“বিএনপির ষড়যন্ত্র” নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পোস্টকে “মিসলিডিং” বলে চিহ্নিত করেছে ফেইসবুক
প্রধানমন্ত্রী-পুত্রের শেয়ার করা একটি পত্রিকার খবর “মিসলিডিং” বা বিভ্রান্তিকর বলে চিহ্নিত করেছেন ফেইসবুকের পক্ষে কাজ করা স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট চেকাররা।
“জেদ্দায় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে গোপন বৈঠক: ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত” শিরোনামের খবরটি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশ হয় ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে। একই দিন সজীব ওয়াজেদ জয় প্রকাশিত সংবাদটি ফেইসবুকে শেয়ার করেন। খবরে দাবি করা হয় গোয়েন্দা সূত্র জনকণ্ঠকে একটি “ষড়যন্ত্রের” বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং বিএনপি-জামাত জোট ২০২৩ এর সাধারণ নির্বাচনে “ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র” করছে বলে তথ্য পেয়েছে দাবি করে বাংলা এই দৈনিক।
কিন্তু ফেইসবুক জয়ের শেয়ার করা পোস্টের নিচে একটি সতর্কতা বার্তা দিয়ে লিখেছে: “প্রেক্ষাপট পরিষ্কার নয়। স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট-চেকাররা (যাচাইকারী) পরীক্ষা করে দেখেছেন যে এখানে প্রদত্ত তথ্যে মানুষ ভুল ধারণা পেতে পারে।”
সতর্কবার্তায় ক্লিক করলে দেখা যায় যে ফেইসবুকের ফ্যাক্ট-চেকাররা খুঁজে বের করেছেন যে জনকণ্ঠের প্রকাশিত লেখাটি বাংলা ট্রিবিউনে ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সিরিজ থেকে প্রায় হুবহু তুলে দেয়া, অনেকাংশেই কোন পুনর্লিখনও নেই, শুধু কপি-পেস্ট।
ফেইসবুকের স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট-চেকাররা বলেন:
“দৈনক জনকণ্ঠের গত ২৪ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনের বেশিরভাগ তথ্য (দিন তারিখ ও বর্ণনাসহ) ২০১৮ সালে প্রকাশিত বাংলাট্রিবিউন এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্যের সাথে অবিকল মিলে যাওয়া, জনকণ্ঠের প্রতিবেদনের বহু প্যারা এবং বাক্য হুবহু বাংলাট্রিবিউনের ২১ মাস আগের প্রতিবেদনের সাথে মিলে যাওয়া, তথ্যের গরমিল এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনকে ‘প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে’ অনুষ্ঠিত এমন অভিযোগ যুক্ত অডিও ফোনালাপের উদ্ধৃতি রিপোর্টে ব্যবহার করা — ইত্যাদির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, জনকণ্ঠের রিপোর্টটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে প্রচারিত খবরের পুনরুৎপাদিত ভার্সন; যা ২০২৩/২৪ সালের নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকরভাবে আরোপ করা হয়েছে।”
বিএনপি-জামাত-আইএসআই ষড়যন্ত্রের সংবাদ জয়ের জন্য এতই লোভনীয় ছিল যে তিনি তা শেয়ার না করে পারেননি — মিসলিডিং হবার বিষয়টি কোন গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে হয়না। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী-পুত্র, যিনি তার মায়ের তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা পদে আছেন, এখন পর্যন্ত তার “মিসলিডিং” পোস্টটি ডিলিট করেননি।
বলাই বাহুল্য, এতে করে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি কতখানি বস্তুনিষ্ঠ তা নিয়ে প্রশ্ন আসে। ফেইসবুকের ফ্যাক্ট-চেকার বুম বলেছে তাদের ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল জনকণ্ঠের প্রকাশিত লেখাটি যে স্বাভাবিক কোন প্রতিবেদন নয় এবং পুরনো সংবাদের ব্যাখ্যাতীত পুনঃপ্রকাশ তা চিহ্নিত করা। ভেতরের তথ্য যাচাই উদ্দেশ্য নয়। “এই প্রতিবেদনে বাংলাট্রিবিউন বা অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে ২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বা বর্তমানে জনকণ্ঠে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর সত্যমিথ্যা যাচাই করা হয়নি,” বুম তাদের প্রতিবেদনে বলে।
আইএসআই, বিএনপি বা জামাত ২০১৮’র নির্বাচনের সময় কি করেছে বা করেনি তা নিয়ে অন্ধভাবে নিশ্চয়তা দেয়া কারো পক্ষেই সমীচীন হতে পারে না। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট। সংবাদমাধ্যমের সূত্র হবার মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নেই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রায়শই মিথ্যা ঘটনা বানায় এবং পক্ষপাতদুষ্ট ও সরকার সমর্থক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাদের এসব বানোয়াট কাহিনী সরবরাহ করে থাকে, যারা সানন্দে এসব প্রকাশ করে দেয়।
উপরন্তু, যে বিষয়টি আমরা সন্দেহাতীতভাবে জানি তা হলো আওয়ামী লীগ নির্বাচনে “জিতেছে” ৯৩% ভোট পেয়ে, যাতে ৩০০ আসনের মাঝে ২৮৮ আসনই পেয়েছে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন জোট, এবং নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা যাকে বলেছে ভয়-ভীতি, গ্রেফতার ও ব্যালট বাক্স ভরাটের নির্বাচন।
হয়তো আমরা বলতে পারি, যদি নির্বাচন ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্র প্রকৃতপক্ষে হয়েই থাকে তা ঘটেছে আওয়ামী লীগের দ্বারা? তবে তা নিয়ে কোন লেখা বাংলা ট্রিবিউন বা দৈনিক জনকণ্ঠে দেখার আশা করলে অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হতে পারে।
//DB
নেত্র নিউজের মূল ওয়েবসাইট দেখুন
বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য
বাংলাদেশের বাইরের পাঠকদের জন্য
ইউটিউব চ্যানেল