বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নথি: সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্যে মারাত্মক অসম্পূর্ণতার চিত্র প্রকাশ

Netra News
Netra News
Published in
3 min readJun 27, 2020

(১৮ জুন ইংরেজিতে প্রথম প্রকাশিত।)

প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) পাঠিয়ে থাকে বাংলাদেশ সরকার। মোট কতটি পরীক্ষা করা হয়েছে, কতজন কোভিড শনাক্ত হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা কত তা থাকে এসব তথ্যে। এগুলোকে সমন্বয় করে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মহামারীর সর্বশেষ পরিস্থিতি বিষয়ক সাপ্তাহিক “সিচুয়েশন রিপোর্ট” নিজেদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে থাকে ডব্লিউএইচও। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ডব্লিউএইচও এখন পর্যন্ত এমন ১৬টি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

ডব্লিউএইচও থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত দুইটি রিপোর্টে দেখা যায় বাংলাদেশ সরকারের পাঠানো তথ্য অসম্পূর্ণ। এই রিপোর্টগুলোতে বয়স, লিঙ্গ এবং আক্রান্ত ও মৃত রোগীর এলাকা বিষয়ক সব তথ্য নেই।

সরকারের কাছে আক্রান্ত ও মৃত ব্যাক্তিদের বয়স ও লিঙ্গ পরিচয়ের তথ্য না থাকার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। অথচ ডব্লিউএইচওর সাম্প্রতিক সিচুয়েশন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে ঠিক তাই ঘটেছে।

১৫ জুন প্রকাশিত সর্বশেষ সিচুয়েশন রিপোর্টে ডব্লিউএইচও লিখেছে, “শনাক্তকৃত রোগীদের তালিকাতে বর্তমানে কেবল ২৪ শতাংশের বয়স ও লিঙ্গ উল্লেখ আছে।”

এর অর্থ দাঁড়ায়, ডব্লিউএইচও বলছে রে, বাংলাদেশের প্রশাসন দেশে ৯০,৬১৯ শনাক্ত রোগীর মধ্যে ২১,৪২৩ জনের বয়স ও লিঙ্গ পরিচয় জানে।

অর্থাৎ, ডব্লিউএইচওর রিপোর্টে বয়স ও লিঙ্গ ভিত্তিক যে সকল পরিসংখ্যান দেখা যায় — যেমন আক্রান্তদের মধ্যে ২৬.৫% রোগীর বয়স ৩১ থেকে ৪০, ২৬% রোগীর বয়স ২১ থেকে ৩০, ১৮% রোগীর বয়স ৪১ থেকে ৬০, এবং ১২% রোগীর বয়স ৫১ থেকে ৬০ — তাতে ৭৬% করোনা পজিটিভ ব্যাক্তি হিসাবের বাইরে।

আক্রান্তের তুলনায় মৃতদের বয়স ও লিঙ্গ বিষয়ে অধিক তথ্য রয়েছে, কিন্তু সেক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ তথ্য নেই।

ডব্লিউএইচও বলছে, “৫৮.৯% কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট-মৃত্যুর তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে।”

অর্থাৎ ১২০৯ জন মৃতের মধ্যে ৭১২ জনের তথ্য রয়েছে।

তবে তথ্য ঘাটতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে আক্রান্তদের এলাকা বিষয়ক কোনো তথ্য না থাকা, যার ফলে কোথায় কি পরিমান আক্রান্ত রোগী রয়েছে তার স্পষ্ট হিসাব এখন অজানা। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়বে সরকারের নীতি নির্ধারণ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার ওপর।

১৫ জুনের ডব্লিউএইচও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “কোভিড-১৯ পজিটিভ কেসের মাত্র ৫৭ শতাংশের ক্ষেত্রে রোগীর এলাকা ভিত্তিক অবস্থানের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।”

অর্থাৎ ৯০,৬১৯ সনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে মাত্র ৫১,২৭১ জন কোন কোন এলাকায় থাকেন তার তথ্য রয়েছে।

অর্থাৎ, ডব্লিউএইচওর রিপোর্টে বিভাগ ভিত্তিক যেসকল পরিসংখ্যান রয়েছে — ৬৭% কোভিড-১৯ পজিটিভ কেস ঢাকা বিভাগের, ১৮% কেস চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩% ময়মনসিংহ বিভাগের, ২.৯% খুলনা বিভাগের, ২.৮% সিলেট বিভাগের, ২.৬% রংপুর বিভাগের, ২.২% রাজশাহী বিভাগের এবং ১.৩% বরিশাল বিভাগের — এসব পরিসংখ্যানে ৪৩% আক্রান্ত রোগীর হিসাব নেই।

অসম্পূর্ণ এসকল তথ্যের উদ্ভব ঘটেছে বাংলাদেশ সরকারের হিসাব থেকে, ডব্লিউএইচওর সম্পাদিত কোন হিসাব থেকে নয়। কারণ একই ধরণের তথ্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটেও দেয়া আছে। সেখানে দেয়া প্রত্যেক বিভাগের তথ্য যোগ করলে ৫২,৮৩০ হয়, যেখানে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত সংখ্যা ৯০,৬১৯ জন।

নির্ভরযোগ্য তথ্যের ঘাটতির ফলে সরকারের ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণ গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। যেমন কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঘনত্ব কোথায় সর্বাধিক, অর্থাৎ কোথায় কোথায় হটস্পট রয়েছে, তা এলাকা ভিত্তিক তথ্য ছাড়া জানা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বক্তব্য জানবার জন্য আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু এ প্রতিবেদন যখন প্রকাশ হয় তখনো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছেও জানতে চেয়েছিলাম যে বয়স, লিঙ্গ বা ঠিকানা সম্পর্কিত তথ্যের যে ঘাটতি রয়েছে সে বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন কিনা। সংস্থাটির ঢাকাস্থ অফিসের কমিউনিকেশান ডিরেক্টর জানান, “রিপোর্টে যা আছে, তার অতিরিক্ত কোন তথ্য আমরা দিতে পারবো না।”

--

--

Netra News
Netra News

Netra News - a new independent and impartial online media platform publishing investigations, analysis, and opinion on Bangladesh politics and society