বাংলাদেশের কাছে কি শিখতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

Netra News
Netra News
Published in
3 min readNov 16, 2020
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮’র জাতীয় নির্বাচনে নিজের ভোট প্রদানের পর “ভি” চিহ্ন দেখাচ্ছেন। হাসিনার বোন রেহানা (মাঝে) এবং মেয়ে সায়মাকে (বামে) তার সাথে দেখা যাচ্ছে। (এসকে হাসান আলী/এ্যাল্যামি স্টক ফটো)

এমন হওয়াটাই অবিশ্যম্ভাবী ছিল।

আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে একধরনের সঙ্কটের জন্ম দিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মন্তব্য করেছেন যে বাংলাদেশের নির্বাচন থেকে আমেরিকার অনেক কিছু শেখার আছে।

বর্তমান বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে আমেরিকার নির্বাচন বেশ ভৌতিক মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা খুবই অকল্পনীয় যে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন ব্যক্তি ভোট সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ করছেন, আবার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচনে হেরেও যাচ্ছেন।এমন এলাহী কান্ড বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কখনোই ঘটবে না।

একথা হয়তো সত্য যে সুযোগ থাকলে ট্রাম্প নির্বাচনে বিজয়ের জন্য কোনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বা প্রথাই ধ্বংস করতে দ্বিধা করতেন না, যেমনটি বাংলাদেশে শেখ হাসিনা করেছেন। কিন্তু ট্রাম্প যেকারনে অপারগ তা হলো আমেরিকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে এমন চেষ্টায় বাঁধা দেয়। ফলে শেখ হাসিনার গত দুটি নির্বাচনের চাইতে ট্রাম্পের নির্বাচন ভিন্ন হওয়ার কারণ হলো- আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যা করে ট্রাম্প সেটি পারেন না। অর্থাৎ শেখ হাসিনার মতো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ভোট চুরির ব্যবস্থা করে নির্বাচনের আগেই জিতে যাবার কোন সুযোগ তাঁর নেই। ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে গন্ডগোল করার চেষ্টা করতে পেরেছেন ভোটে হেরে যাবার পর।

বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্বাচনটাই দেখা যাক।

২০১৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ পুলিশ ও ছাত্রলীগকে দিয়ে দেশব্যাপী ভোটকেন্দ্রগুলো দখল করে নেয় এবং নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। কিন্তু সেটা ছিল কেবল শতভাগ সুনিশ্চিত হবার সর্বশেষ অবলম্বন। তার আগে হাসিনা সরকার একটি পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত করে, প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক প্রার্থীকে অযোগ্য বানিয়ে দেয়, বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে, বিরোধী দলের মিছিল-সমাবেশে হামলা চালায় এবং বিরোধী দলের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেয়। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনা দেশের সামগ্রিক প্রশাসন ও আমলা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নেয় এবং নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করে। নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা বুঝতে ব্যালট গোনা পর্যন্ত কাউকে অপেক্ষা করতে হয়নি।

ট্রাম্প এধরনের সুযোগ পেলে হয়তো লুফে নিতেন। কিন্তু এমন কোনো কিছু করার সুযোগ তিনি পাননি। যদিও আমেরিকার নির্বাচন ব্যবস্থা ক্রুটিমুক্ত নয়, তবে সেখানে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রয়েছে যা ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনে জালিয়াতির এমন সব উপায় অবলম্ভনের চেষ্টা প্রতিহত করে।

এখানেই দুই দেশের নির্বাচনের মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ। বাংলাদেশে এমন কোনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নেই যেটা স্বাধীনভাবে চলে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ।

একজন স্বাধীনচেতা নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গত বুধবার বিদ্রুপ করে বলেছেন যে ট্রাম্প নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন: “বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা না নেয়ার কারণেই আমি নির্বাচনে হেরে যাচ্ছি”।

বাংলাদেশেও একসময় বেশ অন্যরকম অবস্থা ছিল।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে তখন সরকারি দল প্রশাসন ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে করায়ত্ত করে রাখতে পারেনি। এ নির্বাচনগুলোর মধ্যে তিনটিতেই ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হয়েছে। পরাজিত পক্ষ প্রতিবারই ভোট কারচুপি হয়েছে বলে আর্তচিৎকার করলেও ফলাফলকে প্রভাবিত করার তাদের কোনো উপায় ছিলোনা। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যেত। নির্বাচন তখনও নিখুঁত ছিলোনা, কিন্তু ওইসব নির্বাচনে অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিলো।

কিন্তু এ অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে গেল ২০০৮ এর নির্বাচনে। হাসিনা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সংবিধান পরিবর্তন করার এখতিয়ার পেয়ে গেল, যা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি উঠিয়ে দিল। পরাজয়ের ঝুঁকি নেবার দরকার কি যদি আগে থেকেই বিজয় নিশ্চিত করার সুযোগ থাকে?

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের অবসান ঘটায়। আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আরো দুটি নির্বাচনে ‘বিজয়ী’ হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করে নিলো।

ট্রাম্প একজন কর্তৃত্ববাদী যিনি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা আইনি সীমায় থাকতে বাধ্য হয়েছেন। হাসিনা একজন স্বৈরাচারী যার এ ধরনের কোন বাধ্যবাধকতার বালাই নেই। ট্রাম্প বাংলাদেশে থাকলে তাকে নির্বাচন শেষ হবার পর বিভিন্ন ছলনায় জেতার চেষ্টা করতে হতোনা। বাংলাদেশে তিনি নির্বাচন হবার আগেই বিজয়ী হয়ে যেতেন।

//ডেভিড বার্গম্যান

[১৩ নভেম্বর ইংরেজি ভাষায় প্রথম প্রকাশিত।]

নেত্র নিউজের মূল ওয়েবসাইট দেখুন
বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য
বাংলাদেশের বাইরের পাঠকদের জন্য
ইউটিউব চ্যানেল

--

--

Netra News
Netra News

Netra News - a new independent and impartial online media platform publishing investigations, analysis, and opinion on Bangladesh politics and society