বান্দরবান: মেঘের দেশে ভেসে বেড়ানোর গল্প 🌄
A tale of cloud and mountains.
দু'পাশে শুভ্র সাদা মেঘ ☁️
সবুজের বুকে ছুটে চলা আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পথ যেন অন্তহীন। হাত বাড়ালেই যেন ছুঁয়ে দেয়া যায় মেঘেদেরকে। মাঝে মধ্য উকি দেয়া সুর্যের আলোয় উঁচু উঁচু পাহাড় গুলোর সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুণে। প্রকৃতির এত কাছাকাছি আসার, বুক ভরে নির্মল বাতাস নেয়ার, আর স্বর্গীয় দৃশ্য দেখে চোখ জুড়ানোর মতন জায়গাই হল — বান্দরবান!
আবহাওয়া বার্তায় পরবর্তী তিনদিন আকাশ মেঘলা, হাল্কা বৃষ্টি হবে। ২০ জুন রাতে ঢাকা থেকে রওনা হলাম চট্টগ্রাম এর দিকে তুর্না নিশিতা ট্রেন এ চড়ে 🚋। সকাল সকাল পৌঁছে গেলাম চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে। তারপর চটপট সকালের নাস্তার পালা শেষ করে সোজা চলে গেলাম বান্দরবানগামী পুর্বানি/পুবালি বাস কাউন্টারে। খানিকক্ষণ অপেক্ষার পর বাসের জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে দেখতে শুরু হল যাত্রা।
চট্টগ্রাম শহর থেকে বান্দরবান যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এর মধ্যে শেষের একঘণ্টার কথা না বললেই নয়। সবুজ পাহাড়ের বুক জুড়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা, দুইপাশেই সবুজ এর ছড়াছড়ি। মাঝে মধ্যেই ছোট বড় পাহাড়ি ঘরবাড়ি। রাস্তা মাঝে মধ্যে এমন বেশিই বাক নেয় যেন মনে হয় সামনে আর পথ নেই, সোজা নিচে নেমে গেছে। তো, এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এক সময় পৌঁছে যাই পাহাড় আর মেঘের দেশ — বান্দরবান এ।
বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষ হওয়ায় আমাদের ঠাঁই হয় উজানি পাড়ায়। শহরের একটু ভেতরের দিকে, পাশেই সাঙ্গু নদী আর সারি সারি পাহাড়, সব মিলিয়ে চমৎকার লোকেশন! দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি যেন গরমের তাপ সরিয়ে দিয়ে চারিদিকে এক প্রশান্তি বয়ে নিয়ে এল। বিকেলে একটা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে চলে গেলাম শহরের একদম কাছে - নীলাচল এ।
নীলাচল
নীলাচল আমার মতে সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ! বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে যেতে মাত্র ১৫ মিনিটের মতন লাগে, খরচ ও কম। নীলাচলে সুর্যাস্ত দেখে ফিরবো বলে যাওয়া, কিন্তু একি ! যাবার মাঝ পথেই যেন মেঘে ডুবে গেলাম !!! 🌥 এত নিচেই মেঘের দেখা পাবো আশা করিনি। তো, এই মেঘের ভেতর দিয়েই পাহাড়ি ঢাল বেয়ে বেয়ে উঠে গেলাম নীলাচলে। সেখানে বিকেল বেলা পর্যটকদের ভিড় থাকা সত্ত্বেও আমাদের উৎসাহে একটুও কমতি পড়েনি।
নীলাচল থেকে ছোট্ট বান্দরবান শহর এর পুরোটাকে দেখা যায়, সাথে অনেক দুর দূরান্তে পাহাড়ের বুকে হঠাত হঠাত উঁকি দেয়া আদিবাসীদের ঘরবাড়িও চোখে পড়ার মতন।
পরদিন বিয়ের অনুষ্ঠান এর শেষে আর তেমন কোথাও ঘুরাঘুরি করার সুযোগ হয়নি। বিকেলে খানিক সময় লোকাল মার্কেটে আনাগোনা। তারপর কিছু লোকাল খাবারের স্বাদ নিয়ে দিনশেষ করা। পরের দিনের মিশন আরও উঁচুতে 😉
নীলগিরি
ভোর ৫:৩০ এ গেস্ট হাউসের সামনে ঠিক করে রাখা চান্দের গাড়ী থাকার কথা। কিন্তু বিধিবাম, হয়তো ভোর থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে আমাদের গাড়িচালক ভাই আরামে ঘুমিয়ে ছিলেন এবং আমাদের ফোনও ধরেননি! খানিক পরে আবহাওয়া একটু ভাল হলে চান্দের গাড়ির কাউন্টার থেকে গাড়ি ভাড়া করে ছুট দিলাম নীলগিরির পথে।
সাদা মেঘ আর একটু আধটু সোনালি রোদ। আমাদের ক্রমশ উপরে উঠার পথের পাহাড়গুলো মেঘে ঢাকা অবস্থায় একরকম সুন্দর আবার সকালের রোদে অন্যরকম। এই মেঘের ভেতর দিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটছে, আর চারিদিকের অপার সৌন্দর্যে অবাক হচ্ছি। তো, অবাক হতে হতেই একসময় পৌঁছে গেলাম নীল আকাশ, সাদা মেঘ, আর সবুজ পাহারের রাজ্য নীলগিরিতে।
পথে বেশ কিছু আদিবাসীদের গ্রাম পরে। এখানে সেখানে পাহাড়ি জুম চাষ হয়, আবার পথে পথে দু এক জায়গায় সেই জুমের আনারস, কলা, পেঁপে, ইত্যাদি বিক্রি হয়। মূল্য আমাদের শহরের তুলনায় অনেক কম।
পৌঁছানোর পর পর একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। এই ফাঁকে নাশতার কাজটা সেরে ফেললাম। খাবার টেবিলে বসে হাতে গরম কফি আর জানালায় মেঘ এ ঢাকা পাহড়ে বৃষ্টির খেলা দেখার মতন সুখ হয়তো জীবনে খুব কম'ই আছে। দূরে আঁকাবাঁকা সাঙ্গু নদীও দেখা যায় নীলগিরি থেকে।
বৃষ্টি শেষে খানিকক্ষণ এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে, হেলিপ্যাডে গিয়ে সবাই মিলে কতক্ষণ লাফালাফি করে ফেরার পথ ধরলাম। আসার পথে চিম্বুক পাহারে গাড়ি থামায় সাধারণত। আমরা আগে আসায় এবং তেমন বিশেষ কিছু না থাকায় থামলাম না।
আসার পথের আরেক আকর্ষন হচ্ছে শৈলপ্রপাত। খুব ছোট এবং অল্প পানির একটা ঝর্না । ভেজার মতন না ঠিক। অত্যন্ত পিচ্ছিল পাথরে সাবধানে দুয়েকটা ছবি তুলেই ফিরে এসে বসে পড়লাম গাড়িতে। এইখানে আরেকটা স্থানীয় বাজার আছে, কেউ কেউ টুকিটাকি কেনাকাটাও করে নিল। তারপর সোজা বান্দরবান, হোটেল এবং বিকেলের বাস এ ফের চট্টগ্রাম যাত্রা।
বান্দরবানের আরেক আকর্ষন হচ্ছে স্বর্ণ মন্দির। সোনালি রঙের ছোঁয়া পুরো বৌদ্ধ মন্দির জুড়ে। আগেই যাওয়া হয়েছে বলে এবার গেলাম না। তাই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা একটা ছবিই দিলাম -
সংক্ষিপ্ত
আবহাওয়া আমাদের অনুকূলে ছিল তাই মেঘের দেখা পেয়েছি এবং সকাল সকাল বৃষ্টি হওয়ায় লোকেশনগুলতে ভিড় তুলনামূলক কম ছিল। যাতায়াতের জন্য সরাসরি ঢাকা থেকে বান্দরবানের বাসও রয়েছে। প্রায় সবগুলো জায়গাতেই এন্ট্রি ফি এবং পার্কিং ফি আছে।
যেখানেই যাব আমরা চেষ্টা করবো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং স্থানীয় রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে। হ্যাপি ট্রাভেলিং 🙂