Alpine Gem: Berchtesgadener Land

এক টুকরো স্বর্গের খোঁজে জার্মান-অস্ট্রিয়ান আল্পসে ⛰ 🇩🇪

Nowshad
tripsharebd
9 min readJul 1, 2021

--

এইতো কিছুদিন আগেও ঘরে শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছিলাম, আর ভাবছিলাম আবার কবে কোথাও একটু মুক্ত হাওয়া খাওয়ার সুযোগ হবে! গ্রীষ্মের আগমনে আর জার্মানি জুড়ে করোনার ভ্যাক্সিনের অগ্রগতি বেশ ভাল হওয়ায় এখন ঘোরাফেরা করা শুরু করা যায় বলেই মনে হল। আর কোথাও যাবার কথা ভাবলেই প্রথমে মনে আসে পাহাড়ের কথা, আর পাহাড় মানেই জার্মানির দক্ষিণের স্টেট - বাভারিয়া।

বাভারিয়ার মূল কয়েকটি পাহাড় কেন্দ্রিক আকর্ষণীয় জায়গায় আগে যাওয়া হয়েছে। তবে একটু দূরে হওয়ায় আর সময়-সুযোগ ঠিকঠাক না মেলার কারণে বাকি আছে শুধু - Berchtesgadener Land। জার্মানির একদম দক্ষিণ-পূর্বে, জার্মান-অস্ট্রিয়া বর্ডার ঘিরে এই এলাকা। পাহাড়, লেক, গ্লেশিয়ার, ছবির মতন সুন্দর সুন্দর ছোট টাউন, স্কি রিসোর্ট - কি নেই এই অঞ্চলে! তিনদিকেই পাহাড়ে ঘেরা এই টাউন, সব সিজনেই ট্যুরিস্টদের উপচে পড়া ভিড় থাকে এখানে।

বার্লিন থেকে এক সপ্তাহ হল বাজেট ট্রেন সার্ভিস - ফ্লিক্সট্রেন চালু হয়েছে। বার্লিন-মিউনিখ-বার্লিন রাউন্ড টিকেট মাত্র ১৮ ইউরো তে কিনে পরে প্লান করতে বসলাম যে কোথায় যাওয়া যায়, কই থাকা যায়! এখনো যেহেতু Berchtesgadener Land যাওয়া হয়নি, তাই সেখানেই উইকেন্ডে দুইদিন থাকার জন্য হোস্টেল বুক করে দিন গুনতে লাগলাম।

কোভিড ভ্যাক্সিন এর দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে, শুক্রবার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে রাতের ট্রেনে চড়ে বসলাম। আমার জার্নির মাঝে তেমন ঘুম হয়না, তবে একটু ঘুমাতে পারলে দিনের বেলা ঘুরতে সুবিধা হবে ভেবে চেষ্টা করে সারা রাতে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘুমালাম।

এই বারের মত ভাল কোন প্লান করা ছাড়াই ঘুরতে যাওয়া আমার আগের কোন ট্রিপেই হয়নি। কিন্তু এবার কই যাব, কিভাবে যাব কিছু ঠিক না করেই চলে আসলাম। স্টেশনে এসে ওয়াশরুমের কমোডে বসে সব ঠিকঠাক করলাম যে কই যাব, কিভাবে যাব 😅

স্টেশনের বেকারি থেকে একটা স্যান্ডউইচ কিনে খেতে খেতে বাস স্টেশনের দিকে এগুলাম। ৭-৮ মিনিট দূরেই বাস স্টেশন, স্যান্ডউইচ শেষ হতে হতেই পৌঁছে গেলাম। প্যারিসগামী এক প্লাটফর্মে এমনিতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আমার বাসের আরও একঘণ্টা দেরিতে থাকায়। তবে যাদের সাথে দাঁড়ালাম তাদের দেখে পুলিশের অবৈধ অধিবাসী বলে সন্দেহ হওয়ায় অগত্যা আমাকেও চেক করল পাস্পোর্ট বা সঠিক রেসিডেন্স পারমিট দেখাতে। দেখালাম, এক মিনিট পরে চেক করে ফেরত দিয়ে যেতে বলল।

বাসে উঠে বসলাম সকাল ৮টা নাগাদ, মিউনিখ থেকে অস্ট্রিয়ার সালজবুর্গ এর ডিরেক্ট বাস। এই রাস্তায় আমি আগেও বাস জার্নি করেছি, আমার বিদেশে আসার পরে প্রথম ট্রিপ ছিল সেটা! চেনা রাস্তা, আস্তে আস্তে পাহাড়ের দিকে চলল বাস। সকাল ১০টা নাগাদ সালজবুর্গ বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিল, ৫ মিনিট পরেই সেখান থেকে Berchtesgaden যাবার বাস, তাই একরকম তাড়াহুড়ো করে এক বাস থেকে নেমে আরেক বাসে চড়ে বসলাম।

মিউনিখ থেকে বার্চেসগাডেন যাবার ট্রেন থাকলেও অনলাইনে সালজবুর্গ থেকে বাসের সুন্দর রাউটের কথা কয়েকবার দেখেছি, তাই এই রাস্তায় আসা। আসলেই বাস পাহাড়ের ছোট ছোট টাউন আর গ্রামের ভেতর দিয়ে সাপের মতন আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছুটে চলল, সে এক সুন্দর জার্নি! প্রায় ৪০ মিনিট পরে বাস থামল বার্চেসগাডেন বাস/ট্রেন স্টেশন। আমার হোস্টেল এই ট্রেন স্টেশনেরই একটা অংশ, নিচে বার্গার কিং, আর উপরে তিনতলা হোস্টেল। তবে চেক ইন টাইমের আরও প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা দেরি। তাই ভাবলাম কিছু খাবার ব্যাবস্থা করে একটু টাউনটা ঘুরে দেখি।

জার্মানির সবচেয়ে সুন্দর লোকেশনের সুপারশপ থেকে কিছু খাবার কিনে হাঁটা শুরু করলাম। টাউনের সেন্টারটা আসলে একটা গোল চক্কর, যেটা আবার একটা ব্রিজ। নিচে পাহাড়ী নদী যার তিনটা শাখা তিনদিকে চলে গেছে রাস্তাগুলোর মতনই। সেখান থেকে হেঁটে একটু উঁচুতে মূল টাউনের সেন্টার। সেখানে সুন্দর চার্চ, টাউনহল, স্কি পার্ক, গন্ডোলা, সবই আছে। চারিদিকে পাহাড় আর তার গায়ে লেগে থাকা সুন্দর সুন্দর বাড়িঘর দেখতে দেখতে উপরের দিকে হাঁটলাম। মাঝে আইসক্রিমের দোকান থেকে আইসক্রিমও কিনে খেলাম। টাউনের মূল সেন্টার ঘুরে দেখার পর, একটা ছোট পাহাড়ের উপরে উঠলাম, সেখানে একটা একদম ছোট ক্যাপেলে বা চার্চ। সেখান থেকে পুরো টাউনের সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়, তো অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটির পরে সেখানে বেশ কিছুক্ষণ বসে বাতাস খেলাম, চারদিকের সতেজ সবুজ দেখে চোখের শান্তি আর কি!

Berchtesgaden Town

হোস্টেলে চেক ইন এর সময় হয়ে গেছে, তাই আস্তে ধীরে পাহাড় থেকে নেমে হোস্টেলে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ফিরতেই আমার এক জার্মান রুমমেট এর সাথে দেখা। তবে ইংরেজি বলতে পারেনা তেমন, তাই আমার ক-খ ভুলভাল জার্মানেই তার সাথে কথা বলার চেষ্টা চালালাম। সে কয়েকবার এখানে এসেছে, এবার এসেছে রিল্যাক্স ট্রিপে, আগের দিন একটু এডভেঞ্চার এর জন্য প্যারাগ্লাইডিং করেছে। আমি কই যাবার প্লান করছি, আর কই যাওয়া যায় সেটা নিয়েও কথা হল। রাতে আরেক ব্রাজিলিয়ান রুমমেট এর সাথেও অনেক কিছু নিয়ে কথা হল।

সামারের সময় হাতে সময় অনেক, তাই বিকেল ৫টার দিকে বের হলাম, বাসে চড়ে ১৫ মিনিটের জার্নি রাজার লেক (königssee) তে গেলাম। কালকের সারাদিনের প্লান এখানেই, তবে আজকে জাস্ট একটু ঢুঁ মারলাম, কিছুক্ষন লেকের পাড়ে হেঁটে হোস্টেলে ফিরলাম। আগের রাতে ভাল ঘুম হয়নি আর পরের দিন বেশ ঘুরাফেরা করতে হবে, এই চিন্তা করে আগে ভাগেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

রাতে একটা ভাল ঘুম দিয়ে সকাল ৬:৩০ এর দিকে উঠলাম। ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম, আজকে দিনে কখন নাওয়া খাওয়া হবে তার ঠিক নেই। তাই সুপার শপ থেকে রেডি খাবার, দুইটা আপেল আর দুই বোতল পানি কিনেই দিনের প্রথম বাসে চলে গেলাম königssee। প্রথম ফেরি সকাল আটটায়, তবে একেবারে প্রথমে যাওয়ায় ভিড় নেই তেমন। আর আবহাওয়াও একদম চকচকে রোদেলা। Königssee জার্মানির সবচেয়ে সুন্দর লেক গুলোর মধ্যে একটি, প্রায় ৭-৮ কিমিঃ লম্বা পাহাড়ে ঘেরা এই লেকটি একদম নরওয়ের ফিওর্ড (fjord) এর মতন দেখতে। পানি এত পরিষ্কার যে পুরো লেকের পানিই মিনারেল পানযোগ্য পানি। আর এখানের ফেরি বা বোট গুলোও পরিবেশ বান্ধব ইলেক্ট্রিসিটিতে চলে। তাই ইঞ্জিনের কোন শব্দও নেই।

এর আগে আরও পাহাড়ি লেক দেখলেও আমার দেখা এই পর্যন্ত সবচেয়ে সুন্দর লেক এটা। যেমন পানির রং, তেমনি চারিদিকের পাহাড়, একটু পর পর পাহাড়ের গায়ের ঝর্না, আর লেকের মধ্যে দিয়ে কাঠের নৌকা বা ফেরিতে ঘুরে চলেছি। মাঝে ফেরি এক বিশাল পাহাড়ের দেয়ালের সামনে দাঁড়ালো আর ফেরির মূল অপারেটর একটা বাঁশি বাজিয়ে প্রতিধ্বনি শোনালো। তার শব্দ পাহাড় থেকে পাহাড়ে প্রতিফলিত হয়ে কয়েকবার প্রতিধ্বনি শোনা যায়!

Salet (Königssee)

লেকের মাঝে একটা স্টপ থাকলেও আমার প্রথম গন্তব্য লেকের একদম আরেক মাথায় - Salet। দিনের প্রথম ফেরিতে আসায় সেখানে আমাদের আগের আর কেউই নেই। কি সুন্দর সেখানটা, তা চোখে দেখা ছাড়া লিখে বা ছবিতে বোঝানো সম্ভব না মনে হয়।

সামনে একদম খাড়া স্তম্ভের মতন পাথরের পাহাড়। সেদিকেই হাইকিং শুরু করলাম। একটু সমতল আবার একটু উঁচু, আঁকাবাঁকা পথে হেটে চললাম। যেদিকে তাকাই সেদিকেই ফ্রেশ একটা ব্যাপার আছে সবুজ-নীলের মাঝে। প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটার পরে আরেকটা ছোট্ট লেক দেখলাম - Obersee। এই লেকের পাড়ের অনেক ছবি ইন্সটাগ্রামে দেখছি, আর এখন নিজেই এখানে, তাও কোন ভিড় ছাড়া একটা সুন্দর আবহাওয়ার দিনে - সৌভাগ্যই বলা যায়।

Obersee

সেখানে একটু বসে ছবি তুলে, পানি খেয়ে আবার সামনে হাঁটা দিলাম। এবার আর কোন ডাউনহিল বা সমতল নাই, হয়তো বেশি খাড়া নাহয় অল্প খাড়া পথে এগুলাম। একটু উঁচুতে উঠতেই দূরের সেই খাড়া পাথরের স্তম্ভের বুকে থেকে নেমে আসা ঝর্না চোখে পড়ল — Röthbach Waterfall, বেশ উঁচু এই ঝর্না, দূর থেকে পানির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ঝর্নার আগে একটু সমতল, বেশ কিছু মানুষ সেখানে জিরিয়ে নিচ্ছে। তবে ঝর্নার মাঝ পর্যন্ত উঠা যায়, আমি সে পথই ধরলাম। পুরো হাইকে এই অংশটুকুই বেশ কঠিন ও কষ্টকর। খাড়া আর পিচ্ছিল পাথর; গাছের শেকড় ধরে ধরে খুব সাবধানে উঠা লাগে উপরে। পিছলে পড়লে খবর আছে। তবে নিরাপদে ঝর্নার অর্ধেকের খোলা যায়গায় পৌছালাম। সেখান থেকে দুইটা লেকই দেখা যায়, আবার ঝর্নারও অনেকটা দেখা যায়। তবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পানির ছিটায় ভিজে যাব বলে একটু পরেই নামা শুরু করলাম। নামতে নামতে মনে হল উঠার চেয়েও বেশি কষ্ট, হাঁটুর খবর হয়ে গেল আর কি নামার সময়।

Röthbach Waterfall

ফেরার পথ যেহেতু বেশিরভাগই ডাউনহিল তাই বেশ তাড়াতাড়িই Obersee পৌঁছে গেলাম। সেখানে এতক্ষণে বেশ মানুষের ভিড়, তবে লেকের পাড়ে একটা পাথরের উপর বসে সুন্দর ভিউ দেখতে দেখতে সকালে কেনা খাবারের একাংশ খেলাম, আহা এমন জায়গায় যদি নিয়মিত খাওয়া যেত!

খাওয়া-রেস্ট শেষে আর কোন থামাথামি বাদেই ফেরি ঘাটে ফিরলাম। এখনো ফেরার ফেরি গুলোর বেশিরভাগই ফাঁকা যেহেতু মানুষ আসছে অনেক। ফেরি লেকের মাঝের আরেকটা পয়েন্ট St. Bartholomä নামাল। দুপুর বাজে একটা, এই পুরো লেকে কোন ফোনের নেটওয়ার্ক নেই, তবে এই পয়েন্টে ইন্টারনেট আছে। বাসায় ফোন দিলাম আর একটু সোশ্যাল মিডিয়া চেকিন দিয়ে নিলাম, হারিয়ে গেলে এটলিস্ট শেষ কোথায় ছিলাম সে খবর পাওয়া যাবে।

সেখান থেকে আবার হাইক, প্রায় ১৫ মিনিট সমতলে ফরেস্ট এর ভেতর হাইকিং এর পরে শুরু হল আপহিল। তবে St. Bartholomä তে টুরিস্টদের ভিড় থাকলেও পুরো হাইকিং এর পথে মোট ১২-১৫ জন মানুষ দেখলাম। আমার কাছাকাছি একটা পুরো ফ্যমিলি গিয়েছে, ৫-৭ বছরের বাচ্চা, ৫০-৬০ বছরের দাদু-দাদি, কোলে ১ বছরের বাচ্চা সহ মহিলা, মানে ৩ প্রজন্ম একসাথে এইরকম পাহাড়ি হাইকে এসেছে দেখেই খুব ভাল লাগল। প্রায় দেড় ঘণ্টা হাইকিং এর পরে একটা অসম্ভব সুন্দর জায়গায় পৌছালাম - Eiskapelle Watzman। মূলত একটা গ্লেশিয়ার যেটা সারা বছর থাকে আর সামারে এর নিচের একটা গুহা ওপেন হয়। সেই গ্লেশিয়ারের উপর বেশ কিছুক্ষণ হাঁটলাম, আর ভেতরের গুহাতে এখনো পুরোটা বরফ গলেনি বলে অল্প একটু ঢুকা যায়, আর অনিরাপদও। তাই একটু ঢুকেই আবার বেরিয়ে পড়লাম।

Eiskapelle

অনেকক্ষণ ওখানে থেকে সবাই ফিরার যাত্রা শুরু করেছে। কিছু আমার হটাত ইচ্ছা হল গ্লেশিয়ারের উপরে দুইটা ঝর্না আছে ওগুলোর কাছে যাবার। তাই একাই সেখানে উঠলাম ঝুরঝুরা পাথর বেয়ে। সে কি অসাধারণ ভিউ। ব্যাগের ভেতর একটা রেডি পাস্তা ছিল, সেটা ওখানে বসেই খেলাম, কয়েকটা ছবি তুললাম। তবে অনেকক্ষণ একা সেখানে থাকার ইচ্ছা থাকলে সাহস করলাম না কারণ দৃষ্টিসীমার সবাই তখন প্রায় চলে গেছে আর দিনের শেষ ফেরি মিস করলে বেশ বড় বিপদে পড়তে হবে। তাই নেমে আবারও প্রায় ১ ঘণ্টার পথে ফিরলাম লেকের পাড়ে। শেষ ফেরি আরও এক ঘণ্টা পর, তাই সারদিন হেঁটে ক্লান্ত হওয়া পা গুলো জুতা থেকে মুক্তি দিয়ে লেকের পরিষ্কার স্বচ্ছ পানিতে ভিজিয়ে প্রায় পুরো সময়ই বসে রইলাম। এ এক অন্য রকম শান্তি। শরীর প্রচণ্ড ক্লান্ত, কিন্তু এমন একটা সুন্দর দিন কেটছে ভেবে মনটা ততটাই খুশি। সেই খুশি খুশি মনেই এই দিনের মতন সেখান থেকে ফেরা, হোস্টেলে ফিরে ফ্রেশ হয়েই একরকম মরার মতন ঘুম।

St. Bartholomä

আগেরদিন অনেক বেশি হাইকিং হয়েছে, তাই আজকে তেমন কোন প্লান করিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে আস্তে ধীরে ভাবলাম বাসে করে ধারে কাছের আরেকটা লেক - Hintersee যাওয়া যায়। তাই বাসে চড়ে সুন্দর রাস্তা দেখতে দেখতে চলে গেলাম সেখানে। আমি ছাড়া রবিবার এত সকালে মাত্র ৩-৪ জন মানুষ সেখানে। এত সুন্দর স্বচ্ছ পানির লেক, লেকের নিচ পর্যন্ত মাছগুলো দেখা যায়। লেকের চারিদিকে হেঁটে রাউন্ড দিলাম আস্তে ধীরে। তারপর মনে হল এই এলাকার একটা চার্চ এর ছবি খুব বিখ্যাত, লেক থেকে প্রায় ৩-৪ কিমি সামান্য ডাউনহিল। তাই হেঁটেই ফরেস্ট এর ভেতর হয়ে পাহাড়ি নালার পাশে দিয়ে চললাম। একসময় পৌঁছে গেলাম Ramsau নামের জায়গায়। খুব সুন্দর পাহাড়ি ঝিরি, দুই পাশে বাড়িঘর, গেস্ট হাউস, একটু পর পর কাঠের ব্রিজ, একদম ছবির মতন সুন্দর। একটা ব্রিজের পাশে প্রায় ১ ঘণ্টা বসে একটু আরাম করলাম। তারপর বাসে চড়ে ফিরলাম বার্চেসগাডেন।

Hintersee | St. Sebastian Church

রবিবার বেশিরভাগ জায়গাই বন্ধ, তাই হোস্টেলের নিচের বার্গার কিং এ বসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর মনে হল যে আবহাওয়া ভাল, আরেকটা বাস জার্নি করা যাক। এবারের বাস বেশ খাড়া পাহাড়ের রাস্তা ধরে প্রায় ১৫ মিনিট চলল। তারপর আরেকটা বিশেষ বাস স্টপে নামাল। এখানে থেকে শুধুমাত্র এই বাস চলে এমন রাস্তায় প্রায় ১০০০ মিটার উচ্চতা পরিবর্তন হয় এমন ২০ মিনিটের জার্নি। গন্তব্য - Eagles Nest

Eagles Nest

প্রায় ২৮ ইউরো লাগে পুরো রাউন্ড ট্রিপের জন্য। ২০ মিনিট শুধু পাহাড়ের উপরেই উঠল বাস। মাঝে প্রায় ৭ টা ছোট ছোট টানেল পেরিয়ে বাস থামল পাহাড়ের প্রায় উপরে। সেখান থেকে আরেকটা হাঁটার টানেল হয়ে একটা লিফটে করে চলে গেলাম পাহাড়ের একদম উপরে। 1834 মিটার উচ্চতায় থাকা এই জায়গাটি বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত হবার কারণ হিটলারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এই জায়গা থেকেই দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধ থেকে শুরু করে গণহত্যা, অনেক কিছুই প্লান করা হয়েছে এখান থেকেই। ক্ষমতা এবং সর্বশ্রেষ্ঠত্ত প্রকাশের জন্যই এত দুর্গম জায়গায় এই স্থাপনা।
এখানে দাঁড়িয়ে আসে পাশে প্রায় অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়, কয়েকটা হাইকও আছে। তবে আজকে এই জায়গাটাতেই ২ ঘণ্টার মতন সময় কাটালাম, হাইকিং করলাম না কোন। পরে সেখান থেকে নেমে আবারো বাসে করে ফিরলাম স্টেশনে।

এবার যাবার ট্রেন ধরলাম। এই রাস্তাটাও পাহাড়ে ঘেরা আর সুন্দর। মাঝে মাঝে ছোট ছোট টাউন গুলো দেখলাম আর ভাবলাম কোন একটাতে অনেক দিনের জন্য একবার থাকা দরকার।

তো এইসব ভাবতে ভাবতে একসময় পৌঁছে গেলাম মিউনিখ, তারপরে রাতের ট্রেনে বার্লিন। আর সেই সাথেই আবার দিন গুনা পাহাড়ে ফিরবার আশায়…

--

--