ইসলাম ও গণতন্ত্রের মূলনীতির মধ্যে কোন বিরোধ নেই (পর্ব-২)

Rethinking Islamic Thoughts..
3 min readJan 5, 2020

--

http://almawridindia.org/

[এটি মূলত পাকিস্তানের বহুল আলোচিত ইসলামি চিন্তাবিদ, আল বায়ান তাফসিরের লেখক, পাকিস্তান সরকারের কাউন্সিল অফ ইডীওলজি এর সাবেক সদস্য, আল মাওরিদ ফাউন্ডেশোনের চেয়ারপার্সন জাভেদ আহমাদ ঘামিদি সাহেবের পাকিস্তানের বহুল জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল পিটিভি-কে দেওয়া একক স্বাক্ষাতকারের বঙ্গানুবাদ। স্বাক্ষাতকারটি নিয়েছেন পিটিভির সাংবাদিক সালিম সাফী। এছাড়া ঘামিদি সাহেব ইসলামের সম্পূর্ন ব্যাখ্যাকারক হিসেবে লিখেছেন দীর্ঘ বইঃ আল মিজান। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি কুরআনের তাফসির করছেন, এছাড়া তিনি নানা দেশে ইসলাম সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সরাসরি জবাব দেন।]

প্রথম পর্ব পড়তেঃ

সালিম সাফীঃ ঠিক আছে। কিন্তু জনগণ যদি আল্লাহভীরু হয়, তখন তাদের মতামতের ভিত্তিতে চালানো যায়। কিন্তু এই পশ্চিমা গণতন্ত্র তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে জনগণকেই সকল ক্ষমতার উৎস মনে করে। অর্থাৎ তারা ইসলাম-বিরুদ্ধ যা ইচ্ছা তাই আইন করে পাশ করে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর রায় কী?

জাভেদ আহমেদ ঘামিদিঃ দেখুন আপনাদের একটি কথা বুঝতে হবে, কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা যখন মুসলিমরা মিলে প্রতিষ্ঠা করবে তাহলে সেখানে আইনকানুন অনুমোদন দেওয়া বা খারিজ করা সবকিছু মুসলিমদের অধীনেই থাকবে। আর মুসলিম বলে কাকে? যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, অর্থাৎ আল্লাহ’র আইনকেই শিরোধার্য মনে করে যারা তারাই তো মুসলিম। তাহলে মুসলিমরা যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে কোন আইন পাশ করবে তাহলে তা কেন ইসলামের বিরুদ্ধে যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর আগে খোজা চাই। এ কারণেই কায়েদে আজম জিন্নাহ সাহেবকে যখন বলা হল, পাকিস্তান কোন নীতিতে চলবে, তিনি বললেন গণতন্ত্রের ভিত্তিতে, অর্থাৎ অধিকাংশের মতের ভিত্তিতে। তখন অনেকে বললে, কিন্তু এখানে তো শরিয়া চলার কথা ছিল। তখন বললেন, যখন মুসলিমরা মিলে একটি সংসদ চালাচ্ছে তাহলে এখন সেখানে কোন আইন ইসলামের শরিয়তের বাইরে যাবে কেন? একজন মুসলিম লোক যখন নিজেকে মুসলিম ভাবেন তখন তার কাজই হচ্ছে নিজেদের ইচ্ছা-উদ্দেশ্যকে আল্লাহর দিকে রুজু করা। আর এরাই যখন আবার সংসদে বসবে তখন সেখানেও শরিয়তের হুকুম প্রতিষ্ঠা হবে। কে মুসলিম কে না, তাতো তাদের মতামত দিয়েই বুঝা যাবে।

সালিম সাফীঃ কিন্তু আপনি যদি পশ্চিমা গণতন্ত্রের দিকে তাকান, সেখানে যেকোন আইন পাশ করার অধিকার সংসদের আছে, হোক সেটা ধর্মের পক্ষে বা অধর্মের পক্ষে। আমাদের সংসদকেও এই ধরণের এখতিয়ার দেওয়া যাবে কীনা? অনেকে বলে, দ্বীনি বিষয়ে সংসদ সিদ্ধান্ত নিবে না, তাহলে তো আর গণতন্ত্রের মূলনীতির সাথে মিলছে না।

ঘামিদিঃ আমি বুঝিনা সংসদ কী কোন এক বিরাট বোবা- ঘরের নাম? সংসদে লোকেরা যায়, মুসলিম নেতারাই যাবে। আমি আবারো বলছি, মুসলিম বলে কাকে? যে আল্লাহর সকল সিদ্ধান্তে রাজি থাকে। যারা আল্লাহকে তাদের প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে (যেমন বাংলাদেশে বলা হচ্ছে ৯০% লোক মুসলিম)। তাহলে আপনারা ভাবছেন কীভাবে যে একটি সংসদ যার ৩০০ এমপি না হলেও অধিকাংশ লোক মুসলমান, যারা ভোট দিচ্ছে তাদের অধিকাংশ লোক মুসলমান, কিন্তু আবার এরাই যখন তারা ভোট দিচ্ছে বা সংসদে যাচ্ছে তখন আল্লাহ’র আইনের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। এটা সম্ভব? আমাকে একটি নমুনা দেখান যেখানে সংসদের অধিকাংশ লোক প্রকৃত অর্থে মুসলমান হয়েও দ্বীনের বিরুদ্ধে কোন আইন করেছে? এসব আইন হয় যেখানে রাজতন্ত্র কায়েম থাকে অথবা তথাকথিত গণতন্ত্রের দেশে যেখানে অধিকাংশের রায়ের সঠিক প্রতিফলন হয় না। তাই আমি আশা করব, সত্যিকারের মুসলিমদের একবার সংসদে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। তারপর স্বাধীনতা দেয়া হোক, যে তারা নিজেদের ফয়সালা নিজেরা করতে পারে, আইন প্রণয়ণ করতে পারে। তার জন্যে গণতন্ত্রে বাধা দেওয়ার দরকার নাই।

আমার এত কথার মূলকথা হচ্ছে, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে লোকজনদের নামে নয়, প্রকৃত মুসলিম হিসেবে তৈয়ার করা। ইসলামের সত্যিকারের জ্ঞানের আলো তাদের ভিতরে তৈয়ার করা। আর এই জ্ঞানের আলো নিয়ে তারা যখন সংসদে আসবে, তার প্রতিফলন হবে একরকম। আর যদি দ্বীনের বুঝহীন লোকেরা যায়, যেমন পশ্চিমা গণতন্ত্রের দেশের সংসদগুলোতে হয়, তখন সিদ্ধান্ত আরেক রকম হবেই।

সালিম সাফীঃ কিন্তু আমরা যদি রাসুলের সময় থেকে চারখলিফা বা তারপর অনেক জায়গায় মুসলিম শাসন কায়েম হয়েছে, সেখানে তাকালে কিন্তু কোথাও এমন গণতন্ত্রের রুপ দেখা যায় না। মানে জনগন মতামত দিচ্ছে, একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন, সংসদ আছে। তাহলে এটি আসলো কোথা থেকে?

ৃতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

--

--

Rethinking Islamic Thoughts..

জাভেদ আহমাদ ঘামিদির নানা ইসলামী চিন্তার সাথে বাংলাভাষীদের পরিচয় করা উদ্দেশ্য নিয়ে। (A Bengali Blog of Translated thoughts of Javed Ghamidi)