নতুনদের জন্য প্রোগ্রামিং — কি, কেন, কিভাবে?

বিগিনারদের জন্য প্রোগ্রামিং নিয়ে সবকিছু। নিঃসন্দেহে ব্লগটি আপনাকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে প্রোগ্রামিং নিয়ে।

Ehsanul Islam
9 min readJul 11, 2022
Programming for beginners

একটি সত্যি কথা কি জানেন? গুগোল, ফেসবুক যারা বানিয়েছেন, তারাও কিন্তু একটা সময় একজন জিরো লেভেলের প্রোগ্রামার ছিলেন। প্রোগ্রামিং জানার জন্য কম্পিউটারের নাড়িভুঁড়ি খুব বেশি না জানলেও চলে। শুনে অবাক হবার কিছু নেই, ব্যাপারটা একদমই সত্যি। আমায় বিশ্বাস করুন, কিছুক্ষণ পর আপনি নিজেই নিজেকে বলবেন — “একটু সময় দিলেই আমি পারবো!”

এই ব্লগটি থেকে আপনি যা জানতে পারবেন-

  • প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জিনিসটা আসলে কি?
  • এটি শিখে মানুষের কাজটা কি?
  • কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে আপনি শুরু করবেন?
  • নিজের অজান্তেই যে প্রতিদিন-ই আপনি প্রোগ্রামিং বা অ্যালগরিদম করে যাচ্ছেন, এটির ব্যাখ্যা।
  • প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের বাপ-দাদা-বড় আব্বা নিয়ে অল্প খানি হিস্ট্রিও জেনে যাবেন এক ফাঁকে।

প্রোগ্রামিং জিনিসটা কী!

Photo by James Harrison on Unsplash

ধরুন আপনি একদিন বাসায় একা। কে কখন আসবে তার ঠিক নেই। কিন্তু আপনার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। বাসায় কোন নাস্তাও নেই। রান্নাঘরে গিয়ে দেখলেন ভাত আছে তবে কোন তরকারি নেই। এমতাবস্থায় কি করা যায়? ক্ষুধায় তো পেট চোঁচোঁ করছে। মনের ভেতর সাহস রেখে ডিসিশন নিয়েই ফেললেন যে রান্না করবেন, ক্ষুধাটা একটু বেশিই লেগেছে। চট করে চলে গেলেন ফ্রিজের কাছে। খুলে দেখলেন ভেতরে মোটামুটি অনেক কিছুই আছে- মাছ, মাংস, সবজি, হাবিজাবি ইত্যাদি। কিন্তু হুট করে এত বড়সড় কিছু রান্না করা তো আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। হঠাৎ করেই আপনার চোখে পরলো বেশকিছু ডিম। যেই দেখা সেই ভাবা। মনস্থির করলেন ডিম ভাজি করবেন।

মিনিট দশেক পর আপনি কিন্তু সত্যিই আবিষ্কার করবেন ডিম ভাজিটি আপনি করে ফেলেছেন। এইবার ভাত দিয়ে খেয়ে উদরপূর্তির পালা।

“কোন কিছু রান্না নেই, এখন রান্না করতে হবে”- এটি কিন্তু আপনার জন্য একটি সমস্যা ছিল। প্রয়োজন মেটাতে দৈনন্দিন জীবনে এরকম অনেক ধরনের খুঁটিনাটি সমস্যার সম্মুখীন হই আমরা। বলতে গেলে এই সকল সমস্যাগুলোকে কিন্তু বেশির ভাগ সময় আমরা নিজেরাই সমাধান করে ফেলি। আর এই সমস্যা সমাধান করতে আমরা যা কিছুই করছি, এটিই আসলে প্রোগ্রামিং। যেমন ধরুন বিয়ের প্রোগ্রাম, জন্মদিনের প্রোগ্রাম বা অন্য যেকোন প্রোগ্রাম। আসলে বাস্তবিক জীবনে বিয়ের প্রোগ্রামটির মাধ্যমেই কিন্তু বিয়ে বা অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হওয়ার যাবতীয় কাজগুলো করা হয়ে থাকে। তাই একে আমরা বিয়ের প্রোগ্রাম বলছি। তেমনি ভাবে ডিম ভাজি করার জন্য আপনি যা যা করেছিলেন, সেটিই হল ডিম ভাজি করার প্রোগ্রাম। এখন আপনি চাইলে এই প্রোগ্রামটি ব্যবহার করে যতবার ইচ্ছা ততবার ডিম ভাজি করতে পারবেন। অর্থাৎ যতবার আপনি ডিম ভাজি করতে যাবেন, ততবারই আপানাকে আগের কাজগুলোই পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এই জিনিসটাকেই আমরা আসলে প্রোগ্রামিং বলছি। কোন কাজ বা সমস্যা সমাধান করার প্রক্রিয়া।

একটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন কি? প্রয়োজন না পড়লে আপনি কিন্তু আজও ডিমটি রান্না করতেন না। যখনই আপনার প্রয়োজন পড়েছে ঠিক তখনই তা করেছেন। খেয়াল করে দেখুন, প্রথমে কিন্তু আপনি এর জন্যে একটি পরিকল্পনা করেছিলেন- ‘কি রানবেন’ এবং ‘কিভাবে রানবেন’। ডিম ভাজার আগে আপনি ছোট ছোট বেশ কিছু কাজও করেছেন। যেমন- ডিম খুঁজে পাওয়া, পেঁয়াজ-মরিচ কাটা, কড়াইটা একটু ধুয়ে নেয়া, লবণ মিক্স করা, আগুন জ্বালানো এবং তেল গরম করে ডিম ভাজা ইত্যাদি। অর্থাৎ নির্ধারিত কাজটি করার লক্ষ্যে আপনি আপনার চেষ্টা এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে একটু একটু করে তা সম্পন্ন করে ফেলেছেন। প্রোগ্রামিংয়ে এই জিনিসটাকেই বলা হয় অ্যালগরিদম (Algorithm) । অর্থাৎ কোন কাজের পূর্বপরিকল্পনা।

ধরুন আপনার গায়ের জামাটি অল্প একটু ছিড়ে গেছে। চাইলেই কিন্তু আপনি মিনিটখানেকের মাঝেই জামাটি সেলাই করে নিতে পারেন। আবার ধরুন একদিন সাইকেল চালাতে গিয়ে সাইকেলের চেইনটি পড়ে গেল। আপনি সেটাও কিন্তু ঠিক করে ফেলতে পারবেন। আবার বিকেল বেলা একদিন চা খেতে ইচ্ছা করলে আপনি তাও বানিয়ে ফেলতে পারবেন। ছোট ভাইয়ের খেলনা অথবা বাসার কোন জিনিস ভেঙে গেলে সেটিকেও কিন্তু কোন আঠা বা glue দিয়ে লাগিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই দেখবেন বাসার বাল্ব নষ্ট হয়ে গেলে নিজেরাই সেটি ঠিক করে ফেলে। আবার ঘরে কোন ছবি বা পোস্টার টানাতে চাইলে হাতুড়ি দিয়ে ঘরের দেওয়ালে একটি পেরেক গেঁথে দেয়।

আসলে আমাদের চলার প্রতিটি মুহূর্তই ছোটখাটো এরকম বিভিন্ন প্রবলেম বা সমস্যায় জর্জরিত। আমরা এই সকল সমস্যা নিজেরাই সমাধান করে থাকি। এমনকি মাঝে মাঝে অনেক বড় বড় সমস্যাও সমাধান করে ফেলি। আর এই প্রবলেম সলভিং-ই হল প্রোগ্রামারদের মুখ্য উদ্দেশ্য। আপনি কিন্তু প্রতিদিনই এরকম ছোটখাটো কোন না কোন প্রবলেম সলভ করে যাচ্ছেন। অতএব আজ থেকে জেনে রাখুন, আপনি নিজেও একজন প্রোগ্রামার।

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ পরিচিতি

Photo by Nikita Bandaruk on Unsplash

একজন প্রোগ্রামারের কাজই তো হল তার চিন্তাশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার সুন্দর একটি সমাধান খুঁজে বের করা। তবে প্রকৃত অর্থে প্রোগ্রামাররা কিন্তু এই সমস্যা গুলো একটু ভিন্ন ভাবে সমাধান করে থাকে, আর সেটি হল কম্পিউটারের সাহায্যে। এই ক্ষেত্রে কম্পিউটারের সাথে আমাদের কিন্তু একটা যোগাযোগ মাধ্যম প্রয়োজন। আর সেটিই হল প্রোগ্রামিং ভাষা বা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ

আচ্ছা, আপনি কি এখন পর্যন্ত কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের নাম শুনেছেন? যেমনঃ সি, পাইথন, জাভা অথবা অন্য কোন কিছু? এ নামগুলো কিন্তু কম্পিউটারের এক এক ধরনের ভাষার নাম। মানে বাংলা, ইংরেজি, চাইনিজের মতই এক ধরনের ভাষা। ছোটবেলায় পড়েছেন না- মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যমই ভাষা! সেটা লিখে হোক, কথা বলে হোক, অথবা ছবি এঁকেই হোক না কেন! ভাব বিনিময় হলেই সেটি একটি ভাষা। তেমনি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো দিয়েও আমরা কম্পিউটারের সাথে ভাব বিনিময় করে থাকি।

আচ্ছা বলেন তো, আপনি কি পাখি-কুকুর-বিড়াল এদের ভাষা বুঝতে পারেন? এমন মানুষ কিন্তু আছে যারা তাদের প্রিয় প্রাণী কি চায়, কি করছে সেটা বুঝতে পারে এবং সে সকল প্রাণীরাও কিন্তু তাদের মালিকের ভাষা বোঝে। কথা বোঝে, ইশারা বোঝে। সব না হোক, কিছু হলেও আন্দাজ করে বোঝে। আর এটা কিন্তু একদিনে এমনি এমনি গড়ে উঠেনি। ভালোলাগা-ভালোবাসায় যখন একে অপরকে আদৃত করেছে, সময় কাটিয়েছে, বোঝার চেষ্টা করেছে- ঠিক তখনই বুঝেছে। আর এরকমটা কিন্তু আমাদের আশেপাশে খুব কম নেই, বরং একটু বেশি-ই, তাই না? আপনি জেনে অবাক হবেন, প্রোগ্রামিং ভাষাটা এই কুকুর-বেড়ালের সাথে ভাব আদান-প্রদান করা থেকেও আরো অনেক বেশি সহজ!

চলুন আর একটু গল্প করা যাক। আপনি কি জানেন, সকল প্রোগ্রামিং ভাষার মাঝে পাইথন (Python) অনেক সহজ একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ! আজকাল কিন্তু অনেকেই এই ল্যাংগুয়েজটি শিখছে। কিন্তু এটাও জেনে রাখুন যে বেশিরভাগ মানুষই তাদের হাতেখড়ি শুরু করে সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে। এই রকম আরো টুকিটাকি বিষয় গুলো যদি আপনি কখনো নাও শুনে থাকেন, চিন্তার কোন কারণ নেই। শুনে তো নিচ্ছেন এখন। আর এগুলো না জানলেও কিছু যায় আসে না। কারণ আপনি পিছিয়ে নন, বরং এখন এমন অনেক কিছুই জানতে যাচ্ছেন যা আপনাকে নতুন এক জগতে পৌঁছে দিবে, আপনাকে অনেক সুন্দর করে ভাবতে শিখাবে।

চলুন এবার একটি ছোট্ট ভিডিও দেখি। প্রোগ্রামিং দিয়ে আমরা কিভাবে দুনিয়া ভেঁজে খাব তার একটি জ্বলন্ত উদাহরন এই ভিডিওটি। শুধুমাত্র প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েই যে কি কি করা সম্ভব, তা ভিডিওটি না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না। কথা না বাড়িয়ে চলুন উপভোগ করা যাক।

কেমন লাগল বলুন তো? এই জিনিসগুলো করা কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। তবে অবশ্যই অনেক কষ্ট করতে হবে। ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। অনুশীলন করতে হবে। জানতে হবে। বুঝতে হবে। কাজকে ভালবাসতে হবে। নিজের সর্বচ্চো চূড়াটি ভেঙ্গে আরও সর্বচ্চো চূড়ায় যেতে হবে। আর এই দায়িত্বটি কিন্তু আমাদেরকেই নিতে হবে বুঝলেন? আপনাকে সহযোগিতা করার জন্যে হাজারো মানুষ রয়েছে এবং থাকবে। আপনার কাজ হল শুধু ‘শুরু করে দেয়া’ এবং ‘লেগে থাকা’

আচ্ছা, অনেক কিছু ভাবা-ভাবি হয়ে গেল এতক্ষণ। এবার আসুন আসল কথায়। সব থেকে মজার বিষয় কি জানেন? বাংলা, ইংরেজি বা আরবিতে যেমন অক্ষরগুলো একদম ভিন্ন ভিন্ন দেখতে, প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোতে কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও এমন নয়- বরং একই রকম দেখতে। কাজ করার জন্যে আদেশটা শুধু একটু কম লিখে বা একটু বেশি লিখে দিলেই অন্য একটি ভাষা হয়ে যায়। আর এজন্যই আপনি চাইলে অনেক গুলো ভাষাই শিখে ফেলতে পারবেন নিমিষে। চাই শুধু একটু সময় দেয়া, আর ভালোবাসা। এক কথায় একটু ‘লেগে থাকা’। কারণ কোডিংয়ের বেসিকটা বুঝতে পারলেই আপনি যে কোন প্রোগ্রামিং ভাষা রপ্ত করতে পারবেন খুব অল্প সময়েই।

প্রোগ্রামিংয়ের দাদা-নানা

আচ্ছা এবার চলুন কিছু ভাষার নাম জানা যাক। বিস্তারিত জানতে হবে না। শুধু নাম শুনে রাখুনঃ C, Java, Python, C++, JavaScript, C#, Swift, Rubi, Dart, PHP, Groovy, Go, Kotlin এরকম আরো অনেক। যেকোনো ভাষা শিখতে হলে তার কোডিং ভালোভাবে বোঝাটা আবশ্যক। অর্থাৎ প্রোগ্রামিং লজিক বা কোডিং সেন্স ভালো থাকলে, চাইলেই আপনি নির্দিষ্ট কোন ভাষা দিয়ে নিজের পছন্দ মত যেকোনো কাজ করতে পারবেন। আর এই প্রোগ্রামিং লজিক বা কোডিং সেন্সটা খুব ভালোভাবে বুঝতে হলে সি প্রোগ্রামিং জানাটা খুবই জরুরী। একটু শুনে অবাক হবেন, সি প্রোগ্রামিং ভাষাটা কিন্তু অনেক পুরনো, তবে এই ভাষা দিয়েই আপনি আপনার বেসিক বেশ ভাল ভাবেই ঝালাই করে নিতে পারবেন।

আচ্ছা আরেকটি বিষয় জানিয়ে দেই- এই যে কত কত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, এইগুলো আমাদের কেন জানা উচিত?

-যদি আমরা মেশিন বা কম্পিউটারের সাথে কথা বলতে চাই, তবে মেশিন বা কম্পিউটার কিন্তু আমাদের বাংলা-ইংরেজির মতো ভাষাগুলো বুঝবে না। কম্পিউটারের ভাষা দিয়েই তাকে আদেশ-নির্দেশ দিতে হবে, তাই না? সেজন্যই আপনার-আমার মতো মানুষেরা কম্পিউটারের এসকল ভাষাগুলো রপ্ত করে থাকে। এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করে থাকে, বিভিন্ন জিনিস বানিয়ে থাকে- যেন কম্পিউটারের সাথে বাকি অন্যান্য মানুষের কাজ করতে কোন সমস্যা না হয়। আর সেজন্যেই আপনাদেরকে প্রোগ্রামার বলা হয়। কারণ, আপনারাই প্রোগ্রামিং শিখে সেটা দিয়ে বিভিন্ন রকম প্রোগ্রাম বানিয়ে রাখেন, যাতে অন্যান্য সাধারণ মানুষরা user friendly ভাবটা বুঝতে পারে, যা তাদের দৈনন্দিন কাজ করতে সুবিধা করে দিবে। এক কথায় কম্পিউটার আর সাধারণ মানুষের যোগাযোগ মাধ্যমটা হলো আপনাদের মত প্রোগ্রামার, অথবা আপনাদের বানানো বিভিন্ন প্রোগ্রাম। যার বাহ্যিক রূপটাকে আমরা বলে থাকি সফটওয়্যার

বর্তমানে কমবেশি যে সকল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে কাজ করা হয় তাদের মধ্যে সবথেকে বুড়ো এবং গম্ভীর প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটি হল ‘সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ’। তাই আমি ‘সি’ কে আদর করে নাম দিয়েছি প্রোগ্রামিং গুরু। আর এই গুরুর কাছে আসলে আপনিও হয়ে উঠবেন কোডিং গুরু। অনেকে আবার একে সকল প্রোগ্রামিং ভাষার জননী ও বলে থাকেন। তবে সি এর আগেও কিন্তু বেশ অনেক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি হয়েছে। সে সকল ভাষার কদর আজকাল আর খুব বেশি দেখা যায় না। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় এখনোও কাজ করা হয় পুরনো ভাষাগুলো দিয়ে।

সর্বপ্রথম 1951 সালে আবিষ্কৃত হয় Regional Assembly Language। এটি ছিল পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষা। যদিও এখনকার প্রচলিত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোর মতো এটা এতটা স্মার্ট আর সুন্দর ছিল না। কারণ এটিকে মুলত মেশিনকোডের উপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছিল। অর্থাৎ প্রত্যেকটি কম্পিউটারের গঠনশৈলী বা আর্কিটেকচারের উপর ভিত্তি করে নিজস্ব Assembly Language ডিজাইন করা হত। এজন্যে একে “symbolic machine code”-ও বলা হয়ে থাকে। এরপর আরো বেশ কিছু ল্যাঙ্গুয়েজ আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রোগ্রামিং ভাষাকে একটু একটু করে উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিজ্ঞানিরা। এভাবে মাত্র কয়েক বছর পরেই 1957 সালে প্রথম widely used high level programming Language নিয়ে হাজির হয় Fortrain প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। তার পরে আরো বেশ কিছু ভাষা আসতে থাকে। এক সময় 1969 সালে B প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর জন্ম হয়। তারপর Pascal (1970) , Forth (1970)। আর এর পরপরই আবিষ্কৃত হয় C programming Language, 1972 সালে। মানে আমাদের ‘৭১ এর যুদ্ধের ঠিক পরের বছরেই।

এরপর আরো অনেক রকম ভাষাই তৈরি করা হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এ পৃথিবীতে এখন বিভিন্ন রকমের ভাষা প্রচলিত আছে। মানুষ এগুলো শিখে এবং ব্যবহার করে মানব সভ্যতাকে নিয়ে যাচ্ছে নতুন এক জগতে। এ সকল বিষয় আমাদের খুব বেশি একটা দরকার লাগবে না, আর আমরা কিন্তু সবাই-ই ইতিহাস একটু কম পছন্দ করি, তাই না? সেজন্যে লিংক দিয়ে দিলাম, আপনাদের ইচ্ছা হলে একটু ঘুরে আসতে পারেন প্রোগ্রামিংয়ের ইতিহাস থেকে।

কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে শুরু করবেন?

সময় নষ্ট না করে আজই যেকোনো একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে বসে যান। আপনি যত বেশিই ঘাটাঘাটি করেন না কেন এতে শুধুমাত্র আপনার সময়টাই অপচয় হবে, কোন কিছু শিখা হবে না। এর চেয়ে ভালো বরং কোনো একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে দিন।

  • প্রোগ্রামিং জগতটা খুব ভালো ভাবে বুঝতে চাইলে কিংবা আপনার খুঁটিটি শক্তপক্ত করে ধরতে চাইলে সি প্রোগ্রামিং (C Programming) শিখার কোন বিকল্প নেই।
  • আপনি যদি স্বল্প সময়ের মাঝে প্রোগ্রামিং জগতে কিছু একটি করতে চান, তবে পাইথন (Python) দিয়ে শুরু করতে পারেন। এটি অত্যন্ত সহজ এবং পাওয়ারফুল একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। Artificial Intelligence এবং Data Science এ পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ একধাপ এগিয়ে আছে।
  • Python এর মতই Java হল আরেকটি অলরাউন্ডার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। Desktop Application থেকে শুরু করে কম-বেশি প্রায় সকল ফিল্ডেই এর ব্যবহার দেখা যায়। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বানানোর ক্ষেত্রে Java প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের ভূমিকা অপরিসীম।
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কথা আসলে JavaScript এর নাম না বললেই নয়। ওয়েব ডেভলপমেন্টে পারদর্শী হতে হলে আপনি HTML এবং CSS শিখার পর JavaScript প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটি শিখতে পারেন। বর্তমানে কমবেশি সকল ক্ষেত্রেই এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজটির চাহিদা ব্যাপক।
  • iOS ডেভেলপমেন্টে আপনার যদি ঝোঁক থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে Swift প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজটি আপনার জন্য। এটি একইসাথে মজার এবং খুবই সহজ একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ।

এছাড়াও আপনি চাইলে অন্য কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েও আপনার যাত্রা শুরু করতে পারেন। তবে অবশ্যই মাথায় রাখবেন, যে ল্যাঙ্গুয়েজটি ধরবেন সেটি যেন আপনি ভালোভাবে শিখেন এবং লেগে থাকেন। একটি ভালোভাবে বুঝে গেলেই আপনি অন্য যেকোন প্রোগ্রামিং ভাষা সহজেই ধরে ফেলতে পারবেন। এবং আমি বলব আপনি যদি সি প্রোগ্রামিং লাঙ্গুয়েজের বেসিকটা ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে পারেন তাহলে আপনার জন্য বাকি যেকোন ভাষাই আরো বেশি সহজ বলে মনে হবে। সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আপনার প্রোগ্রামিং ক্যারিয়ারের জন্য একটি ফাউন্ডেশন স্বরূপ। সুতরাং আমার রিকমেন্ডেশন থাকবে অবশই সি দিয়ে শুরু করুন। আর এরপর আপনি চাইলে খুব দ্রুতই যে কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে নিজেকে শিফট করে নিতে পারবেন- এটি খুবই সহজ। সি আপনাকে সেই ফাউন্ডেশন করে দিবে।

“এত্ত সহজ সি প্রোগ্রামিং! — একটি কোড এবং তার পরিচিতি” -এই ব্লগটি পড়ার মাধ্যমে আপনি সি প্রোগ্রামিং নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এখানে খুবই চমৎকার ভাবে লেখক লাইন বাই লাইন সব কিছু তুলে ধরেছেন। সত্যি বলতে, সি প্রোগ্রামিং নিয়ে আপনার সকল ভয় দূর করে দেয়ার জন্যে এই ব্লগটি যথেষ্ট। তাই আমি আপনাকে রিকমান্ড করব অবশ্যই একবার চোখ বুলিয়ে আসার জন্যে ব্লগটি থেকে।

কোন জিনিস জানার জন্যে বেশি বেশি Google এবং YouTube সার্চ করুন। কারণ, আপনি জানেনও না এখানেই আপনার জন্যে কত কি রয়েছে। আপনার কাজ হল শুধু তা নেয়া। আপনি যত বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করবেন, ততো বেশিই জানতে পারবেন।

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন। এতে বাকিরাও উপকৃত হবে। সবাই মিলে শেখার সুযোগ তৈরি হোক সবার থেকেই 😍

গুরুত্বপূর্ণ লিংক -

--

--