“কেয়ামত চলে আসলো বলে!” টাইপের কথা না বলাই ভালো
পৃথিবীর ধ্বংস কখন তা কেবল আল্লাহই নির্ধারন করবেন
অনেক সময়েই মানুষকে বলতে শোনা যায়, ‘কেয়ামতের আর বেশি বাকি নেই।’ ভাবখান এমন যেন তাকে স্রষ্টা জানিয়ে দিয়েছেন কেয়ামত কখন হবে।
এই প্রবণতা কেবল মুসলিমদের মধ্যে নয়, ইহুদি, খ্রিষ্টান ফান্ডামেন্টালিস্টসহ অনেকেই এ ধরনের ভুল শুধু করে, কেউ কেউ পাগলামিতে এতটাই এগিয়ে যায় যে দিন তারিখ সহ কখন কেয়ামত কবে হবে তারও ভবিষ্যতদ্বাণী করে বসে।
List of dates predicted for apocalyptic events শিরোনামের উইকিপিডিয়া এন্ট্রিতে পাওয়া যায়: শেখ নাজিম আল হাক্কানী, এডগার কায়স, ন্যাশন অফ ইসলামের তিনেত্তা মুহাম্মদ সহ অরো অনেকে ২০০০ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে বলেছিলেন। এর ছাড়াও পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ পৃথিবী ধংস হওয়ার কথা বলার চেষ্টা করেছে।
ভবিষ্যত তারিখগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: সাঈদ নুসরি আবজাদ পদ্ধতিতে সুন্নী হাদিস নির্ভর ভবিষ্যতদ্বাণী করেছেন ২১২৯ সালে পৃথিবীর ইতিহাস সমাপ্তি ঘটবে। গওহর শাহীর মেসাইয়া ফাউন্ডেশনের মতে ২০২৬শে, অর্থোডক্স ইহুদীদের মতে ২২৩৯, রাশাদ খালিফার মতে ২২৮০ ইত্যাদি।
এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য দুনিয়া ধ্বংসের এরকম ভবিষ্যতদ্বানী করা দিনখনের লিস্ট আছে এখানে।
এখন আসুন কুরআনে। সুরা জ্বীনে চলে যাই।
قُلْ إِنْ أَدْرِي أَقَرِيبٌ مَّا تُوعَدُونَ أَمْ يَجْعَلُ لَهُ رَبِّي أَمَدًا
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضَىٰ مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا لِّيَعْلَمَ أَن قَدْ أَبْلَغُوا رِسَالَاتِ رَبِّهِمْ وَأَحَاطَ بِمَا لَدَيْهِمْ وَأَحْصَىٰ كُلَّ شَيْءٍ عَدَدًا
বলো, ‘আমি জানি না তোমাদের জন্যে সেই প্রতিশ্রুত দিবসটি কাছেই, না আমার প্রতিপালক সেজন্যে স্থির করবেন দীর্ঘমেয়াদ।’
তিনি একাই গায়েব বা অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। গায়েবের জ্ঞান কারো পক্ষেই জানা সম্ভব নয়, যদি না তিনি কাউকে জানান, যেমন তিনি রসুলদের জানিয়েছেন। তিনি (যখন রসুলদের ওহী পাঠান) তখন তাদের সামনে-পেছনে প্রহরী নিয়োগ করেন। এভাবে নিশ্চিত করেন যে, রসুলরা যা বলছে তা আল্লাহর সত্যবাণী। রসুলদের কাছে যা-কিছু আছে, তা তাঁর জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেমনভাবে তিনি অস্তিত্বের সবকিছুরই হিসাব রাখেন এক এক করে।
৭২. সূরা জ্বীন, ২৫ — ২৮
আমাদের আসলে বলার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে যে আমরা জানি না আমাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক সেই জগতের সমাপ্তি কখন করবেন। এটা যেমন খুব সন্নিকটেও হতে পারে, অথবা অনেক সময় পরেও হতে পারে। অদৃশ্য ও গায়েবের খবর কেবল স্রষ্টার কাছেই আছে।
আমাদের প্রত্যেকের মৃতু্যই আমাদের জন্য কেয়ামতের শুরু। কিন্তু “কেয়ামত এসে গেল, আলামত সব প্রকাশ পেয়ে গেছে” টাইপের কথা বলে আমরা আসলে বিষয়টাকে বেশি হালকা করে ফেলি এবং সেটা কুরআনের শিক্ষাও নয়।
সুতরাং এর পরে কেউ যদি আপনাকে এই টাইপের কথা বলে যে ভাই অমুকে তো পুরা ডেট দিয়ে বলে দেয় যে কেয়ামত আসলে ২০২০ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় হবে — তা হলে এই টাইপরে লোক বা গ্রুপ থেকে সাবধানে থাকাই উত্তম। এ ধরনের কথা কয়েকটা বার্তা বহন করে: এটা হয় কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞ এবং খুব বেশি হাদীস নির্ভর, অথবা এটা সামগ্রিকভাবে ইমম্যাচিউর অথবা ধর্ম নিয়ে বেহুদা ইমোশনাল। বা ভিতরে ভিতরে এতটাই মানুষ সম্পর্কে বিদ্বেষী (Misanthrope)যে পৃথিবী কালকেই ধ্বংস হয়ে যাক, এটাই তারা চায়।