সত্যের ব্যাপারে সকল সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পারস্পরিক ঈর্ষা ও বিদ্বেষের কারণে মতভেদ
মতভেদের মূল কারন সম্পর্কে সাবধান! সাবধান!! সাবধান!!!
হে প্রভু আমি তোমার নিকট শয়তানের প্ররোচনা ও প্রভাব থেকে আশ্রয় চাই, সে ও তার দলবল যেন আমার কাছেও ভিড়তে না পারে — পরম দয়াল দাতা আল্লাহর নামে শুরু
كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّـهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ وَمَا اخْتَلَفَ فِيهِ إِلَّا الَّذِينَ أُوتُوهُ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۖ فَهَدَى اللَّـهُ الَّذِينَ آمَنُوا لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ ۗ وَاللَّـهُ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
সকল মানুষ একই জাতি সত্তার / ধর্ম ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা পয়গম্বর পাঠালেন সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকরী হিসাবে। আর তাঁদের সাথে অবর্তীণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানব সম্প্রদায় তাদের মতভেদের বিষয়ে হুকুম বা ন্যায় বিচার প্রয়োগ করতে পারে।
বস্তুতঃ কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তু পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পারস্পরিক জেদবশতঃ / ঈর্ষা ও বিদ্বেষে তারাই করেছে, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল।
অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদ লিপ্ত হয়েছিল।
আল্লাহ তাকেই সত্যপথে পরিচালিত করেন, যে চায় (সত্যপথে পরিচালিত হতে)। — ২.২১৩ সূরা বাকারা
উপরোক্ত সূরা বাকারার আয়াতটি থেকে আমরা বেশ কিছু বিষয় শিক্ষা লাভ করতে পারি:
অতীতে মানুষ একই সম্প্রদায় বা উম্মত ছিলো। মানুষের ধর্মবিশ্বাস একটিই ছিলো। এটি চিরায়ত বা সনাতন ধর্ম (Perrenial Religion / Primordial Religon)।
মানুষের সমাজে একাধিক মানুষের মধ্যে মতের ভিন্নতা একটা সহজাত বিষয়। মতের বৈচিত্র্য সৃষ্টি জগতের অন্যান্য বৈচিত্রের মতোই অবশ্যম্ভাবী।
এরপর স্রষ্টা সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে নবী প্রেরণ করেন। এই নবীদের কাজ কি ছিলো? সত্যজ্ঞান সম্বলিত কিতাব তাদের উপরে নাজিল হয়।
এই কিতাব কেন নাজিল হয়?
যেন সেই কিতাবকে সংবিধানের মতো, এর সাহায্যে হুকুম বা আইন পরিচালনা হয় — যেটি সত্য মিথ্যার মধ্যে বিরোধের ফরসালা করবে। লিয়াহকুমা বায়নান নাসি ফিমা ইখতিলাফু ফিহা
কিতাবের কাজ হুকুমত বা শাসন ব্যবস্থার সংবিধান / ফ্রেম ওয়ার্ক হিসেবে কাজ করা। তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলানো, ভারবাহী গাধার মতো না বুঝে মুখস্ত করা অথবা সর্বোচ্চ তাকের উপরে কাপড়ে মুড়িয়ে রেখে বারবার চুমু খাওয়ার জন্য অথবা কে কত সুন্দর সুর করে প্রতিযোগিতা সহকারে তথাকথিত তেলাওয়াত / ওয়াজ করা অথবা অল্প মূল্যে এটির পঠন শেখানোর ধর্ম ব্যবসা — এর কোনটিই এটি প্রেরণের উদ্দেশ্য নয়। সত্য কাজে কোন পারিশ্রমিক হয় না। ধর্ম ব্যবসা হারাম ও নাযায়েজ তা যে ফরম্যাটেই হোক না কেন।
ইখতিলাভ বা মত ভিন্নতার মানদন্ড হিসেবে সত্য কি হবে তা কুরআন বা কিতাব থেকে নিতে হবে। মত ভিন্নতা হতেই পারে, তবে সেটার বিপরীতে জ্ঞানের জন্য যেতে হবে স্রষ্টা নাজিলকৃত কিতাবে। কোরআন পূর্ববর্তী সকল ঐশী কিতাবের সত্যায়নকারী। কোরআন হতে পারে, হতে পারে তাওরাত, ইঞ্জিল।
এরপরে সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় যে বিষয়টি যা বোঝা খুব জরুরী সেটা হলো, সত্য আসার পরে যাদের কাছে কিতাব এসেছে বা কিতাবের সত্য এসেছে তারা পারস্পরিক ঈর্ষা, বিদ্বেষের কারনেই মতভেদ তৈরী করেছে।
অর্থাৎ সত্য এসে গেলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। বা অন্যভাবে বললে মিথ্যার বাজারে যারা সত্যকে চিনতে পারার কাজটি করলেন, তাদের পরবর্তী পরীক্ষা কিন্তু পারস্পরিক ঈর্ষা ও বিদ্বেষ নিয়ে। এরপরে ভিষনভাবে যেখানে সতর্ক থাকতে হয় তা হলো পারস্পরিক ঈর্ষা সম্পকে।
বিভিন্ন যুগে যত মাযহাব বা ধর্মের ভেদাভেদ, সাম্প্রদায়িকতার জন্ম তার পেছনে মূল কারনটা কিন্তু এখানে অল্প কথায় পুরোটা প্রতিফলিত হয়েছে।
যদিও পারস্পরিক ঈর্ষার কারনে মতভেদ হয়ও, ঈমানদারদের জন্য তারপরেও আশা থাকে। আল্লাহ তাদের মতভেদ বিষয়গুলো থেকে পরিত্রাণ করে তাদের পথ দেখান।
যে সত্য পথের পথিক, যার ভিতরে সত্যের ক্ষুধা আছে আল্লাহ তাকে সিরাতাল মুস্তাকিমের পথ প্রদর্শন করবেন, করেন।
আল্লাহ যেন সত্যের সন্ধানীদের পারিস্পরিক ঈর্ষা, বিদ্বেষ, হানাহানি, দলাদলি ইত্যাদি থেকে হেফাযত করেন এবং প্রকৃত হিকমত প্রয়োগ করার সামর্থ্য দান করেন। নিশ্চই আল্লাহর দানকৃত সামর্থ্য ছাড়া আমরা সকলেই অপারগ।
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّـهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّـهِ قَرِيبٌ
তোমরা কি মনে করো, তোমরা কোনো পরীক্ষা ছাড়া এমনি এমনি জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমরা তো এখনো পূর্ববর্তীদের মতো পরীক্ষার সম্মুখীন হও নি? তোমাদের পূর্ববর্তী বিশ্বাসীরা অভাব, কষ্ট, বিপদ, মুসিবত এবং অত্যাচার-নির্যাতনে এতটাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল যে, নবীসহ তারা আর্তনাদ করে বলেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য সবসময় খুবই কাছে। — ২.১১৪ সূরা বাকারা
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ ۚ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّـهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
(হে নবী! জেনে রাখো) যারা তাদের ধর্মবিশ্বাসকে খণ্ড খণ্ড করে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোনো দায়িত্ব তোমার ওপর বর্তায় না। তাদের বিষয়টি পুরোপুরিই আল্লাহর এখতিয়ারে। সময় হলেই তিনি তাদের বুঝিয়ে দেবেন, তারা কে কী করেছে! — ৬.১৫৯ সূরা আনআম