গান খায় না মাথায় দেয়?

Parikshit Sanyal
Significant others
Published in
2 min readApr 5, 2024

গান শুনতে ভালো লাগে, অথবা খারাপ । একেবারেই বেসুরো বেতালা না হলে শ্রুতিকটু বলা চলেনা । কিছু গান নেহাৎ উৎপীড়ন, তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম । মোটামুটি পাতে দেওয়ার মত হলে গান শুনতে ভালোই লাগে । পছন্দ বা অপছন্দ নির্ভর করে শ্রোতার বয়স, রুচি, সকাল না বিকেল, বর্ষা না বসন্ত, আমরা না ওরা এবম্বিধ হাজারোকিছুর ওপর । বাচ্চারা সারাদিন ইউটিউবে বেবিশার্ক শোনে, অপোগণ্ড (অপ্রাপ্তবয়স্ক অর্থে) শোনে কে-পপ, সংস্কৃতি মনস্কেরা লুকিয়ে সামি সামি শোনে । এই কানে শোনা আর মরমে পশিবার বাইরে কি গান আছে?
যেকোন প্রশ্নের সত্যিকারের উত্তর পেতে হলে অঙ্ক কষতে হয়, অন্ততঃ ভৌতবিজ্ঞান বইতে তাই লেখে । গান কি মাপা যায়? সুরের কম্পাঙ্ক থাকে, কিন্তু শুধু একটা সুর তো ‘গান’ নয় । আওয়াজের বেশি কম তারতম্যটাও ‘গান’ নয় । তাহলে গান কোনটা? আলাপ আর তানের তফাত কিসে? ‘আধুনিক’, ‘রাগপ্রধান’ আর ‘ঠুমরী’ কিসে আলাদা? রামপ্রসাদী আর কমলাকান্তের তফাত কি?
সনাতন শ্রোতা জানেন, তফাত হয় জটিলতায়, ডিটেলিং এর কাজে । সাবেকি সাদা জানলার পর্দা আর লখনৌ-র চিকনকারির যা তফাত, হাতিবাগানের লাল গামছা আর ফুলিয়ার নক্সী কাঁথার গামছার যা তফাত, খেয়াল এর সাথে ঠুমরীর সেই তফাত । এই জটিলতা মাপার গাণিতিক উপায় হল ফ্র্যাক্টাল (fractal) । যে গান যত জটিল এবং যত তার কালোয়াতি, তার fractal dimension ও ততটাই বেশি ।
মানবশরীরের অগণিত রক্তবাহ দিয়ে যে শোণিতের ধারা বয়ে চলেছে, তার নিজস্ব কম্পাঙ্ক, বেগ, তাল, অর্থাৎ একটা নিজস্ব ‘সঙ্গীত’ রয়েছে । এবং তারও একটা নির্দিষ্ট জটিলতা রয়েছে । হ্রদয়ের জায়গায় একটা জলের পাম্প বসিয়ে দিলে কাজ চলেনা, ক্লোমের জায়গায় হাতপাখা নিতান্তই অচল। পাম্প হাতপাখা এসব সহজ সরল যন্ত্র, এদের মধ্যে কোন জটিলতাই নেই । শরীর এক জটিল যন্ত্র, তার অন্ত্রে অন্ত্রে তন্ত্রে তন্ত্রে অজস্র উপনদী শাখানদী । একে চালাতে গেলে খুব মেপে মেপে টানতে হয়, ধরতে হয়, ছাড়তে হয় । এই জটিলতা (complexity) অহেতুক নয়, বিবর্তনে অ্যামিবা থেকে মানুষ হওয়ার সুদীর্ঘ পথে সবদিক সামলাতে গিয়ে আমরা এমনই হয়ে গেছি । এখন এই জটিলতাই আমাদের সহজ ।
কানে শোনা গান যে শুধু ‘ভাললাগে’ তা নয়, সেই গানের গুঁতো এই রক্তবাহ হ্রৎপিন্ড সবাইকে চঞ্চল করে তোলে। গানের যেমন চলন সেই চালে কাঁপে এরা সবাই । বাইরের জটিলতা খানিকক্ষণ পরেই ভিতরে চলে আসে। এর তাৎপর্য কি তা কে জানে । হয়তো এই আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনটাকেই ‘ভালোলাগা’ বলে। তবে গান তো শুধু কানের নয় । মহাবিশ্বের সুদূর প্রান্তের নীহারিকা থেকে শুরু করে আমার দেওয়ালঘড়ি পর্যন্ত কত রকমের কম্পন আমাদের ঘিরে রয়েছে । তার কোনটা কানে বাজে, কোনটা কান পেরিয়ে ত্বক-মেদ-পেশী-মজ্জা ভেদ করে শোণিতে তরঙ্গ তোলে । তাহলে আমার ‘আসল’ কম্পাঙ্ক, আসল fractal কোনটা? নাকি এই সব মিলিয়েই ‘আমি’ বলে একটা বিমূর্ত ধারণা তৈরি করে রয়েছে । কে জানে ।

হৃৎপিন্ড-এর গতির তারতম্য থেকে Poincare plot; কানে যত জটিল গান শোনানো হয় হৃৎপিন্ড-এর গতির তারতম্যও তত বাড়ে

পুরো প্রবন্ধঃঃ https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1746809424003008?dgcid=coauthor

--

--