করোনা ভাইরাসঃ কেন এই মুহূর্তেই পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক
মূল লেখাঃ https://medium.com/@tomaspueyo/coronavirus-act-today-or-people-will-die-f4d3d9cd99ca
[গুরুত্বের খাতিরে অনেক দ্রুত অনুবাদ করা হয়েছে, কিছু বানান বা অন্য ভুল থাকতে পারে, সে জন্য ক্ষমাপ্রার্থী]
করোনা ভাইরাস নিয়ে যত কিছু হচ্ছে তাতে এই মূহুর্তে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া খুব কঠিন। আমাদের কি আরো তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত নাকি এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে? সিদ্ধান্ত নিতে হলে সেটা কি?
এখানে আমি আমি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চার্ট, তথ্য এবং বিভিন্ন মডেলের সাহায্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করবোঃ
· আপনার এলাকায় কত সংখ্যক করোনা ভাইরাস সংক্রমন হতে পারে?
· সত্যিই যদি আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে কি ঘটতে পারে?
· আপনার কি করা উচিত?
· কখন?
এই লেখাটি পড়া শেষ করার পর আপনি যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন তা হলোঃ
করোনা ভাইরাস আপনার দিকে ধেয়ে আসছে।
এটা খুব দ্রুতগতিতে আসছেঃ প্রথমে ধীরে ধীরে, অতঃপর হঠাৎ করে বিস্ফোরণের মত।
এটা আর মাত্র কিছুদিনের ব্যাপার। এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ।
যখন এটা ঘটে যাবে আপনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আতংকগ্রস্থ হবে এবং পুরাই ভেঙ্গে পড়বে।
আপনার আশে পাশের মানুষদেরকে হলরুমগুলোতে চিকিৎসা দিতে হতে পারে।
অতিরিক্ত কাজের ভারে স্বাস্থ্য কর্মীরা ভেঙ্গে পড়বে। কেউ কেউ মারা যাবে।
তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন রোগীকে বাচাবে আর কাকে মারা যাওয়ার জন্য ছেড়ে দিবে।
এটা থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হচ্ছে আজকেই সামাজিক দূরুত্ব তৈরী। আগামীকাল নয়, আজকেই।
তার মানে হচ্ছে যত সম্ভব মানুষদের বাসার মধ্যে আবদ্ধ রাখা, এখন থেকেই।
একজন রাজনীতিক, সামাজিক বা ব্যবসায়িক নেতা হিসেবে আপনার সেই সক্ষমতা আছে আর আপনার উচিত দায়িত্বের সাথে এর প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা।
আপনার মনে ভয় আসতে পারেঃ আমি বেশি বেশি করছি কি না? মানুষ কি আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে? তারা কি আমাকে নিয়ে রাগন্বিত হবে? আমাকে কি বোকার মত দেখাবে? অন্যদের পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করাটাই কি বেশি ভালো হবে না? আমি কি সামাজিক এবং দেশীয় অর্থনীতিকে খুব ক্ষতিগ্রস্থ করবো?
কিন্তু ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে, যখন পুরো বিশ্ব আবদ্ধ হয়ে যাবে, যখন কিছুদিনের সামাজিক দূরুত্ব অনেক মানুষের প্রান বাঁচাবে, মানুষ আর আপনাকে সমালোচনা করবে না। তারা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানাবে।
ঠিক আছে, চলুন আলোচনা করা যাক।
১। আপনার এলাকায় কত সংখ্যক করোনা ভাইরাস সংক্রমন হতে পারে?
বিভিন্ন দেশে করনো ভাইরাসে আক্রান্তের হারঃ
যতদিন এটা চীনের মধ্যে ছিলো ততদিন এর আক্রান্তের হার ছিলো ক্রমবর্ধমান। কিন্তু অতঃপর এটা চীনের বাইরে ছড়িয়ে পড়লো এবং এখন এটা মহামারীর মত হয়ে গেছে যেন কেউ আটকাতে পারবেনা।
আজকে পর্যন্ত এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতালি,ইরান এবং দক্ষিন কোরিয়ার জন্যঃ
দক্ষিন কোরিয়া, ইতালি এবং ইরানে এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে যে বিশ্বের বাকী দেশের অবস্থা বোঝাটা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে নিচের চার্টটির ডান দিকে নিচে একটু জুম করুন।
খেয়াল করে দেখুন সেখানে ডজন খানেক দেশ আছে যারা ক্রমবর্ধমান হারে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এসকল দেশের সকলেই পশ্চিমের।
এই রকম আক্রান্তের হার যদি এক সপ্তাহের মত চলতে থাকে তাহলে অবস্থা ঠিক এরকম দাঁড়াবেঃ
আপনি যদি বুঝতে চান যে কি ঘটবে বা কিভাবে এর প্রতিরোধ করা যাবে তাহলে আপনাকে চীন, পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোতে সার্স এবং ইতালিতে কি ঘটেছে সেগুলোর উপর নজর রাখাতে হবে।
চীন
এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ চার্টগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই চার্টে হলুদ বারগুলোর মাধ্যমে হুবেই প্রদেশে সরকারি ভাবে পরীক্ষার সংখ্যা দেখানো হয়েছে।
ধূসর বারগুলোর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের আসল আক্রান্তের সংখ্যা দেখানো হয়েছে। চীনের রোগ নিয়ন্ত্রন এবং প্রতিরোধ বিভাগ এসকল রোগীদের যখন প্রথম উপসর্গ প্রকাশ পায় তখন জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই তথ্য পেয়েছে।
খুব গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ঐ সময় এই বিষয়টা জানা যায় নি। আমরা শুধু পেছনের দিন গুলোতে লক্ষ্য করে বিষয়গুলো বুঝতে পারি। কর্তৃপক্ষ এটা জানে না যে কখন একজন ব্যক্তির প্রথম উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে। তারা তখনই জানতে পারছে যখন কেউ ডাক্তারের নিকট যাচ্ছে বা পরিক্ষা করছে।
এর মানে হচ্ছে কমলা বারগুলোর তথ্যগুলো কর্তৃপক্ষ জানে আর বাস্তব হচ্ছে ধূসর বারগুলোর অবস্থা।
২১ জানুয়ারীতে, নতুন পরীক্ষাকৃত রোগীর (কমলা) সংখ্যার বিস্ফোরন ঘটেছেঃ প্রায় ১০০’র মত নতুন আক্রান্ত। কিন্তু বাস্তবে আসলে ঐদিনে ১৫০০ এর মত নতুন আক্রান্ত ছিলো আর যেটা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছিলো। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটা জানতো না। তারা শুধু জানতো যে হঠাত করে এই নতুন রোগে ১০০ নতুন রোগী আক্রান্ত হয়েছে।
দুই দিন পরে, কর্তৃপক্ষ উহান আবদ্ধ করে দেয়। এই অবস্থায় প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ এর মত। সংখ্যাটা খেয়াল করুন, যখন এক দিনে মাত্র ৪০০ এর মত আক্রান্ত হলো তখনই শহর অবরুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২৫০০ এর মত, কিন্তু তারা জানতো না।
পরে দিন, হুবেই এর আরো ১৫ টি শহর অবরুদ্ধ করা হয়।
আপনি খেয়াল করলে দেখবেন যে, ২৩ জানুয়ারী যখন উহান অবরুদ্ধ করা হয় তখন পর্যন্ত ধূসর গ্রাফটি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছিলো। প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যার বিস্ফোরণ হচ্ছিলো। উহান অবরুদ্ধ করা মাত্রই আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করে। ২৪ তারিখ যখন আরো ১৫ টি শহর অবরুদ্ধ করা হয়, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা (ধূসর বারগুলো) না বেড়ে এক জায়গায় স্থির থাকে। দুই দিন পর, সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত হয় আর তার পর থেকে একেবারে কমতে থাকে।
লক্ষ করুন, কমলা বার বা অফিসিয়াল আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে তখনও বাড়ছিলো। পরবর্তী ১২ দিনে এটা মনে হতে পারে যে আক্রন্তের সংখ্যার বিস্ফোরণ হচ্ছে কিন্তু আসলে বিষয়টা সে রকম না। এটা শুধু এমন যে আক্রান্তরা আরো বেশি উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে এবং ডাক্তাররা সেগুলো সনাক্ত করছে। (নতুন আক্রান্তের সংখ্যার হার তেমন বাড়ছে না)
অফিসিয়াল এবং প্রকৃত আক্রান্ত হওয়ার ধারনাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টা পরবর্তী সময়ের জন্য আপাতত মাথায় রাখুন।
চীনের অন্য অঞ্চলগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। তাই তারা তাৎক্ষনিক এবং কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই হচ্ছে তার ফলাফলঃ
প্রত্যেক সমতল লাইন হচ্ছে চীনের অন্য অঞ্চলগুলোর আক্রান্তের চিত্র। প্রত্যেক অঞ্চলেরই ক্রমবর্ধমান হারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু জানুয়ারীর শেষের দিকের পদক্ষেপের কারণে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহ
দক্ষিন কোরিয়াতে আক্রান্তের হার বিস্ফোরণ ঘটেছে, কিন্তু আপনার কি আশ্চর্য মনে হচ্ছে না যে, কেন জাপান, তাইওয়ান, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড অথবা হংকং তেমন আক্রান্ত হয়নি?
২০০৩ সালে এ সকল দেশগুলো সার্স নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলো এবং এসব দেশ সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েছে। তারা বুঝেছিলো যে এটা কত সংক্রামক এবং প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই তারা এটাকে গুরুত্বের সাথে নেয়ার প্রয়োজনীয়তাটা জানে। তাই তাদের সকল গ্রাফে আক্রান্তের হার শুরুতে বাড়লেও সেটা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়েনি।
এখন পর্যন্ত, আমাদের কাছে করোনা ভাইরাসের বিস্ফোরণের তথ্য আছে আর সেটার বিপদ সম্পর্কে সরকারগুলো সচেতন। বাকী দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটা সম্পূর্ন ভিন্ন গল্প।
আমি তাদের আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে দক্ষিন কোরিয়া সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। এই দেশটি সম্ভবত অন্যদের থেকে কিছুটা ভিন্ন। করোনা ভাইরাস এখানে ৩০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। ৩১ নাম্বার রোগীটি ছিলো এই রোগের গণ-বিস্তারকারী ফলে তার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। কারণ ভাইরাসটি জনগনের মধ্যে উপসর্গ দেখাতে শুরু করে। এর মধ্যেই কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে যে, ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। তারা এখন সেই একটি রোগীর ক্রমবর্ধমান সংক্রমনের মূল্য দিচ্ছে।
ওয়াশিংটন স্টেট
ইতোমধ্যে আপনারা পশ্চিমা দেশগুলোতে সংক্রমনের হার দেখেছেন। মাত্র এক সপ্তাহে কি বাঝে ভাবেই না সংক্রমন বেড়ে গেছে। এখন চিন্তা করুন যদি উহান বা পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোর মত অবরুদ্ধ না করা হয় তাহলে মহামারীতে রূপ নিবে।
চলুন কিছু আক্রান্তের চিত্র দেখি। যেমন ধরুন ওয়াশিংটন স্টেট, সান ফ্রান্সিস্কো বে, প্যারিস এবং মাদ্রিদ।
ওয়াশিংটন স্টেট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের উহান। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। বর্তমানে সেটা ১৪০।
কিন্তু শুরুর দিকে খুব লক্ষনীয় একটা ব্যাপার ঘটেছে। মৃতের হার ছিলো আকাশচুম্বী। একটা পর্যায়ে প্রদেশটিতে ৩ জন আক্রান্তের মধ্যে ১ জন মারা গিয়েছিলো।
আমরা অন্য অঞ্চল থেকে জেনেছি যে, করোনা ভাইরাসে মৃতের হার ০.৫% থেকে ৫% (এর পর আরো বেশি হয়েছে)। তাহলে এখানে কিভাবে সেটা ৩৩% হতে পারে?
তার মানে বোঝা যাচ্ছে যে, ভাইরাসটি এক সপ্তাহধরে বিস্তার লাভ করছিলো এবং সেটা সনাক্ত করা যায়নি। বিষয়টা এমন না যে মাত্র ৩ জন আক্রান্ত বরং কর্তৃপক্ষ মাত্র ৩ জনকে সনাক্ত করতে পেরেছিলো এবং তাদের মধ্যে একজন মারা গিয়েছিলো মারাত্মক অবস্থার কারণে।
এই বিষয়টা চীনের কমলা এবং ধূসর বারের মত ঘটনা। এখানে তারা শুধুমাত্র কমলা বার সম্বন্ধে অবগত (অফিসিয়াল) এবং সেটার সংখ্যা তেমন বেশি না, মাত্র ৩। কিন্তু বাস্তবে, আরো শত শত, সম্ভবত হাজার হাজার প্রকৃত আক্রান্ত বিদ্যমান।
বিষয় হচ্ছে, আপনি শুধু অফিসিয়াল আক্রান্তের সংখ্যাটাই জানতে পারছেন, প্রকৃত সংখ্যাটা না। কিন্তু আপনাকে প্রকৃত সংখ্যাটা জানা প্রয়োজন। আপনি কিভাবে প্রকৃত সংখ্যাটা পরিমাপ করবেন? কয়েকটি পথ আছে আর আমার নিকট তার মডেল আছে, যেন আপনিও এটা নিয়ে চেষ্টা করতে পারেন। (সরাসরি লিঙ্ক)
প্রথমত, মৃতের সংখ্যার মাধ্যমে। যদি আপনার এলাকায় কেউ মারা যায় আপনি সেটা ব্যবহার করে প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারন করতে পারবেন। আমরা এটা জানি যে, একজন ব্যক্তি আক্রন্ত হওয়া থেকে শুরু করে মৃত পর্যন্ত যেতে আনুমানিক ১৭.৩ দিন মত লাগতে পারে। তার মানে কেউ যদি ২৯/২ তারিখে ওয়াশিংটন স্টেটে মারা যায় তাহলে সম্ভবত সে ১২/২ তারিখে আক্রান্ত হয়েছিলো।
মনে করেন, আপনি মৃতের হার জানেন। এই ক্ষেত্রে আমি ১% ধরবো(আমরা এটা নিয়ে পরে আলোচন করবো)। তারমানে দাঁড়ায়, ১২/২ তারিখের দিকে ঐ এলাকায় ১০০ এর মত আক্রান্ত ছিলো (তার মধ্যে মাত্র একজন ১৭.৩ দিনের মাথায় মৃত্যু বরণ করেছে)
এখন, করোনা ভাইরাসের দ্বিগুন হওয়ার গড় টাইম ধরেন। এটা হচ্ছে ৬.২। তার মানে দাঁড়ায়, যে ১৭ দিনে ঐ ব্যক্তিটি মৃত্যু বরণ করে, আক্রান্তের সংখ্যাকে গুন করতে হবে ~৮ দিয়ে (=২^(১৭/৬))। তার মানে আপনি যদি সকল আক্রান্তকে পরীক্ষা না করেন তাহলে একটি মৃত্যু মানে আজকে অন্তত ৮০০ এর মত প্রকৃত আক্রান্ত।
ওয়াশিংটন স্টেটে আজকে পর্যন্ত ২২টি মৃত্যু হয়েছে। উপরোক্ত হিসাব অনুযায়ী, আপনি ~১৬০০০ প্রকৃত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত পাবেন। ইতালি এবং ইরানের অফিসিয়াল আক্রান্তের সংখ্যার ঠিক কাছাকাছি।
আপনি যদি আরো গভীর ভাবে দেখেন, আমরা বুঝতে পারি যে মৃতের সংখ্যার মধ্যে ১৯ জন যা একটি নির্দিষ্ট এলাকা/অঞ্চল থেকে। তাই বোঝা যায় যে, ভাইরাসটি খুব বেশি এলাকাজুড়ে বিস্তার লাভ করে নি। তাই, আমরা যদি ঐ ১৯ জন কে ১টি মৃত হিসেবে গনণা করি, তাহলে ঐ স্টেটে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪। এটা দিয়েও যদি মডেলটিকে ব্যবহার করা যায় তাহলেও আমরা ~৩০০ এর মত আক্রান্ত পাই ঐ দিনের জন্য।
Trevor Bedford এর পদ্ধতিটি সরাসরি ভাইরাস এবং তাদের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে যার মাধ্যমে বর্তমান আক্রান্তের ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাবে।
শেষ কথা হচ্ছে, ওয়াশিংটন স্টেটে বর্তমানে আনুমানিক ১১০০ এর মত আক্রান্ত রয়েছে।
এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কোনটাই ১০০% ঠিক নাও হতে পারে। কিন্তু সবগুলোই একই বিষয়কে নির্দেশ করে যে, আমরা প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যাটা জানি না, কিন্তু অফিসিয়াল সংখ্যা থেকে তা অনেক বেশি। আর এটা শত এর ঘরে না, বরং হাজার বা তার ও বেশি।
সান ফ্রান্সিস্কো বে
৮/৩ পর্যন্ত, বে অঞ্চলে কোন মৃত্যু ছিলো না। তাই এই অঞ্চলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা কত সেটা জানা খুব কঠিন ছিলো। অফিসিয়ালি, সেখানে ৮৬ জন আক্রান্ত ছিলো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পরিমান ভাইরাস টেস্টিং এর বাইরে থাকছে পর্যাপ্ত পরিমান টেস্ট কিটের অভাবের কারণে। দেশটি নিজেদের টেস্ট কিট বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে কাজে আসছে না।
নিচের চিত্রে ৩ মার্চে বিভিন্ন দেশে ভাইরাস পরীক্ষার তথ্য দেয়া হলোঃ
তুরুস্ক (করোনা ভাইরাসের কোন আক্রান্ত নেই) যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ১০ গুন অধিবাসীর পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এখনো অবস্থার তেমন কোন উন্নতি নেই।
এখানে আপনি অফিসিয়াল আক্রান্তের একটি অংশকে প্রকৃত আক্রান্ত হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কিভাবে সিদ্ধান্ত নিবেন কোন অংশ ব্যবহার করবেন? বে এলাকার জন্য, যারা ভ্রমন করেছিল তাদের সবাইকে পরীক্ষা করেছিলো অথবা যারা ট্রাভেলারদের সংস্পর্শে গিয়েছিলো। এর মানে হচ্ছে তারা ট্রাভেল সম্পর্কিত আক্রান্ত বিষয়ে জানতো। কিন্তু তারা সামাজিক বিস্তারে আক্রান্তদের নিয়ে জানতো না। সামাজিক বিস্তার এবং ট্রাভেলের মাধ্যমে বিস্তারের ধারণা থাকলে আপনি জানতে পারবেন প্রকৃত আক্রান্ত সেখান কেমন ছিলো।
আমি দক্ষিন কোরিয়ার এই অনুপাত পর্যবেক্ষন করেছি, যেখানে বেশ ভালো কিছু তথ্য পেয়েছি। এই মূহুর্তে তাদের ৮৬ জন আক্রান্ত রয়েছে। এর মধ্যে সামাজিকভাবে বিস্তারের হার হচ্ছে ৮৬%।
এই তথ্য থেকে আপনি প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা হিসাব করতে পারেন। যদি বে এলাকাতে আজকে ৮৬ টি আক্রান্ত থাকে তাহলে প্রকৃত সংখ্যা আনুমানিক ৬০০ এর মত।
ফ্রান্স এবং প্যারিস
ফ্রান্সে আজকে ১৪০০ আক্রান্ত এবং ৩০ জন মৃত বলে প্রকাশ করেছে। আমাদের ২ টি মডেল অনুযায়ী, আপনি হিসাব করে বের করতে পারেন যে, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা হতেপারে ২৪,০০০ থেকে ১৪০,০০০ এর মধ্যে।
ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আজকে আনুমানিক ২৪,০০০ থেকে ১৪০,০০০ এর মধ্যে
আমি আবারো বলছি, ফ্রান্সে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা অফিসিয়াল আক্রান্তের চেয়ে ১-২ গুন এর মধ্যে হবে। আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না? আসুন আবারো উহানের চিত্র টা দেখি।
আপনি যদি ২২/১ পর্যন্ত কমলা বার গুলো দেখেন, তাহলে দেখবেন যে ৪৪৪ জন আক্রান্ত। এখন সব ধূসর বার গুলো যোগ করুন। দেখবেন মোট আনুমানিক ১২,০০০ আক্রান্ত পাবেন। উহান মনে করেছিলো যে তাদের ৪৪৪ জন আক্রান্ত আছে কিন্তু প্রকৃত আক্রান্ত আসলে ২৭ গুন। যদি ফ্রান্স মনে করে এর ১৪০০ মত আক্রান্ত আছে তাহলে এর প্রকৃত সংখ্যা হতে পারে হাজার হাজার।
একই হিসাব প্যারিস এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শহরের ভেতরে যে ৩০ জনের মত আক্রান্ত পাওয়া গেছে, প্রকৃত সংখ্যা হতে পারে ১০০ এর বেশি বা হাজার। ৩০০ জন আক্রান্ত ইল-দি-ফ্রান্স অঞ্চলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা হাজার হাজার হয়ে গেছে হয়তো।
স্পেন এবং মাদ্রিদ
স্পেন ফ্রান্সের মতই আক্রান্ত। (১২০০ vs ১৪০০ আক্রান্ত এবং উভয়ের ৩০ জন মৃত)। তার মানে একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে তাই স্পেন সম্ভবত ২০ হাজারের মত প্রকৃত আক্রান্ত হবে।
Comunidad de Madrid অঞ্চলে ৬০০ অফিসিয়ালি আক্রান্ত এবং ১৭ জন মৃত কিন্তু প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা হতে পারে ১০,০০০ থেকে ৬০,০০০ এর মধ্যে।
আপনি যদি এই তথ্য দেখেন এবং নিজেকে বলেন, “অসম্ভব, এটা সত্য হতে পারে না” তাহলে চিন্তা করেন এই সংখ্যক আক্রান্ত নিয়ে উহান অবরুদ্ধ অবস্থায় চলে গিয়েছিলো।
এখন আমরা যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স, ইরান, জার্মানি, জাপান, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক,সুইডেন অথবা সুইজারল্যান্ড যে সংখ্যক আক্রান্ত দেখছি,উহানে এই সংখ্যক আক্রান্ত নিয়েই অবরুদ্ধ অবস্থা চলে গিয়েছিলো
আবার আপনি যদি বলেন যে, “ঠিক আছে, হুবেই শুধুমাত্র একটি অঞ্চল” আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে, সেখানে ৬০ মিলিয়ন মানুষ বাস করে যা স্পেন থেক বেশি এবং ফ্রান্সের সমান।
২। সত্যিই যদি আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে কি ঘটতে পারে?
করোনা ভাইরাস এসে গেছে। এটা লুকায়িত অবস্থায় আছে এবং ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে।
যদি এটা আমাদের দেশে আঘাত করে তাহলে কি ঘটবে? এটা ধারণ করা খুব সহজ কারণ অন্যান্য স্থানে আক্রান্তের পর কি অবস্থা দাড়িয়েছে সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে হুবেই এবং ইতালি।
মৃত্যুর হার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩.৪% (বর্তমানে ৮%) মৃত্যুর হার উল্লেখ করেছে। এই সংখ্যাটি প্রকৃত অবস্থা ব্যাখ্যা করে না। আমি বিষয়টি বুঝিয়ে বলছি।
এটা সত্যিকার অর্থে দেশ এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের উপর নির্ভর করে। যেমন ধরেন দক্ষিন কোরিয়াতে ০.৬% এবং ইরানে ৪.৪% এর তুলনা। তাহলে বিষয়টি কি? বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা একটি কৌশল অবলম্বন করতে পারি।
যে দুই উপায়ে আপনি মৃত্যুর হার হিসাব করতে পারেন সেগুলো হচ্ছে মৃত্যু সংখ্যা/মোট আক্রান্ত এবং মৃত্যু সংখ্যা/সমাপ্ত আক্রান্ত সংখ্যা। প্রথম হিসাবটা এক প্রকার অবমূল্যায়ন, কারণ বহু আক্রান্ত শেষ পর্যন্ত মারা যেতে পারে। দ্বিতীয় হিসাবটা অতিমূল্যায়ন হতে পারে কারণ মারা যাওয়া আরোগ্য লাভের থেকে অনেক দ্রুত গতিতে হয়েছে।
আমি উভয় হিসাবকে সময়ের পরিপেক্ষিতে কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেটার উপর নজর দিয়েছি। উভয় সংখ্যা ই একই ফলাফল দিবে যখন সমস্ত আক্রান্ত সংখ্যার পরিসমাপ্তি হবে। তাই আপনি যদি অতীত রেকোর্ড কে ভবিষ্যতের সাথে তুলনা করেন তাহলে আপনি সর্বশেষের অবস্থায় মৃতের সংখ্যা নির্ধারন করতে পারবেন।
এটাই আপনি তথ্যের মধ্যে দেখতে পাবেন। চীনের মৃত্যুর হার এখন ৩.৬% এবং ৬.১% এর মধ্যে। আপনি যদি ভবিষ্যতে এটাকে প্রজেক্ট করেন তাহলে মনে হচ্ছে এটা ৩.৮ — ৪% এর মধ্যে থাকবে। এটা বর্তমান অনুমানের তুলনায় দ্বিগুন এবং Flu থেকে ৩০ গুন খারাপের দিকে।
যদিও এটা প্রস্তুত করা হয়েছে দুইটি ভিন্ন বাস্তবতার পরিপেক্ষিতে: হুবেই এবং চীনের বাকি অংশ।
হুবেই এর মৃতের হার সম্ভবত ৪.৮% এর মত হতে পারে। এর মধ্যে চীনের বাকি অংশের হার হবে সম্ভবত ~০.৯%।
আমি ইরান, ইতালি এবং দক্ষিন কোরিয়ার সংখ্যাগুলোও চিত্রায়িত করেছি কারণ এই দেশ সমূহেই যথেষ্ট তথ্য আছে বিষয়টি চিত্রায়িত করার জন্য।
ইরান এবং ইতালির মৃতের হার/মোট আক্রান্ত এর ৩%-৪% এর মধ্যে আপতিত হচ্ছে। আমার ধারণা এই সংখ্যাটি আমাদের ঐ ফিগারের আশেপাশেই মধ্যেই শেষ হবে।
দক্ষিণ কোরিয়া হচ্ছে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, কারণ এই দুইটি সংখ্যা এখানে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। মৃত/মোট আক্রান্ত হচ্ছে মাত্র ০.৬ % কিন্তু মৃত/পরিসমাপ্তি সংখ্যা অনেক বড় ৪৮%। আমার মনে হচ্ছে সেখানে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় ঘটছে। প্রথমত, তারা সকলকেই পরীক্ষা করছে (অনেক আক্রান্তের তুলনায় মৃত অনেক কম ) এবং আক্রান্ত সংখ্যা দীর্ঘ সময় ধরে থাকছে (তাই তারা রোগীর মৃতের সাথে সাথে দ্রুত আক্রান্তের পরিসমাপ্তি টানছে)। দ্বিতীয়ত, তাদের হাসপাতালগুলোর অনেক সংখ্যক বেড রয়েছে। তাদের আরো অন্য কোন কারণ থাকতে পারে যা আমরা জানি না। যে বিষয়টি সম্পর্কিত সেটা হচ্ছে মৃত/আক্রান্ত ০.৫% এর আশেপাশেই স্থির থাকছে। মনে হচ্ছে এটা ঐ অবস্থায়ই থাকবে।
সর্বশেষ প্রাসঙ্গিক উদাহরন হচ্ছে Diamond Princess cruise। তাদের মোট আক্রান্ত হচ্ছে ৭০৬ জন, ৬ জন মৃত এবং ১০০ সুস্থ হয়েছে। মৃতের হার হবে ১% থেকে ৬.৫%।
আরো উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক দেশে বয়সের বিন্যাসও ভূমিকা পালন করেছে। যেহেতু বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে মৃতের হার অনেক বেশি তাই বেশি বয়সের দেশ জাপান নবীন বয়সের দেশ নাইজেরিয়ার থেকে বেশি আক্রান্ত হবে। তাছাড়া আবওহাওয়া ভূমিকা পালন করতে পারে, বিশেষ করে আদ্রতা এবং তাপমাত্রা। কিন্তু এটা এখন পরিষ্কার না যে এগুলো কিভাবে বিস্তার এবং মৃতের হারকে প্রভাবিত করতে পারে।
এই অবস্থায় আপনি উপসংহার টানতে পারেন যে,
* এগুলো বাদে, যেসব দেশ প্রস্তুত তাদের মৃতের হার হবে ০.৫% (দক্ষিন কোরিয়া) থেকে ০.৯ (চীনের বাকী অংশ)
* যে সকল দেশ বেশি এলোমেলো থাকবে তাদের মৃতের হার হবে ~৩% থেকে ৫%
অন্যভাবে চিন্তা করলে, যে সকল দেশ দ্রুত পদক্ষেপ নিবে তারা মৃতের হার ১০ ভাগে নামিয়ে আনতে পারবে। শুধুমার মৃতের সংখ্যাই যে কমবে তা নয় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার ফলে আক্রান্তের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দেশগুলো মৃতের হার ১০ ভাগে নামিয়ে আনতে পারে
তাহলে একটি দেশ কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে?
২০% এর মত আক্রান্ত রোগীর হস্পিটালাইজড হওয়া প্রয়োজন, ৫% আক্রান্তের প্রয়োজন Intensive Care Unit (ICU), এবং ২.৫% এর মত রোগীর নিবিড় সাহায্য দরকার যেমন ventilators অথবা ECMO (Extra-corporeal oxygenation)
সমস্যা হচ্ছে ventilators অথবা ECMO বানানো অথবা পরিবহন সহজ নয়। কয়েক বছর পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ২৫০ টির মত ECMO যন্ত্র ছিলো। উদাহরণস্বরূপ-
যদি আপনার হঠাৎ করে ১০০,০০০ মত মানুষ আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে বহু মানুষ পরীক্ষার জন্য যাবে। ২০,০০০ এর মত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, ৫,০০০ এর মত ICU প্রয়োজন হবে এবং ১,০০০ জনের জন্য এমন যন্ত্র লাগবে যা এখন পর্যাপ্ত নেই। আর এটা মাত্র ১০০,০০০ জনের হিসেবে।
এই হিসেব টা মাস্কের মত জিনিস বাদেই। যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রায়োজনের তুলনায় ১% মাস্ক রয়েছে। যদি এক সাথেই প্রচুর পরিমান আক্রান্ত হতে থাকে তাহলে যে মাস্ক আছে তা ২ সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, হংকং বা সিঙ্গাপুর এবং চীনের হুবেই প্রদেশের বাইরে অন্যান্য অঞ্চলকে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং রোগীর যে চিকিৎসা দরকার সেটা দেয়া হয়েছে।
কিন্তু অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো বরং হুবেই এবং ইতালির পথ অনুসরন করছে। আসলে সেখানে কি ঘটছে?
হুবেই এবং ইতালি তে শুরুর দিকে যা ঘটেছিলো সেটা মোটামুটি একই রকম। হুবেই ১০ দিনে ২ টি হাসপাতাল নির্মান করেছিল, কিন্তু তারপরও তারা পুরোপুরি ভাইরাসে নিমজ্জিত/হতবিহবল হয়ে গিয়েছিলো।
স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘন্টার পর ঘন্টা একটি মাত্র নিরাপত্তামূলক পোষাকে পার করেছেন, কারণ তাদের পর্যপ্ত সংখক নিরাপত্তা সামগ্রী ছিলো না। যার ফলে তারা আক্রান্ত ছেড়ে যেতে পারেন নি। যখন তারা বিরতি নিচ্ছিলেন তারা ভঙ্গুর, পানিশুন্যতা এবং ক্লান্ত-অবসন্ন ছিলো। শিডিউল নামে কোন কিছু ছিলো না। অনেককে অবসর থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো প্রয়োজনের খাতিরে। এমন অনেক আছে যাদের নার্সিং নিয়ে কোন ধারণা ছিলো না তাদেরকে রাতারাতি প্রশিক্ষন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সকলেই সর্বদা কাজের মধ্যে ছিলো।
বিষয়টা এমন যে, যতক্ষন না তারা অসুস্থ হয়ে যায় ততক্ষন কাজ করে গেছেন। এরকম ঘটনা অনেক ঘটেছে, কারণ তারা ভাইরাসের খুব কাছাকাছি নিবিড়ভাবে অবস্থা করছিলো আর তাদের যথেষ্ট নিরাপত্তা সামগ্রী ছিল না। আর এই অবস্থা যখন ঘটেছে তাদেরকে ১৪ দিনের কোয়েরেন্টাইনে চলে যেতে হয়েছে। এই সময়টা তে তারা কোন সাহাযা করতে পারে নি। তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থা হচ্ছে ১৪ দিন নষ্ট হওয়া আরে সব চেয়ে খারাপ হচ্ছে তাদের মারা যাওয়া।
ICU তে সবচেয়ে খারাপ যে বিষয়টি সেটা হচ্ছে যখন রোগীদের ventilators অথবা ECMO গুলো শেয়ার করতে হয়। প্রকৃত পক্ষে এই বিষয়গুলো শেয়ার করা অসম্ভব। তাই স্বাস্থ্য কর্মীদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, কোন রোগী এগুলো ব্যবহার করবে। অন্য কথায় এর মানে হচ্ছে কে বাঁচবে আর কে মারা যাবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া।
“কিছুদিন পর, আমাদেরকে বাছাই করতে হবে […….] সবাইকে ইনকিউবেট করা সম্ভব নয়। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বয়স এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা দেখে”- Christian Salaroli, Italian MD
এই সমস্ত বিষয়গুলোই একটা সিস্টেমকে মৃতের হার ~০.৫ % এর পরিবর্তে ~৪% এ নিয়ে আসে। আপনি যদি আপনার শহর বা দেশকে এই ৪% এর অংশ করতে চান তাহলে এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকেন।
৩। আপনার কি করা উচিত?
এটি এখন মহামারী আকার ধারন করেছে। এখন হুট করে এটি নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে আমরা যা করতে পারি তা হলো এর প্রভাব হ্রাস করা। কিছু দেশ এই ব্যাপারে অনুকরণীয় হয়েছে ভূমিকা রেখেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সফল হয়েছে তাইওয়ান, যা চীনের সাথে অত্যন্ত নিকটবর্তী এবং ওতোপ্রতভাবে সংযুক্ত কিন্তু এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০টিরও কম! সাম্প্রতিক এক গবেষণাপত্রে প্রাথমিকভাবে নেওয়া সমস্ত পদক্ষেপের বিবরণ তারা দিয়েছে, যা তারা করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করেছিল।
আমরা যত বেশি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রন করবো, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভালভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারবে , ফলে মৃত্যুর হার কম হবে। এভাবে আমরা এমন একটা অবস্থায় পোঁছাব যখন টিকা আবিস্কার হবে এবং যারা সংক্রামিত হয়নি এমন জনসংখ্যা বেশি হবে। ফলে তাদের আগে থেকেই টিকা দেওয়া হবে এবং এই রোগের ঝুঁকি কমে যাবে।
বাইরের মানুষের সাথে দূরুত্ব রাখা
আমরা খুব সাধারণ একটা কাজ করতে পারি যা কার্যকরঃ সামাজিক দুরত্ত বজায় রাখা।
আমরা যদি উহান এর তথ্য পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো, যখনই সেখানকার জনগণকে আলাদা করে রাখা হল, সংক্রমণের হার কমে গেলো। এর কারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ কমে গেল এবং সাথে সাথে সংক্রমণও। বর্তমান বৈজ্ঞানিক তথ্য মতে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ সুস্থ মানুষের কারো ২ মিটার বা ৬ ফিট এর মধ্যে অন্য কেউ কাসি বা হাছি দিলে বা এর চেয়ে বেশি দুরত্বে থাকলে এই রোগ ছড়ায় না।
সংক্রমনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি স্পর্শের মাধ্যমে। এই ভাইরাস ৯ দিন পর্যন্ত খোলা স্থানে সক্রিয় থাকতে পারে। ফলে ভাইরাস যুক্ত দরজার নব, টেবিল, সিরামিকের জিনিস, ধাতুর তৈরি বস্তু, বাসে দারানোর জন্য ধরার রড, সিট ইত্যাদি হাত দিয়ে ছুঁলে সংক্রমনের সম্ভবনা অনেক বেশি।
এই ভাইরাস এর হাত থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায় হল মানুষের সাথে দুরত্ব বজায় রাখা, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া, যত বেশি সম্ভব বাসায় অবস্থান করা।
এই পদ্ধতির সফলতা আগেও দাখা গেছে। ১৯১৮ সালে Flue মহামারি আকার ধারন করে।
ফিলাডেলফিয়া তাতক্ষনিক ব্যবস্থা না নেয়াতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করে, অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। সেই জায়গায় Denver প্রশাসন প্রথমে পদক্ষেপ গ্রহন করে পরে আবার ঢিলা দেয়। ফলে পরবর্তীতে মৃত্যুর হার প্রথমবারের থেকে অনেক বেশি বেড়ে যায়।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়:
উপরের চার্টটিতে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১৮ সালে Flue’র জন্য কীভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তার ফলে কিভাবে মৃত্যুর হারে পরিবর্তন আসে। উদাহরণস্বরূপ, সেন্ট লুইসের মতো শহর পিটসবার্গের ৬ দিন আগে ব্যবস্থা গ্রহন করে। ফলে মহামারিতে এখানকার নাগরিকদের মৃত্যু অর্ধেকেরও কম পরিলক্ষিত হয়। গড়ে, ২০ দিন আগে ব্যবস্থা গ্রহণ করে মৃত্যুর হারকে অর্ধেক করে রাখা সম্ভব হয়েছিল।
ইতালি অবশেষে এটি বুঝতে পারে। তারা প্রথমে রবিবার লম্বার্ডি শহরকে অবরুদ্ধ করেছিল এবং একদিন পরে, সোমবার, তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্তে তারা পুরো দেশটিকে অবরুদ্ধ করে।
আশা করা যায়, আমরা আগামী দিনগুলিতে এর ফলাফল দেখতে পাব। তবে এর ফলাফল পেতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। চীনের উহান এর বেলাতে দেখা গেছে, অবরধ ঘোষণার ১২ দিন পর থেকে সংক্রমনের হার কমতে শুরু করে।
রাজনীতিবিদরা কীভাবে দূরত্বের বজায় রাখার ব্যাপারে অবদান রাখতে পারে?
রাজনীতিবিদরা এই মূহুর্তে যে কিছু একটা করতে হবে সেটা নিয়ে সন্দিহান নয়, বরং তারা সঠিক পদক্ষেপ কি হতে পারে সেটা নিয়ে চিন্তিত।
মহামারী নিয়ন্ত্রণের কয়েক ধরণের অবস্থা রয়েছে। শুরুতে এটা নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ধারণা এবং পরবর্তীতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে নির্মূল করা। কিন্তু আজকে এই মূহুর্তে দুইটি পন্থা অবলম্বনের সময় পার হয়ে গেছে। এখনকার মত আক্রান্তের পর রাজনীতিবিদদের হাতে শুধুমাত্র দুইটি পন্থা বাকি থাকে, আর সেগুলো হলো অবরুদ্ধ করা এবং আক্রান্তের হার প্রশমন করা।
অবরোধ
অবরোধের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, সকল আক্রান্তকে চিহ্নিত করা, তাদেরকে নিয়ন্ত্রনে এনে অবরুদ্ধ করা। এই জিনিসটাই সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান বা তাইওয়ান খুব ভালো ভাবে করেছে। তারা খুব দ্রুত বাইরে থেকে মানুষ প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করেছে, অসুস্থদের সনাক্ত করেছে এবং তাতক্ষনিকভাবে তাদের অবরুদ্ধ করেছে। সাথে সাথে তারা তাদের স্বাস্থ্য কর্মীদের যথেষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে, তাদের সাথে যারা সম্পর্কযুক্ত তাদেরকে বাছাই করে কোয়ারেন্টাইন করেছে। এই পদ্ধতি তখনই ভালো কাজ করবে যখন আপনি শুরু থেকেই প্রস্তুতি নিবেন আর এর জন্য আপনার অর্থনীতিকে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।
আমি ইতোমধ্যেই তাইওয়ানের পদ্ধতি আপনাদেরকে প্রচার করেছি। কিন্তু চীনও খুব ভালো পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। যখন তারা অবরুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় তখন ভাইরাসটির বিস্তার ছিলো আকাশচুম্বী। উদাহরণস্বরূপ, তাদের ১৮০০ টি ৫জনের টিম ছিলো যারা প্রত্যেক আক্রান্ত রোগীকে, ঐ রোগীদের সাথে যাদের সংস্পর্শ ছিলো তাদের মনিটর করতো এবং তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে অবরুদ্ধ করতো। এভাবেই তারা তাদের বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়।
পশ্চিমা দেশগুলো এই পদ্ধতি অবলম্বন করে নি। আর এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করার ঘোষনা দিয়েছে যেটা এক প্রকার অবরুদ্ধ করার মত কিন্তু এই ঘোষনা এসেছে যখন তাদের আক্রান্তের সংখ্যা হুবেই প্রদেশ যখন অবরুদ্ধ করা হয় তখনকার তাদের আক্রান্তের চেয়ে ৩ গুন। আরে এই আক্রন্তের সংখ্যা এখন ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। আমরা কিভাবে বুঝবো যে এটা যথেষ্ট? আমরা উহানের ভ্রমন নিষেধাজ্ঞার উপর পর্যবেক্ষন করলেই বুঝতে পারবো।
এই চার্টটির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, উহানের ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা মহামারীকে বেশ ভালোভাবে আটকে দিয়েছে। বৃত্তের সাইজগুলো প্রতিদিনের আক্রান্তের সংখ্যা নির্দেশ করে। প্রথম লাইনটি যখন কোন পদক্ষেপ নেয়া হইনি সেই অবস্থাকে নির্দেশ করে। যখন ৪০% এবং ৯০% ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় তখন যে অবস্থা দাঁড়ায় সেটা বাকী দুই লাইনে বোঝানো হয়েছে। মহামারী বিশেষজ্ঞদের দ্বারা এই মডেলটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
আপনি যদি খুব বেশি পার্থক্য দেখতে না পান তাহলেও সমস্যা নাই। কারণ মহামারীর বিকাশে এই পার্থক্য স্বাভাবিকভাবে বোঝা খুব কঠিন।
গবেষকরা অনুমান করেন যে, সব কিছুর উপর, উহানের ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা চীনে ভাইরাসের বিস্তার ৩-৫ দিনে সীমাবদ্ধ করে।
তাহলে সংক্রমন কমানোর উপর গবেষকদের মতামত কি?
প্রথম অংশটি আপনি পূর্বে যা দেখেছিলেন সেটার মতই। অন্য দুইটি অংশে আপনি দেখতে পাবেন যে সংক্রমন কমতে শুরু করেছে। যদি সামাজিক দূরুত্বের মাধ্যমে সংক্রমনের হার ২৫% কমে যায় তাহলে গ্রাফে সমতল হতে শুরু করে আর যদি ৫০% কমানো যায় তাহলে মহামারী একেবারেই দেখা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ইউরোপে ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা খুব ভালো সিদ্ধান্ত। তবে এটাই সামগ্রিকভাবে আমাদের জন্য যথেষ্ট না, এটা হয়তো আপনাকে কিছুটা সময় দিবে কিন্তু এই ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা পর যেটা দরকার সেটা হচ্ছে নির্মূল করার পরিকল্পনা। কারণ এটা এখন হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুত গতিতে।
নির্মূল
নির্মূলের জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার সেটা হচ্ছে সামাজিক দূরুত্ব। বিস্তার রোধে সকলকে আড্ডাবাজি বন্ধ করে দেয়া উচিত। তাছাড়া প্রতিষ্টানসমূহ, দোকান, গনপরিবহন, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া দরকার। আপনার সামাজিক দূরুত্ব যত কম হবে পরিস্থিতি তত খারাপ হবে। আপনি যত শক্তিশালী পদক্ষেপ নিবেন তত দ্রুত আপনি আক্রান্তদের সনাক্ত করতে পারবেন এবং উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে কম মানুষ আক্রান্ত হবে।
উহানের এটাই করার কথা ছিলো। এই বিষয়টাই ইতালিকে বাধ্য হয়ে গ্রহন করতে হয়েছে। কারণ যখন ভাইরাস প্রচন্ড গতিতে বেড়ে যায় তখন এর বিস্তার বন্ধ করতে একমাত্র পন্থা হচ্ছে অবরোধ আরোপ করা। হাজার হাজার অফিসিয়ালি আক্রান্তের সংখ্যা এবং আরো বেশি প্রকৃত আক্রান্তের দেশ ইরান, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড বা যুক্তরাষ্ট্রকে এটাই করতে হবে।
কিছু কিছু প্রতিষ্টান বাসা থেকে কাজ করার ব্যবস্থা করেছে যা আসলেই চমৎকার।
কিছু গণ জমায়েত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কিছু কিছু সংক্রমিত এলাকা নিজেদেরকে কোয়ারেন্টাইন করেছে।
এই সমস্ত পন্থা ভাইরাসে সংক্রমনকে ধীর করে দিবে। তারা আক্রান্তের হার কমিয়ে দিবে ২.৫ থেকে ২.২ বা সম্ভবত ২। কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি ১ এর নিচে আসবে না বরং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মহামারী বিস্তার হয়েই যাবে।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই সংক্রমনের হার কমানোর জন্য কি কি কাজ আমাদের করতে হবে? নিজের পদক্ষেপ গুলো লক্ষ্য করি যেগুলো ইতালি আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেঃ
১। খুব জরুরি পারিবারিক বা কর্মক্ষেত্রের কাজ ব্যতিত অবরুদ্ধ এলাকা থেকে কেউ বের হতে পারবে না, কেউ সেখানে ঢুকতেও পারবে না।
২। এলাকার মধ্যেও নিজেদের চলাফেরা সীমাবদ্ধ করে ফেলা যদি না একেবারেই বাদ দেয়া না যায়।
৩। যে সকল মানুষ শ্বাসনালীর রোগে বা জ্বরে আক্রান্ত তাদেরকে নিজেদের বাসায় থাকার ব্যাপারে কঠোরভাবে বলা।
৪। স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাভাবিক কাজের সময় বাতিল
৫। সমস্ত শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্টান (স্কুল, কলেজ, …..), জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক কেন্দ্র, সুইমিং পুল, থিয়েটার ইত্যাদি বন্ধ ঘোষনা।
৬। বার এবং খারাবের হোটেল গুলোর খোলা রাখার সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া (সকাল ৬টা থেকে রাত ৬টা)। সাথে সাথে এসব জায়গায় মানুষের সাথে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরুত্ব বজায় রাখা।
৭। সকল বানিজ্যক কাজ কর্মে সকলকে কমপক্ষে এক মিটার দূরুত্ব বজাইয় রাখা। যারা এই দূরুত্ব বজায় রাখতে পারবে না সেগুলো বন্ধ করে দেয়া। মন্দির খোলা রাখা যেতে পারে যদি তারা এই দূরুত্ব বজায় রাখতে পারে।
৮। পারিবারিক এবং বন্ধুদের হাসপাতাল পরিদর্শন কম করে দেয়া।
৯। কর্মক্ষেত্রের মিটিংগুলো বন্ধ করে দেয়া। বাসা থেকে কাজ করতে উৎসাহিত করা।
১০। সকল খেলাধুলা ও প্রতিযোগীতার ইভেন্ট বন্ধ করে দেয়া, পাবলিক বা প্রাইভেট হোক সব বন্ধ করে দেয়া। যদি খুব প্রয়োজন হয় তাহলে আবদ্ধ রুমে ইভেন্ট হতে পারে।
দুইদিন পরে তারা আরো যোগ করেছে, “না, প্রকৃতপক্ষে, খুব জরুরী ব্যাতিত সকল ব্যবসা ই বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন। তাই, আমরা এখন সকল বানিজ্যিক কাজকর্ম, অফিস, ক্যাফে এবং দোকান বন্ধ করে দিচ্ছি। শুধুমাত্র যাতায়াত, ফার্মাসী, মুদি দোকান খোলা থাকবে”
একটা পদ্ধতি ভালো কাজ করছে কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেটা ভাইরাসকে বিস্তারে বেশ ভালো সময় দিয়ে দেয়। আপনি যদি ভালো থাকতে চান, তাহলে উহানের পদ্ধতি অনুসরন করুন। মানুষ এখন হয়তো অভিযোগ দিবে, কিন্তু তারা পরবর্তীতে ধন্যবাদ জানাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩২৮ টি টেক কোম্পানি সামাজিক দূরুত্বের এই লিস্টকে প্রয়োগ করেছে। আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো কোম্পানিগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেমন ঘন্টায় কাজ করা কর্মীদের বিষয়ে কি করা হবে। অফিস খোলা রাখা হবে কি না, ইন্টারভিউ কিভাবে নেয়া হবে, ক্যাফেটেরিয়া কিভাবে ব্যবহার করা হবে।
৪। কখন?
আমার কাছে মনে হয় আমি এতক্ষন যা বলেছি সেগুলোর সাথে আপনি একমত এবং আপনি শুরু থেকেই আশ্চর্য হচ্ছিলেন এবং ভাবছিলেন ঠিক কখন প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্য ভাবে চিন্তা করুন যে প্রতিটি পন্থার জন্য কি কি ব্যবস্থা রয়েছে।
রিস্ক-বেইজড মডেল
কি করতে হতে পারে বিষয়টি সমাধানের জন্য আমি একটি মডেল দাড় করিয়েছিঃ
এটা আপনার এলাকায় আনুমানিক কতজন আক্রান্ত সেটা বের করার সুযোগ দিবে। এর মাধ্যমে আপনার কর্মচারীদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা যাবে এবং সময়ের সাথে কিভাবে বাড়তে পারে ও কিভাবে আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন যে অফিস খোলা রাখবেন কি না।
এটা আমাদের কে এরকম জিনিস বলবেঃ
১। ধরুন, আপনার কোম্পানি ওয়াশিংটনে এবং আপনার কর্মচারীর সংখ্যা ১০০। ওয়াশিংটনে ৮/৩ তারিখে ১১ জন করোনা ভাইরাসে মারা যায়। তাহলে আপনার কমপক্ষে ১ জন কর্মচারী আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%। ফলে আপনার কোম্পানি এক্ষুনি বন্ধ করে দেয়া উচিত।
২। যদি আপনার কোম্পানির কর্মচারী ২৫০ জন হয় আর আপনার কোম্পানি হয় দক্ষিন বে তে তাহলে ৯/৩ তারিখে সেখানে আপনার ~২% সম্ভাবনা আছে আপনার কমপক্ষে ১ জন কর্মচারী আক্রান্ত হবে। কারণ স্যান ম্যাতেও এবন সান্তা ক্লারা তে এক সাথে মোট ২২টি অফিসিয়াল মৃত হয়েছে ৯/৩ তারিখে। তাই আপনার কোম্পানিও বন্ধ করে দেয়া উচিত।
৩। (১২/৩ তারখের আপডেট) যদি আপনার কোম্পানি প্যারিসে হয় এবং ২৫০ জন কর্মচারী থাকে তাহলে আজকে প্রায় ৯৫% সম্ভাবনা আছে আপনার কমপক্ষে ১ জন কর্মচারী আক্রান্ত হবে। ফলে আপনার কোম্পানিও বন্ধ করা উচিত আগামীকালের মধ্যেই।
এই মডেলটি ‘কোম্পানি’ এবং ‘কর্মচারী’ দুইটি বিষয়কে ব্যবহার করেছে। কিন্তু একই মডেল প্রায় সব কিছুর জন্যই ব্যবহার করা যাবে যেমন স্কুল, গন-পরিবহন। তাই যদি আপনার শুধু ৫০ জন কর্মচারী প্যারিসে থাকে এবং তারা হাজার হাজার মানুষের সাথে ট্রেনে করে যাতায়াত করে তাহলে এটা খুবই স্বাভাবিক যে আপনার কমপক্ষে ১ জন কর্মচারী আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এবং অবশ্যই আপনার কোম্পানি বন্ধ করে দেয়া উচিত।
যদি আপনি এখনো দ্বিধাগ্রস্থ থাকেন যে কারো মধ্যে কোন লক্ষন বা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না, তাহলে মনে রাখবেন যে, ২৬% আক্রান্ত তাদের উপসর্গ দেখা প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই আক্রান্ত হচ্ছে। (লিঙ্ক)
আপনি কি নেতাদের অ্যাসোসিয়েশানের অংশ?
এই গনিতটা কিছুটা এক কেন্দ্রিক। এটা প্রতিটি কোম্পানির ঝুকিকে আলাদাভাবে পরিমাপ করে। ফলে করোনা ভাইরাসে কোম্পানির ঝুকি সর্বোচ্চ হলেই অফিসে বন্ধ করার পর্যায়ে যায়।
কিন্তু আপনি যদি ব্যবসায়ী নেতা হন তাহলে আপনাকে একটি কোম্পানির হিসাব চিন্তা করলে হবে না, সকলের জন্যই চিন্তা করতে হবে। হিসাবটা দাঁড়ায় এমনঃ আমাদের যে কোন একটি কোম্পানির আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? যদি আপনি বে এলাকাতে ৫০ টি কোম্পানির নেতা হন যেখানে গড় কর্মচারী ২৫০ জন, তাহলে সেখানে ৩৫% সম্ভাবনা থাকে যে আপনার কমপক্ষে একটি কোম্পানি আক্রান্ত হবে এবং ৯৭% সম্ভাবনা থাকে পরের সপ্তাহের জন্য। আমি এটা দেখার জন্য মডেলটিতে একটি ট্যাব যুক্ত করেছি।
উপসংহার
আজকে সিদ্ধান্ত নেয়াটা কিছুটা ভয়ের, উদ্বেগের, কিন্তু আপনাকে এই ভাবে চিন্তা করলে হবে না।
এই তাত্ত্বিক মডেলটিতে বিভিন্নত গোষ্টির তুলনা দেখানো হয়েছে। একটি কোন সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখেনি, আরেকটি n তম দিনে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখা শুরু করেছে আর বাকিটি n+1 তম দিনে সামাজিক দূরুত্ব শুরু করেছে। গ্রাফের নাম্বার গুলো কল্পিত কিন্তু আমি হুবেই প্রদেশে যা ঘটেছিলো সেটার সাথে তুলনা করে (সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ~৬হাজার প্রতিদিন আক্রান্ত) তাদেরকে ঠিক করেছি। এটা এ জন্য গ্রহন করা হয়েছে যেন বুঝতে পারা যায় প্রতিটি দিন কত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি দেখতে পাবে যে, একদিন আগে-পরে সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে কতটুকু পার্থক্য তৈরী হয়েছে এবং শেষে এটা শুন্যের দিকে চলে আসছে।
কিন্তু সামগ্রিক ফলাফলের কি অবস্থা দাঁড়াবে?
এই তাত্তিক মডেলটিতে হুবেই প্রদেশের তথ্য নিয়ে দেখানো হয়েছে যে, অতিরিক্ত একদিন অপেক্ষা আক্রান্তের পরিমান ৪০% বৃদ্ধি করেছে। তাই, সম্ভবত, যদি হুবেই কর্তৃপক্ষ ২৩/১ তারিখের পরিবর্তে ২২/১ তারিখে অবরোধের ঘোষনা দিতো তাহলে তাদের আক্রান্তের হার কমে ২০ হাজারে চলে আসতো।
আর মনে রাখবেন, এইগুলা শুধুমাত্র আক্রান্তের বিষয়। মৃত্যু আরো বেশি হতে পারে। সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থাও ধবসে পড়তে পারে যার ফলে মৃতের সংখ্যা ১০ গুন বেশি বেড়ে যেতে পারে যা আমরা পূর্বে দেখে এসেছি বিভিন্ন সময়। তাই, সামাজিক দূরুত্বে একটি দিনের পার্থক্য আপনার এলাকায় আক্রান্তের হারে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে যা মৃতের সংখ্যা বাড়াবে।
এটাকে ক্রমবর্ধমান বিপদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। প্রতিটি দিন মূল্যবান। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে একটি দিন দেরি করলে বিষয়টা এমন না যে, মাত্র কয়েকজন আক্রান্ত হবে বরং আপনার এলাকাতে এটা শত শত বা হাজার হাজার আক্রান্ত বাড়িয়ে দিবে। প্রতিটি দিন যা সামাজিক দূরুত্বের মধ্যে পার করবেন না, আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে মহামারীতে রূপ নিবে।
সবার সাথে শেয়ার করুন
গত শতাব্দীতে এটাই মনে হয় প্রথম যখন আপনার একটি শেয়ার একটি জীবনকে রক্ষা করতে পারে। আরো বড় বিপর্যয় এড়াতে এই লেখার বিষয়বস্তু সকলকে বুঝাতে হবে। আমাদেরকে এই মূহুর্তেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।