গবেষণাপত্রে ফার্স্ট অথর হতে চাইলে

আর যেভাবে ফার্স্ট অথর হওয়া যায় না

Enayetur Raheem
dataskool
5 min readAug 6, 2019

--

Photo by Luca Onniboni on Unsplash

এই টপিক নিয়ে লিখতে গিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করলাম কেন এসব নিয়ে লিখছি। কেন এরকম “হাউ টু” ধরনের আর্টিকেল লেখার প্রয়োজন বোধ করছি? সেটির ব্যাখ্যা ছোট করে হলেও আগে দিতে হবে।

সোস্যাল মিডিয়ায় বিচরণের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে দেশে ইদানিং গবেষণা করার উদ্যোগ লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে। আমাদের সময়ের তুলনায় তো বটেই, তিন চার বছর আগেও ব্যাপারটি এমনভাবে নজরে পড়েনি। গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই অনুভব করছে — এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু কেন গবেষণার জন্য বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীরা আগ্রহী হয়ে উঠছে, দীর্ঘদিন শিক্ষা ও গবেষণার সাথে জড়িত থাকার কারণেই প্রশ্নটি মনে জেগেছে।

এর কারণ অনুসন্ধান করতে আরেকটি গবেষণা করতে হবে সেটি অবশ্যই আমি করিনি বা করার কোন পরিকল্পণাও নেই। তবে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছি যেগুলোর মধ্যে দুটি আমার বিচারে উল্লেখযোগ্য।

প্রথম এবং সম্ভাব্য প্রধানতমটি হচ্ছে এ প্রজন্মের ছেলেপেলেরা তাদের ডিগ্রি সম্পন্ন করার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এ দেশ তাদের ছাড়তে হবে। অর্থাৎ যেমন করেই হোক বিদেশে চলে যেতে হবে। আর তারা কোন না কোন ভাবে বুঝতে পেরেছে যে এ্যডমিশন নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য গবেষণার অভিজ্ঞতা দরকার। উপরন্ত তাদেরকে কে বা কারা মাথায় ঢুকিয়েছে যে গবেষক হিসেবে বেশকিছু পেপার তাদের থাকতেই হবে। যদিও পরিসংখ্যানের ছাত্রদের বিদেশে এডমিশনের জন্য পেপার থাকা অতিশয় জরুরী নয়, তবুও যার পেপার থাকবে সে হয়ত বাড়তি মনোযোগ পাবে।

দ্বিতীয় গ্রুপে আছে যারা দেশেই থাকবেন বলে স্থির করেছেন কিন্তু প্রমোশনের জন্য পেপার পাবলিশ করা প্রয়োজন।

আমি মোটামুটি কনভিন্সড যে এই দুই গ্রুপ যে করেই হোক নিজেদেরকে বিভিন্ন গবেষণার সাথে জড়িত করতে চান।

শুধু জড়িত থাকতেই নয়, একেবারে ফার্স্ট অথর হতে চান!

আজকের এই লেখায় ফার্স্ট অথর হওয়ার জন্য যা যা করতে হবে সে সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। পেপার এর ফার্স্ট অথর হওয়ার জন্য কী ধরনের কাজ করতে হয় সেটি গুগল আমাদের অনেকের থেকে ভালো জানে। কিন্তু পরিচিত কারো কাছ থেকে এ সম্পর্কে জানতে আমরা সবাই আগ্রহী হয়ে থাকি। আর সেটি মাথায় রেখেই আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

লেখাটি যেসব ডিসিপ্লিন এর জন্য প্রযোজ্য

যেহেতু বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে অথর্শিপ এর প্রথা একেক রকম তাই এই লেখাটি সব ডিসিপ্লিন এর জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। যেসব ডিসিপ্লিন এর জন্য এই লেখাটি প্রযোজ্য হবে বলে আমার ধারণা সেগুলো হচ্ছে —

  • স্ট্যাটিসটিকস ও বায়োস্টাটিস্টিকস
  • পাবলিক হেলথ ও হেলথ সার্ভিস রিসার্চ (এপিডেমিওলজিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল স্টাডিজ)
  • ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং
  • সাইকোলজি
Photo by Austin Distel on Unsplash

গবেষণাপত্রের গঠন

প্রথমেই দেখে নেই একটি গবেষণা পত্রে কয়টি অংশ থাকে। এই অংশগুলির সবগুলিতে লেখক নিজে কাজ করতে পারেন, আবার অন্যের সাথে কোলাবরেশনের মাধ্যমেও সম্পন্ন করতে পারেন।

ভূমিকা/ব্যাকগ্রাউন্ড ও লিটারেচার রিভিউ

কোন খ্যাতনামা পাবলিশার এর ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্র খুললে দেখবেন প্রথমেই আছে ভূমিকা বা ব্যাকগ্রাউন্ড। এরপরে আছে লিটারেচার রিভিউ বলে একটি সেকশন। অনেক ক্ষেত্রে লিটারেচার রিভিউ আর ব্যাকগ্রাউন্ড একসাথে থাকতে পারে। এই সেকশনে গবেষণা পত্রে উপস্থাপিত বিষয় এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত রিভিউ থাকে। মূলত: আগে কী কাজ হয়েছে এবং আরও কী কী কাজ করা যায় (গ্যাপ এনালিসিস) সেগুলোকে উন্মুক্ত করা যাতে করে উপস্থাপিত কাজটির ন্যায্যতা প্রমাণিত হয়। মোদ্দা কথা হলো গবেষণা করে নতুন কী করতে চাইছেন তা পূর্ববর্তী গবেষণার সাথে তুলনা করে উপস্থাপন করা হয় যাতে নতুন গবেষণাটির প্রভাব ও গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

এরপরে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করতে হয় যে (এক বা একাধিক) প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। যেকোন গবেষণার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। গবেষণার মূল উদ্দেশ্যই হলো কোন সমস্যার সমাধান করা বা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। আর এই প্রকৃয়ায় পুরনো জ্ঞানকে নতুন করে যাচাই করা কিংবা বাতিল বলে প্রমাণাদি উপস্হাপন করাও গবেষণার উদ্দেশ্য হতে পারে।

গবেষণা পদ্ধতি, এনালিসিস ও উপসংহার

গবেণার প্রশ্নের পরে গবেষণার পদ্ধতি কী হবে সেটি উপস্হাপন কর হয়। সেখানে থাকবে স্টাডি ডিজাইন কী হবে, কিভাবে ডাটা সংগ্রহ করা হবে এবং কিভাবে ডেটা এনালাইজ করা হবে তার বর্ননা।

পরিশেষে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সেই সাথে গবেষণার ফলাফল কিভাবে এবং কোন ক্ষেত্রে কাজে লাগবে সেটি উল্লেখ করে গবেষণা পত্রটি শেষ করা হয়।

ফার্স্ট অথরের দায়িত্ব

উপরে উল্লেখিত ধাপগুলোর প্রতিটিতে ফার্স্ট অথর এর প্রত্যক্ষ অবদান থাকবে। ‌

অনেক সময় শুনে থাকি যিনি আইডিয়া দিয়েছেন তিনি তো ফার্স্ট অথর হওয়ার যোগ্য। গবেষণার আইডিয়া সাধারণত ফার্স্ট অথর এর কাছ থেকে আসে। যিনি একটি সমস্যাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম এবং সেটি সমাধানের সম্ভাব্য পথ ও বাতলে দিতে সক্ষম। নিদেনপক্ষে প্রশ্নগুলোর উত্তর কিভাবে পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে ফার্স্ট অথর এর ওভারঅল একটা ধারণা থাকবে।

তার মানে এই নয় যে উনাকেই সবকিছু করতে হবে। কোলাবোরেশনের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান সম্পন্ন গবেষকদের কে দায়িত্ব দিয়ে গবেষণা পত্রে উল্লেখিত অংশ গুলো দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব। কোলাবোরেটিভ রিসার্চ এর দ্বারা অল্প সময়ে গবেষণার কাজ সম্পন্ন করা ও ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে।

ফার্স্ট অথর এর দায়িত্বগুলো বুলেট পয়েন্ট করে দিচ্ছি —

  • শুধু আইডিয়া দেয়া নয়, গবেষণার মোটিভেশন এবং ব্যাকগ্রাউন্ড এবং কেন এই গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি ড্রাফট করা
  • পুরো গবেষণাপত্রের আউটলাইন তৈরী করা
  • গবেষণার মূল প্রশ্ন গুলো কী কী সেগুলো ড্রাফট করা
  • যদি কোন নির্দিষ্ট হাইপোথেসিস থাকে সেটিও ড্রাফট করবেন। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যানবিদ বা এ বিষয়ে যারা পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তাদের সাহায্য নিবেন
  • ফার্স্ট অথর এর সুপারভিশনে ডাটা কালেকশন, কোয়ালিটড চেক ও এনালিসিস হবে
  • এনালিসিস এর পর ফলাফল বিশ্লেষণ ও কনক্লুশান টেনে গবেষণাপত্রের প্রথম ড্রাফ্ট তৈরী করা‌
  • আর্টিকেলটি কোথায় সাবমিট করা হবে সেটি নিয়ে ব্রেইনস্টর্ম করা। এই ধাপটি আইডিয়া জেনারেশনের সময়ও করা যায়
  • কেলাবরেটররা নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে অবদান রাখবেন ফার্স্ট অথর এর তত্ত্বাবধানে
  • ফার্স্ট অথর পুরো ব্যাপারটি সমন্বয় করবেন

ফার্স্ট অথর অ্যানালিটিক্যাল অংশটুকু বাদ দিলে উল্লিখিত ধাপগুলোর প্রত্যেকটিতেই কোন না কোন ভাবে জড়িত থাকেন। ফার্স্ট অথর এর অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে বাকি কো-অথরদের সাথে কাজের সমন্বয় করা এবং পুরো টিম নিয়ে একসাথে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করা।

যেসব কারণে ফার্স্ট অথর হওয়া যায় না

  • আপনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান — সেই পদমর্যাদা ব্যবহার করে গবেষণায় কোন অবদান না রেখেই ফার্স্ট অথর হতে পারবেন না
  • আপনার প্রমোশন আটকে আছে গবেষণা পত্র পাবলিশ হচ্ছে না দেখে, এই অবস্থায় আপনার অধীনস্থ একজন জুনিয়র গবেষক কে দিয়ে পুরো কাজ করে নিয়েছেন সেখানেও আপনি ফার্স্ট অথর হওয়ার যোগ্য নন
  • আইডিয়া দিয়েছেন কিন্তু সম্পূর্ণ কাজ করছে টিমের বাকি সদস্যরা। এক্ষেত্রেও আপনি ফার্স্ট অথর হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন
  • আপনি ডেটা জোগাড় করে দিয়েছেন এবং গবেষণার প্রাথমিক ধারণা দিয়েছেন কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রপোজাল তৈরি, গবেষণার উদ্দেশ্য এবং রিসার্চ কোশ্চেন তৈরিতে কোন অবদান রাখেন নি — তা হলেও প্রধান অথর হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন
  • অন্য ক্ষমতাবলে কিংবা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে কিংবা যেকোন উপায়ে প্রভাব খাটিয়ে আপনি ফার্স্ট অথর হতে পারবেন না
  • এই মুহূর্তে ফার্স্ট অথর হিসেবে একটি পাবলিকেশন লাগবে এই কারণে ও আপনি ফার্স্ট অথর হতে পারবেন না। বিশেষ করে গবেষণার অন্য অংশগুলিতে কোন রকম অবদান না রেখে শুধু এই অজুহাত দিয়ে ফার্স্ট অথর হওয়া যায় না

ফার্স্ট অথর হওয়ার জন্য গবেষণায় প্রধানতম ভূমিকা পালন করতে হবে।

ফার্স্ট অথর হতে চাইলে প্রধানতম দায়িত্ব পালন করুন।

গবেষণা চলুক।

লেখাটি ভাল লাগলে তালি বাজাতে ভুলবেন না :)

ধন্যবাদ।

লেখক সম্পর্কে

Enayetur Raheem is a Data Scientist and Statistician with nearly two decades of experience in academia and industry combined. Currently, as a Senior Data Scientist, he provides strategic guidance for the development, validation, and use of algorithms for data based decision making in a health service company in the USA. Follow him on LinkedIn, Facebook, and Twitter

--

--