অঞ্জন দত্তের মালা নিয়া

Tasnim Rifat
Tasnim Rifat
Published in
2 min readAug 10, 2020

মালা একটা খুবই ওয়েল-স্ট্রাকচার্ড লিরিক্স। এর অন্যতম কারণ টাইমের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার৷ মালায় অতীত আর বর্তমান কাল ঘুইরা ফিরা বারবার আসে৷ অন্য অনেক গানের মতো এটা কেবল অতীতের স্মৃতিচারণ নিয়া হা-হুতাশ না, আবার বর্তমানের অবস্থা নিয়া শুধু কান্নাকাটিও না।

গানটা শুরু হয় মালার বর্তমান অবস্থা নিয়া। তার এখনকার দিন কেমন জাঁকজমকে কাটতাছে, তার পিসিচন্দ্রের দুল, ঢাকেশ্বরী শাড়ি। আমরা জানতে পারি 'আজ' একটা শুভদিন। এইবার গানটা হাজির হবে স্মৃতির দাবি নিয়া। এই শুভদিনে নানান কাজের মধ্যেও একবার কি মনে পড়তেছে আগের দিনগুলার কথা? এইযে বর্তমান থেকে অতীতে শিফট করলো লিরিক্স।

আবার পরের লাইন গান বর্তমানে ফিরা আসবে। তবে এইবার শুধু আজকের কাহিনী না। ইদানিংকার নিয়মিত লাইফের কথা আসবে গানে। এখনো মাঝরাত্রে মালা 'রোজ রোজ' কোথায় যায়? আর এই জাঁকজমমের মধ্যেও, 'মালা আসলে কে?' সে কি অতীতের মালা,নাকি এখনকার এই জাঁকজমকের মালা? নাকি তার জাঁকজমকে বারবার বাগড়া দেয় অতীত?

এইটুকুটে আইস্যা গানে আরেকটা শিফট হবে। এইবার গান আর স্মৃতির মধ্যে নাই। চইলা যাবে মালার গুণ বর্ণনায়। মালা আসলে কেমন? যার কথাবলা মধুবালা আর হাঁটাচলা সোফিয়া লরেনের মতো। প্রেমিকের কাছে প্রেমিকার বা প্রেমিকার কাছে প্রেমিকের বৈশিষ্ট্যগুলা তো একটা চিরকালীন রূপ হয়া টিইকা থাকে। ওই যে, 'আমি চিনি, আমি জানি তোমাকে।' এরপর গানে আবার আসবে মালা কি কি করতেছে ইদানীং, তার কথা।

গানের শেষ অংশে গানটা আরেকটা ডাইমেনশনে চইলা যায়৷ এইবার আবার পুরনো স্মৃতি ঘাঁটাঘাঁটি। আমরা এতোক্ষণ মালার জাঁকজমকমার্কা জীবনের কথা জানতে পারছি। এইবার আসবে মালার অতীতের জীবন। আবার মালা কেন আর কথকের জীবনে নাই, তারও ক্লু? এইখানে আসে মালা আর কথকের সাধারণ জীবনের কথা। মানে ক্লাসের (শ্রেণী) কাহিনী। এইখানে একটা ক্লাসিক্যাল প্যাচে পড়মু আমরা। ক্লাসিক্যাল বললাম এইজন্য যে, বাংলার শিল্প-সাহিত্য ক্লাসের প্রবলেম অনেকসময়ই আসে প্রেমের মামলা হিসেবে৷ প্রেমিকের আর্থিক সঙ্গতি নাই দেখে প্রেম টিকে নাই বা বিয়া হয় নাই, এই কাহিনী দেখে নাই বাংলার আর্ট-কালচারে, এমন মানুষ খুইজা পাওয়া মুশকিল।

যাই হোক, 'যেভাবে হোক বাঁচার স্বপ্ন' তো ছিল। তারপর কী হইলো? আমরাও এটা পরিষ্কার জানতে পারি না, কথকের আর্থিক অবস্থা কি এই বিচ্ছেদের কারণ? হইতেও পারো৷ অঞ্জনের চরিত্ররাই তো চাকরী পায়া ফোন করে '2441139' এ৷ আবার নাও হইতে পারে। স্বাভাবিক বিচ্ছেদও হইতে পারে।তবে কথকের মনে ওই আগের মালার রূপই হাজির হইতে থাকে বারবার। সে ইমরান খানরে আপ্যায়ন করা মালা না,জেয়সালমিতে ঘুরতে যাওয়া মালাও না ; 'এন্টালী সিনেমার পেছনের বস্তির মৌলালির মালা’।

মালা গানটায় বারবার টাইম শিফট হয়, বারবার প্রেমিকের সাথে প্রেমিকার সম্পর্ক, স্মৃতিচারণ বিভিন্ন ডাইমেনশনে আসতে থাকে৷ এইজন্য মালা কোন একরৈখিক হা-হুতাশ না৷ মালা একটা ওয়েল স্ট্রাকচার্ড লিরিক্সের দারুণ এক্সাম্পল।

--

--