যেভাবে কোন সিনিয়র ডিজাইনারকে এপ্রোচ করা উচিত

Thauhid Hussain Chowdhury
6 min readSep 15, 2022

--

বর্তমানে বাংলাদেশের ডিজাইন কমিউনিটিগুলোর এক্টিভিটি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশ চোখে পড়ার মতো এবং অনেক জুনিয়র ডিজাইনাররা সেখান থেকে বিভিন্ন বিষয় জানতে ও শিখতে পারছে। এছাড়াও অনেক সিনিয়র ডিজাইনাররা নিজে থেকেই কমিউনিটিতে কন্ট্রিবিউট করতে এগিয়ে আসছেন যেটি আক্ষরিক অর্থেই বেশ চমৎকার একটি বিষয়। জুনিয়র ডিজাইনার হিসেবে অনেকেই নিজের লার্নিং প্রোগ্রেসকে আরেকটু বুষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিনিয়রদের সহযোগিতা কামনা করে থাকে।

তবে স্বাভাবিকভাবেই সিনিয়রদের বেশ ব্যস্ততা থাকে। যার কারণে তাদের সাথে যোগাযোগ করে সাহায্য পাওয়ার বিষয়টা মাঝে মাঝে একটু কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে যায়। তার উপর যদি যোগ হয় জুনিয়রদের শিষ্টাচারের ঘাটতি, তাহলে পুরো বিষয়টি একেবারেই লেজেগোবরে হয়ে যায়। জুনিয়ররা বুঝতে পারেনা তাদের ভুল কোথায়, আর সিনিয়রদের হাতে সবাইকে ধরে ধরে বোঝানোর মতো সময় (মাঝে মাঝে আগ্রহও) থাকেনা। দুই দিকেই বিরক্তির উদ্রেক হয়, যার প্রভাব পড়ে পুরো কমিউনিটির উপর।

আশার কথা হচ্ছে, জুনিয়র হিসেবে সিনিয়রদের এপ্রোচ করার আগে কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে এই বিষয়ে ডিজাইন কমিউনিটির বেশ কিছু সিনিয়র তাদের মতামত শেয়ার করেছেন। সেই আলোচনাই হচ্ছে এই আর্টিকেলের মুল বিষয়বস্তু। এটিকে একটি বেসিক গাইডলাইন হিসেবে ধরা যেতে পারে।

Read the English version of this article here.

মেসেজ দেবার পূর্বে

কিছু জিজ্ঞেস করার আগে রিসার্চ (গুগল) করুন

সিনিয়রদের কাছে কোন কিছু জানতে চাইবার আগে সেই বিষয়ে ভালভাবে রিসার্চ করুন। আরো সহজ করে বললে, সিম্পলি সেই বিষয়টি লিখে গুগলে সার্চ দিন। পরবর্তী কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার প্রায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর জানা হয়ে যাবে। গুগল ছাড়াও মিডিয়াম, ইউটিউব এমনকি ডিজাইন কমিউনিটির গ্রুপগুলোতেও পোস্ট সার্চ করে দেখতে পারেন। একেবারেই যদি আপনার প্রশ্নের উত্তরটি খুঁজে না পান, শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সিনিয়রদেরকে নক করা যেতে পারে। যেই প্রশ্নের উত্তর গুগলে আছে, সেটি সিনিয়রদের জিজ্ঞেস করার অর্থ হচ্ছে আপনি অলস, আপনি বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস না এবং সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ সমস্যা হচ্ছে, সিনিয়রদের সময়ের দাম আপনার কাছে নেই।

ব্যক্তিটি সম্পর্কে জানুন

যাকে প্রশ্ন করবেন, তার সম্পর্কে জানা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তার নাম কি, সে কোথায় কাজ করে ইত্যাদি জানাই যথেষ্ট নয়। বরং তার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আরো ভালোভাবে রিসার্চ করা জরুরি। লিংকডিন হচ্ছে খুবই চমৎকার একটি প্লাটফর্ম যেখান থেকে আপনি তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন শুধুমাত্র তার প্রোফাইল এনালাইসিস করে। কাউকে নক করার আগে তার সম্পর্কে জানার বিষয়টি আপনার কনফিডেন্স বাড়াতে সাহায্য করবে।

যোগাযোগের জন্য সঠিক মাধ্যম নির্বাচন করুন

প্রফেশনালি ব্যবহারের জন্য লিংকডিনকে একটি উপযুক্ত কমিউনিকেশন প্লাটফর্ম হিসেবে ধরা হয়। যদিও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের (যেমন: ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ, টেলিগ্রাম ইত্যাদি) মাধ্যমেও তাদের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ফ্রি মেন্টরিং প্রোগ্রামের জন্য ADPList প্লাটফর্মটিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।

টাইম-জোনে নজর রাখুন

কমিউনিটির বেশ ভাল সংখ্যক সিনিয়র ডিজাইনার দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ভিন্ন ভিন্ন দেশে অবস্থান করার কারণে তাদের টাইমজোনের সাথে আমাদের টাইমজোনের বড় রকমের পার্থক্য রয়েছে। তাই, দেশের বাইরে অবস্থানকারী সিনিয়দের নক করার আগে তাদের টাইমজোন চেক করে নিন। তারা ঘুমিয়ে যেতে পারে এমন সময়ে তাদের মেসেজ না পাঠানোই ভালো। কোনো কারণে নোটিফিকেশনের সাউন্ডে তাদের ঘুমের ব্যঘাত ঘটলে এবং সেটার কারণ হিসেবে আপনাকে আবিষ্কার করলে, সেটি মোটেই ভালো কোন ইম্প্রেশন তৈরি করবে না।

হাতে সময় নিয়ে মেসেজ পাঠান

মেসেজ পাঠানোর পর এমন হতে পারে যে, সেই সময়ে তিনি এভেইলেবল আছেন এবং তখনই তিনি কথা বলতে চাচ্ছেন বিষয়টি নিয়ে। তাই বেটার রেসপন্স পাবার জন্য একই সময়ে আপনারও এভেইলেবল থাকাটা জরুরি। তাই হাতে সময় নিয়ে তাদের মেসেজ পাঠান যেন পরবর্তী মোটামুটি ৩০ মিনিট আপনি ফ্রি থাকেন।

মেসেজ দেবার সময়

প্রথম মেসেজেই প্রশ্নটি বলুন

কেউ যদি মনে করে থাকেন যে আগে সালাম দেই পরে প্রশ্ন করবো, তাহলে সিনিয়রের রিপ্লাই পাবার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। কারণ তিনি যদি ফ্রি হয়ে রিপ্লাই দেন ও, আপনি তখন প্রশ্ন করার জন্য অনলাইনে নাও থাকতে পারেন। এজন্য তারা এ ধরণের মেসেজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এভয়েড করে থাকেন। তাই, প্রথম মেসেজে সম্ভাষণের সাথেই আপনার প্রশ্নটি বলুন। তাহলে পরবর্তীতে যখন তিনি ফ্রি হবেন তখন সহজেই উত্তরটি দিয়ে দিতে পারবেন।

নিজের পরিচয় দিন

সরাসরি প্রশ্নে যাওয়ার আগে নিজের সম্পর্কে কিছু বলা ভদ্রতার মধ্যে পড়ে। একেবারেই অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে গেলে আমরা সাধারণত নিজেদের পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করি। তবে এই ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম হবে? পরিচয় দেবার স্টাইলের মধ্যেও আপনার ম্যানার এবং প্রফেশনালিজম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তাই এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখুন।

কনটেক্সট উল্লেখ করুন

প্রশ্ন করার সময় তাদেরকে যথেষ্ট কনটেক্সট দিন। এতে তাদের উত্তর দিতে সুবিধা হবে। কারণ, সঠিক উত্তরটি কনটেক্সটের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।

প্রফেশনের সাথে রিলেটেড প্রশ্ন করুন

প্রশ্ন করার আগে সেই সিনিয়রের প্রফেশনাল ব্যকগ্রাউন্ডের কথা মাথায় রাখুন। এমন প্রশ্ন করবেন না যেটির সাথে তার প্রফেশনের সরাসরি সম্পর্ক নেই। প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আপনার জিজ্ঞাসার জন্য একজন ইউআই ডিজাইনারকে নক করলে সেটি বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। তিনি হয়তো উত্তরটা জানতে পারেন, তবে এই ধরণের প্রশ্ন তিনি আশা করবেন না এটাই স্বাভাবিক। আর যদি করেও ফেলেন, তাহলে এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, আপনি কোন চিন্তাভাবনা এবং ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ ছাড়াই প্রশ্ন করে বসেছেন।

বিনয়ী হোন

সিনিয়র ডিজাইনারের সাথে কথা বলার সময় বিনয়ী হোন। তারা কিন্তু আপনাকেই সাহায্য করার জন্য নিজের ব্যস্ততা থেকে কিছুটা সময় বের করেছেন। তাদের সাথে কোনো বিষয়ে মতের অমিল হলে বিনয়ের সাথে সেটি বলুন অথবা এড়িয়ে যান। কে সঠিক — এটি নিয়ে বিতর্ক করার কিছু নেই। তাদের সাথে সহজ ও সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখুন। পরবর্তীতে আরো অনেক বিষয় নিয়ে সিনিয়রদের সাথে আলোচনা করার সুযোগ তৈরি করে দেবার জন্য বিনয়ের বিকল্প নেই। মনে রাখবেন, জ্ঞান মানুষকে বিনয়ী করে তোলে।

শেখার আগ্রহ এবং কমিটমেন্ট দেখানোর চেষ্টা করুন

আপনার এপ্রোচ দেখে যেন বোঝা যায় যে আপনি বেশ সিরিয়াস এবং তার কাছ থেকে কিছু শিখতেই এখানে এসেছেন। এক ধাক্কায় সবকিছু জেনে ফেলার চেষ্টা না করা এবং সবকিছু জানেন এমন ভাব না দেখানোই শ্রেয়। বরং আপনার রেসপন্স এবং কাজের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিন যে আপনি ডেডিকেটেড এবং নতুন কিছু শিখতে ভীষণভাবে আগ্রহী। একইসাথে, সিনিয়রদের পরামর্শ বা উপদেশকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন।

হুট করে চাকরি চেয়ে বসবেন না

কাউকে হুট করে চাকরি দেবার জন্য অনুরোধ করা উচিত নয়। এতে আপনার আনপ্রফেশনালিজম প্রকাশ পায়, যার কারণে হয়তো সুযোগ থাকলেও সে আপনাকে রিকমেন্ড করবেনা। তার চেয়ে বরং অপেক্ষা করুন তার কোম্পানিতে জবের ভ্যাকেন্সির জন্য এবং কমিউনিকেশনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিন আপনি জবটির জন্যে এপ্লাই করাতে আগ্রহী।

কাউকে জবের জন্য এপ্রোচ করার সময় নিচের বিষয়গুলো মেইনটেইন করুন,

  • রেফারেন্স দিন (জবটি সম্পর্কে কোথা থেকে জানতে পেরেছেন বলুন)
  • নিজের সম্পর্কে তথ্য দিন
  • রেজুমে এবং লিংকডিন প্রোফাইল এটাচ করে দিন

মেসেজ দেবার পর

তাড়াহুড়ো করবেন না

সিনিয়রদের কাছ থেকে সাথে সাথে রিপ্লাই না পেলে অনেকে আরো বেশ কয়েকটি মেসেজ দিয়ে তাদেরকে তাড়া দিয়ে থাকেন, যেই কাজটি একেবারেই দৃষ্টিকটু। তাদেরকে তাদের সুবিধা অনুযায়ী রিপ্লাই দেবার সুযোগ দিন। যদি এমন হয় যে ২/৩ দিন পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু রিপ্লাই পান নি, তাহলে সুন্দর করে একটি রিমাইন্ডার দিন। মনে রাখবেন, আপনার প্রত্যকটি ছোট ছোট অ্যাকশন তাদের কাছে আপনার ইম্প্রেশন তৈরি করতে সাহায্য করবে।

তাদের কলিগ এবং ফ্যামিলি মেম্বারদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবেন না

টুকটাক ২/১ বার মেসেজে কথা হলেও, একজন সিনিয়রের ব্যক্তিগত জীবনে অতি অবশ্যই আপনি একজন বহিরাগত। আপনি তার সাথে সর্বোচ্চ ফেসবুক অথবা লিংকডিনে কানেক্টেড হতে পারেন। অনেকে আবার অপরিচিত কারো সাথে ফেসবুকে কানেক্ট হওয়াও প্রেফার করেন না। সেখানে ২/১ বার কথাবার্তা হবার পরে আপনি যদি মনে করেন, তার কো-ওয়ার্কার এবং ফ্যামিলি মেম্বারদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো যায়, তাহলে এটি খুবই আনপ্রফেশনাল একটি কাজ হবে। আপনি স্পষ্টতই তার পার্সোনাল স্পেসে ঢোকার চেষ্টা করছেন যেটি করে আপনার কোন বেনিফিট নেই।

উপসংহার

আশা করছি এই পরামর্শগুলো ফলো করার মাধ্যমে জুনিয়র ডিজাইনাররা সিনিয়রদের এপ্রোচ করার সুযোগটি কার্যকর ভাবে সদ্ব্যবহার করতে পারবে। একই সাথে জুনিয়রদের এটিকেট নিয়ে সিনিয়রদের বিরক্তি কমে আসবে এবং স্বতস্ফুর্ত ভাবে তারা কমিউনিটিতে কন্ট্রিবিউট করতে আগ্রহী হবে। এই পুরো বিষয়টি আমাদের ডিজাইন কমিউনিটিতে পজিটিভ প্রভাব ফেলতে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।

Translated from English by Shaown Setu

--

--