ভিডিও গেমের আজ-কাল…

Marium Tasnuva Granthi
Battery Low Interactive
4 min readFeb 25, 2020

ভিডিও গেম… শব্দ দুইটি শুনলে কি মনে পড়ে বলুন তো? আপনি যদি ৯০ দশকের হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মনের আঙ্গিনায় উঁকি দিয়ে উঠবে স্কুল পালিয়ে ভিডিও গেমের দোকানে কাটানো কিছু সময়। বাবা মায়ের পকেট থেকে না জানি কত বারই টাকা সরিয়েছে জি টি এ, ফ্রগার বা সুপার মারিও ব্রোজ খেলার জন্য। গগনচুম্বি ইমারত গুলো যেদিন থেকে বিকেলের মাঠ কেড়ে নিল সেদিন থেকে ভার্চুয়াল গেমের প্রতি মানুষের ঝোঁক আরো বেড়ে যায়।

৯০ এর দশকে বাংলাদেশে একটি গেম খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে ছিল। যা “মোস্তফা” নামে খুবই জনপ্রিতি পেয়েছিল। জনপ্রিয়তা পাওয়া গেমটির আসল নাম ‘ক্যাডিলাকস্ অ্যান্ড ডাইনোসরস’। অনেকের গেমিং জগতে হাতেখড়ি হয়েছে এই ভিডিও গেমের মাধ্যমে। অন্যান্য আর্কেড গেমের মতো এই গেমটিও গেমের দোকানে গিয়ে কয়েন দিয়ে খেলতে হতো। ‘জিনোজোইক টেলস’ নামের এক কমিক বুক সিরিজ অবলম্বনে ১৯৯৩ সালে জাপানিজ গেম ডেভলপার কোম্পানী ক্যাপকম এই গেমটি বাজারে আনে। একই বছর টেলিভিশনে প্রচারিত ক্যাডিলাকস্ অ্যান্ড ডাইনোসরস নামের একটি অ্যানিমেটেড সিরিজের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করার উদ্দেশ্যে মূলত এই গেমটির জন্ম।

চার বন্ধু, রাসেল কে, স্টিভ হেমন্ড, ডেভিড জোনস ও মাইক ডেইলি। বন্ধুদের মধ্যে ডেভিড জোনস ভিডিও গেম তৈরি করতেন তাঁর নিজের ডিএমএ ডিজাইন প্রতিষ্ঠান থেকে। এ প্রতিষ্ঠানের নাম এখন রকস্টার গেমস্লাম। ডেভিড জোনসের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে। ছোটবেলা থেকেই নিজের শহর নিয়ে কিছু একটা করতে চাইতেন। ইচ্ছা ছিল, শহরটাকে বাইরের মানুষও চিনুক। অন্যদিকে, মাইক ডেইলি ছিলেন একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তাঁর ইচ্ছা ছিল, তিনি ভার্চুয়াল থ্রিডি অ্যানিমেশন বানাবেন এবং একটি গেম তৈরির চিন্তা করছিলেন। প্রথমে তাঁরা দুজনেই ভেবেছিলেন, পুলিশ কর্মকর্তাকে নায়ক চরিত্রে বসাবেন। কিন্তু তখন সময়টা ছিল গ্যাংস্টারদের। একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁরা দেখতে পান, কিছু গ্যাংস্টার একটা দোকানে ঢুকে দোকানের মালিককে পেটাচ্ছে। তারা জানতে পারলেন, দোকানের মালিক টাকা দেবে না বলে জানিয়েছিল গ্যাংস্টারদের। হঠাৎ করে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। গ্যাংস্টাররা ছুটে পালিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও পুলিশ সেই গ্যাংস্টারগুলোকে ধরতে পারে না। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিছুক্ষণ পর তাঁরা কর্মস্থলে ফিরে আসেন। এরপর দুই বন্ধু বুঝতে পারলেন, পুলিশ চরিত্র নিয়ে গেম বানালে সেটি আকর্ষণীয় হবে না। ভিলেন হয়ে খেলতেই মানুষ বেশি মজা পাবে। তাঁরা আরও চিন্তা করলেন পুলিশ হয়ে ভিলেনের পেছনে না ঘোরার; ভিলেন হয়ে পুলিশকে পেছনে পেছনে ঘোরানো বেশি মজার হবে। সেই থেকে যাত্রা শুরু। এই গেমের প্রতিটি পর্বেই বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে খেলা যায়। গেমটিতে আপনি যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন উড়োজাহাজ, গাড়ি, নৌকা ইত্যাদি।

মনে পড়েছে কোন গেমের কথা বলা হচ্ছে? ১৮ বছর ধরে গেমসের জগতে শক্ত অবস্থানে ছিল গ্র্যান্ড থেফট অটো — জিটিএ। এমন না জানি কত ভিডিও গেম প্রতিবার কেড়ে নিয়েছে রাতের ঘুম। তৈরী করেছে ধমনীতে উত্তেজনা। বাঙ্গালীরা কিন্তু ভিডিও গেম খেলেই ক্ষান্ত হয় নি, তারা স্বপ্ন দেখেছে এবন প্রতিবার বাংলাদেশ কে উপহার দিয়েছে তাদের স্বপ্নের ফসল।

একবিংশ শতাব্দির শুরুর সাথে বাংলাদেশে হাতে খড়ি হয় গেমিং ইন্ডাস্ট্রির। “ঢাকা রেসিং” নামক একটি থ্রিডি গেমের হাত ধরেই শুরু হয় বাংলাদেশের গেম ডেভেলপমেন্ট। ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত দুই যুবকের তৈরি এই গেম সারা দেশের অনেক মানুষের মন জয় করে এবং এক বছরের মধ্যেই বাজারে আসে “চিটাগং রেসিং”।

২০০৪ সালের “অরুণদয়ের অগ্নিশিখা”-র জন্ম দেয় ত্রিমাত্রিক ইন্টার‍্যাক্টিভ। ৭১ এর চেতনাকে যুবসমাজের মাঝে তুলে ধরাই ছিল এই গেমের মুল উদ্দেশ্য। এটি ছিল একটি ফার্স্ট পারসন শুটার গেম।

২০১২ সালে বাংলার মেধাবী তরুণেরা তৈরি করে বাংলার প্রথম অনলাইন মাল্টি প্লেয়ার গেম “Aerial Multi-Player Dogfight”। এই গেমের বৈশিষ্ট্য হল এটি প্লেয়ারের শারীরিক মুভমেন্ট এবং কণ্ঠস্বর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার মন জয় করে “Liberation 71”। এছাড়াও ২০১৪ এর “হাতিরঝিল; ড্রিম বিগিনস”, ২০১৫ এর “দা রিলস; ওয়েল্কাম টু বাংলাদেশ”, “হিরোজ অফ ৭১” সহ আরো অনেক গেম প্রমান করে দিয়েছে বাংলার ছেলেমেয়ের শুধু পালিয়ে গেম খেলার নেশায় থেমে নাই। তারাও পারে তাদের কল্পনার জগতকে ভার্চুয়াল রুপ দিতে।

স্কুল পালিয়ে ভিডিও গেম খেলা এই মানুষগুলোর স্বপ্নডানায় ভর করে বাংলাদেশ আজ দক্ষিন এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম ভিডিও গেমিং মার্কেটে পরিনত হয়েছে। দেশের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা “দ্য ডেইলি স্টার” এর ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ অনুযায়ি বাংলাদেশের বর্তমান গেমিং মার্কেট ৫০০ কোটি টাকা সমমানের। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারনে বাংলাদেশের অনলাইন গেম প্লেয়ারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

তাই এখন আর কেউ বলবে না “গেম খেলে কি হবে?” । কারন, যারা গেম খেলে তারাই স্বপ্ন দেখে নিজের ভার্চুয়াল দুনিয়ার আর এরাই হবে আগামী প্রজন্মের গেম ডেভেলপার।

--

--