ফগ কম্পিউটিং (Fog Computing) — সেটা আবার কী?

--

কুয়াশা (Fog) যেন মাটির কাছাকাছি নেমে আসা মেঘ। ছবি: Max Bender on Unsplash

ক্লাউড কম্পিউটিং (Cloud Computing) সম্পর্কে কম-বেশি কিছু শুনেছিলাম। কিছু ধারণাও হয়েছিল কিন্তু ফগ বা “কুয়াশা” কম্পিউটিং সম্পর্কে একেবারেই নতুন করে শুনলাম, জানলাম। আর সেটা শেয়ার করার জন্যই লিখছি। বরাবরের মতো প্রথমেই বলে নিচ্ছি, আমি এ ব্যাপারে মোটেও কোনো এক্সপার্ট না। শুধু একটা রিসার্চ পেপারে কিছু কাজ করার সুবাদে একটু শেখা, জানা হয়েছে — আর সেটাই শেয়ার করছি, হয়তো কারো উপকারে আসবে।

মূলতঃ একটা নেটওয়ার্কে আমরা যারা ব্যবহারকারী, ইউসার — তারা নেটওয়ার্কের এজ (Edge) বা ধারে থাকি। একটা মোবাইল ফোনের কথা চিন্তা করা যাক। ধরুন আপনি মোবাইল ফোনে YouTube -এ কোনো ভিডিও দেখছেন। কিংবা Facebook ব্যবহার করছেন। আপনার ফোনের YouTube বা Facebook এপটি কিন্তু আপনার মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের (যেমন গ্রামীণ ফোন, কিংবা বাংলালিংক ইত্যাদি) কোনো টাওয়ারে থাকা রাউটারের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের গভীরে (Core Network) থাকা YouTube বা Facebook সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করে কনটেন্ট নিয়ে এসে আপনার ফোনে দেখাচ্ছে, ঠিক না?

এই যে কোর নেটওয়ার্কে থাকা সার্ভার, এটা হয়তো বাংলাদেশেই নাই। এশিয়ার কোনো দেশে হয়তো হোস্ট করা আছে। হাই স্পিড ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব ইউসার এর সাথে যোগাযোগ করছে — বলা হচ্ছে এই সার্ভার গুলো ক্লাউডে (Cloud) আছে।

আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি: Amazon , Google, Microsoft, IBM সহ বড় বড় সব টেকনোলজি কোম্পানি এখন ক্লাউড সার্ভিস দিয়ে থাকে। এদের ইউসার মূলত ছোট বা মাঝারি সাইজের অন্য কোম্পানি গুলো। এদের ওয়েবসাইট হোস্ট করা, ইমেইল সার্ভিস, কম্পিউটিং এবং অন্যান্য সুবিধা অর্থাৎ এক কথায় “ক্লাউড কম্পিউটিং” — সার্ভিস দিয়ে বড় কোম্পানি গুলো ব্যবসা করে থাকে। এইসব ছোট বা মাঝারি সাইজের কোম্পানিগুলোর ইউসার কিন্তু আবার আপনার- আমার মতো সাধারণ মানুষ, যারা হয়তো বাসায় বা কাজের জায়গায় থাকা কম্পিউটার কিংবা নিজের মোবাইলের মাধ্যমে এদের সার্ভিস নিয়ে থাকে। আর এভাবে আমরা সবাই কম-বেশি “ক্লাউড কম্পিউটিং” ব্যবহার করে থাকি।

এইবার আসি ফগ (Fog) বা বাংলায় কুয়াশা কম্পিউটিং-এর কথায়। মোবাইল অপারেটর কোম্পানি, কিংবা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি গুলো ভেবে দেখলো, “ আরে! আমাদের টাওয়ার গুলোতে থাকা কম্পিউটার, রাউটার ইত্যাদিতে তো অনেক ফ্রি মেমোরি আছে, কম্পিউটিং পাওয়ারও আছে। Amazon সহ অন্যান্য বড় কোম্পানি গুলো যদি তাদের ডাটা ওয়্যারহাউস -এ থাকা অলস মেশিন গুলো ব্যবহার করে ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া দিতে বা সার্ভিস বিক্রি করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারি না?” — আর এই আইডিয়া থেকেই ফগ কম্পিউটিং-এর জন্ম। কুয়াশা যেমন আকাশ থেকে মাটির কাছাকাছি নেমে আসা মেঘের মতো, একই ভাবে ফগ কম্পিউটিং নেটওয়ার্কের গভীর বা ক্লাউড (Core Network or Cloud) থেকে নেমে এসে ইউজারের কাছাকাছি অর্থাৎ নেটওয়ার্কের ধারে (Edge Network) অফার করা সার্ভিস। এজন্য Fog Computing কে Edge Computing -ও বলে।

কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে Cloud Computing -এর সাথে Fog বা Edge Computing — এর কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। প্রথমটাতে যখন শক্তিশালী মেশিন, ডেডিকেটেড হাই স্পিড ইন্টারনেট দিয়ে যুক্ত, সেখানে Fog কম্পিউটিং মূলতঃ অনেক কম শক্তিশালী মেশিন আর মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ওয়াই-ফাই দিয়ে যুক্ত থাকছে। মোবাইল টাওয়ারের বিদ্যুৎ চলে যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে কোনো টাওয়ারে থাকা সার্ভার আর তার সার্ভিসের কী হবে? কাজেই প্রশ্ন হচ্ছে, এই Fog Computing -র সুবিধা, অসুবিধা গুলো কী কী? আদৌ কি মোবাইল টাওয়ার বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার -এর মেশিন গুলো Cloud Computing -র সুবিধা দিতে পারবে? প্রাইভেসী, সিকিউরিটির কী হবে? ইউজারের কাছাকাছি নেটওয়ার্কের ধারে (Edge) সার্ভার গুলো থাকায় পারফরমেন্স কি ভালো হবে? পারফরমেন্স মেসার (performance measure) বা টেস্ট কীভাবে করা যাবে?

এরকম অজস্র প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন। ছোট আকারের মডেল তৈরী করছেন, টুল তৈরি করে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে ফল প্রকাশ করছেন। এখনো আমার জানামতে কেউ ফগ বা এজ কম্পিউটিং সার্ভিস নিয়ে বাজারে আসে নাই। পুরোটাই রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফেইজে আছে।

ক্লাউড কম্পিউটিং-এ পারফরমেন্স, লোড বা স্ট্রেস টেস্ট ইত্যাদি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কিছু কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আর সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমার কলিগ প্রফেসর ডুয়ান, তার এক ছাত্রী আর আমি মিলে ফগ কম্পিউটিং -এ পারফরম্যান্স টেস্ট করতে গেলে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে — সেটা নিয়েই ছোটোখাটো একটা রিসার্চ পেপার লিখেছি। মূলত এখন ক্লাউড কম্পিউটিং -এ ইন্ডাস্ট্রি তে কিভাবে পারফরমেন্স টেস্ট করা হয়, আর ফগ কম্পিউটিং -র বেলায় কি কি পরিবর্তন করতে হতে পারে, তার একটা তুলনামূলক আলোচনা করেছি। এই ব্লগ পোস্টে বিস্তারিত না লিখে পেপারের আর স্লাইডের লিংক দিয়ে দিচ্ছি, কেউ ইন্টারেস্টেড হলে পড়ে, দেখে নিতে পারেন।

রিসার্চ পেপার:
https://drive.google.com/file/d/1DmTShTeeRr0u2jnn5lt1ghx4Eny3QbFs/view?usp=sharing

প্রেসেন্টেশন স্লাইড:
https://drive.google.com/file/d/1fPu-Nuux4pP_NUEPonmT1HFZyRD9VGNv/view

ধন্যবাদ!

--

--

Ishtiaque Hussain
প্রোগ্রামিং পাতা

Senior Software Engineer in Test @ Bloomberg, Former Assistant Professor of Computer Science, Pennsylvania State University, Abington, USA. Opinions are mine.