Mittenwald: a mountain gem

জার্মান আল্পসের কোলে একদিন

Nowshad
tripsharebd
3 min readJun 22, 2021

--

গত বছরের গ্রীষ্মে শেষ কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারপরে করোনা মহামারির দ্বিতীয়-তৃতীয় ধাক্কায় বেসামাল প্রায় আট মাস একরকম ঘরেই আটকে থেকে একদম ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছি। তবে এতদিনের অপেক্ষার পরে বসন্তের আগমনে মহামারি একটু শান্ত হল বলে! কতদিন পাহাড়ে যাই না ভেবেই মনে হল একটু ঘুরেই আসি। বাভারিয়ার উত্তরের ছোট শহর ব্যাম্বার্গে আমার ইউনিভার্সিটির বেশ কিছু বড় ভাইয়ের বসবাস। তাই থাকার জায়গার কথা চিন্তা করতে হয়না, আর কোথাও ঘুরতে গেলেও সঙ্গ পাওয়া যায়। তেমন কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়াই তাই এক শুক্রবারে অফিস শেষে রওনা দিলাম ব্যাম্বার্গের উদ্দেশ্যে।

বাস বার্লিনের গণ্ডি পেড়িয়ে দ্রুতবেগে ছুটে চলে রাত প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ ব্যাম্বার্গের ট্রেন স্টেশনের সামনে নামিয়ে দিল। পরিচিত শহর, এত রাতে শহরের একমাত্র পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাসও চলেনা। তাই একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাতাস খেয়ে হেঁটেই পৌছালাম এক বড় ভাই এর বাসায়। এত রাতে পৌঁছালেও ভাই-ভাবীর চিকেন বিরিয়ানির আপ্যায়নে কমতি পড়েনি। তবে কাল খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে, তাই বেশি সাড়াশব্দ না করে ঘুম।

সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে রওনা দিলাম ট্রেন স্টেশনের দিকে। স্টেশনে আমরা তিনজন বাদেও আর চারজন যোগ হয়ে মোটমাট সাতজনের একটা দল হল।

ব্যাম্বার্গ আর আমাদের গন্তব্য মিটেনভাল্ড - বাভারিয়ার একদম উত্তর থেকে একদম দক্ষিণে। বেশ লম্বা জার্নি আর মাঝে নুরেমবার্গ আর মিউনিখে দুইবার রিজিওনাল ট্রেন পরিবর্তন করে যেতে হয়। তবে এত লম্বা পথেও বোরিং লাগল না, বরং আস্তে আস্তে পথের সৌন্দর্য বাড়তে লাগল। আর সেই সুন্দর রাস্তা দেখতে দেখতে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা পরে পৌঁছে গেলাম পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট স্বর্গ - Mittenwald।

অস্ট্রিয়া-জার্মান বর্ডার ঘেঁষে অবস্থিত এই ছিমছাম পাহাড়ি উপশহরের মূল প্রাণই ট্যুরিজম। পাহাড়, লেক, ঝর্না, অগণিত হাইকিং ট্রেইল - সব মিলিয়ে একটা পারফেক্ট জায়গা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য। দুইদিকে বরফে ঢাকা পাহাড়ের চুড়া, আর মাঝে একদম ছবির মতন সুন্দর টাউন। নানারকম অঙ্কনে সাজানো নান্দনিক বাড়িঘর, গেস্টহাউস আর পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট চারদিকে।

পাহাড়ে এসেছি আর একটু হাইকিং করবো না, তা তো আর হয়না! গত গ্রীষ্মে গার্মিস পারটেনকিরখেন এর একটা পাহাড়ের গর্জ বা Canyon এ গিয়েছিলাম। এইখানেও আরেকটা তেমনই সুন্দর ক্যানিয়ন বা গর্জ আছে। খাড়া পাথরের পাহাড়ের মাঝে গিয়ে বরফ গলা পানির স্রোতের শব্দ যেন প্রতিধ্বনি হয়ে ব্যাপক হয়ে উঠে।

বেশ খানিকটা উঁচুতে হাইক করার পরে পাহাড়ের গায়ে লাগানো কিছু স্টিলের প্লাটফর্মে পৌছালাম। নিচে কয়েকশত ফুট খাড়া একদম, স্টিলের প্লাটফর্মের ফাকা দিয়ে কিংবা রেলিং এর পাশ দিয়ে দেখলে একটু ভয়ও লাগে। তবে সেই ভয়, আশেপাশের সৌন্দর্যের কাছে ফিকে হয়ে যায়। বেশ লম্বা এই প্লাটফর্ম গুলো, মাঝে দুটি ব্রিজও আছে পাহাড়ের এপাশ থেকে ওপাশে যাবার। আমরা এখানে বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে, মাঝে এক যায়গাতে দুপুরের খাবারের ব্রেক নিলাম। বেশ শান্তির জায়গা বলা যায়।

ব্রেক শেষে এবার এখান থেকে ফিরে নিচে নামার পালা। উঠতে বেশ সময় লাগলেও নামতে আর তেমন লম্বা সময় লাগেনি। আর মাঝে মাঝে দুই এক ফোটা বৃষ্টি বেশ ভালই লাগল।

আমাদের পরবর্তি গন্তব্য আবারো উপরের দিকে, একটা পাহাড়ি লেক - Lautersee। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট আপহিলে হাইক করার পরে বিশাল পাহাড়ের ব্যাকড্রপের সামনে নীলাভ-সবুজ স্বচ্ছ পানির লেক। আর সামনে একটা ছোট চার্চ। একদম ইন্সটাগ্রামের ছবির মতন, আর এত বেশি শান্তি শান্তি ভাব যে শরীর এলিয়ে লেকের পাড়ের সবুজ ঘাসে ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছা হল। প্রায় এক ঘণ্টা লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে চুপ করে বসে থেকে চারিদিকের শান্তির শান্তির প্রকৃতি মন ভরে দেখে নিলাম, বুক ভরে শ্বাস নিলাম, আর মনে হল সারাদিনের সব ক্লান্তি যেন শরীর বেয়ে নেমে লেকের ঠাণ্ডা পানি শুষে নিল। এমন পরিবেশে জীবনটাকে সুন্দর মনে হওয়াটা বোধহয় খুব স্বাভাবিকই!

বিকেল পড়ে আসছে, আর আমাদের ফিরতে হবে সেই ৪ ঘণ্টার জার্নির পর। আসার সময়ের এই যাত্রা যতটা উপভোগ্য, যাবার সময়ে তো আর তেমন উপভোগ্য না। তাই ঝিমাতে ঝিমাতে আর একটা ভাল দিন কাটালাম ভাবতে ভাবতে একসময় ফিরে এলাম ব্যাম্বার্গে।

বিছানায় শুয়ে যেন একটা ভাল দিন শেষ করার প্রশান্তি নিয়ে ঘুমালাম, আবারো পাহাড়ে ফিরবো বলে শীঘ্রই …

--

--