তারা এখন ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার
মাত্র ১ বছর আগে খুঁজে খুঁজে প্রায় ৩০ জনের মত স্টুডেন্ট জোগাড় করেছিলাম, মূলত স্টুডেন্ট হিসাবে নয়, গাইড হিসাবে প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্য। এর মধ্যে বড় ভাই, ছোট ভাই, বন্ধু-বান্ধব সহ সবই ছিলো। নিয়মিত নক দিতাম, বলতাম কি অবস্থা কি খবর। উনাদের মোটিভেশন ছিল শীর্ষে, শিখেই ছাড়বেন। এদের মধ্যে ৪ জন সার্টিফিকেট পেলেন ফ্রিকোডক্যাম্প হতে। পথ তো কেবল শুরু।
সরাসরি ফ্রি কোড ক্যাম্পে যাইনি আমরা, এবং ফ্রি কোড ক্যাম্প আমাদের গন্তব্য নয়। এটা আমাদের মূল গন্তব্যে যাওয়ার একটা ছোট পথ। এই ছোট পথ পাড়ি দিতেও অনেক ঝড় পেড়োতে হয়েছে। এতটুকু পথ পাড়ি দেবার আগে প্রচুর পরিমাণে ভিডিও দেখতে হয়েছে, টিউটোরিয়াল দেখতে হয়েছে, দিন রাত পরিশ্রম করতে হয়েছে। নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়েছে। হয়তো কখনো সময় মিলেনি, কখনো পরীক্ষা ছিলো, কখনো কেউ কেউ অসুস্থ ছিলো। কিন্তু তারপরও উনারা এগিয়ে গেলেন। বলতে বলতে শিখে ফেললেন। এত কিছুর পর উনারা অবশ্যই জানেন যে রাস্তা মাত্রই শুরু হলো।
এখন আসি মূল কথায়, একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন, উনাদের সার্টিফিকেট দেখে হয়তো আপনিও খুব মোটিভেটেড হলেন, শিখতে চাইলেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। আহ, আজই শিখে ফেলবেন প্রোগ্রামিং।
না, ব্যাপারটা এমন না।
৩০ জন হতে মাত্র ৪ জন টিকে আছেন, এই কথাটার মানে হলো বাকি ২৬ জন পিছিয়ে গেছেন। উনাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের রাস্তা নিজেরা তৈরি করে নিয়েছেন, হয়তো আমার দেখানো রাস্তা পছন্দ হয়নি বলে। কেউবা সঠিক মোটিভেশনের অভাবে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। আর বাকিরা হাল ধরার আগেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
প্রোগ্রামিং শেখার জন্য আমি বরাবরই উৎসাহ দিতাম। শিখতে বলতাম, শেখাতে বলতাম। কিন্তু উৎসাহই সব নয়। ওই ২৬ জনের মধ্যে ২০ জনই দেখা যাবে এখনো কোন কিছুই শিখতে পারেন নি। উনারা এখনো রাস্তা খুজতেসেন, এখনো কারো আশায় বসে আছেন, আর এদিকে ইনারা এগিয়ে গেলেন, মাঝখান দিয়ে চলে গেল ১ বছর। চাকরি, বাকরি, অসুস্থতা, সহ হাজারো অজুহাত দেখিয়ে উনারা কি নিজেদেরই ক্ষতি করেননি?
আজ হতে ১ বছর পরের কথা চিন্তা করুন। এই ৩০ জনের মধ্যে যারা এগিয়ে গেলেন, তারা ত সব বাধা বিপত্তি পার হয়েই এগিয়ে গেলেন। এরা আরো এগিয়ে যাবে, হাল না ছাড়ার আগ পর্যন্ত। হয়তো ইনারা আরো উপরের অনেক কিছু শিখবেন। হয়তো একসময় ইনাদের কাছেই অনেকে শেখার জন্য নক দিবেন। হয়তো ইনাদেরও নাম ডাক হবে।
আর যারা হালই ধরে নাই, টং দোকানে গিয়ে আর মোবাইলে COC, লুডুস্টার খেলে, সময় নষ্ট করলেন, তারা? তারা ওই বছরও টং দোকানে সময় পার করবেন, আর নতুন কোন গেমস এলে সেটা খেলবেন।আর হয়তো এদিক ওদিক গিয়ে চাকরির জন্য দৌড়াদৌড়ি করবেন। কিন্তু চাকরি ত সোনার হরিণ। আর আপনাকে শেখানোর জন্যও ত কেউ বসে থাকবে না, দুনিয়া দুনিয়ার মত এগিয়ে যাবে। এখন সময়টা নষ্ট করবেন, আর পরে গিয়ে হা হুতাশ করবেন।
চলার পথে বাধা আসবে, প্রশ্ন আসবে। শিখতে গেলে মনে হবে ইংরেজি কি আমাকে দিয়ে হবে? আমার কম্পিউটার আর ইন্টারনেট স্পিড দিয়ে হবে? এইসব শিখলে কি আমার আদৌ চাকরি হবে? কাজ করতে গেলে কি আমাকে ভিডিও কলে থাকতে হবে? কাজ করলে টাকা কিভাবে পাবো? আমি একা একা এতকিছু কিভাবে শিখবো? এত কিছু শিখে কি লাভ?
এত প্রশ্ন না করে, সময় থাকতে শিখে ফেলুন, বাধা বিপত্তি যখন আসবে তখনেরটা তখন দেখা যাবে। না শিখলে সময়টাই লস হবে, আর শিখে ফেললে পরে বলতেও পারবেন যে কিছু একটা ত শিখেছি, কিছু একটা ত করেছি।