রবীন্দ্রনাথকে বিচার
আকবর আলী খানের ‘দুর্ভাবনা ও ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে’ গ্রন্থের আলোকে
কিছুদিন পূর্বে আমার পরিচিত একজন ফেসবুকে একটি লেখা শেয়ার করেন, যেখানে লেখার সাথে দুটি ছবিও সংযুক্ত ছিল। একটি ছবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, এই ছবিতে লাল ক্রসচিহ্ন দেয়া। অপর ছবিটি নবাব সলিমুল্লাহ’র, এই ছবিতে রাইটচিহ্ন দেয়া। লেখার মুল বিষয়বস্তু এই- রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় চরম বিরোধিতা করেছেন, এদেশের মানুষকে হিংসা করেছেন, তিনি মুসলিম বিদ্বেষী ছিলেন; তারপরও আমরা তাকে জাতীয় কবি বানিয়েছি। অপরদিকে নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনেক জমি দিয়েছেন, বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন; কিন্তু আমরা তাকে মনে রাখিনি। তাছাড়া ঐ লেখায় কবির বিভিন্ন কবিতা ও বক্তৃতার অনেক অংশকে হাস্যকরভাবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। লেখাটি পড়ার পর কয়েকদিন আমি মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিলাম। এর কারণ এই লেখা পড়ে একটা বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট হয় যে একটি বিশেষ গোষ্ঠী খুবই সুপরিকল্পিতভাবে এধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করছে। যে ভদ্রলোক এই লেখা শেয়ার দিলেন তিনি একজন স্কুলশিক্ষক। তাছাড়া এই ঘটনার আগে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রকেও এধরনের বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত অবস্থায় দেখেছিলাম, তাদের জ্ঞানের উৎসও সোশ্যাল মিডিয়া। পাকিস্তান আমলে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক রবীন্দ্র বিরোধিতার কথা আমাদের অজানা নয়। তাছাড়া ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ও অনেক পড়ালেখা না জানা সাধারণ মানুষের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা ও বিদ্বেষ সবসময়ই ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন উদ্যমে কবিকে নিয়ে নানা রকম কুৎসা রটানো হয় এবং দেশের শিক্ষিত সমাজ, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা অনেক তরুণ নিজেদের অজ্ঞতাজনিত কারণে খুব সহজেই বিভ্রান্ত হয়, বিচার বিশ্লেষণ না করেই এসব মিথ্যাচার ও অপপ্রচার বিশ্বাস করে নেয়, তখন কবিগুরুকে যারা সামান্যও চিনেন তাদের জন্য ব্যাপারটা অনেক যন্ত্রণাদায়ক হয়ে দাঁড়ায়।
তীব্র মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে ঈদের ছুটি শেষ করে মেসে এসেই বন্ধুর টেবিলে দুর্ভাবনা ও ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে’ বইটি পেয়ে যাই। এই বইয়ে পনেরোটি অধ্যায়ে কবিকে নিয়ে আমাদের নানা ভাবনা দুর্ভাবনা চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক এবং অত্যন্ত শক্তিশালী যুক্তি ও সত্যনিষ্ঠ তথ্য ব্যবহার করে কবির বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়েছেন। বইয়ের একটি অধ্যায় ‘রবীন্দ্রনাথ ও পৌত্তলিকতা’। এদেশ থেকে রবীন্দ্রনাথকে ঝেটিয়ে বিদায় করার লক্ষ্যে বিশেষ ধর্মান্ধ গোষ্ঠী প্রধান যে হাতিয়ার ব্যাবহার করে তা হল- তিনি হিন্দু, তিনি মূর্তি পূজারি, তার কবিতায় দেব-দেবীর বন্ধনা করেছেন; সুতরাং, রবী ঠাকুরের কবিতা পড়া যাবে না। হিন্দু কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত রাখা যাবে না ইত্যাদি। একজন মহাপুরুষ জাত, ধর্ম, সামাজিক স্ট্যাটাস, দেশ-কালের সীমা এসব অতিক্রম করতে পারেন বলেই তিনি মহাপুরুষ। রবী ঠাকুর হিন্দু, মুস্লিম, আস্তিক, না নাস্তিক ছিলেন তা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই ধর্মের দিকটাকে পুঁজি করেই বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। কবিকে হিন্দু ধর্মের ভেতরে ঠেলে দিয়ে মাঝখানে একটি দেয়াল তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই চেষ্টা আগেও ছিল, ইদানীং আবার মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে। আলোচ্য গ্রন্থে লেখক এই দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেছেন।
আকবর আলী খান ঠাকুর পরিবারের ইতিহাস, পারিবারিক ধর্ম ভাবনা, কবির নিজের ধর্ম ভাবনা, এসব বিষয়ে খুবই সত্যনিষ্ঠ তথ্যপ্রমাণ হাজির করে দেখিয়েছেন যে, যদি ধর্মের দিক থেকে কবিকে বিচার করতেই হয় তাহলে দেখা যায় রবীন্দ্রনাথ ধর্মের দিক থেকে হিন্দুদের চেয়ে মুসলিমদের অনেক কাছাকাছি ছিলেন। পঞ্চদশ শতকে মুসলিমদের সংস্পর্শে জাতিচ্যুত হয়ে কবির পূর্বপুরুষরা কৌলীন্য হারিয়েছিলেন। তখন থেকে তাঁরা পরিচিতি হন পিরালি ব্রাহ্মণ হিসেবে। এই পরিবারের এক কন্যাকে বিয়ে করে পিঠাভোগের জমিদার জগন্নাথ কুশারি পিরালি দোষে দুষ্ট হন। তার প্রপৌত্র ষোড়শ শতাব্দীর শেষদিকে কলকাতায় এসে এক জেলে পাড়ার নিকটে বসবাস শুরু করেন। জেলেরা এই পরিবারের ইতিহাস জানত না। উনারা ব্রাহ্মণ ছিলেন এতটুকু জেনেই তারা ঠাকুর ডাকতে শুরু করে। এভাবেই কুশারী পদবি ঠাকুরে পরিণত হয়। ব্যাবসা-বাণিজ্য করে অনেক ধনসম্পত্তি অর্জন করলেও তাঁরা কখনও কুলীন ব্রাহ্মণদের জাতে উঠতে পারেননি। কলকাতার কোন ব্রাহ্মণ পরিবার তাঁদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করতে রাজি হত না। খুলনা, যশোর অঞ্চলের পিরালি গোত্র থেকে পাত্রী সংগ্রহ করতে হত। কবির দাদি দিগম্বরী দেবী যশোরের নরেন্দ্র পুরের মেয়ে। কবির নানাবাড়ি এমনকি শ্বশুরবাড়িও এই অঞ্চলে। ঠাকুর হলেও এই পরিবারকে হিন্দু কুলীন সমাজের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হত না। দ্বারকানাথ ও দেবেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করার পর এই পরিবার কুলীনদের কাছে আরও অপাংক্তেয় হয়ে পড়ে। ব্রাহ্মধর্ম পৌত্তলিকতা বিরোধী এবং ইসলামের সাথে তার একটা বড় মিল রয়েছে। এই মিলের জায়গা হল- এক ঈশ্বরে বিশ্বাস। ব্রাহ্মধর্ম আন্দোলনে দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভূমিকা অনন্য। এর বিকাশের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন কবির পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেবেন্দ্রনাথের বিশ্বাসের মুল উৎস ছিল দুইটি- ১) উপনিষদ ২) ইসলামি সুফিবাদ। পারস্য কবি হাফিজের গজল দ্বারা তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন। পিতার প্রভাবে কবিও হাফিজের প্রতি অনুরাগী হন। ১৯৩২ সালে পারস্য ভ্রমণকালে হাফিজের সমাধি দেখার পর কবি লেখেন-
“ মনে হল আমরা দুজনে একই পানশালার বন্ধু, অনেকবার নানা রসের অনেক পেয়ালা ভরতি করেছি। আমিও তো অনেকবার দেখেছি আচারনিষ্ঠ ধার্মিকদের কুটিল ভ্রুকুতি। তাদের বচনজালে আমাকে বাঁধতে পারেনি; আমি পলাতক, ছুটি নিয়েছি অবাধপ্রবাহিত আনন্দের হাওয়ায়। নিশ্চিত মনে হল আজ, কত-শত বৎসর পরে জীবন মৃত্যুর ব্যবধান পেরিয়ে এই কবরের পাশে এমন একজন মুসাফির এসেছে যে মানুষ হাফিজের চিরকালের জানা লোক”।
দেবেন্দ্রনাথের একেশ্বরবাদে অটল বিশ্বাসের প্রভাব শান্তিনিকেতনে দেখা যায়। ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠার সময় শান্তিনিকেতনের ট্রাস্ট দলিলে শর্ত আরোপ করেন- সেখানে মূর্তি পূজা হতে পারবে না।
পারিবারিকভাবে কবি ব্রহ্মধর্ম ও একেশ্বরবাদের সাথে পরিচিত হয়েছেন এবং নিজেও তা গ্রহণ করেছেন। যৌবনে কিছুদিন এই ধর্মের সংগঠকও ছিলেন। ব্রাহ্মধর্মের মুখপত্র ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই তিনি ব্রহ্মসংগীত রচনা শুরু করেন। আকবর আলী খান এই অধ্যায়ে কবির অনেক রচনা, বক্তৃতা, চিঠি ও পারিবারিক ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে দেখিয়েছেন যে, কবি ব্রাহ্মধর্ম ও একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং মূর্তি পূজা পছন্দ করতেন না। ১৯২৫ সালে মহাত্মা গান্ধী শান্তি নিকেতনে এসেছিলেন। তখন গান্ধী হরিজনদের প্রস্তর পুজাকে সমর্থন করলে কবি তাঁর সাথে মোটেও একমত হননি। এসব বিষয়ে আলোকপাত করার পর লেখক এভাবে বলেছেন-
“উপরিউক্ত ঘটনাবলী থেকে দেখা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ কখনো পৌত্তলিকতায় বিশ্বাস করেননি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে রবীন্দ্রনাথ হিন্দুদের চেয়ে মুসলমানদের অনেক কাছাকাছি ছিলেন”। তাঁর গীতি কবিতায় ইসলামি আদর্শের প্রভাব সুস্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে কবি গোলাম মোস্তফার বক্তব্য তাৎপর্যময়-
কবি সম্রাট রবীন্দ্রনাথ তাঁর গীতিকবিতায় যে ভাব ও আদর্শ ব্যক্ত করিয়াছেন, তাহার সহিত ইসলামের চমৎকার সৌসাদৃশ্য আছে। তাহাঁর ভাব ও ধারণাকে যেকোনো মুসলমান অনায়াসে গ্রহণ করিতে পারে। বাংলা ভাষায় আর কোন কবি এমন সুন্দর করিয়া মুসলমানের প্রাণের কথা বলিতে পারেন নাই। …
তবে একটা প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে আসে, কবি যদি মূর্তি পূজায় বিশ্বাস না-ই করেন তাহলে তার কবিতায় এত দেব-দেবীর নাম আসে কেন? এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ব্যাক্তি রবীন্দ্রনাথ আর কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। এটা সব কবির ক্ষেত্রেই সত্য। ব্যাক্তি কবিকে না জানলে তাঁর কবিতার সারমর্ম বুঝা যায় না। নজরুলও কবিতায় দেব-দেবীর বন্দনা করেছেন। হিন্দু ধর্মের অনেক অনুসঙ্গ নজরুলের কবিতায় এসেছে। নজরুলকে আমরা পৌত্তলিক বলব কি? নজরুল রামায়ণ, মহাভাভারত, মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য এসব প্রাচীন সাহিত্য পাঠ করেছেন এবং সেখান থেকে কবিতার উপাদান নিয়েছেন। আর রবীন্দ্রনাথ যেহেতু বেড়ে উঠেছেন হিন্দু সামাজিক পরিবেশে তাই তাঁর কবিতায় দেব-দেবীর প্রসঙ্গ, পৌরাণিক প্রসঙ্গ স্বাভাবিকভাবেই এসেছে। কে পৌত্তলিক আর কে পৌত্তলিক নয়, এ বিষয়টি শুধু কবিতা পড়ে নির্ধারণ করা যায় না, কবির ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে হয় ।
রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘদিন পিতার পথ ধরে একেশ্বরদাদের অনুসারী ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে বাউলদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অদ্বৈতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। আকবর আলী খান প্রথম অধ্যায়ে এ বিষয়ক আলোচনার শিরোনাম দিয়েছেন- একেশ্বরবাদ (monotheism) থেকে অদ্বৈতবাদ (monism): বাংলার সেরা বাউল। অদ্বৈতবাদীরা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেও তাঁরা মনে করেন সৃষ্টি ও স্রষ্টা অভিন্ন। অর্থাৎ স্রষ্টার আলাদা কোন সত্তা নেই, তিনি সৃষ্টির মাঝেই মিশে আছেন। এই অদ্বৈতবাদ হল বাউল দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলাম ধর্মের সুফিবাদ, হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণববাদ এবং বাংলার বিভিন্ন লোক ধর্মের মানবিক দিকগুলো নিয়ে বাউল মতবাদের উৎপত্তি। যেহেতু বাউলরা বিশ্বাস করে যে স্রষ্টা সৃষ্টির মাঝেই বিরাজমান তাই তারা মানুষের ভজনা করেই স্রষ্টাকেই (বাউল গানে এই স্রষ্টাকে মনের মানুষ, মুর্শিদ এসব নামে ডাকা হয়েছে) পেতে চায়। বাউলরা ধর্ম ভিত্তিক বিভাজন মানে না। তারা মনে করে হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের মানুষই সঠিক পথে আছে, যেহেতু উদ্দেশ্য এক। জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে পূর্ব বাংলায় এসে কবিগুরু কুষ্টিয়ার বাউলদের সংস্পর্শে আসেন। তাঁদের ধর্মদর্শন দ্বারা প্রভাবিত হন, অদ্বৈতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। গীতাঞ্জলি কাব্যের কবিতাগুলোতে এই প্রভাব খুবই স্পষ্ট। উদাহরণ হিসেবে একটি কবিতা দেখা যাক-
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহপ্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান!
আমার নয়নে তোমার বিশ্বছবি
দেখিয়া লইতে সাধ যায় তব কবি-
আমার মুগ্ধ শ্রবণে নীরব রহি
শুনিয়া লইতে চাহ আপনার গান।।
আমার চিত্তে তোমার সৃষ্টিখানি
রচিয়া তুলিছে বিচিত্র এক বাণী।
তারি সাথে, প্রভু, মিলিয়া তোমার প্রীতি
জাগায়ে তুলেছে আমার সকল গীতি-
আপনারে তুমি দেখিছ মধুর রসে
আমার মাঝারে নিজেরে করিয়া দান।।
শেষ দুটি লাইন একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন আর অনুভব করার চেষ্টা করুন- আপনার দেহটি ঈশ্বরের প্রতিরূপ, নিজের বিশাল সৃষ্টি জগতকে মন ভরে দেখার জন্য ইশ্বর আপনার দেহে আশ্রয় নিয়েছেন। আপনার চোখ দিয়ে তিনি জগতকে অবলোকন করছেন! কী বুঝলেন? সৃষ্টিকর্তাকে এর আগে এতো গভীরভাবে ফিল করেছেন কখনো? প্রতিটি মানুষেই তো স্রষ্টা বিরাজমান। এই মানুষকে মানুষকে আপনি কষ্ট দিবেন? ঘৃণা করবেন? পারবেন না। এই হল অদ্বৈতবাদের দর্শন। কবিগুরু বাউলদের সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেননি কিন্তু এই মহান দর্শনকে গভীরভাবে ধারণ করেছিলেন। এই দর্শন কবিকে ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাত, দেশ-কালের সীমা ছাড়িয়ে বিপুলা পৃথিবীর প্রতিটি ঘরের সন্তানে পরিণত করেছিল। ভারত তীর্থ কবিতার কয়েকটি লাইন দেখা যাক-
‘এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু মুসলমান-
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খৃস্টান।
এসো ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার।
এসো হে পতিত, হোক অপনীত সব অপমানভার।’
এই কবিকে আপনি হিন্দু বলবেন, না মুসলমান বলবেন? ধর্মের ক্ষুদ্র গণ্ডির মাপকাটিতে মহাপুরুষদেরকে বিচার করা যায় না। তাঁরা সব বিভেদের বেড়া অতিক্রম করে হয়ে যান সমগ্র পৃথিবীর, সকল মানুষের। অতএব, রবীন্দ্রনাথকে হিন্দুত্বের আবরণ পরিয়ে দূরে ঠেলে দেয়ার সুযোগ নেই। এটা আমাদের সুভাগ্য যে, বাংলা ভাষা রবীন্দ্রনাথের মতো লেখক পেয়েছে।
এই ছিল ‘রবীন্দ্রনাথ ও পৌত্তলিকতা’ বিষয়ে মোটামুটি আলোচনা। আমি গুরত্বপূর্ণ দিকগুলি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য বইটি পাঠ করা জরুরি। বইয়ের নাম আবারও বলছি- ‘ দুর্ভাবনা ও ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে’, লেখকঃ আকবর আলী খান, প্রথমা প্রকাশন।
পরবর্তী অধ্যায় ‘রবীন্দ্রনাথ ও সাম্প্রদায়িকতা’
সাথেই থাকুন-
এই প্রবন্ধটি লিখেছেন, তোফায়েল আহমেদ, প্রাত্বন সভাপতি, এসইউডিএস।