ব্লকচেইন এ ভবিষ্যৎ!

Reyad Rahman
14 min readDec 22, 2017

--

সে কালে বাংলায় এক প্রচুর ধনী রাজা ছিলেন । রাজার বিশাল এলাকা জুরে রাজ্য ছিলো । সে রাজ্যের জনগণ বেশ সুখেই ছিলো , কারণ রাজা সব কিছু ঠিক মত দেখভাল করতেন । রাজ্যের প্রজারা তাই আনন্দের সাথেই প্রচুর পরিশ্রম করত । তাদের মূল আয়ের উৎস ছিলো ক্ষেত খামার । প্রচুর শস্য ফলত এবং সেগুলো নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বছর জুড়ে অন্যান্য রাজ্যের সাথে ব্যবসা করার জন্য ও ব্যবহার হত । রাজার নিয়ম করা ছিলো সবাইকে একটা নির্দিষ্ট পরিমান ফসলের অংশ রাজ ভান্ডার জমা দিতে হতো, রাজা পরে সেগুলো রাজ্যের অপেক্ষাকৃত গরীব প্রজা, যাদের সে বছর ফলন ভালো হয় নি তাদের মাঝে সমান ভাগে ভাগ করে দিতেন । আর সব রাজ্যের মত এই রাজ্যেও দুষ্টু লোকের অভাব ছিলো না । রাজার জনপ্রিয়তাকে অনেকেই হিংসা করতো । খোদ রাজার প্রধান মন্ত্রী মশাই আর রাজার ধন ভান্ডার দেখভাল করার মন্ত্রী রাজাকে হিংসা করতো । তো হলো কি, রাজা তো আর নিজে ফসল ভাগ ভাটোয়ারা করে দিতেন না, তার অধিনস্থ রা এই কাজ করতো, রাজার কাছে হিসাব যেতো বা সে নিয়ম করে দিতো এই বছর এতো লোক এর মাঝে এই পরিমাণ ফসল ভাগ করে দেয়া হবে । সেবার সেই দুষ্টু মন্ত্রী আর রাজার কোষাগার দেখভাল এর দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী এক দুষ্টু বুদ্ধি আঁটল রাজা কে জব্দ করার জন্য! তারা ফসল বিতরণে কারচুপি করলো এমন ভাবে যে হিসাবে রাজ্যের সবাই সমান ভাবে ফসল পেয়েছে, কিন্তু আসলে ওই দুই দুষ্টু মন্ত্রীগণ শুধু মাত্র তাদের পছন্দের লোক দের মাঝেই বেশি বেশি ফসল বিতরণ করলো আর অল্প অল্প করে রাজ্যের বাকি দের মাঝে । এতে করে রাজ্যের মানুষের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হলো, কারন সে বার সত্যিই খুব ভাল ফসল হয়েছিল এবং সবাই আশা করেছিলো রাজার ভান্ডার থেকে ভালো একটা অংশ পাবার জন্য । রাজাকে কিন্তু দুষ্টু মন্ত্রী দয় হিসাব দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ফসল সমান ভাগে ভাগ করে রাজ্যের প্রজাদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়েছে , রাজাও সন্তুষ্ট যে তার সব প্রজা সমান ভাবে ভাগ পেয়েছে । তো এক দিন হলো কি রাজা রাজ্য দেখতে বেড়িয়েছেন , প্রজারা তাকে এমনিতে খুব ভালোবাসে, রাজা রাস্তায় রাস্তায় প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবর নিতে থাকলে , প্রজারা বিচার দিলো যে তারা খুব একটা ফসল পায় নি, তাদের কে বাইরে থেকে প্রচুর দামে নতুন করে ফসল কিনতে হচ্ছে, রাজা তো রেগে গেলেন, তৎক্ষণাৎ তার মন্ত্রী দের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার , কি শুনছেন তিনি! এদিকে মন্ত্রী রা তো আর স্বীকার করে না, তারা বার বার করে বলে যে না সবাইকে সমান ভাগে ফসল বন্টন করা হয়েছে, সেভাবে হিসাবও দেখাচ্ছে । এদিকে প্রজারা বলতেসে তারা ফসল পায় নি, পেলেও অল্প । রাজা পড়লো উভয় সংকট এ । তার মন্ত্রীরাও বিশ্বস্ত আবার তার প্রজারাও তো তাকে মিথ্যে বলতেসেনা, রাজা মন্ত্রী দের হিসেবে দেখতেসেন সবাইকে সমান ভাগে ফসল বিতরণ করা হয়েছে আবার খোঁজ নিয়ে দেখলেন যে না, তার প্রজারা আসলেই কষ্টে আছে, বাজার থেকে চড়া দামে ফসল কিনছে । রাজা এখন কি করবেন? তিনি কাকে বিশ্বাস করবেন? এখন তো সবার থেকে ফসল ফেরত নিয়ে নতুন করে বিতরণ করা সম্ভব না । তিনি সেবার কোন ভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারলেন না । এদিকে তিন মাস পর নতুন করে ফসল হবে, নতুন করে সবার মাঝে বিতরণ করা লাগবে । রাজা পড়ে গেলেন চিন্তায় । একবার নাহয় তার প্রজারা কষ্ট ভোগ করলো, কিন্তু বার বার তো এটা হতে দেয়া যায় না , এদিকে তিনি মন্ত্রী দের ও কিছু বলতে পারছেন না কারণ তারা তার সাথে অনেক দিন ধরে রাজ্য পরিচালনা করছেন । রাজা ভাবতে ভাবতে লাগলেন , কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় । ভাবতে ভাবতে একদিন তিনি একটা সমাধান বের করে ফেললেন । সেবার তিনি মন্ত্রীদের হাতে ফসল ভাগের দায়িত্ব দিলেন না, বরং তিনি এমন ব্যবস্থা করলেন যে, প্রতিবার কেউ একজন রাজার গোয়ালে ফসল জমা রাখলে, রাজা তাকে একটা ফর্দ ( তালিকা) ধরিয়ে দিচ্ছেন । এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কিসের তালিকা? ধরেন, রাজার গোয়াল একদম খালি । তো গোয়ালে রাজা ২০ মন ধান জমা রাখলো । সেটার হিসাব রাখা হলো এভাবে —

এরপর রাজার গোয়ালে রাজ্যের প্রধান অর্থমন্ত্রী জমা রাখলেন ২৫ মন ধান । অর্থমন্ত্রী কে নিচের মত করে একটা ফর্দ ধরিয়ে দেয়া হলো —

তৃতীয় জন কে,

চতুর্থ জন যেটা পেলো সেটা অনেক টা এরকম —

এতে করে কি হচ্ছে? যে বা যারাই রাজার গোয়ালে ধান জমা রাখছে, তাকে একটি করে ফর্দ দেয়া হচ্ছে, যেখানে সে নিজে কত মণ ধান জমা করেছে এবং তার আগে কে কত মন ধান জমা দিচ্ছে তার হিসেব থাকছে । এখন প্রশ্ন হতে পারে যারা আগে জমা দিচ্ছে তাদের ফর্দ আর যারা পরে জমা দিচ্ছে তাদের ফর্দ তো এক না, সবাই তো এক হিসাব পাচ্ছে না! সেটা ঠিক, কিন্তু রাজা মশাই ও বুদ্ধিমান, সে প্রতি টা ফর্দ এর আলাদা একটা কপি জমা রাখতেসেন এবং সেটা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছেন । ফলে কি হচ্ছে একদম শুরু তে যে জমা দিচ্ছে আর একদম শেষে যে জমা দিচ্ছে দুই জন এর ফর্দ আলাদা থাকলেও রাজা মশাই এর কাছে রাখা লিস্ট থেকে যেকোন সময় যে কেউ দেখতে পাচ্ছে কে কত জমা দিলো । একই পদ্ধতি তে রাজা মশাই যখন ফসল বিতরণ শুরু করলেন , তার একটা হিসাব রাখলেন । প্রতিবারের জন্য একটা ফর্দ, এবং পরের ফর্দে আগের বিতরণ এর বিবরণ । এতে করে সেবার সবাই নিজ নিজ ভাগে সমান ফসল পেলো এবং সবার কাছেই একই রকম করে একটা ফর্দ ছিলো যেখানে কে কি পরিমাণ ফসল জমা দিয়েছে এবং কি পরিমাণ ফসল পেয়েছে তার হিসাব ছিলো ।

আমি চেয়েছি, উপরের গল্প দিয়ে, ব্লকচেইন এর একদম বেসিক সম্পর্কে ধারনা দিতে । যেটাকে বলে মূল প্রিন্সিপাল । আদতে উপরের গল্পে কিছু সমস্যা আছে । যেমন, প্রতিবার হাতে রেখে হিসাব রাখা লাগতো । এতে করে কাগজের উপর বা যেটাতে লিখেই এই হিসাব রাখা হতো তার উপর চাপ পড়তো এবং এতো পরিমাণ কাগজ জমা রাখাও সমস্যা ছিলো । তার উপরে কথা হচ্ছে, যে সময়ের কথা বলছি সে সময়ে ব্লকচেইন এর কোন অস্তিত্ব থাকার কথা না , কারণ কম্পিউটার ছিলো না, ক্রিপটোগ্রাফি ছিলো না ।

এবার আমরা সহজ ভাষায় ব্লকচেইন বুঝবো ।

ব্লকচেইন কি?

একটা নির্দিষ্ট নেটওয়ার্ক এ একটা নির্দিষ্ট ডাটাবেজ যেটা ওই নেটওয়ার্ক এর সব সদস্যের কাছে ডিস্ট্রিবিউট করা থাকে ( রিয়েল টাইম — মানে ডাটাবেইজ এ কোন আপডেট হলে সেটা ওই নেটওয়ার্ক এর সবার কাছে থাকা ডাটাবেইজ এ অটোমেটিক আপডেট হয়ে যায় ) । এবং এই ডাটাবেজ যেকোন কিছুর হতে পারে, ট্রানজেকশন হিস্টোরি হতে পারে, কোন একটা পণ্যের লিস্ট হতে পারে । প্রতি টা ডিস্ট্রিবিউট ডাটাবেইজ একটা নির্দিষ্ট ব্লক এ থাকে । প্রতি টা ব্লক এর আলাদা আলাদা ইউনিকএড্রেস থাকে একে অপরের সাথে কানেক্ট থাকার জন্য এবং পরবর্তীতে ডাটা বের করার জন্য ।

How Blockchain works.

এখন প্রতি টা ব্লক এ কিছু ডাটা থাকে এরকম —

এটা হচ্ছে একদম শুরু’র ব্লক, ইংরেজি তে জেনেসিস ব্লক । এখন এই ব্লক এর আগে যেহেতু আর কোন ব্লক নেই তাই এই ব্লক এর ইনডেক্স হচ্ছে ০ । মনে রাখবেন ব্লক এর ইন্ডেক্সিং শুরু হচ্ছে ০ থেকে । এরপর আসতেসে কখন এই ব্লক টা তৈরি হয়েছে । ব্লকচেইন এই হিস্টোরি মনে রাখে টাইমস্ট্যাম্প নামের টার্ম দিয়ে । যেমন এই ব্লক তৈরি হয়েছে ২৭ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার GMT 2:30:00 । ব্লক যেহেতে আছে ব্লক এ কিছু ডাটাও রাখা হয়েছে । ধরেন এইটা একটা টেক্সট । এরপর আসতেসে হ্যাশ বা হ্যাশিং । এটা নিয়ে আরেকটা বড় পোস্ট লেখা যাবে বিশদ বিবরণ সহ । সিম্পল কথায় হ্যাশ দিয়ে একটা ব্লক কে ভ্যলিড করা হয় , আর Previous Hash দিয়ে আগের ব্লক ভ্যালিড/লিঙ্কড করা হয় । এখানে প্রিভিয়াস হ্যাশ ০ , কিন্তু বর্তমান হ্যাশ ০০০০১৮০৩৫… এরকম কেন? বর্তমান হ্যাশ এক হবার কথা ছিলো তাই না? এটার পেছনেও কারণ আছে , যেটা হ্যাশিং এ বলবো । আপাতত মনে রাখেন এটা একটা অ্যাড্রেস যেটা বর্তমান হ্যাশ কে ভ্যালিড করতেসে এবং পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ব্লক এর সাথে লিঙ্কেড করতেসে । এরপর আসতেসে Nonce; এই Nonce এ দেখেন একটা নাম্বার জেনারেট হয়েছে ৫৬৫৫১ এর মানে হলো নির্দিষ্ট ওই ডাটা রাখতে ( Welcome to Blockchain CLI ) পুরো সিস্টেম কে ৫৬৫৫১ বার একই প্রসেস এর পুনরাবৃত্তি করতে হয়েছে এবং এর পরই এই নির্দিষ্ট ব্লক টি পেয়েছে ।

এই পুরো বিশয়টার সাথে ক্রিপ্টোগ্রাফি উতপ্রোত ভাবে জড়িত । রাজার গল্প টা মনে আছে তো? রাজা মশাই তো পুরো হিসেব তার কাছে রাখলেন আবার সকলের জন্য উন্মোক্ত ও রাখলেন কিন্তু যারা দুষ্টু বুদ্ধির অধিকারী তারা চাইলেই হিসেবে গরমিল করতে পারে এবং রাজার কাছে নতুন করে ফসলের দাবি করতে পারে, যদি না রাজা সেখানে নিরাপত্তা’র ব্যবস্থা করে । এরকম ভাবে পুরো ব্লকচেইন এ ক্রিপ্টোগ্রাফি ইমপ্লিমেন্ট করা ।

ক্রিপ্টোগ্রাফি কি?

ডাটা স্টোর এবং ট্রান্সফার করার এমন এক পদ্ধতি যেখানে শুধু নির্দিষ্ট কিছু মানুষেরই ক্ষমতা থাকে সেই ডাটা পড়া এবং সেটা নিয়ে কাজ করার । ক্রিপ্টোগ্রাফি কিছু টেকনিক ব্যবহার করে যেমন মাইক্রো ডটস এর মাধ্যমে ডাটা স্টোর করা, টেক্সট এবং ইমেজ কে এক করে ডাটা স্টোর করা । এতে করে কি হয় যে জানেনা পুরো সিস্টেম কিভাবে কাজ করে সে কখনোই কোন একটা কিছু থেকে অর্থ বের করতে পারবে । ধরেন আপনি মুলার ছবি দেখতেসেন নিচের মত —

আপনি দেখতেসেন মূলা, আমি বলতেসি পেপাল কিন্তু মূলা আর পেপাল এর পিছনে জুম হাসতেসে । যাদের জানার তারা ঠিক ই জানে এই মূলা’র মাহাত্য কি, কিন্তু আপনি আম জনতা অত কিছু বুঝেন না , তাই আপনাকে মূলা দেখিয়ে পেপাল বলে জুম বিক্রি করা হলো । এইখানে যদিও ক্রিপ্টোগ্রাফি নাই, চাতুরতা আছে, ক্রিপ্টোগ্রাফি ও সেইম । এমন ভাবে সিস্টেম ডিজাইন করা শুধু মাত্র তারাই বুঝবে যাদের জন্য বানানো । আপনি দেখবেন শুধু ছবি, কিন্তু ছবি’র পিছনে লুকানো থাকবে নানা রকম অর্থ ।

আধুনিক ক্রিপ্টোগ্রাফি চারটা মূল মোটিভেশন এর উপর সাজানো ।

১। Confidentiality : সিস্টেম এ লুকায়িত তথ্য শুধু মাত্র তারাই বুঝবে যাদের জন্য বানানো, সবার জন্য নয় ।

২। Integrity : সিস্টেম এর তথ্য কোন ভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না যে পাঠিয়েছে (সেন্ডার) এবং যাকে পাঠানো হচ্ছে (রিসিভার) দুজন একই রকম তথ্য পাবে । ডাটা ট্রান্সমিশন এর সময় তথ্য পরিবর্তন এর চেষ্টা করা হলে সিস্টেম সেটা ধরতে পারবে ।

৩। Non-repudiation : ডাটা ট্রান্সমিশনের পুরো সময় জুড়ে এবং ডাটা সফল ভাবে ট্রান্সমিট হবার পর বা ডাটা ক্রিয়েট হবার সময় দু পক্ষের কোন পক্ষই নিজেদের কে এই প্রসেস এর সাথে সংযুক্ত নয় বলে দাবি করতে পারবেনা ।

৪। Authentication : উভয় পক্ষই ডাটা কোথা থেকে এলো এবং কই যাচ্ছে, কার কাছ থেকে এসেছে কিংবা কার কাছে যাচ্ছে তা ভেরিফাই করতে পারবে ।

ক্রিপ্টোগ্রাফি’র উপর আরো শিখতে চাইলে কোর্সেরা’র এই কোর্স দেখতে পারেন —

ব্লকচেইন এ আবার আসি । সবাই ব্লক চেইন নিয়ে কথা বলতেসে । বলা হয় ২০০০ সাল যদি ইন্টারনেট এর হয়, ২০১৮ হবে ব্লক চেইন এর এবং ২০২৭ সালের ভিতর দুনিয়ার সব কোম্পানি ব্লক চেইন ব্যবহার করতে বাধ্য হবে ।

The businesses who don’t adapt to the decentralized world of the future will soon become businesses of the past.

কেন হবে তা জানতে চাইলে এখানে পড়তে পারেন —

ব্লকচেইন কেন গুরুত্বপূর্ণ ?

In chronological order: ব্লকচেইন একটা শেয়ারড পাব্লিক লেজার যেখানে প্রতিটা ট্রানজেকশন এর ডাটা ওপেন এবং সিস্টেম এর ভিতর যে কেউ সেই ডাটা দেখতে পারবে । উপরন্তু প্রতিটা ব্লক এর একটা ইউনিক আইডি আছে , এবং একটা রেফারেন্স লিঙ্ক ( হ্যাশ ) যেটা দিয়ে তার পূর্ববর্তী ব্লক এর সাথে লিঙ্কড ।

Immutable: এর মানে হচ্ছে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন যোগ্য নয় । একবার একটা ব্লক সিস্টেম দিয়ে ভেরিফায়েড হয়ে গেলে এবং ব্লক চেইন এ অ্যাড হয়ে গেলে আর কেউ সেটা’র পরিবর্তন , পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা সম্ভব হবে না ।’

Shared: পুরো ডাটা সিস্টেম এর সবার সাথে শেয়ার করা এবং অটোমেটিক আপডেট হয় । এটাকে বলে ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার ।

Decentralized: ব্লকচেইন এর সবচেয়ে মজার পার্ট হচ্ছে ব্লকচেইন থার্ড পার্টি বা মধ্যষত্বভোগী পছন্দ করে না এবং পুরো সিস্টেম এমন ভাবে সাজানো যে কোন সিঙ্গেল আইডেন্টিটি’র কাছে সেন্ট্রালাইজড ভাবে কোন ডাটা থাকে না যাতে করে তারা মধ্যষত্বভোগী হতে পারে এবং সিস্টেম এর লাভ উঠাতে পারে ।

Transparent: ব্লকচেইন এ জমা হওয়া সমস্ত ডাটা পুরো সিস্টেম এর সকলের কাছে ( সকল নোড ) উন্মুক্ত । যে কেউ প্রয়োজন মত তথ্য দেখতে পারে ।

Impossible to forge (tamper-proof): ধূর্ত লোকের তো অভাব নেই আমাদের সমাজে যারা নিজেদের লোভের জন্য পারে না এমন কিছু করতে । এই যে ধরেন দেশের ব্যঙ্কিং খাতে যে রাহাজানি হচ্ছে তার কারণ হচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের অতি লোভ, তাদের সাগরেদ দের সাপোর্ট, জবাব দিহিতা না থাকা । ফলে চাইলেই কাগজে দেখিয়ে ব্যাংক থেকে লুটপাট করা সম্ভব হচ্ছে এবং তার দায়/খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণ কেই । যেখানে সেখানে ভ্যাট-ট্যাক্স বসতেসে , দ্রব্যমুল্যের দাম বারতেসে । ব্লক চেইন এ এগুলো সম্ভব না । একবার ডাটা ভেরিফাই হয়ে গেলে কার সাধ্যি নাই সেই ডাটা পরিবর্তন করে ফায়দা উঠাবে ।

এই জন্য ব্যাংকিং সেক্টর এর লোকজন ব্লকচেইন সহ্য করতে পারে না! ;)

বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এবার ঘুঘু তোমার বধিব পরান।

এখন আসি ব্লকচেইন এর কিছু ব্যবহার নিয়ে —

তার আগে আপনাকে জিজ্ঞেশ করতেসি ট্রানজেকশন বলতে আপনি কি বুঝেন? সাধারণ ভাবেই টাকা ট্রানজেকশন । দু জন ব্যক্তি’র মাঝে যে কোন কিছু’র আদান প্রদান তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি তে এটার নাম হলো ট্রানজেকশন । এতো দিন পর্যন্ত তাই ছিলো । এবং এই তৃতীয় পক্ষ সব সময় ফায়দা উঠায় । এই জন্যই আমাদের কে বিকাশ এর প্রতি ট্রানজেকশন এ দোকান ওয়ালা এবং টেলিকম অপারেটর দের কে বিশাল পরিমাণ নেটওয়ার্ক ফি দেয়া লাগে । যেহেতু আমরা বিকাশ কে বিশ্বাস করি না, কিংবা বিকাশ আমাদের কে বিশ্বাস করতে পারবে না কেননা ট্রানজেকশন এর সময় দুই পক্ষ সামনাসামনি থাকতে পারে না তাই টেলিকম অপারেটর রা এবং দোকান থেকে বিকাশ করার সময় ওই দোকান মালিক পক্ষ মধ্যষত্ব ভোগী হিসেবে লাভ উঠায় ।

কিন্তু ব্লক চেইন এই তৃতীয় পক্ষ কে সম্পূর্ণ রিমুভ করতেসে ।

The blockchain cancels the need for a third party presence, while maintaining the essence of the function, i.e. trust. It allows for ledger sharing or distribution among all parties in a decentralized manner that guarantees the authenticity of the information it conveys.

এমন সিস্টেম আসবে যেখানে বিকাশ এর মত টাকা ট্রাঞ্জেকশন এ আপনাকে মোবাইল অপারেটর কিংবা দোকান ওয়ালার সাহায্য নিতে হবে না, কাউকে বলতে হবে না আপনার টাকা আপনি কাকে কেন পাঠাচ্ছেন , একদম স্বল্প খরচে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন মুহূর্তেই!

ব্লকচেইন দেখতে কিরকম?

Here! ;)

Understand the Blockchain in Two Minutes

আচ্ছা সব বুঝলাম, ট্রানজেকশন কিভাবে ভ্যালিডেট হয়?

ব্লকচেইন এ প্রতিটা ট্রানজেকশন ভেলিডেট হয় ডাবল পাব্লিক কি/প্রাইভেট ( Public Key/Private Key ) (ক্রিপ্টোগ্রাফি) কি দিয়ে । ব্লকচেইন এ প্রতিটা ইউজার একটা করে পাব্লিক কি এর মালিক । এই পাব্লিক কি এর আবার নিজস্ব প্রাইভেট কি ও আছে । প্রতি টা পাব্লিক কি এবং প্রাইভেট কি নিজেদের সাথে ইউনিকলি কানেক্টেড ( র‍্যান্ডম নাম্বার দিয়ে )

একটা পাব্লিক কি এর উদাহরণ -

3048 0241 00C9 18FA CF8D EB2D EFD5 FD37 89B9 E069 EA97 FC20 5E35 F577 EE31 C4FB C6E4 4811 7D86 BC8F BAFA 362F 922B F01B 2F40 C744 2654 C0DD 2881 D673 CA2B 4003 C266 E2CD CB02 0301 0001

Public and Private Key

এবং যেহেতু পাব্লিক এবং প্রাইভেট কি কানেক্টেড কোন একটা পাব্লিক কি তে পাঠানো মেসেজ এনক্রিপ্টেড হয়ে যায় যেটা শুধু ওই পাব্লিক কি এর সাথে রিলেটেড এমন প্রাইভেট কি দিয়ে ডেক্রিপ্টেড করেই পড়া সম্ভব । এই জন্যি ব্লকচেইনে এই সিকিউরিটি যুক্ত করে দেয়া হয়েছে ফলে আপনার ডাটা সবসময় নিরাপদ থাকবে । এছাড়া সিস্টেম এর জন্য আরেকটা জিনিশ নিশ্চয়তা প্রদান করে সেটা হলো ডিজিটাল সিগনেচার ।

Digital Sign

ধরেন, আমি একটা বাইক বিক্রি করবো রুবেল ভাইয়ের কাছে । ব্লকচেইন এ জিনিস্টা এভাবে যাবে-

sign( “আমি বাইক বিক্রি করলাম মোশাররফ রুবেল এর কাছে ১ লাখ টাকায় , ১২/২২/২০১৭ তারিখে”, আমার প্রাইভেট কি ) = “সিগনেচার”

এখন আমি যদি এট ব্লকচেইন এ দেই, তখন আমার নেটওয়ার্ক এর মানুষ জন আমার পাব্লিক কি এবং আমার সাইন মিলিয়ে দেখে এই ট্রানজেকশন Approval দিবে অথবা disapproval দিবে । Approved হলে আমার সিস্টেম এ আমাউন্ট জমা হয়ে যাবে, ব্লকচেইন এর হিস্টোরি তে আজীবন এটা থাকবে এবং আমার বাইকের নতুন মালিক হবে মোশাররফ রুবেল ভাই । এবং এর তথ্য কোন ভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব না । একভার চিন্তা করে দেখুন একই রকম কোন একটা সিস্টেম বাংলাদেশ এর জমি জমা সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমায় / তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা যেতো মানুষের কষ্ট কত খানি লাঘব হতো ।

আলিবাবা’র বিখ্যাত জ্যাক মা “ব্লকচেইন” সম্পর্কে কি বলে দেখেন :)

বুঝতেই পারছেন এর গুরুত্ব কত খানি? এই লেখায় যাই পরছেন একদম বিগিনার লেভেলের । এখনো বেশ কিছু ফান্ডামেন্টাল টপিক বাকি আছে যেগুলা নিয়ে এই এক লেখায় আলোচনা করতে গেল লেখা আরো বড়ো হবে এবং বোরিং হয়ে যেতে পারে । আমি এখানে শুধু ফান্ডামেন্টাল টপিক্স এর লিঙ্ক দিচ্ছি সময় করে পড়ে নেবেন । আমার অন্যান্য লেখাতেও এগুলা নিয়ে আলোচনা হবে ।

পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক , Hash Function ( using Python ), Hash Function , Proof Of Work , Trust-less System, Public Key Infrastructure, Triple Entry Bookkeeping, Triple Entry PDF, Double Spending Problem , Consensus , Distribute Consensus, Two Phase Commit Protocol , Paxos, Sybil Attack, CAP Theorem and the list goes on and on…

ব্লকচেইন এ ভবিষ্যৎ —

ব্যাংকিং — ফিউচার এ ব্যাংক থাকবেনা । থাকলেও আমরা যেরকম ব্যাংক এখন দেখি তার কিছুই থাকবেনা । পারসোনালাইজড পিয়ার টু পিয়ার ব্যাংকিং শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে । বিটকয়েন আর ক্রিপ্টোকারেন্সি তার প্রমাণ । আর এই ব্যাংকিং ব্যবস্থা লিড দিবে ব্লকচেইন বেইজড কমিউনিটি/সফটওয়ার কোম্পানি গুলা ।

যেমন Babb —

অথবা

R3 — https://www.r3.com/

Corda is a distributed ledger platform that is the outcome of over two years of intense research and development by R3 and 80 of the world’s largest financial institutions. A financial grade ledger, Corda meets the highest standards of the banking industry, yet it is applicable to any commercial scenario.

পেমেন্ট এবং মানি ট্রান্সফার —

এগেইন ব্যাংক থাকবে না মিডল ম্যান হিসেবে । আমরা এখন যেরকম পেপাল দেখি, বিকাশ দেখি এই সমস্ত সকল সিস্টেম এই বিশাল পরিবর্তন আসবে, সেন্ট্রালাইজড একটা সলুশ্যন থেকে ডিসেন্ট্রালাইজড একটা সল্যুশন ।

উদাহরণ-

কয়েনবেজ

Coinbase

Abra — https://www.abra.com/

শিক্ষা ব্যবস্থা —

Learning Machine — http://www.learningmachine.com

Learning Machine

নির্বাচন —

Follow My Vote -https://followmyvote.com/

আইওটি https://filament.com/

রাইড শেয়ারিং —

Arcade City | Uber and Pathao Rival :P

এগুলা শুধু কিছু উদাহরণ মাত্র । হসপিটাল থেকে শুরু করে ইলেক্টিসিটি থেকে খেলাধুলা কিংবা ইকমারস সব কিছু ব্লকচেইন এর দখলে চলে যাবে ।

এখানে পড়তে পারেন আরো — https://www.cbinsights.com/research/industries-disrupted-blockchain/

ব্লকচেইন কিভাবে দারিদ্র দূর করতে পারে সে সম্পর্কে পড়তে পারেন এ লেখাটি ।

লিঙ্ক — https://www.ft.com/content/60f838ea-e514-11e7-8b99-0191e45377ec

ব্লকচেইন স্টার্টআপ্স-

ব্লকচেইন স্টার্টআপ্স

২০১৭ প্রায় শেষ এবং ২০১৮ শুরু । এখনি সময় ব্লকচেইন সম্পর্কে জানা এবং কাজ করা । যে বা যারাই এই লেখাটি শুরু থেকে পড়েছেন এবং এ পর্যন্ত এসেছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যদি ব্লকচেইন ভিত্তিক কোন সেবা নিয়ে কাজ করতে থাকেন তবে আমি আপনার সাথে পরিচিত হতে আগ্রহী ।

আমার অন্য লেখা গুলো —

চ্যাটবট কি , কেন এবং কিভাবে বানাবেন? https://goo.gl/QD4uGM

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর আদ্যপান্ত — কি , কেন, কিভাবে, কোথায়?!!https://goo.gl/XwTQjz

ডাটা সায়েন্স এর জারিজুরি ।https://goo.gl/xjif7W

‘আ’ তে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স!https://goo.gl/ZrjmR7

নিউরনে নিউরনে নিউরাল নেটওয়ার্ক !https://goo.gl/1dwkzo

আমি রিয়াদ রহমান , কাজ করি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডাটা সায়েন্স এবং ব্লকচেইন নিয়ে । ফেইসবুক এ আমিলিঙ্কইডইন এ আমিটুইটার এ আমাকে টুইট করুন । আমার প্রতিষ্ঠান টাইগার ডিজিটাল পোর্টফোলিও । আমাদের বাঘা প্রজেক্ট ।

Corporate Inquiry — hello@tigerdigital.xyz

Personal — ireyadrahman@gmail.com

--

--

Reyad Rahman
Reyad Rahman

Written by Reyad Rahman

Building The Next Global Bank | Raising Fund | reyad@muthopay.com

Responses (5)