লিনাক্স vs কালী: Civil War

শুরুতে লিনাক্স ব্যবহারকারীদের একটাই প্রশ্ন থাকে প্রথম কয়েকমাস। “ভাই কোনটা ব্যবহার করবো? আমার পিসির কনফিগ হচ্ছে ব্লা ব্লা ব্লা……….”

এতোক্ষনে শিরোনাম দেখে হয়ত‌ো এক্সপার্টগন আমাকে পাগল বলা শুরু করে দিয়েছেন। লিনাক্স আর কালী? কালী কি আলাদা কিছু নাকি? কালী তো যাস্ট একটা ডিস্ট্রো। মিকি সিওর পাগল হয়ে গিয়েছে আর নাহয় ডোজ বেশি হয়ে গিয়েছে ওর।

আসলে যা ভাবছেন তা নয় ভাই। আমরা শুরুতে যারা লিনাক্স এ আসি তারা বেশিরভাগ ই ভাবি লিনাক্স দিয়ে ফেসবুক হ্যাক করতে পারবো, কালী লিনাক্স হচ্ছে সবচেয়ে বেস্ট। কালী লিনাক্স অল ইন অন ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। সাধারন ইউজারদের কাছে কালী লিনাক্স মানে কি যেনো মধু টাইপ কিছু। আর যে কালী ব্যবহার করে তার সে কি পার্ট। মুই কি হনু রে টাইপ। অথচ দেখা যায় যে ম্যাক্সিমামই কালীর ফাংশনালিটি বুঝে না। ফলাফল? “লিনাক্স কি ফাউল জিনিস, কিভাবে চালায় কিছুই বুঝিনা, ধুর এডা কিসু হইলো? আজিরা জিনিস মানুষ চালায়?” ইত্যাদি টাইপের ধরনা নিয়ে আমরা আবার সেই চিরোচেনা জানালাতে ফিরে যাই। :( আসলেই কি লিনাক্স খুব কঠিন কিছু? আসলেই কি লিনাক্স ফাউল?

এবার মুল টপিকে আসার আগে একটু ইতিহাস যেনে আসি। উপরের দুই প্যারার আলোচনা ইতিহাসের পরে। কারন দেশের গন্যমান্যরা আজকাল কম্পিউটার সাইন্সের জব ইন্টারভিউতে ইতিহাস ধরছেন তো তাই অগ্রিম পদক্ষেপ।

ইতিহাস/পাতিহাসঃ

লিনাক্স হচ্ছে লিনাক্স বেজড অপারেটিং সিস্টেমের কার্নেল বা মুল ভিত্তি। তবে অনেকে এটাকে অপারেটিং সিস্টেম ও বলে। অতি সঠিকভাবে লিনাক্স বলতে শুধু লিনাক্স কার্নেলকেই বোঝায়। তবে যে-সব ইউনিক্স-সদৃশ অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে এবং মূলত গ্নু (GNU) প্রকল্পের কোড লাইব্রেরি ও টুলস ওই কার্নেলের সাথে যুক্ত করে বানানো হয়েছে, সাধারণভাবে সে-সব অপারেটিং সিস্টেমকে লিনাক্স হিসেবে বর্ণনা করা হয়। আরও ব্যাপক অর্থে একটি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বলতে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ও এর সাথে সরবরাহকৃত বিপুল পরিমাণের এপ্লিকেশন সফটওয়্যার-এর সমষ্টিকে বোঝায়। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো সহজেই কম্পিউটারে ইন্সটল ও রিইনিস্টল করা যায়। লিনাক্স তৈরি করেন ফিনল্যান্ডের নাগরিক লিনাস টোরভাল্ডস্, আজ থেকে প্রায় ২৩ বছর আগে, ১৯৯১ সালে। তার আগে ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম চালু থাকলেও সেটির সোর্স কোড উন্মুক্ত ছিল না। লিনাক্সের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ওপেন সোর্স, অর্থাৎ এর সোর্স কোড উন্মুক্ত। যে কেউ এই সোর্স কোড ডাউনলোড করতে পারবে, প্রয়োজন অনুসারে এর কোনো অংশ পরিবর্তন করতে পারবে, আবার সেই পরিবর্তিত সোর্স কোড বিতরণও করতে পারবে।

তবে এখানে একটু মজার ব্যপার আছে। লিনাক্স কিন্তু লিনাসের নাম অনুসারে নাম নয়। বরং লিনাক্সের নামকরনের ক্রেডিট হচ্ছে আরি লেমকে নামক এক ভদ্রলোকের। লেমকে ভদ্রলোক হেলসিংকি ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজিতে ftp.funet.fi নামক একটি এফটিপি সার্ভারের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সার্ভারটি ছিল ফিনীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা নেটওয়ার্ক-এর একটি অংশ, আর এই নেটওয়ার্ক-এর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি ছিল লিনুসের ইউনিভার্সিটি অফ হেলসিংকি। লিনুস যখন তার অপারেটিং সিস্টেম প্রকল্পটি এই সার্ভারটিতে রক্ষা করার জন্য লেমকে-কে দেন, লেমকে তখন তা একটি ডিরেক্টরিতে রাখেন ও ডিরেক্টরিটির নাম দেন “লিনাক্স”, অর্থাৎ “লিনুসের মিনিক্স” কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ। লিনুস অবশ্য নিজে প্রকল্পটির নাম “ফ্রিক্স” (freax) রাখতে চাচ্ছিলেন, যা ছিল “ফ্রি” (বিনামূল্য) ও ইউনিক্সের শেষ অক্ষর “এক্স”-এর সম্মিলিত রূপ। শেষ পর্যন্ত লেমকের দেয়া লিনাক্স নামটিই টিকে যায়।

প্যাঁচালঃ

Linux is not for hacking at all

ইতিহাস তো জানা হলো। এবার চলেন মুল আল‌োচনায় ফিরে আসি। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে দুটো।

১। আমরা নতুনেরা দ্বিধায় ভুগি যে আমাদের হার্ডওয়্যার অনুযায়ী আমাদের কোন ডিস্ট্রো চালালে ভালো হবে।
২। লিনাক্সে কি জানালার(Windows) সফটওয়্যার চলবে?

উপরের দুইটা প্রশ্নের জবাব গুগল আর ইউটিউব ঘাটলে কয়েকশো পাবেন। তবে আমি আমার মত করে কিছু পরামর্শ দেই।

প্রথম সমস্যাঃ আমরা কোন ডিস্ট্রো চালাবো? এই প্রশ্নের উত্তর আপনার প্রশ্নেই আছে ভাই। একটু খেয়াল করেন। লিনাক্সের ডিস্ট্রো সংখ্যা প্রায় হাজার খানেকের কাছাকাছি (বেশিও হতে পারে)। একেকটা একেক কাজের। এখন যদি আপনি সাধারন ব্যবহার করতে চান তবে আপনি চাইলেই উবুন্টু বা মিন্ট বা কুবুন্টু ব্যবহার করতে পারেন। আবার যদি আপনি চান যে না লিনাক্স যখন চালাবোই তখন অবশ্যই একটু ভাব না থাকলে কেমনেকি? এই যদি আপনার ইচ্ছা হয় তবে ম্যাকের লুক দিতে আপনি চাইলেই এলিমেন্টরী বা ডেপিন ব্যবহার করতে পারেন। আবার আপনি যদি নিজের মত করে আপনার ডিস্ট্রো সাজাতে চান তবে আপনি চাইলে আর্চ ব্যবহার করতে পারেন। সার্ভারের কাজ করতে চাইলে চালাতে পারেন সেন্টওএস বা রেডহ্যাট।

লিনাক্স বেজড ডিস্ট্রের অভাব নেই। আপনি যেটা ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারেন। মূলত ব্যবহারটাই আসল। আপনি কি কাজে ব্যবহার করবেন সেটাই মূল। যেমন আমি গ্রাফিক্সের কাজ আর ডেভলপমেন্টের কাজ করি। আমি নিজে ব্যাকবক্স ৫ চালাই। এবার অনেকেই বলতে পারেন ভাই আপনি এতক্ষন কালীর বিরোধিতা করে এখন নিজেই পেনেট্রেশনটেস্টিং ডিস্ট্রো চালাতে চাচ্ছেন। কাহীনি কি? আপনি তো মিয়া মানুষ সুবিধার না 😤
আসলে আমি ব্যাকবক্স চালাই কারন কিছু প্রয়োজনে। ব্যাকবক্স আমার হার্ডওয়্যার এর সাথে পুরো সুইট্যাবল। লো কনফিগ হার্ডওয়্যারে আমি ৪ বছর ধরে ব্যাকবক্স চালাচ্ছি। স্মুদলি। তবে কথা তো এখনো রয়েই গেলো। আপনি সিকিউরিটি ডিস্ট্রো চালান আর আমাদের বলেন কালী না চালাইতে। এ কেমন বিচার?
ব্যাকবক্সে একটা সুবিধা আছে। আপনি চাইলেই সিকিউরিটির টুলস গুলো আনইনিস্টল করে ফ্রেশ বানাতে পারেন। আমিও তাই করেছি। এখন কথা হচ্ছে, যদি ব্যাকবক্স কে আমি ফ্রেশ ও বানাই তবে ব্যাকবক্সের সাথে কুবুন্টুর তফাত কি থাকলো? দুটোর ডেক্সটপ এনভয়েনমেন্ট ই তো xfce তাহলে আমি কুবুন্টু চালাই না কেনো? কারন কোনো এক অজানা কারনে আমার ল্যাপ্পিতে ব্যাকবক্স যেমন স্মুদলি চলে অন্য যত লাইটওয়েট ডিস্ট্রোই হোকনা কেনো তেমন স্মুদলি চলেনা। হ্যাং করবেই করবে। এটা আসলে কিসের সমস্যা আমি নিজেও জানিনা।

ঘুরেফিরে সেই এক কথাই ভাই। আপনি যেই ডিস্ট্রোতে মজা পান সেইটাই আপনি চালান। তবে হ্যা লিনাক্স দিয়ে ফেসবুক হ্যাকিং করা যায় বা লিনাক্স শিখলে হকার হওয়া যায় এই চিন্তা মাথা থেকে ফালায় দেন ভাই। আপনি হ্যাকার হতে চালাইলে আপনার হাতের স্মার্টফোনই কাফি। কালীকুলির দরকার নাই। সুতরাং কালীই সব। লিনাক্স মানেই কালী এটা ভুল ভাই। কালী লিনাক্সের ফাংশনালিটি হিউজ কমপ্লেক্স। অতি দরকার না হলে কালীতে না যাওয়াই বেটার। না না দুঃখীত। বেটার না। বেস্ট।

এবার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দেই। লিনাক্সে জানালার সফটওয়্যার চালাবো কিভাবে? লিনাক্সে জানালার সফটওয়্যার চালানোর দুটো রাস্তা আছে। প্রথমত আপনি চাইলে Wine নামক সফটওয়্যার ইনিস্টল করে .exe ফরম্যাটের সফটওয়্যারগুলো চালাতে পারবেন। আবার চাইলেই আপনার লিনাক্সে ভার্চুয়াল বক্স নামের সফটওয়্যার ইনিস্টল করে সেখানে জানালা সেটাপ দিয়ে চালাতে পারেন। আপনি কিভাবে চালাবেন সেটা ডিপেন্ড করে আপনি কি চালাবেন সেটার উপর। তবে আমার মতে জানালার বহুল ব্যবহার করা সফটওয়্যারগুলোর ম্যাক্সিমাম ই ক্রশ প্লাটফর্মে চলে। বা অলটারনেটিভ অাছে লিনাক্সের জন্য।

কালী কেনো চালাবোনা?

কালী কেনো চালাবো না এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেয়ার আগে আপনি বলেন তো “কালী আপনি কেনো চালাবেন?” যদি কমেন্ট একটা যুক্তি দেখাতে পারেন যে আপনি শুরুতেই ঠিক এই কারনে কালী চালাবেন তবে আমি কথা দিচ্ছি কাল থেকে আমিও কালী চালানো শুরু করবো। 😃

সারমর্মঃ

লিখতে লিখতে প্রায় গরুর রচনা লিখে ফেললাম। অনেকটা বোর্ড পরিক্ষায় আমরা বেশি নম্বর পেতে যেমন ভুরি ভুরি লিখি তেমনই। আসলে টপিকটাই এমন। তর্ক করার আরো অনেক কিছু এখনো বাকি আছে। সেগুলো না লিখি। আমাদের লিনাক্স কমিউনিটি আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। ওপেনসোর্সের দিকে বাংলার মানুষ ঝুকছে বেশি। আরেকটা কথা। প্রথম প্রথম লিনাক্সের ডিস্ট্রো সেটাপ দিতে গেলে হয়তো দুএকবার আপনি ভুলবসত আপনার হার্ডডিক্স ফরম্যাট করে ফেলবেন। ঘাবড়াবেন না। আমি নিজেও প্রায় ৪ বার হার্ড ড্রাইভ ফরম্যাট দিয়ে তারপর নিজে নিজে সেটাপ দেয়া শিখেছিলাম। তখন টেকনোলজি নিয়ে এতো কিছু জানতাম না। জানলে হয়তো আমি হার্ডড্রাইভ ফরম্যাট করতাম না। আপনাদের বেলায় ও এমন হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়াল আছে। যেকোনো একটি দেখে নিজেই শুরু করে দিন। আর লিনাক্স মানেই হ্যাকিং বা লিনাক্সে ফেসবুক হ্যাক করা যায় এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন। মার্ক জাকারবার্গ মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ফেসবুকের সিকিউরিটির কাজে লাগাচ্ছে। আর আপনি ঢাকার মাইনকারচিপায় বসে কালী সেটাপ দিয়ে দুই গুতা দিলেন আর ফেসবুক হ্যাক হয়ে গেলো এই কথা পাগলে শুনলেও হাসবে। 💩

আজ এ পর্যন্তই। আমি রেগুলার লেখালিখি করি না। সময় পাই না যে তা না। আগ্রহ আর টপিক পাই না। মাঝে মাঝে যাই ছাইপাশ লিখি তাতে যদি আপনাদের একটু উপকার হয় তবে তাতেই আমি সন্তুষ্ট।

আল্লাহ হাফেজ 😆

--

--