২০১৭ সালের বহুল আলোচিত ৫টি রেস্টুরেন্ট

Ahmed Robin
Harriken Tales
Published in
6 min readJan 18, 2018

২০১৭ ছিল রেস্টুরেন্টগুলোর জন্য একটি ভিন্নধর্মী বছর। অন্যান্য বছরের মত এ বছরে পুরোনো রেস্টুরেন্টগুলোর আধিপত্যই কেবল দেখা যায়নি, বরং এ বছর বেশ কিছু নতুন রেস্টুরেন্ট তাদের নিজেদের জন্যে একটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। খাবারপ্রেমীরাও বেশ কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় সব পুরোনো রেস্টুরেন্টগুলোর থেকে নতুন রেস্টুরেন্টগুলোতে যেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে।

গেল বছরের হিসাব নিকাশের খাতায় আমরা আজ তুলে ধরবো এসকল রেস্টুরেন্টগুলোর সাফল্য ও তাদের সফলতার কারণ, তাদের যাত্রা, তাদের উপস্থাপনা, পরিবেশ, খাবার পরিবেশনা সহ আরও অনেক কিছু।

১৩৮ ইস্ট (138 East)

138 East

শুরুর গল্পঃ এখনকার ফুডপ্রেমীরা কেবল খাবারই নয়, সাথে রেস্টুরেন্টের ইন্টেরিয়র, ডেকরের দিকে বেশ নজর দিয়ে থাকেন। সে কথা মাথায় রেখেই পুরোনো লন্ডনের থিমের ওপর তৈরি ১৩৮ ইস্ট যার খাবার, ডেকর, সবখানেই রয়েছে ক্লাসিক ভিন্টেজের আমেজ।

আউটলেট: বর্তমানে ১৩৮ ইস্টের কেবল একটি আউটলেট আছে যেটি কিনা গুলশান ১ এ অবস্থিত।

যে কারণে আলোচিত: মূলত ডেকরই এখানে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণের বিষয়, বিল্ডিংটির ডিজাইন, ভিতরের পরিবেশ সূক্ষ্মভাবে সবখানেই রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। এখানে কাস্টমারদের জন্যে রয়েছে বোর্ড গেমের ব্যবস্থা। মূলত গতানুগতিক রেস্টুরেন্টগুলো থেকে একটু ভিন্ন মানের ইন্টেরিয়রের জন্যে এ রেস্টুরেন্টটি গত বছর বেশ আলোচিত হয়েছে।

খাবারঃ এখানে রয়েছে বেশ বড় মেন্যু যেখানে সবার জন্যে সব ধরনের খাবার রয়েছে। এখানে পিজ্জা, বেভেরেজ থেকে শুরু করে রয়েছে মেইন ডিশ, ডেসার্ট, সালাদ, স্যুপ সহ আরও অনেক কিছু। সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার এখানে সি ফুড ও পিজ্জা।

খাবারের দাম এখানে ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার ভিতর।

হারিকেন প্রোফাইল ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন।

ইয়াম চা ডিসট্রিক্ট (Yum Cha District)

Yum Cha District

শুরুর গল্পঃ চায়নাতে বেলা ১১/১২ টার দিকে যে হালকা নাস্তা খাওয়া হয় তাকেই ইয়াম চা বলা হয়। ইয়াম চা এর এই হালকা নাস্তার কথা ভেবেই রাজধানীর বনানীতে গেল বছর যাত্রা শুরু করেছে “ইয়াম চা ডিসট্রিক্ট” ।

আউটলেটঃ এ রেস্টুরেন্টটির বর্তমানে বনানী ১১ তে একটি মাত্র আউটলেট রয়েছে।

যে কারণে আলোচিতঃ ইয়াম চা এর বেশ কিছু দিকে নতুনত্বের ছাপ রয়েছে। যেমন, চাইনিজ খাবার হলেও টেস্ট মূলত এদেশের টেস্টের সাথে মিলিয়ে করা হয়েছে। খাবার পরিবেশন করা হয় বাঁশের বাক্সজাতীয় পাত্রে। চীনা মাটির প্লেটগুলোও নজর কাঁড়ার মতন। এছাড়া লাইটিং, ডেকোরেশন, খাবারের মান, স্টাফদের ব্যবহার — সব মিলিয়ে এটি বেশ কম সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছে। মূলত চাইনিজ কালচারের আমেজের জন্যে এ রেস্টুরেন্টটির তুলনা নেই।

খাবারঃ চাইনিজ, এশিয়ান ফিউশন ও ডিম সামের এ রেস্টুরেন্টটিতে খাবারের মধ্যে রয়েছে সুই মাই, ওন্তন, হারগাও, টফু সহ আরো বেশ কিছু সুস্বাদু খাবার। ডামপ্লিং, নুডলস ও ওয়াইসিডি স্পেশাল ফ্রাইড রাইস এখানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

এখানে খাবার গুলোর দাম ৩৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার ভেতর পড়বে।

Food Variation at YCD

হারিকেন প্রোফাইল ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন।

দ্যা ওয়াইট ক্যানারি ক্যাফে (The White Canary Café):

The White Canary Café

শুরুর গল্পঃ সুপারহিরোদের কে না পছন্দ করে? আর কেমন হবে যখন কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যেয়ে দেখলে ডিশগুলোর নাম তোমার প্রিয় সুপারহিরোদের নামের ওপর করা? এ চিন্তা নিয়েই সুপারহিরোদের নামের অসাধারণ কিছু নর্থ আমেরিকান নাস্তা নিয়ে রাজধানীর গুলাশানের বুকে গেল বছর যাত্রা শুরু করে ওয়াইট ক্যানারি ক্যাফে।

আউটলেট: এ রেস্টুরেন্টির দুইটি আউটলেট রয়েছে ; একটি গুলশান ২ নর্থ এভেনিউতে মূলত পিজ্জা, পাস্তা, কফি ও ওয়াফেলসের জন্যে এবং আরেকটি গুলশান-তেজগাঁও লিঙ্ক রোডে কেবল ওয়াফেলস ও কফির জন্যে। দুটো স্টোরেই ব্রেকফাস্ট ও ব্রাঞ্চের খাবার রয়েছে।

যে কারণে আলোচিত: রেস্টুরেন্টটি বেশ সুসজ্জিত, ভিতরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন বেশ চোখে পড়ার মত। সবখানে নর্থ আমেরিকার ছোঁয়া। বিভিন্ন ফেসটিভ সিজনে, বিশেষ করে ক্রিসমাসে, সোশ্যাল মিডিয়াতে এদের ক্যাম্পেইন ছিল প্রচুর। মূলত অফিসগামী মানুষদের ব্রেকফাস্ট ও ব্রাঞ্চের জন্যে গড়ে উঠেছে এ রেস্টুরেন্টি।

খাবার: মেন্যু বুকে চোখ বুলালেই দেখা মিলবে বিভিন্ন সুপারহিরোদের ও এদের বিভিন্ন ক্যারাক্টারের নাম। দি একুয়াম্যান, দি পইসন আইভি, দি গ্রিন অ্যারো, দি ফ্লাশ; এমনি আরও নজরকাড়া নাম। রেস্টুরেন্ট পুরোটিতেই নর্থ আমেরিকার ছোঁয়া রয়েছে। এমনকি খাবারের টেস্টেও রয়েছে ভিন্নতা। এখানকার খাবার মূলত হালকা নাস্তা জাতীয়, ব্রেকফাস্ট কিংবা ব্রাঞ্চ কেন্দ্রিক। কফি ও পিজ্জা ফুঙ্ঘির পাশাপাশি এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারটি হচ্ছে ব্লু বেরি প্যানকেক।

এখানে খাবারের দাম পড়বে ৩৫০ টাকা থেকে ১,২০০ টাকার মধ্যে।

হারিকেন প্রোফাইল ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন।

চা টাইম (Chatime)

Chatime

শুরুর গল্পঃ তাইওয়ান ভিত্তিক জনপ্রিয় টি হাউজ চেইনের নাম চা টাইম। ২০০৫ সালে তাইওয়ানে তখন লা কাফফা কফি নামে যাত্রা শুরু করার পর একে একে মালয়শিয়া, কানাডা, ফিলিপাইনস, নিউজিল্যান্ড, জাপান সহ মোট ২৬ টি দেশে চা টাইম তাদের স্টোর খুলতে শুরু করে। সেই যাত্রারই অংশ হিসেবে গত বছর জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশে “চা টাইম বাংলাদেশ” নামে এ ফ্রাঞ্চাইসের যাত্রার সূচনা হয়।

আউটলেট: বর্তমানে গোটা ঢাকা শহরে তাদের ৪টি আউটলেট রয়েছে: বনানী (কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ), ধানমন্ডি (সাত-মসজিদ রোড), গুলশান এভেনিউ এবং উত্তরা (সেক্টর ৯)।

যে কারণে আলোচিত: রেস্টুরেন্টটি বেশ বড় এবং ড্রিঙ্কস গুলো বেশ সুলভ মূল্যের । পরিবেশ এবং সুলভ মূল্যের জন্যে মূলত এটি সব বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে বেশ পরিচিতি পেয়েছে।

খাবার: চা টাইম মূলত বেশ কয়েক রকমের চা এবং কফি জাতীয় ড্রিঙ্কস খুব সুলভ মূল্যেবিক্রয় করছে। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ফলের স্বাদের কোমলপানীয় বেশ কম দামে পাওয়া যায়। তারো পুডিং মিল্ক টি, হাওয়াইন আইস টি, পার্ল মিল্ক টি এখানে বেশ আলোচিত।

এখানকার ড্রিঙ্কসের দাম ২০০ টাকা হতে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

হারিকেন প্রোফাইল ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন।

৫। বাও (Bao):

শুরুর গল্প: বাও শব্দটির আক্ষরিক অর্থ এক ধরনের চাইনিজ ব্রেড রোল যার মাঝে মাংস অথবা সবজির টুকরো দেয়া থাকে। এ ধরনের খাবারের ওপর মূলত ভিত্তি করে ঢাকার গুলশানে গত বছর গড়ে উঠে বাও নামের রেস্টুরেন্টটি।

আউটলেট: এদের এখনো একটি মাত্র আউটলেট রয়েছে যা গুলশান ১ এ অবস্থিত।

যে কারণে আলোচিতঃ বাও রেস্টুরেন্টটিতে সবখানে রয়েছে আধুনিকত্যের ছোঁয়া। বেশ অল্প খাবারের একটি মেন্যুর পরেও এখানকার ব্যতিক্রমধর্মী সুস্বাদু খাবার, হাতের নাগালের মধ্যে দাম, রুচিসম্মত ইন্টেরিয়র ডিজাইন এবং বাও খাবারটির নজরকাড়া পরিবেশনের জন্যে বাও রেস্টুরেন্ট এখন সকল বয়সী মানুষের জন্যে একটি জনপ্রিয় নাম।

খাবারঃ বেশ ছোট মেন্যুর এ রেস্টুরেন্টটিতে বর্তমানে ৬ ধরনের বাও পরিবেশন করা হয়। এছাড়া ফ্রাইড রাইস এবং প্রন্স, গ্রিলড ক্রিসপি স্কিন স্যালমন সহ রয়েছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস, গার্লিক মাশরুম ও হট উইংস। বিভিন্ন ধরনের বাও এখানে বেশ জনপ্রিয়।

বন্ধু বান্ধব, পরিবারের সবার জন্যে এ রেস্টুরেন্টের খাবারের দাম ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।

হারিকেন প্রোফাইল ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন।

হারিকেন প্রোফাইল ভিজিট করতে ক্লিক করুন: http://harriken.com/restaurants/bao-gulshan-1-dhaka

এখনকার ফুডপ্রেমিরা কেবল গতানুগতিক খাবারের রেস্টুরেন্টই নয়, বরং একটু ভিন্ন ধরনের, ভিন্ন থিমের রেস্টুরেন্টগুলোতে যেতে বেশি পছন্দ করছেন। এছাড়া খাবারের টেস্টেও এখনকার ফুডপ্রেমীরা চাচ্ছেন একটু নতুনত্ব। সব মিলিয়ে এ পাঁচটি রেস্টুরেন্ট বেশ পাকাপোক্তভাবেই রেস্টুরেন্টের বাজারে তাদের জায়গা করে নিয়েছে। সামনের দিনগুলিতে তাদের সফল যাত্রার জন্যে রইল শুভকামনা।

ক্রেডিট — ফারজানা ইয়াসমিন প্রিয়া

--

--