বহুল আলোচিত ঢাকার ‘দি গ্রীন লাউঞ্জ’
রাজধানীর বাংলা মোটরের কাছে এ বছর মে মাস থেকে যাত্রা শুরু করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক রেস্টুরেন্ট যার নাম — দি গ্রীন লাউঞ্জ। রেস্টুরেন্টটির ডেকোরেশন, ইন্টেরিয়র, সবুজ গাছপালার সমারোহ, মজাদার খাবার ও বাইরের সুন্দর পরিবেশের কারণে বেশ অল্প সময়ের মধ্যেই গ্রীন লাউঞ্জ সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
ঢাকার বাংলা মোটরের রুপায়ন ট্রেড সেন্টারের ছাদে ( রুফটপে ) গড়ে উঠেছে এ চমৎকার রেস্টুরেন্টটি। এখানকার কাস্টোমারদের মতে, এ রেস্টুরেন্টটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে অন্যান্য রেস্টুরেন্টগুলো থেকে একটু আলাদা এবং অনেকের মতে রুফটপের রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে গ্রীন লাউঞ্জই সেরা। চমৎকার পরিবেশ ও চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্যে এ রেস্টুরেন্টটি এক কথায় অসাধারণ।
নতুন গড়ে ওঠা এ রেস্টুরেন্টটিতে দুটি ভাগ রয়েছে; ইনডোর ও আউটডোর। ইনডোর অংশটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আউটডোর অংশটি বেশ বড়, ফ্লোরে সবুজ ঘাস, গাছপালা ও পানির ফোয়ারা দিয়ে সাজানো। এখানকার ডেকোরেশন একদম নিখুঁতভাবে সাজানো হয়েছে।
গ্রীন লাউঞ্জের সবখানেই রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। খুব ছোটখাটো ডিজাইনের মধ্যেও দেখা মিলবে নান্দনিকতার। প্রথমেই কথা বলা যাক এখানকার ইনডোর নিয়ে। ভিতরের ইনডোরে রয়েছে ওপরের সিলিং থেকে ঝোলানো অপূর্ব ডিজাইনের লাইট, দেয়ালে ছোট ছোট কাঁচের বোতলে গাছপালার সমারোহ ও দেয়াল ও সিলিং থেকে ঝোলানো গাছ। এছাড়া দেয়ালে দেখা মিলবে বিভিন্ন পেইন্টিং এর। দেয়ালের কাঠের মধ্যেও দেখা যাবে ডিজাইন। ইনডোরের জায়গাটি আউটডোর থেকে বড় কাঁচের গ্লাস দিয়ে ঘেরা। রাতের বেলায় হলুদ লাইটে ইনডোরে সৃষ্টি হয় এক মনোরম পরিবেশের। আর বৃষ্টির সময়ে ইনডোর থেকে উপভোগ করা যাবে বাইরের স্নিগ্ধ পরিবেশ।
এবার কথা বলা যাক আউটডোর নিয়ে। ইনডোর থেকে বাইরের সুবিশাল আউটডোরের দেখা মিলবে। আউটডোরে এলে মনেই হবে না যে এটি ব্যস্ত ঢাকার বুকে তৈরি। এখানে সবকিছু এত সুন্দর করে সাজানো গোছানো ও সবুজ। সবখানে দেখা যাবে নজরকাড়া ইন্টেরিয়রের স্পর্শ । ইনডোর থেকে বের হলে খোলা আকাশের নিচে আউটডোরের দেখা মিলবে। এক পাশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি শামিয়ানা রয়েছে, রয়েছে সিঁড়ি দিয়ে যেয়ে ওপরে বসার ব্যবস্থা। সিঁড়ি কিংবা দেয়াল, সবখানে রয়েছে কাঠের শিল্পকর্ম । আরেকপাশে কাঠের তৈরি দেয়ালে কিচেনের দেখা মিলবে ।
পুরো আউটডোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গাছপালা। ফ্লোরে সবুজ ঘাসও চোখে পড়ার মত। ছোট ও মাঝারি সাইজের গাছগাছালি ও ডালপালার মাঝে মাঝে সাজানো হয়েছে বসার জায়গা। চেয়ার টেবিলগুলোর ডিজাইন ও রং রেস্টুরেন্টের একেক জায়গায় একেক রকম। সাজানোর জন্যে ফ্লোরে দেখা যাবে ছোট ছোট পাথরের। ডিজাইন করা ও ঘাসের ফ্লোরের মাঝে মাঝে রয়েছে পানির ফোয়ারা। পুরো আউটডোরের ওপর দিয়ে টাঙ্গানো হয়েছে নেটের তৈরি শামিয়ানার। কাঠের দেয়াল, কাঠ দিয়ে ঘেরা পিলার, শামিয়ানা — সব খানেই রয়েছে ছোট ছোট গাছ। শামিয়ানা থেকে ঝুলন্ত ফুলগাছ ছাড়াও পিলারে ও দেয়ালে রয়েছে স্নিগ্ধ হলুদ বাতি। নীল আকাশ কিংবা রাতের অন্ধকার, গ্রীন লাউঞ্জ যেন এক কল্পনার রাজ্য। ছাদের ধারে বসে, ব্যস্ত শহর দেখতে দেখতে মজাদার খাবার উপভোগ করতে পারবেন এখানকার কাস্টোমাররা।
এখানে এলে যেন ব্যস্ত শহর থেকে একটু হলেও মুক্তি পান এখানকার কাস্টোমাররা। মনোরম পরিবেশ, তার ওপর কিছুদিন আগের রমজান, ইফতার, ঈদ — সবকিছু মিলিয়েই এখানে ভিড় লেগেই ছিল। কেবল খাবার নয়, শুধুমাত্র সুন্দর পরিবেশ দেখা ও ছবি তোলার কারণে এখানে কাস্টোমাররা এত বেশি ভিড় করে থাকেন যে প্রায়ই সময়েই রেস্টুরেন্টটি হাউজফুল থাকে এবং এতে করে অনেক কাস্টোমাররা বসার জায়গা পান না। এখানকার কর্মচারীদের মতে, এখানে অনেক কাস্টোমাররা আসেন শুধুমাত্র পরিবেশ একনজর দেখতে ও ছবি তুলতে যার কারণে বেশ বড় রেস্টুরেন্ট হওয়া সত্ত্বেও এখানে বসার জায়গা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। কাস্টোমাররা যদি কেবল খাবারের জন্যে এখানে আসেন, তাহলে জায়গা নিয়ে এতটা সমস্যা আর থাকবে না। তারা কাস্টোমারদের অনুরোধ করেন তারা যেন এখানে কেবল ছবিই তুলতে না আসেন।
এবার কথা বলা যাক গ্রীন লাউঞ্জের মজাদার খাবারের মেন্যু নিয়ে। এখানে খাবারের মেন্যু বেশ বড়। খাবার বলতে কি নেই এখানে; এপেটাইজারস, স্যুপ, রাইস এন্ড ন্যুডলস, ভেজিটেবিলস, মিট, প্রন ও সি ফুড, স্টিক, চিকেন, পাস্তা, পিজ্জা, কাবাব, সি ফুড গ্রিল, কাড়াই, শর্মা, ব্রেড, ডেসার্ট, ট্রপিকাল ফ্রুট স্মুদি, কফি, মিল্ক শেক, মকটেলস ও বেভেরেজেস । জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে চিকেন টিক্কা, রেড থাই চিকেন কারি, থাই থিক স্যুপ, থাই ফ্রাইড রাইস। খাবারের দাম এখানে প্রতিজন ৩৫০ টাকা হতে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পড়বে।
রেস্টুরেন্টটি প্রতিদিন দুপুর ১২ টা থেকে রাত ১০.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।রেস্টুরেন্টটির নিজস্ব ওয়েবসাইটও রয়েছে। এখানে পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে জন্মদিন, পুনঃমিলনী, বিবাহ বার্ষিকী থেকে শুরু করে যেকোনো পার্টির আয়োজন করা যাবে। যে কোনো পার্টির পূর্বে এখানে যোগাযোগ করার জন্যে অনুরোধ করলেন এখানকার কর্মচারীরা। এছাড়া এখানে বেসমেন্টে ২০০টি গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা রয়েছে।
"প্রাণহীন ঢাকায় আকাশের নিচে, অরণ্যের মাঝে, পানি ও ঝিঝি পোকার ছন্দে বসে খাওয়ার ঠিকানা দি গ্রীন লাউঞ্জ" — এ স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ রেস্টুরেন্টটি যেন ঠিক ছবির মতন সুন্দর। পরিবার কিংবা বন্ধু বান্ধব, মজাদার খাবারের পাশাপাশি ঢাকার ব্যস্ত শহর থেকে একটু অবসর ও সবুজ-স্নিগ্ধ পরিবেশ উপভোগ করার জন্যে এ রেস্টুরেন্ট যেন এক কথায় তুলনাবিহীন।
দি গ্রীন লাউঞ্জ সম্পর্কে আরো জানতে হলে ভিজিট করতে পারো আমাদের হারিকেন ওয়েবসাইট থেকে।