কর্পোরেট ইউএক্স ম্যাচুরিটি — কি, কেন, কীভাবে?

Shad Iqbal
11 min readSep 14, 2021

--

Photo from Unsplash

আপনার প্রতিষ্ঠানের যদি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস থেকে থাকে, তাহলে সচেতনভাবে মেইনটেইন করা হোক বা না হোক, সেটার একটা ইউএক্স আছে। বলাই বাহুল্য, আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ইউজার থাকলে, তাদের কিছু না কিছু বলার মত এক্সপেরিয়েন্সও আছে। এই সুযোগে মনে করিয়ে দেই, ইউএক্স ডিজাইনের গণ্ডি ডিজিটাল এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনে সীমাবদ্ধ হলেও ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর পরিধি একজন ব্যবহারকারীর সাথে ঐ অর্গানাইজেশনের প্রোডাক্ট, সার্ভিসের সাথে সমস্ত ইন্টারেকশন জুড়ে ইউএক্স ও সার্ভিস ডিজাইনের ব্যাপ্তি।

“Does the company recognize UX as a tool for success?”

কর্পোরেট ইউএক্স ম্যাচুরিটি লেভেল দিয়ে ইউএক্স সচেতন ভাবে “মেইনটেইন করা” এবং “না করা” প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা করা হয়। আর সেটা পরিমাপ করা হয় মূলত ২টি বিষয়ের উপরে- ১. প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইউজারদের ডাটাকে কতখানি গুরুত্ব দেয়া হয়? ২. ইউজার সেন্ট্রিক ডিজাইন প্রসেসের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া কেমন নির্ভরশীল?

সোজা বাংলায় বলতে গেলে, কোম্পানির টপ ম্যানেজমেন্ট ইউজার সেন্ট্রিক প্রসেসকে কতটা পাত্তা দেয়, সেটাই হল ঐ কোম্পানির কর্পোরেট ইউএক্স ম্যাচুরিটি লেভেল।

আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের ইউএক্স প্রসেস উন্নত করতে চান, তাহলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের ইউএক্স ম্যাচুরিটি কোন অবস্থায় আছে, তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে বুঝতে পারা বেশ জরুরী। আপনি যদি ইউএক্স ডিজাইনার, ডেভেলপার, সেলস, মার্কেটিং, প্রোডাক্ট ম্যানেজার বা বিজনেস ঔনার হিসাবে, আন্তরিক ভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানে ইউজারদের চাহিদার যোগ বাড়াতে চান, তাহলে ম্যানেজমেন্টকে ম্যানেজ করেই আপনাকে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। নইলে কোন এক মিরাকল না ঘটা পর্যন্ত, সাধ ও সাধ্যের গরমিলে, হতাশার বাম্পার ফলনই প্রাপ্তি হবে শুধু।

লেভেলে, লেভেলে, লেভেলে নাই!

কর্পোরেট ইউএক্স ম্যাচুরিটি মডেল

বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টরা বিভিন্ন কর্পোরেট ইউএক্স ম্যাচুরিটি মডেল প্রস্তাব করেছেন। এগুলোর মধ্যে ২০০৬ সালে Neilson Norman Group-এর জ্যাকব নেলসনের ৮ ধাপের মডেল, প্রিন্সটন ইউভার্সিটির চার্লি ক্রেইজবার্গের ৬ ধাপের মডেল, Human Factor International-এর এরিক শেফার এর ৫ ধাপের মডেল, UIE এর জারেড স্পুলের ৫ ধাপের মডেল সহ প্রায় ডজনখানেক ইউএক্স ম্যাচুরিটি মডেল রয়েছে। এই মডেলগুলো বিভিন্ন আর্থসামাজিক প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে বলে, এগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে। এই এছাড়া এই বিষয়ে বেশ কিছু রিসার্চ পেপারও বিভিন্ন সময়ে পাবলিশ হয়েছে।

Jakob Neilsen’s Model, Charles Kreitzberg Model & Infosys Model

আমাদের প্রেক্ষাপটে ইউএক্স ম্যাচুরিটি মডেল

জ্যাকব নেলসন ২০০৬ সালে ৮ ধাপের ইউএক্স ম্যাচুরিটি মডেলটি প্রস্তাব করেন এবং ঐ সময় থেকে বৈশ্বিক ইউএক্স ফিল্ডে- কাজ, প্রসেস, টুলস, ডেলিভারেবলস, লিডারশীপ এবং সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই নেলসন নরম্যান গ্রুপ অতি সম্প্রতি (জুন, ২০২১) এই মডেলের ৬ ধাপের একটি রিভাইজড ভার্শন প্রকাশ করে।

তবে প্রথম মডেলে ধাপ সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রাথমিক ধাপগুলোকে সহজে রিলেট করা যায়। এজন্য আমরা অন্যান্য কিছু আর্টিকেল ও রিসার্চ পেপারের সাহায্য নিয়ে একটি ঈষৎ পরিবর্তিত ৭ ধাপের মডেল নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনাতে যাব।

লেভেল ১ — ইউএক্স আবার কি?

এই পর্যায়ের কোম্পানিগুলো হয় ইউএক্স সম্পর্কে কিছুই জানে না, অথবা জানলেও ইউএক্স তাদের জন্য আদৌ দরকারি বলে মনেই করে না। বিশেষ করে নিশ প্রোডাক্ট ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে মার্কেটে প্রতিযোগিতা থাকে না বলে ধরে নেয়া হয়- প্রোডাক্ট আছে এটাই বড় কথা! আর যাদের মার্কেটে প্রতিযোগিতা আছে, তাদের প্রোডাক্ট ডোমেইন এক্সপার্টরা ভাবে-

“ইউজার কি আমাদের চেয়ে বেশি জানে?”

এই লেভেলের বৈশিষ্ট্যঃ

  • ফিচার ডেভেলপমেন্ট করে ডেলিভারি বা রিলিজ করাই মুখ্য বিষয়।
  • প্রোডাক্ট ডিসকাশনে ইউএক্সের প্রসঙ্গ আসে না।
  • ডেভেলপারদেরকে ডিজাইন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করতে হয়।
  • ইউএক্স ডিজাইন বা ইউএক্স রিসার্চের কোন বালাই নেই।

পরের লেভেলে যেতে হলে-

  • এই লেভেলে কোম্পানির বোধোদয়ের জন্য অপেক্ষা ছাড়া তেমন করার কিছু নেই। কোম্পানি ম্যানেজমেন্টে আপনার অ্যাক্সেস থাকলে আন্যালাইটিকাল ডাটা, কাস্টমার ফিডব্যাক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করতে পারেন। সাথে ইউজাবিলিটির বিষয়টি কথা প্রসঙ্গে তুলে ধরতে পারেন।

২য় লেভেল — অ্যাস্থেটিক ইউএক্স

এই পর্যায়ে এসে কোম্পানি বুঝতে শুরু করে সহজে ব্যবহার করা যায় এমন প্রোডাক্ট বানাতে পারলে লাভ আছে। ম্যানেজমেন্টের অথবা ডেভ টিমের কেউ ইউজারকে নিয়ে ভাবতে কোম্পানিকে আগ্রহী করে তুলেছে কিন্তু ইউএক্স প্রসেস ব্যাপারটা বেশ ধোঁয়াটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডেভেলপাররা প্রোডাক্ট ডেভেলপ করার পর সেটাকে ব্যবহারবান্ধব করার জন্য ডিজাইনারদের বা কনসাল্টেন্টদের নিয়োগ করা হয়। এই ধাপকে ডেভেলপার কেন্দ্রিক ইউএক্স লেভেলও বলা হয়।

“আমরা মোটামুটি বানিয়ে ফেলিছি, এইটাকে এখন সুন্দর করেন!”

এই ধাপের বৈশিষ্ট্যঃ

  • টিম ও ব্যক্তি মতামতের উপর নির্ভর করে ডিজাইন হয়ে থাকে।
  • ভিজুয়াল ডিজাইন এবং ইন্টারেকশন ডিজাইনের কোন পার্থক্য করা হয় না।
  • প্রোডাক্টের ইউএক্স বলতে নান্দনিক ইন্টারফেস ডিজাইনকে বিবেচনা করা হয়।
  • বিচ্ছিন্নভাবে ইউজার ইন্টারভিউ বা সার্ভে করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সেটা তেমন ফলপ্রসূ হয় না।
  • ম্যানেজারদের কাছে বাজেট থাকে না বলে ইউএক্সের জন্য ডেডিকেটেট রিসোর্স ও সময় বরাদ্দ করা হয় না।

পরের লেভেলে যেতে করণীয়ঃ

  • টিমের সবাই বুঝুক বা না বুঝুক, এমনকি নূন্যতম আগ্রহীদের সাথেও ইউএক্স নিয়ে প্রচুর কথা বলতে হবে, ইউজাবিলিটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে হবে। প্রোডাক্টের ইউএক্স কিভাবে আরও ভাল করা যায় তাই নিয়ে ম্যানেজারদের সাথে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
  • নতুন ফিচার ডিজাইনের পরপরই ইন্টারনাল টিম মেম্বারদের নিয়ে ইউজাবিলিটি টেস্ট সেশন করতে হবে। যুক্তিসংগত ফিডব্যাক ইমপ্লিমেন্ট করে আবার টিমের সাথে শেয়ার করতে হবে। এতে ধীরে ধীরে ইউএক্স নিয়ে টিমের মাইন্ডসেট পরিবর্তন হতে থাকবে।
  • ইন্টারনাল টিমের বাইরে অন্যান্য স্টেইকহোল্ডার টিম, যেমন সেলস, মার্কেটিং, সাপোর্ট ইত্যাদি টিমকেও ডিজাইন ফিডব্যাক কালেকশন লুপে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন।
  • মনে রাখবেন, কোম্পানি ইউএক্স ম্যাচুরিটির এই লেভেলে এসেছে কারণ ম্যানেজমেন্ট কিছুটা হলেও ইউএক্সের ব্যাপারে আগ্রহী। তাই পরবর্তী ধাপে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

লেভেল ৩ — ইউএক্স পাইলট প্রজেক্ট

এই লেভেলে এসে কোম্পানি উপলব্ধি করতে শুরু করে যে, শুধু ডিজাইন টিমের অনুমানের উপরে প্রোডাক্টের ব্যবহার বান্ধবতার ভাবনা ছেড়ে দেয়া উচিত হচ্ছে না। এজন্য টিম মেম্বার বা ম্যানেজার ইউজার টেস্টিং করার বা এক্সটার্নাল ইউএক্স এক্সপার্ট হায়ারের উদ্যোগ নেন। এতে করে পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে ইউজারদের চোখে প্রোডাক্টকে দেখে ইউজাবিলিটি ইমপ্রুভ করার সুযোগ তৈরি হয়।

এই ধাপের বৈশিষ্ট্যঃ

  • টিম বা ম্যানেজারের উদ্যোগে প্রোডাক্ট রিডিজাইন বা বড় কোন ফিচারের ইউএক্স ডিজাইনের প্রজেক্ট নেয়া হয়।
  • ইউএক্স এর জন্য স্বল্পপরিমাণে বাজেট বরাদ্দ করা হয়।
  • পাইলট প্রজেক্টের জন্য কোন একটা ইউএক্স মেথডোলজি বা ডিজাইন ফ্রেমওয়ার্ক দূর্বলভাবে অনুসরণ করা হয়।
  • প্রোডাক্ট ডিজাইনে ইউজারকে সাময়িকভাবে সংযুক্ত করা হতে পারে।
  • ইউএক্স ডিজাইনকে আলাদা কোন স্বতন্ত্র শাখা বলে স্বীকৃতি দেয়া হয় না।

পরের লেভেলে যেতে করণীয়ঃ

  • সংশ্লিষ্ট টিমকে বোঝাতে চেষ্টা করুন যে, তারা ইউজারের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে একটু বেশিই এক্সপার্ট। তাদের প্রোডাক্ট নলেজ বেশি হবার কারণে তাদের ফিডব্যাকে বায়াসনেস চলে আসে। তাই সরাসরি ইউজারদেরকে ফিডব্যাক প্রসেসে সংযুক্ত করা শ্রেয়।
  • প্রোডাক্ট ধরতে গেলে একেবারেই আদিম অবস্থায় থাকে বলে, শুধুমাত্র বেসিক ইউএক্স ইমপ্রুভমেন্টের মাধ্যমেও বড় ধরনের ইমপ্যাক্ট দেখানো সম্ভব। তাই এই ধরণের পাইলট প্রজেক্টের সুযোগ কাজে লাগানো বাঞ্ছনীয়।
  • যথাসম্ভব বিস্তারিতভাবে ইউএক্স প্রজেক্টের ডিজাইন ডকুমেন্টেশন করার চেষ্টা করুন, যেখানে ইউএক্স প্রসেসের ধাপগুলোর বর্ণনা এবং সবশেষে ডিজাইনে পরিবর্তনগুলো প্রদর্শন করা হবে।
  • এক্সিকিউটিভ ইউএক্স রিপোর্ট তৈরি করুন। সব টিমের সাথে শেয়ার করুন এবং সুযোগ থাকলে প্রেজেন্টেশন দিন। রিপোর্টে ডিজাইন ডকুমেন্টেশন অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এবং সবশেষে বিজনেস ইমপ্যাক্ট তুলে ধরুন।
  • পরবর্তী ইউএক্স প্রজেক্টের অনুমোদনের জন্য চেষ্টা করতে থাকুন।

লেভেল ৪ — ইউএক্স বাজেট অর্জন

ইউএক্সের প্রাকটিসে আগ্রহী ভিপি, ডিরেক্টর বা উচ্চপদস্থ কেউ ম্যানেজমেন্টকে রাজি করিয়ে ইউএক্সের নিয়ে নিয়মিত কাজের সুযোগ তৈরি করে দিলে এই লেভেলে কোম্পানি পদার্পন করে। সাধারণত লেভেল ৩-এর এডহক বেসিসে চলা পাইলট প্রজেক্টগুলোর প্রসেস ও ফলাফল ম্যানেজমেন্টকে প্রভাবিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অবশ্য বাজেট দিলেও, বিজনেসের সাথে সরাসরি ইউএক্সের কোন নির্ভরতা গড়ে ওঠে না। এই লেভেলে কোম্পানির দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে NN/g এর বক্তব্য মাথায় রাখা জরুরী-

The company mainly views UX as a magic potion that’s sprinkled sparsely over a user interface to shine it up.

এই ধাপের বৈশিষ্ট্যঃ

  • আগের কিছু ইউএক্স প্রয়োগকৃত প্রজেক্টের সফলতার কারণে ইউএক্সের জন্য বাৎসরিক বাজেট বরাদ্দ করা হয়।
  • ইউএক্স করার জন্য ডেডিকেটেট ডিজাইনার বা ইউএক্স স্পেশালিষ্ট নিয়োগ করা হয়।
  • ইউজাবিলিটি টেস্টিং নিয়মিত হতে শুরু করে, যদিও প্রথম দিকে সেটা রিলিজড প্রোডাক্ট নিয়েই বেশি করা হয়।
  • ডিজাইন ডিসিশনে ইউজারদের সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে, তবে তা সবসময় সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে হয় না।
  • কিছু কিছু প্রজেক্টের ক্ষেত্রে ইউএক্স গোল সুনির্দিষ্ট থাকে। এইক্ষেত্রে ইউজার এরর রেট, এফিশিয়েন্সি মেজারমেন্ট, ইউজার স্যাটিস্ফেকশন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হয়।
  • ইউএক্সে সিনিয়র লিডারশীপ বা ম্যানেজমেন্ট থাকে না। সচরাচর তারা প্রোডাক্ট, মার্কেটিং, ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্য কোন লিডের অধিনস্ত থাকে।
  • কোম্পানিব্যাপী প্রজেক্টের জন্য নির্দিষ্ট কোন একটা ইউএক্স মেথডোলজি বা ডিজাইন ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করা হয় না। বিভিন্ন টিম রিসোর্স প্রাপ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রসেস অনুসরণ করতে থাকে।
  • কোম্পানির টপ ডিসিশন মেকার লিডাররা নিজেদের ও মার্কেট কম্পেটিটরদের প্রোডাক্ট ডিজাইন নিয়ে প্রচুর আলোচনা ও মতামত দিতে শুরু করে।
  • ইউএক্স ডিজাইন নিয়ে কোম্পানিব্যাপী আন্ডারস্ট্যান্ডিং এক হয় না। ইউএক্স এক্সপার্টরা প্রোডাক্ট এক্সিকিউশন লেভেলে থাকলেও ম্যানেজমেন্ট লেভেলে থাকে না।

পরের লেভেলে যেতে করণীয়ঃ

  • বাজেট যেহেতু পেয়েছেন, তাই যাবতীয় ইউএক্স আক্টিভিটির ROI দেখিয়ে এটাকে ডিফেন্ড করা জরুরী। আগের ধাপের মত এটা ইউজাবিলিটির চমক দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে না। সময় নিয়ে একাধিক সাকসেস স্টোরির টার্গেট ধরে আগাতে হবে।
  • কনভার্সন রেট বৃদ্ধি, সাপোর্ট কল হ্রাস পাওয়াসহ কোম্পানি অনুযায়ী অন্যান্য মেট্রিক্স নিয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য সামগ্রিক প্রোডাক্টের কাস্টমার জার্নিম্যাপ তৈরি করে, গুরুত্বানুসারে পেইন পয়েন্ট ধরে ধরে কাজ করতে হবে।
  • এই সমস্ত কর্মকান্ডে ইউএক্স এক্সপার্টকে সেনিয়র লাইন ম্যানেজারের সহায়তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তাকে নিজ উদ্যোগে টিমের অন্যান্য সমস্যদেরকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে ইউএক্স প্রসেসের অংশ করে নিতে হবে। নইলে টিম অ্যালাইমেন্ট ও সাপোর্টিভ মানসিকতা গড়ে উঠবে না।
  • ইউএক্স কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা ও ডিজাইন ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট নিয়মিতভাবে ম্যানেজমেন্টের সাথে শেয়ার করতে হবে।
  • রিসার্চ ডাটার সাথে ডিজাইন ডিসিশনের নির্ভরতা বাড়াতে হবে।
  • কোম্পানিব্যাপী সব টিমে ইউএক্স প্রজেক্টের জন্য নির্দিষ্ট কোন একটা ইউএক্স মেথডোলজি বা ডিজাইন ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতে হবে।
  • ডিসিশন মেকিং লেভেলে ইউএক্স লিডারশীপ পারসন নিয়োগের জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। নইলে কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও পরের ধাপে যেতে অন্যান্য ইস্যু দূর করা সম্ভব হবে না।

৫। ইউএক্স টিম গঠন

এই ধাপে এসে বলা যেতে পারে প্রতিষ্ঠানে “ইউএক্স করা হয়েছে”! আগের ধাপে বিক্ষিপ্ত কিছু ইউএক্স বাজেট ছিল, যা কিনা আবার যেকোনো সময় বাতিল হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু ৫ম ধাপে ইউএক্স ম্যানেজারের নেতৃত্বে অফিশিয়াল ইউএক্স টিম গঠিত হয় এবং ইউএক্স ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানের ইউএক্স ও ইউজাবিলিটি জন্য দায়বদ্ধ থাকেন।

এই ধাপের আন্যান্য বৈশিষ্ট্যঃ

  • শুরুতে অল্প কিছু টিম মেম্বার থাকে এবং ক্রমান্বয়ে টিম বড় হতে থাকে।
  • কোম্পানিতে ইউজার টেস্টিং বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে ডেডিকেটেট ইউজাবিলিটি ল্যাব স্পেস বরাদ্দ হয়।
  • এইধাপেও ৪র্থ ধাপের মত ইউএক্স ফোকাস মূলত ডেভেলপমেন্ট পরবর্তী ইউজার টেস্টিং-এই থাকে। পার্থক্য হয় ধারাবাহিকতায় আর রিসার্চ মেথড ব্যবহারের দক্ষতায়। টিম মেম্বাররা একে অন্যের কাছে শিখতে পারে বলে ইউজাবিলিটি রিসার্চের মানও বৃদ্ধি পায়।

পরের লেভেলে যেতে করণীয়ঃ

  • পূর্ববর্তী রিসার্চগুলোর ফাইন্ডিংস একটা ইউজাবিলিটি রিপোর্ট আর্কাইভে রাখা উচিৎ। এতে করে কোম্পানির ইউজার সম্পর্কে জানা ও বোঝা সহজতর হবে। এবং পরবর্তীতে ক্রস-স্টাডি ইনসাইট সাহায্য করবে সিস্টেমেটিক ইউজাবিলিটি প্রসেসের দিকে যেতে যা কিনা ষষ্ঠ ধাপের বৈশিষ্ট্য।
  • ইউএক্স ম্যানেজারকে শুধু ডিজাইনের ভুলত্রুটি ঠিক করায় ব্যস্ত থাকলে হবে না, বরং চলতি ইউএক্স রিসোর্সগুলো ব্যবহার করে অর্গানাইজেশনাল ইউএক্স ম্যাচুরিটি কিভাবে বাড়ানো যায় সেই স্ট্রাটেজি নিয়ে কাজ করতে হবে।
  • নির্দিষ্ট কোন রিসোর্স নির্ভর না হয়ে সামগ্রিকভাবে ডিজাইন প্রসেস ডেভেলপ করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট কোন ট্যালেন্টেড রিসোর্স চলে গেলেও ডিজাইন বা রিসার্চ কোয়ালিটি ব্যাহত না হয়।
  • প্রজেক্ট শেষে টেস্ট করাই শুধু নয়, বরং সিস্টেমেটিক ইউএক্স অ্যাপ্রচে কিভাবে বিজনেস ভ্যালু বৃদ্ধি পায় তা কোম্পানির সিনিয়র ম্যানেজমেন্টদের বোঝার সুযোগ করে দিতে হবে।
  • সব প্রজেক্টে ইউএক্স প্রসেস ফলো করার মত বাজেট যেহেতু থাকবে না, তাই ইউএক্স ম্যানেজারকে বুঝেশুনে সম্ভাবনাময় প্রজেক্টগুলো বেছে নিতে হবে যাতে ঠিক আগের পয়েন্টটাতে সুবিধা হয়।

৬। সমন্বিত UCD প্রসেস

এই লেভেলে কোম্পানি উপলব্ধি করে যে সত্যিকারের ইউজার সেন্ট্রিক ডিজাইন প্রসেস আসলেই দরকার। এবং ইউএক্স কোন জাদুর পানিপড়া নয় যে, শেষ মূহূর্তে ইউজার ইন্টারফেসের উপর ছিটিয়ে দিলেই চলবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের ডিজাইন শুরু হবার আগেই ইউজার রিসার্চ শুরু হয়ে যায়। উপরন্তু কোম্পানিতে ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনের জন্য সেন্ট্রালাইজড ডিজাইন সিস্টেম থাকে।

A_Method-Independent_Process_Model_of_User-Centred_Design

সেইসাথে টপ ম্যানেজমেন্ট ইউজার এক্সপেরিয়েন্স কোয়ালিটি ইনডিকেটর অন্যান্য বিজনেস ইনডিকেটরের মতই গুরুত্বসহকারে মনিটর করতে শুরু করে এবং ইউজারের হাতে যাবার আগেই দূর্বল ডিজাইন মেরামত করে ফেলা হয়।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কোম্পানি উপলব্ধি করে যে এক রাউন্ডের ইউজাবিলিটি ফিক্সিং এর মাধ্যমে বেস্ট ইন্টারফেস কোয়ালিটি নিশ্চিত করা যায় না, বরং পুনরাবৃত্তিমূলক ডিজাইন প্রসেস মেনে সর্বোত্তম ফলাফল পাওয়া যায়।

এই ধাপ অতিক্রম করতে চাইলে আপনাকে কোম্পানির সব ম্যানেজারদের উপলব্ধি করাতে হবে যে, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স তাদের কাজেরও অংশ এবং ইউজার রিসার্চের রেজাল্ট তাদের কাজের মান ও সন্তুষ্টি বাড়াতে সহায়তা করবে।

৭। ইউজার কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান

আগের ধাপে কোম্পানি ফিল্ড স্টাডিজ শুরু করেছিলো তা এই ৭ম ধাপে এসে আর্লি ইউজার রিসার্চে রূপ নেয়। ম্যাচুরিটি লেভেল ৭ এ এসে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এর প্রতিটি ধাপে ইউজার ডাটার উপর নির্ভর করে কাজ শুরু হয়।

অন্যদিকে ৬ষ্ঠ ধাপের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স কোয়ালিটি বিবেচনা করাতে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও কোয়ান্টিটিভ ইউজাবিলিটি মেট্রিক্স কোম্পানি ট্র্যাক করতে এবং প্রতিটি প্রজেক্টেই একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলা শুরু করে।

What is UX Management? | Interaction Design Foundation (IxDF)

শুরুর দিকের কম ম্যাচুরিটি লেভেলে থাকা অবস্থায় কোম্পানি যে সার্ভিস বা প্রডাক্ট বানাচ্ছিল তা ব্যবহার বান্ধব করার জন্য ইউজাবিলিটি রিসার্চ করে। অন্যদিকে, সপ্তম ধাপে এসে ইউজার ডাটার উপর নির্ভর করেই কি বানানো হবে তার সিদ্ধান্ত নেয়।

জ্যাকব নেলসনের ভাষ্য অনুযায়ী, ইন্টারেকশন ডিজাইনের চূড়ান্ত নির্বাণ হল এই ধাপ- দ্য ইউএক্স নির্ভানা!

পরিশিষ্ট

উপরে যেভাবে আলোচনা করা হলো, বাস্তবে প্রতিষ্ঠানগুলো এমন তাত্ত্বিক ধাপ ধাপে এগোয় না। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বরং ভিন্ন ভিন্ন লেভেলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য মিশ্রভাবে পরিলক্ষিত হয়। তা সত্ত্বেও, লেভেলগুলোর মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূল্যায়ন করলে আমরা পরবর্তী উন্নতির জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারি।

জ্যাকব নেলসন, জারেড স্পুল ও অন্যান্য ইউএক্স লিডাররা লেভেল আপের বিষয় নিয়ে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন, সেগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক-

১। নিজের প্রতিষ্ঠানের ইউএক্স ম্যাচুরিটি নির্ণয় করুন। নো দাইসেলফ! ভাল ও কার্যকরী বিষয়গুলো ধরে রাখার চেষ্টা করুন এবং দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য পরিকল্পনা করুন ও পদক্ষেপ নিন।

২। আপনি যদি ইন্টারফেস ডিজাইনের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকেন, তাহলে প্রতি ধাপ অতিক্রমে আপনাকেই এজেন্ট অব চেঞ্জ হিসাবে কাজ করতে হবে। আর এজন্য শুধু ডিজাইন বা রিসার্চ স্কিল ডেভেলপ করাই যথেষ্ট নয়, এর সাথে সাথে ডিজাইন প্রসেস, টুলস, ডেলিভারেবলস, লিডারশীপ ইত্যাদি বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে।

৩। প্রতিবার শুধু একটি ধাপ নিয়ে স্ট্রাটেজি নির্ধারণ করুন। বর্তমান পরিস্থিতি ও ডিজাইনে ইউজারদের চাহিদার ক্রম বিশ্লেষণ করে কর্মপদ্ধতি ঠিক করুন।

৪। লেভেল, স্কোপ, বাজেট, রিসোর্স মাথায় রেখে ইউজার রিসার্চ করার চেষ্টা করুন। ইউজার সার্ভেই যদি করতে না পারেন, তাহলে ইউজাবিলিটি ল্যাবের জন্য ছোটাছুটি করে লাভ হবে না।

৫। রিসার্চ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল। তাই যথাযত রিসার্চ প্ল্যান করে ম্যানেজমেন্টকে আপ্রোচ করুন।

৬। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন ইউএক্স সংক্রান্ত ট্রেইনিং, ইভেন্ট, পাঠচক্র ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করার উদ্যোগ নিন। এবং সর্বপরি যতবেশি সম্ভব স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়ে ইউএক্স প্রজেক্ট করার চেষ্টা করুন। কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত শিক্ষাই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি আনতে পারে।

# ইউএক্স ম্যানেজমেন্ট কোর্স

সামনে পেয়ে কোর্স অডিট করে কিছুটা তথ্যবহুল বলেই মনে হয়েছে। আগ্রহী হলে এই লিঙ্ক থেকে কোর্সের সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন-

🙌

সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কোন অসঙ্গতি বা ভুল তথ্য উপস্থাপন চোখে পড়লে অনুগ্রহ করে জানাবেন, সংশোধন করে নেব।

আর, এই আর্টিকেলের কোন তথ্য যদি প্রয়োজনীয় বা কৌতুহল-উদ্দীপক বলে মনে হয়ে থাকে, তাহলে বন্ধু বা সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

--

--

Shad Iqbal

UX Lead at 10 Minute School, Contributor at UX Bangladesh, Focusing on edtech, user research, product psychology, UX strategy and design ops