ভাব প্রকাশের একটা মাধ্যম বৈ কিছু না। এখন আমরা তো একজন আরেকজনের সাথে নিজেদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলি। কিন্তু একটা কম্পিউটার কিভাবে অন্য কম্পিউটারের সাথে কথা বলবে? কম্পিউটার তো শুধু 0 এবং 1 ছাড়া কিছুই বোঝে না। মানে কারেন্ট আছে এবং কারেন্ট নেই। তাহলে কিভাবে সম্ভব?

এক কথায় যদি বলি তবে উত্তরটা হবে “API”

শুধু একটা কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে না একটা প্রোগ্রাম অন্য প্রোগ্রামের সাথে কথা বলা বা ডেটা আদান-প্রদানের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করে তাকে আমরা বলি “এপিআই”

API কী? খায় না মাথায় দেয়?

API এর ফুল ফর্ম হলো Application Programming Interface. যার মাধ্যমে একটা প্রোগ্রাম অন্য প্রোগ্রামের সাথে কথা বলে। আমি এই যে মিডিয়ামে লিখছি এবং আপনারা পড়ছেন। তো এটা কিন্তু পেজ রিলোড দেয়ার পরেও আপনি পড়তে পারছেন। তারমানে নিশ্চই সেটা কোথাও না কোথাও স্টোর করা আছে? হ্যাঁ, ডেটাগুলো সার্ভারে স্টোর করা থাকে। তাই তো অনেক সময় আমাদের বলতে দেখা যায় অমুক সার্ভার ডাউন। সাইটে ঢোকা যাচ্ছে না। তারমানে সাইটের সাথে সার্ভারের সম্পর্ক আছে। কিন্তু এই সম্পর্ক কে তৈরি করলো? কে কে কে? এই সম্পর্ক তৈরি করে আমাদের আজকের টপিকের মুল হোতা জনাব/জনাবা এপিআই! 😜 মানে আমার লেখা পোস্ট প্রথমে সে ডেটাবেস দিয়ে সার্ভারে স্টোর করে। পরে আবার সেই ডেটা Fetch করে সাইটে আউটপুট দেয়। আবার চাইলেই আমি আমার লেখা এডিট বা ডিলেট করতে পারি। এই গুরু কর্মখানা সম্পাদন করে API.

বাস্তব জীবনে এপিআই এর উদাহরনঃ

  1. ধরুন আপনি মোবাইল স্যামস্যাং কম্পানীর ব্যবহার করেন। আবার আপনার এক বন্ধু সিম্ফনী কম্পানীর মোবাইল ব্যবহার করে। তো আপনার বন্ধু কাল রাতে কিছু HD ভিডিও ডাউনল‌োড করেছে। কিন্তু সেগুলো সে আপনাকে দিতে চায়। কিভাবে দেবে? শেয়ার ইট দিয়ে? তাহলে নিশ্চই শেয়ারইটে জাদু আছে। সে ১ জিবির ফাইল কিভাবে সরাসরি আপনার মোবাইলে পাঠাবে? এখন স্যামসাং আর সিম্ফোনী কম্পানী দুটোই আলাদা আলাদা। কিন্তু তাদের মোবাইলের ভিতরে ডেটা ট্রান্সফর করা সম্ভব। তো সেটা কিভাবে? স্যামসাং কম্পানীর সাথে সিম্ফোনী বা অন্য যে কোন কম্পানীর ফোনাের সাথে কোন এ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়ারের কোন সম্পর্ক নেই । দুটো ফোনের প্রোগ্রামই একটি ইন্টারফেস বা মাধ্যম ব্যাবহার করে ফাইল শেয়ার করে থাকে । এই মাধ্যমকেই এপিআই বলে ।
  2. ধরুন আপনি একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেন। তো সেখানে যাওয়ার পর আপনার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো ওয়েটার কে ডেকে মেন্যু কার্ড দেখা। তারপর অর্ডার করা। অর্ডার করা শেষে ওয়েটার আপনার অর্ডার নিয়ে রান্নাঘরে যাবে। সেখান থেকে সে বাবুর্চি কে বলে আপনার অর্ডার অনুযায়ী খাবার বানাবে। তারপর সেই খাবার আবার রান্নাঘর থেকে আপনার টেবিলে দিয়ে যাবে। এখানে “আপনার টেবিল > বাবুর্চির রান্নাঘর > আপনার টেবিল” এই যে সাইকেল টা তৈরি হচ্ছে তার একমাত্র মধ্যম হলো আমাদের ওয়েটার মশাই। আপনি চাইলেই কাজটা নিজে করতে পারতেন। কিন্তু তাতে আপনার সময় ও পরিশ্রম দুটোই বেশি হতো। তাই কাজটা আপনি একটা মাধ্যমের সাহায্যে করছেন। এই ওয়েটারের কাজও এপিআই এর মধ্যে পড়ে।

আসলে আমাদের প্রতিটা কাজ ই যুক্তিগত ভাবে এপিআই। আজ আর না। আসাকরি এপিআই নিয়ে আপনাদের সাধারন ধারনা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ সামনে আরো বিস্তারিত লিখবো।

--

--