গওহর রিজভী: “আমার মৃত্যুর খবর অত্যধিক অতিরঞ্জিত হয়েছে”
সম্প্রতি সাংবাদিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী দেশ ত্যাগ করেছেন, তার আগে শেখ হাসিনার কাছে আনুষ্ঠানিক ইস্তফা পত্র দিয়ে গিয়েছেন। এই গুজবের সূত্রপাত সম্ভবত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শহীদ ইসলামের লেখা একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে। কানাডা প্রবাসী শহীদ ইসলাম সাপ্তাহিক পত্রিকা হলিডের ম্যানেজিং এডিটর ছিলেন, এবং পরবর্তীতে একসময় ডেইলি ষ্টারে লিখেছেন।
“তিন রত্নের রহস্যময় বিদেশযাত্রা” নামের লেখায় রিজভী বিষয়ে দাবি করা হয়:
“জানা গিয়েছে যে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী লন্ডন, যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন। কারনটা ব্যক্তিগত বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি ঢাকা ত্যাগের পূর্বে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ পত্র দিয়ে গিয়েছেন, জানিয়েছে একটি বিশ্বস্ত সূত্র…
চীন ও ভারত দুই দেশকে একত্রে হাতে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর ছলনার আশ্রয় নেওয়া ড. গওহর রিজভীর পদত্যাগ এর কারন বলে জানা গিয়েছে। রিজভী মনে করেন, ‘এমন অবস্থান খুবই বিপদজনক, বিশেষত যখন এই দুই পারমানবিক ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিবেশী বড় একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে এবং বাংলাদেশকে দুই দেশই মরিয়া হয়ে নিজেদের পক্ষে নেবার চেষ্টায় আছে,’ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্রটি।”
সরকার পরিবর্তনের আশায় আছেন এমন লোকজনরা রিজভীর কথিত পদত্যাগকে সরকারের একটি মারাত্মক ক্ষতি হিসেবে প্রচার করছেন।
বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে নেত্র নিউজ রিজভীকে ইমেইল করে। তিনি বিষয়টিতে সম্পূর্ণ অসত্য বলে জানান। তিনি বলেন:
“আমি মার্ক টোয়েইনের উদ্ধৃতি দিতে প্রলুব্ধ হচ্ছি: আমার মৃত্যুর খবর অত্যধিক অতিরঞ্জিত হয়েছে। আমি পদত্যাগ করিনি। এ গুজব সম্পূর্ণ বোগাস।”
এ বিষয়টি গেল। কিন্তু অন্যান্য যেসব দাবি ফেইসবুক পোস্টে করা হয়েছে সেগুলোর সত্যতা কতখানি?
সেসব দাবির একটি হলো অর্থমন্ত্রী বর্তমানে দুবাই আছেন। তিনি সেখানে গিয়েছেন:
“প্রধানমন্ত্রীর জামাতা খন্দকার মাসরুর হোসেন মিতুর একটি ব্যক্তিগত সমস্যা জরুরি ভিত্তিতে সমাধানের উদ্দেশ্যে। মিতু সংযুক্ত আরব আমিরাতে পুলিশের একটি তদন্তে বিব্রতকর ভাবে জড়িয়ে গিয়েছেন, যে বিষয়ে কিছু মিডিয়াতে দাবি করা হয়েছে ‘কাতারের একটি একাউন্ট থেকে ১০০ কোটি টাকা অবৈধ ভাবে পাচার’ খতিয়ে দেখার জন্য এই তদন্ত।”
এর আগে বেশ কিছু বিরোধীদল সমর্থক ওয়েবসাইট থেকে প্রচার করা হয়েছিল যে মিতু এ ধরনেরই কিছু অর্থনৈতিক অপরাধের সাথে জড়িত। এ বছরের জানুয়ারিতে নেত্র নিউজ সে খবরগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখে যে প্রচারিত ঘটনার কোন সত্যতা নেই। আমরা ধরে নিতে পারি এবারের প্রচারকৃত বিষয়টিও অসত্য।
শহীদ ইসলামের ফেইসবুকের লেখায় আরেকটি যে বিষয় দাবি করা হয় তা হলো প্রধানমন্ত্রীর আরেক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই, কারন:
“সম্প্রতি রাজশাহীতে ইউএনও কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের উপর ঘটে যাওয়া হত্যা চেষ্টার ফলে দেশের এডমিন ক্যাডাররা, যাদের দায়িত্বে রয়েছেন এইচ টি ইমাম, বিদ্রোহের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে…”
এইচ টি ইমাম এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনো উত্তর পায়নি নেত্র নিউজ। কিন্তু তার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের যে কারন বলা হচ্ছে তার কোন বাস্তব ভিত্তি আছে বলে মনে হচ্ছে না।
//ডেভিড বার্গম্যান
নেত্র নিউজের মূল ওয়েবসাইট দেখুন
বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য
বাংলাদেশের বাইরের পাঠকদের জন্য
ইউটিউব চ্যানেল