নতুন উচ্চতায় | সান্দাকফু ট্রেক | দিন 0

ঢাকা — সিলেট — ডাউকি — শিলং — গৌহাটি — শিলিগুড়ি — মানেভঞ্জন

Nowshad
tripsharebd
6 min readOct 29, 2018

--

অক্টোবর ১৮

সিলেটে দলের বাকি সবাই ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে সোবহানিঘাট বাস স্ট্যান্ড এ। আমার বাস একটু দেরি করায় সবাইকে বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে হল। তবুও অনেক জল্পনা কল্পনার পর আমরা চার জন শেষমেশ এক হচ্ছি এই ট্রিপ এ — আমি, দিপু, রাহাত, নাহিদ ভাই।

আমি পৌছালাম সকাল ৭ টায়। নেমেই ফ্রেশ হয়ে তড়িঘড়ি করে চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ড এ। তারপর সবাই মিলে বাসে রওনা তামাবিল বর্ডারে, বাস ভাড়া ৬০ টাকা। সেই পুরানো জাফলং এর ভাঙ্গা রাস্তা।

প্রায় ২ ঘণ্টা এই ভাঙ্গাচুরা রাস্তায় হেলে দুলে পৌঁছে গেলাম তামাবিল বর্ডারে। ভিড় তেমন একটা নেই বললেই চলে, ৩০ জন মানুষ হবে মোটমাট। যেহেতু এই বর্ডার দিয়ে আগেও একবার এসেছি সেহেতু সব কিছুই জানা। দ্রুতই ইমিগ্রেশন, কাস্টমস এর সব ফর্মালিটি সেরে এপার-ওপার ক্লিয়ার হতে মোট এক ঘণ্টা লাগল। এবার ভারতের ইমিগ্রেশন ফর্ম পূরণ করা লাগলো না বলে কাজ আগের চেয়ে দ্রুত হল। তারপর হেঁটে সোজা ডাউকি বাজার

তামাবিল স্থলবন্দর

আগেই জানা ছিল একটা দোকানে টাকা থেকে রুপি করা যায় এবং রেটও বেশ ভাল দেয়। তাই ডাউকি বাজারে পৌঁছেই সোজা টাকা থেকে রুপি করে নেয়া। রেট পেয়েছি ১০০ টাকায় ৮৩ রুপি

বামে ভারতীয় ইমিগ্রেশন | ডানে ডাউকি বাজার

যেতে হবে শিলং, গাড়ি রিজার্ভ না করে শেয়ার্ড জিপে ১৫০ রুপি পার পারসন হিসেবে উঠে পড়লাম। আমাদের সবার কাছেই ভারী ব্যাগ ছিল, তাই চারজন মোট পাঁচটা সিট নিয়ে একটু আরাম করেই বসলাম। তারপর ছুটে চলা মেঘের মাঝে দিয়ে পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তায়।

বামে মেঘলয়ের রাস্তা | ডানে শিলং পুলিশ বাজার মোড়

শিলং পৌছালাম আড়াই ঘণ্টা পর। হাল্কা যানজট। সকালে তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি, তাই বের হলাম খাবারের সন্ধানে। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে অর্ডার করলাম ভাত চিকেন। কিন্তু তারা খাবার দিতে এক ঘণ্টা দেরি করায় আমাদের বিরক্তির মাত্রা চরম। সব আইটেম দেখতে প্রায় এক রকমই, কোনমতে খেয়ে দেয়ে সোজা চলে গেলাম পুলিশ বাজার, গাড়ি ঠিক করতে হবে গোহাটি, আসাম

কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি আর দরদাম করার পর আসামের এক দাদার গাড়িই ফাইনাল হল — ১৮০০ রূপিতে। যাবার রাস্তা খুব ভাল, চার লেনের হাইওয়েতে গাড়ি চলল একরকম উড়ে উড়ে। মাঝে এক জায়গায় মম আর চা এর বিরতি নিলাম সন্ধ্যার দিকে। গোহাটি ঢুকতেই দুর্গা পুজার ভাবটা টের পাওয়া গেল। একটু পরপর প্যান্ডেল, রঙিন বাতির ঝলকানি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমাদের ড্রপ করা হল কামাখ্যা রেল স্টেশন এ। এখান থেকেই রাত ১১:৪৫ এ আমাদের ট্রেন KYQ PURI EXPRESS

বামে কামাখ্যা রেল স্টেশন | ডানে দুর্গা পুজার একাংশ

এই তাহলে সেই কামাখ্যা! মন্ত্র-তন্ত্রের সাধকদের আস্তানা এখানে। যাই হোক, হাতে অনেক সময় এখনো। আগে থেকেই প্লান করা ছিল যে সময় থাকলে গোহাটির Decathlon এ গিয়ে কিছু জিনিসপত্র কেনার। তো প্রথমে বাস এবং পরে শেয়ার্ড কার এ করে চলে গেলাম Decathlon Azara ব্রাঞ্চ এ। বিশাল সাইজের স্পোর্টস এর শপ, যাতে এমন কিছু নেই যে পাওয়া যায় না। আমরা ক্লোজিং টাইমের মাত্র ৩০ মিনিট আগে গেলাম, তাই একরকম তাড়াহুড়ো করেই কেনাকাটা করলাম একজোড়া জুতো এবং একটা দুই লেয়ারের উইন্ড জ্যাকেট। ভাল মান এবং দামের জন্য খুশি সবাই। নতুন জুতা খুশি মনে পড়ে স্টেশনে ফেরত এলাম একই পথে। এসে রাতের খাবারের পালাটা চুকিয়ে নিলাম স্টেশনের পাশের এক হোটেলেই।

ষ্টেশনে ওয়াইফাই আছে, তবে ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে হলে, মোবাইল নাম্বার দিয়ে লগইন করতে হয় বলে আপাতত ওয়েটিং রূমে ট্রেন আসা পর্যন্ত অলস সময় কাটালাম। কিছুক্ষণ পর ট্রেন ৩ নাম্বার প্লাটফর্ম এ আছে এই ঘোষণা শুনেই চলে গেলাম ট্রেন এ।

জীবনের প্রথম ভারতের ট্রেন এ চড়া। আমাদের স্লিপার সিট ছিল, কিন্তু যেয়ে দেখি আমাদের দেশের শোভনের মতন অবস্থা ! আমরা যখন ব্যাপারটা নিয়ে একটু কনফিউসড তখন পাশের একজন বাঙ্গালি আন্টি এবং আঙ্কেল আমাদের পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিল। আসলে এই সিটগুলাকে তিনতলা স্লিপার বেড এ কনভার্ট করা যায়। তো এইরকম স্লিপার সিট পেয়ে আমরাও সন্তুষ্ট। কিছুক্ষণ সেই আঙ্কেল আন্টির সাথে গল্প করে শুয়ে পরলাম যার যার বেড এ।

বামে ভারতের ট্রেনের স্লিপার বগি | ডানে স্লিপার বেড পেয়ে খুশি সবাই

অক্টোবর ১৯

ভোর বেলায় ওঠে একটা জিনিস খেয়াল করলাম যে ভারতের ট্রেনে হাই কমোড, লো কমোড দুইটাই আছে! ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে কতক্ষণ ঘন বনের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলা দেখলাম, মাঝে কিছু বন্য ময়ূরও চোখে পরল। সকাল ৮টার একটু আগে পৌছাই SILIGURI JUNCTION

শিলিগুড়ি জংশন

স্টেশন থেকে বের হয়েই কাছের একটা হোটেলে ঢুকে গেলাম সকালের নাস্তা করার জন্য। খাওয়া হল লুচি আর সবজি। তার পর মানি এক্সচেঞ্জের খোজ নিয়ে জানা গেল যে সকাল ১০টার আগে হবেনা। পরের পাঁচ দিন আর ডলার ভাঙ্গানোর সুযোগ নেই, তাই অপেক্ষা করলাম স্টেশনে এসেই। পথে দিপু আর রাহাত সিম কিনে নিলে আমাদের দেশে যোগাযোগ করার একটা ব্যাবস্থাও হয়ে গেল। সামনের ৫ দিন ঠাণ্ডা থাকবে এবং গোসল করার কোন ব্যাবস্থা থাকবে না, তাই স্টেশনের সাথেই থাকা গোসলখানায় ১০ রুপি দিয়ে সকাল সকাল গোসল সেরে গত দুই রাত একদিনের জার্নির সকল ক্লান্তি ঝেড়ে ফেললাম।

সকাল ১০টা নাগাদ চলে গেলাম মানি মানি এক্সচেঞ্জে। কনভার্সন রেট ১ ডলার = ৭২ রুপি। এবার গাড়ী ঠিক করতে হবে, আমাদের পরবর্তি গন্তব্য — মানেভঞ্জন যা আমাদের ট্রেকিং এর স্টার্টিং পয়েন্ট। গাড়ির খোজ করতে করতে এক আঙ্কেলের গাড়ি পেয়ে গেলাম ৩২০০ রূপিতে, শিলিগুড়ি — মানেভঞ্জন। মাঝে মিরিক হয়ে যাবার কথা ছিল, কিন্তু হাতে সময় কম এবং অনেকদূর ঘুরে যেতে হয় বলে মিরিকের রুট বাদ দিয়ে ডিরেক্ট রুটেই চললাম।

গাড়ি প্রথমে কিছুদূর গেল একটু গাছপালা ঘেড়া রোড দিয়ে। পথে বুনো হাতি তার পরিবারসহ রাস্তা পারাপার হচ্ছে দেখে একটু দাঁড়ালাম। তারপর সমতল থেকে উঁচু পাহড়ের বুকে সাপের মতন একেবেকে উঠে যাওয়া রাস্তা ধরে ক্রমেই উপড়ে চলতে থাকলাম। গাড়ি শুধু এদিক সেদিক করে জিকজ্যাক রাস্তাগুলো ধরে চলছে। বেশ খানিকটা উপরে উঠে একসময় ঘুম ষ্টেশন চোখে পড়ল। এটি ভারতের সবথেকে উঁচু রেলস্টেশন।

Ghum railway station of the Darjeeling Himalayan Railway is the highest railway station in India. It is situated at an altitude of 2,258 metres (7,407 ft). — Wikipedia

মানেভাঞ্জন

ঘুম পেরিয়ে বেশ খানিকটা নিচে মানেভঞ্জন। মানেভাঞ্জনে যাবার শেষের দিকের রাস্তাটা একটু ভাঙ্গাচোরা। তো এই ভাঙ্গা রাস্তায় দুলুনি খেতে খেতে যখন মানভঞ্জন পৌছালাম তখন বাজল দুপুর ২টা। আর সামনে একটা সিঁড়ির পাশে সাইনবোর্ড এ লিখা - YOU ARE WELCOME TO NEPAL

দিন ০

দিন ১

দিন ২

দিন ৩

দিন ৪

দিন ৫

দিন ৬ এবং শেষ

--

--