সিকিম: দ্যা লস্ট কিংডম | পর্ব ২
গ্যাংটক সাইটসিয়িং
আগেরদিন রাতে হোটেলে কথা বলেছিলাম নর্থ সিকিম যাবার ব্যাপারে, তবে ওরা বলেছিল এত বৃষ্টিতে পারমিট পাবে কিনা শিওর না, সকালে পারমিট এর জন্য কাজ করতে হবে। তো আমরা সব কাগজপত্র জমা দিলাম সকাল সকাল। কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক হলেও শেষমেশ পারমিট পাওয়া গেল না। একটু মন খারাপ হল, আমাদের হাতে সময় একটু কম। আগের প্লান ছিল লাচেন-লাচুং দুই দিকই ঘুরে নর্থ সিকিম দুই রাত তিনদিনের প্যাকেজ নেয়া, তবে লাচেন এর দিকে বেশি স্নোফল এর জন্য রাস্তা অনেকটাই বন্ধ বলে প্লান থেকে বাদ দিলাম।
ভোর এ উঠেছিলাম, তাই সকাল সকাল MG Marg এ হেঁটে বেড়ালাম কুয়াশার মাঝে, মানুষজন অনেকেই সকালে এখানে হাটতে আসে। আর ঝাঁক ঝাঁক কবুতর এর বাক বাকুমে সকালের পুরো রোডটাই মুখর। MG Marg এ মহাত্মা গান্ধীর একটা স্ট্যাচু রয়েছে, এই রোডের সিগনেচার স্ট্যাচু বলা যায়। অপরপ্রান্তে একটা লাল পাণ্ডার প্রতিকৃতিও চোখে পড়ল।
যেহেতু আজ নর্থ এর দিকে যাওয়া যাবেনা, তাই গ্যাংটক সাইটসিয়িং এর সিদ্ধান্ত নিলাম। একজন পার্ট টাইম ড্রাইভারের সাথে কথা হল। Innova গাড়ি, ৩০০০ রূপিতে ১০টা স্পট ঘুরিয়ে দেখাবেন। গাড়িতে ওয়াইফাই এবং হিটারও আছে!
আমার ব্যাক্তিগতভাবে শহরের সাইটসিয়িং এ খুব বেশি আগ্রহ না থাকলেও চেষ্টা করলাম যেন সবগুলো জায়গাই উপভোগ করা যায়। কারণ কোন কিছু উপভোগ করা না করা টোটালি নিজের উপর।
গ্যাংটক রোপওয়ে
আমাদের প্রথম স্পট হল গ্যাংটক রোপওয়ে। টিকিট প্রতিজন ১১৭ রুপি। লিফটে উপরে উঠে অপেক্ষা করলাম। একটা বাক্সে ২০ জন যেতে পারে। একবার নিচে নামে, একবার উপরে উঠে, এমন এক রাউন্ড। খুব বেশি না, ১০ মিনিট লাগে। তবে ভিউ বেশ ভাল। পাহাড়ি বাড়িঘরের উপর দিয়ে আসা যাওয়া করার সময় গ্যাংটক শহরের অনেকটাই চোখে পড়ে।
ফ্লাওয়ার এক্সিবিশন সেন্টার
গ্যাংটকের একটু উপরের দিকে এই ইনডোর ফুলের এক্সিবিশন বেশ ভালই লাগল। চেনা অচেনা নানা রঙের ফুলে ফুলে খুব সুন্দর করে সাজানো জায়গাটা।
প্লান্ট কনজারভেটরি
এখানেও অনেক রকম গাছ এ ভরা আর একটা গ্রিন হাউসে অনেক রকম ফুল, আগেরবারের চেয়েও বেশি ফুল এখানে।পার্কটা খুব পরিষ্কার আর গোছানো। গ্যাংটকের বোটানিক্যাল গার্ডেন বলা যায়।
এখান থেকে বেড়িয়ে পানি পুরি খেলাম, কিন্তু টক গুলো ঠাণ্ডায় যেন বরফ হয়ে ছিল একদম।
লাসা ফলস
এই ঝর্নায় এখন পানি একদম কম, তবুও মানুষের ভিড় কম নেই।পুরো জায়গাটাতেই প্রেয়ার ফ্ল্যাগ দিয়ে সাজানো। তবে আমাদের ড্রাইভার দাদা আমাদের নিয়ে গেলেন পাশের একটা খাবার দোকানে। সেখানে গিয়ে লোকাল ড্রিঙ্কস টেস্ট করলাম নাম — ছাং, অনেকটা দুধ এর মতন সাদা দেখতে। সাথে থুকপা নামক নুডলস, খেতে দারুণ টেস্ট। ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছিলাম, গরম গরম থুকপা খেয়ে শরীর একটু উষ্ণ হল।
হনুমান টক
এটি মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের হনুমানের উপাসনালয়। আসে পাশে বেশ কিছু দোকান পাট আছে। আমরা টুকটাক কেনাকাটা করলাম। উপরে একটা ছোট্ট গিফট শপ আছে। ছোট বড় অনেক রকম জিনিস পাওয়া যায় তাতে।
বানঝাঁকরি ফলস
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।আমরা বেশ নিচে নেমে একটা পার্কের কাছে চলে গেলাম। একটা ঝর্নাকে কেন্দ্র করে পার্কটি গড়ে উঠেছে। মানুষজনেরও ভিড় ভালই বলা যায়। তবে ভেতরের চেরি গাছে ফুটে থাকা চেরি ফুল আমার নজর কেড়েছে। ঝর্নার কাছে গিয়ে একটু সময় ঘুরাফেরা করে ফিরে এলাম কারণ এই ঠাণ্ডায় বেশিক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছা আমাদের কারোরই ছিল না।
সাইটসিয়িং শেষে আমরা গ্যাংটক ফিরে এলাম। আসতে আসতে ড্রাইভারের সাথে কথায় জানলাম যে উনি ইনফরমেশন সেন্টারে কাজ করেন, আর ছুটির দিনে নিজের গাড়ি নিয়েই সাইটসিয়িং করান ট্যুরিস্টদের।
গ্যাংটকে এখনো বৃষ্টি। আজকে একটু ভাল কোন ক্যাফেতে যেতে ইচ্ছা হল আমাদের, তাই এদিক সেদিক দেখে চলে গেলাম Kelly’s cafe, মেইন রোড থেকে আধাসিড়ী নিচে খুব সুন্দর গোছানো একটা ক্যাফে। খাবারের দামও খুবই রিজনেবল আর প্রেজেন্টেশনও খুব ভাল লেগেছে। আমরা বার্গার, পাস্তা, স্যান্ডউইচ, ফ্রুট সালাদ, হট চকোলেট, কফি, টিবেতিয়ান চা খেয়ে অনেকক্ষণ আড্ডাও দেয়া গেল। রেকমেন্ড করার মতন জায়গা। জিজ্ঞেস করে জানলাম মালিকের ডাকনাম Kelly, তারই নাম অনুযায়ী ক্যাফের নাম। খুব ভাল ব্যাবহার তার।
তো পেটপুজো শেষে খুশি মনে ফিরে এলাম হোটেলে। পরদিন নর্থ সিকিম পারমিট পাওয়ার ব্যাপারে হোটেলের সাথে কথা বলে নিলাম। তারপর রুমে ফিরে আগামীকাল বরফ ঢাকা পাহাড় দেখার স্বপ্ন চোখে ঘুম।
আগের পর্বগুলো
পরের পর্বগুলো