টাইমলেস ওয়েব ডিজাইনের সাতকাহন

Shad Iqbal
ডিজাইন বাংলা
4 min readJan 23, 2018

অনেকের কাছেই টাইমলেস ডিজাইন ব্যাপারটা বেশ আগ্রহ জাগানিয়া একটা বিষয়। সময়কে হার মানিয়ে যুগের পর যুগ দর্শকদের মুগ্ধ করে যাচ্ছে এমন শিল্পকর্মের সংখ্যা বেশি বৈকি কম নয়। ভিঞ্চির মোনালিসা থেকে শুরু করে ভ্যানগগের স্টারি নাইট- সবই এর জাজ্বল্যমান উদাহরণ। কিন্তু যখন শিল্প বা আর্টস রেখে ফাংশনাল ডিজাইনের দিকে তাকাই, তখনই মূলত খটকাটা লাগত। এর মূল কারণ হচ্ছে, ফাংশনাল ডিজাইন সবসময়ই সমসাময়িক প্রযুক্তি নির্ভর। আর বলাই বাহুল্য, প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাহলে?

টাইমলেস ডিজাইনের ব্যাপারটা যখন ফাংশনাল ডিজাইনের ক্ষেত্রে আসছে, তখন টাইম বলতে মূলত ঐ ডিজাইন রিলেটেড প্রযুক্তির সময়কালটা বোঝানো হচ্ছে। কম্পিউটার আবিষ্কার পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তির গড় আয়ু ধরা হয় মাত্র দশ (১০) বছর। অর্থাৎ প্রতি দশ বছর পর পর চলতি প্রযুক্তিগুলোর অধিকাংশই বাতিলের খাতায় নাম লেখাচ্ছে এবং তার জায়গা দখল করছে আরও আধুনিক, কার্যকরি ও শক্তিশালী কোন প্রযুক্তি। এখন উদাহরণ হিসাবে পিসি, প্রসেসর, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা পেনড্রাইভ যাই বলুন না কেন, সবক্ষেত্রে কমবেশি একই ঘটনা ঘটতে দেখবেন। তাহলে মানে দাঁড়াচ্ছে, আপনার করা ফাংশনাল ডিজাইন যদি দশ বছর টিকে যায়, তাহলে অভিনন্দন, আপনি একটি টাইমলেস ডিজাইন করে ফেলছেন!

তো ইন্টারফেস ডিজাইনের ক্ষেত্রে টাইমলেস ব্যাপারটা কি? সোজা কথায় বলতে গেলে, সময় সাথে সাথে কার্যকারীতা হারিয়ে ফেলে না এমন ইন্টারফেস ডিজাইনকেই টাইমলেস বা সময় নিরপেক্ষ ইন্টারফেস ডিজাইন বলা হয়ে থাকে। তবে এখানে মাথায় রাখতে হবে যে, বাহ্যিক ডিজাইন নয়, বরং ঐ ডিজাইনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং সামগ্রিক এক্সপেরিয়েন্সটাই এখানে মূল বিষয়।

চলুন, টাইমলেস ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে তা দেখে নেয়া যাক-

কন্টেন্ট উপস্থাপনের স্টাইল

মিনিমালিজম এবং সিম্পল ডিজাইন এই ক্ষেত্রে আপনার তুরুপের তাস। সাদামাটা বিজনেস কার্ড টাইপ উপস্থাপন, সেই সাথে সাথে পরিচ্ছন্ন একটা লোগো। ট্রেন্ডি বা ট্রেন্ডি হতে পারে এমন ডিজাইন প্যাটার্ন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।

টাইপোগ্রাফি

সুন্দর টাইপোগ্রাফির জয় সর্বজনীন। টাইপোগ্রাফি ওয়েবের আগে থেকে আছে এবং এর পরেও থাকবে। তাই সময়ের পরীক্ষায় টিকে গেছে এমন টাইপফেস নির্বাচন করুন।

কন্টেন্ট রাইটিং

পরিমিত ও মার্জিত লেখা ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন এমনকি শব্দ ও বাক্য গঠনের ধরণও সময়ের সাথে সাথে বাসি হয়ে যায়, ধার হারিয়ে ফেলে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই লিখুন, শুধু জায়গা পূরণ করার জন্য লেখা থেকে বিরত থাকুন।

কল টু অ্যাকশন

বাহুল্য-বর্জিত অনাড়ম্বর কল টু অ্যাকশান ব্যবহার করুন। কালার সিলেকশন, শেপ এবং ফন্ট ব্যবহারের সময় চলতি ট্রেন্ড এড়িয়ে চলুন। ধরুন, কিছু ক্ষেত্রে কল টু অ্যাকশান হতে পারে শুধুমাত্র একটা ইমেইল ঠিকানা। যোগাযোগের জন্য ফোনের চাইতে ইমেইলের উপর ভরসা করাই বোধহয় ভালো।

কোডিং

টেকনিক্যালি HTML, CSS আর JavaScript উপরে ভরসা করা যেতে পারে। এগুলো দিয়ে এই সময়ে করা কোন কিছু মনে হয় না আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাতিল হয়ে যাবে।

ভিউপোর্ট

যতবেশি ভিউপোর্ট নিয়ে কাজ করা হবে, লেআউট-ভিত্তিক ভাবে ততবেশি নিরাপদ থাকা যাবে। নিঃসন্দেহে আগামী ১০ বছরে স্ক্রিনগুলো সাইজ ও ডেনসিটির দিক দিয়ে সম্পূর্নভাবে বদলে যাবে। এজন্য যা কিছু SVG-তে করা যায়, সেগুলো করে ফেলা উচিত। এটা নিত্য নতুন স্ক্রিন নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কমাবে। রেস্পন্সিভ ডিজাইনই টিকে থাকার আসল উপায়।

ইউজার ইনপুট

সামনের দিনগুলোতে ইউজার ইনপুটের ধরণ অবশ্যই পাল্টে যাবে। টাচ স্ক্রিনের ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। সম্ভাবনার বিচার করতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারঅ্যাক্টিভ কিছু করার প্রয়োজন নেই, আর যদি করতেই হয়, তাহলে কিবোর্ড-মাউসের উপর ভরসা না করাই ভাল। পাশাপাশি ভয়েস কমান্ডের কথা ভাবতে পারেন।

ডোমেইন-হোস্টিং

হোস্টিং-এর ব্যাপারে সময় নিয়ে ভাবা উচিত। ডোমেইন ১০ বছরের জন্য রেজিস্টার করুন। দেখুন হোস্টিং এর ক্ষেত্রেও সেটা করতে পারেন কিনা। এমন কোন কোম্পানি নির্বাচন করুন যার অন্তত ১০ বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই। ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। নিশ্চিত করুন যাতে এইসব কিছু SSL সার্টিফিকেট এর মত অটো রিনিউ হতে থাকে।

এগুলোই কি সব?

মোটামুটি এই ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক করে আগাতে পারলে টাইমলেস ওয়েব ডিজাইন নিয়ে আশাবাদী হওয়া যেতে পারে। তবে টাইমলেস ওয়েব ডিজাইন সব সময়ই আপেক্ষিক। সব কিছুই কিন্তু নির্ভর করছে যার জন্য ডিজাইন করছেন তার উপরে। সব কথার শেষ কথা হল, আপনার ইউজারের কথা ভুলে যাবেন না। ইউজার সেন্ট্রিক ডিজাইন এবং সাথে উপরের বিষয়গুলো মেলাতে পারলেই মিলবে সাফল্যের দেখা। এর উদাহরণ হিসাবে দেখতে পারেন নিচের ওয়েবসাইট গুলো-

ধন্যবাদ

উল্লেখিত বা অনুল্লেখিত যে কোন বিষয়ে মতামত জানাতে পারেন, আরও পারেন ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে উন্নতির সুযোগ করে দিতে। সাথে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা।

--

--

Shad Iqbal
ডিজাইন বাংলা

UX Lead at 10 Minute School, Contributor at UX Bangladesh, Focusing on edtech, user research, product psychology, UX strategy and design ops