স্রষ্টার আয়াত অস্বীকার করা ও তা থেকে অহংকারে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া

Gateway to Truth
Unity Inc
Published in
4 min readNov 11, 2018
Photo by Francesco Paggiaro from Pexels
নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উম্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আমি এমনিভাবে পাপীদেরকে শাস্তি প্রদান করি। — সুরা আরাফ ৭:৪০

মুসলিম দাবীদার জনগোষ্ঠি পুরো বিশ্বব্যাপী, কেবল এখনকার সময় নয়, নবী মুহাম্মদ (স.) এর বিদায়ের পর থেকেই এমন এক বাস্তবতার উপরে অবস্থিত যেখানে তারা আল্লাহর আয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

উপরের আয়াতে, আল্লাহ “আমার আয়াত” বলতে যা নিদের্শ করেছে তা আমাদের নিকট কুরআন নামেই লিপিবদ্ধ। (যদিও আরো ব্যাপক অর্থে আয়াত বা স্রষ্টার নির্দশনের মধ্যে পুরো সৃষ্টি জগত ও স্রষ্টার সৃষ্টি নৈপুন্যও অর্ন্তভুক্ত)

স্রষ্টার আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা (‘আল্লাযিনা কাযযাবু বি আয়াতিনা’)

কেউ মনে করতে পারেন, মুসলিম নামের দাবীদাররা তো কুরআনকে মিথ্য বলে না? সুতরাং এই আয়াত নিশ্চই বিধর্মী / মুশরিকদেরকেই নির্দেশ করে।

বাস্তবতা হলো, ইমোশন আর লিপ সার্ভিস দিয়ে অমুখাপেক্ষী ও মহাজ্ঞনী স্রষ্টার কিছুই যায় আসে না। বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়। যেখানে সর্বত্র স্রষ্টার বিধান ত্যাগ করে মানুষ সৃষ্ট বিধান ও আইন প্রচলিত, যেখানে স্রষ্টাকে সকল ক্ষমতার অধিকারী ও হুকুমের মালিক না ধরে ‘জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস’ নামের ধোঁকাবাজীতে সকলে লিপ্ত সেখানে আসলে কোন ধরনের অযুহাতেই বলা যায় না যে মুসলিম দাবীদাররা স্রষ্টার নাযিলকৃত আয়াতকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করছে। প্রকৃত সত্য এই যে যখন থেকে এই মুসলিম দাবীদাররা কুরআনের বদলে মানুষ সৃষ্ট পদ্ধতিকে তাদের কিবলা করেছে তখন থেকেই তারা পক্ষান্তরে স্রষ্টার এই দাবী ‘আমার আয়াত সমুহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে’ তাতে সামিল হয়ে গেলো। এ থেকে আপনি, আমি কেউই বাইরে নই।

স্রষ্টার আয়াত বা কুরআন থেকে অহংকারে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া (‘ওয়াসতাকবারু আনহা’)

যে মুহুর্তে আমরা স্রষ্টার মিনিমাল অথচ চিরন্তন বিধানকে অপ্রতুল, অপ্রয়োজনীয়, ব্যাকডেটেড ও আধুনিক সময়ের জন্য প্রযোজ্য নয় মনে করে ব্রিটিশ আইন, ফ্রেঞ্চ আইন, কালো টাকার রাজনীতি ও শিরকি গণতন্ত্রের ধ্বংজাধারীদের দ্বারা তৈরী শোষকের আইনকে আধুনিক, সময়োপযোগি ও সুপ্রিম মনে করছি — ঠান্ডা মাথায় ভাবলেই এটা বোঝা যায় এই আচরণের পেছনে আসলে আমাদের কি মানসকিতা কাজ করছে।

এই মানসিকতাকেই আল্লাহ বলছেন ইসতাকবিরু, অর্থাৎ বড়ত্ব ভাব, নিজেদের সুপিরিয়র মনে করা, অহংকার করা। আমরা কি পশ্চিমা যে কোন কিছুকে সুপিরিয়র ভাবি না? আমরা কি তাদের সব কিছুকে আধুনিক মনে করে আলিঙ্গন করি না? এই আলিঙ্গন করতে গিয়ে আমরা কি স্রষ্টার সরল ও সনাতন যে বিধান তাকে ব্যাকডেটেড ভাবি না? বাস্তবতা হলো আনকনসাশ বা সাবকনশাসে সেই মনোভাব থেকেই আমরা তথাকথিত আধুনিকতায় প্রবেশ করেছি।

এইটা কুরআনের পরিভাষায় ‘ওয়াসতাকবারু আনহা’ — আল্লাহর আয়াতের প্রতি শুধু অস্বীকার বা মিথ্যা বলাই নয়, সেই বলাতে অহংকার বা Arrogance এর সাথে আটকে থাকা। শুধু নির্বোধের মতো আচরণ করাই না, অহংকারের সাথে তাতে নিয়োজিত থাকা — এটাই ক্ল্যাসিক্যাল জাহিলিয়্যাত আচরণ!

যারা আল্লাহর আয়াত তথা কুরআনের বিনিময়ে মানুষের রচিত কিতাবকে (যা রাসুল স্বয়ং করতে মানা করেছে আল্লাহর বিধান ও নির্দেশ মতে এবং পূর্ববর্তী জাতির বিপথগামীর ইতিহাসও একই কথা বলে, তৈরাত বাদ দিয়ে তালমুদ, ঈসার ইনজিল বা দিয়ে পলের শিক্ষা জলজ্যান্ত উদাহরন) — আমরা কি তাদের এই আয়াতের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছি? ইসলামে যত সম্প্রদায়ের উদ্ভব, সবই হাদীস ভিত্তিক পার্থক্যের জন্য, অথচ দ্বীণের মধ্যে বিভেদ, দলাদলি ও সম্প্রদায় সৃষ্টি করাকে আল্লাহ হারাম করেছেন।

যদি প্রশ্ন করা হয়:পৃথিবীর কোথাও কি মুসলিমরা কুরআনের সাথে আছে?

এর উত্তর হলো ‘না।’

শয়তান গণহারে যে পাইকারী ধোঁকাবাজীতে মুসলিম দাবীদারদেরকে ফেলে রেখেছে তা হলো কুরআন পরিত্যাগ করে বাকি সব কিছুকে প্রাধান্য দেওয়া। তাই সারা পৃথিবীর সকল মক্তব, মাদ্রাসার মুল বিষয় হলো দাওরায়ে হাদীস, হাদীস চর্চা, হাদীস নির্ভর ধর্মচর্চা ও ধর্মপালন। এর ফলে যা পরিত্যাগ করা হলো সেটা হলো কুরআনের শিক্ষা, কুরআন বোঝা, কুরআনের মাধ্যমে জীবনব্যবস্থাকে, সমাজ ও বিশ্বকে পথ দেখানোর সংগ্রাম।

এই পরিস্থিতি কিভাবে তৈরী হলো?

ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখবো এই পরিস্থিতি এক দিনে তৈরী হয় নি, একজন মানুষের হাতেও নয়। এক জেনারেশন থেকে শুরু করে আরেক জেনারেশনকে বিপথগামী করা যার কাজ সেই শয়তানের ইটের পরে ইট সাজিয়ে ইমারত দাড় করানোর মতো একটা ব্যাপার।

পরিশেষে পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে যে পুরো মুসলিম দাবীদার জনগনের কুরআনের সাথে নাই কোন সম্পর্ক, না বুঝে কুরআন পড়া তাদের ফ্যাশন ও ধর্মচর্চা, ধর্মব্যবসায়ীদের পুঁজি — কুরআন যে হেদায়াত ও একটা সংবিধান ও পথ দেখানোর আলো — এর পুরোটাই তারা অনবহিত।

পদ্ধতিগত কালপ্রিট যদি আমরা খুঁজতে যাই এবং যদি প্রশ্ন করি কিসের মাধ্যমে সারা বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা মূলত কুরআন থেকে বিরত থাকছে — তা হলে উত্তর হিসেবে কিন্তু হাদীস নামের একটা সন্দেহযুক্ত সাহিত্যই আমরা খুঁজে পাবো।

কুরআনে আল্লাহ কুরআনকেই ‘আহসানুল হাদীস’ (সুন্দরতম বর্ণনা) বলেছেন, নবী মুহাম্মদ (স.) সব সময় তার কথাকে ‘ক্বাওল’ বলেছেন, সেখানে এই টার্মিনোলজীটাই হাইজ্যাক করা হয়েছে মুসলিমদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য।

আল্লাহ যেন আমাদের কাজের মধ্যে আল্লাহর আয়াতকে সত্য হিসেবে বাস্তবায়ন করান। যারা স্রষ্টার আয়াতকে কথা ও কাজে সত্য প্রতিপন্ন করে ও করবে তাদের মধ্যে আমাদের অর্ন্তভুক্ত ও কবুল করান। শয়তানের ধোঁকা থেকে আমাদের ও আমাদের বংশধরদের সংরক্ষণ করুন। নিশ্চই তিঁনি বান্দার আকুল আবেদনে সাড়া দেন।

--

--

Gateway to Truth
Unity Inc

Freedom from sectarianism, schism, half-truth or distortions and journeying towards clarity and whole truth