রাত থেকে রাত অবধি সিয়াম পূর্ণ করো

Gateway to Truth
Unity Inc
Published in
4 min readMay 8, 2019

আল্লাহর পথনির্দেশই প্রকৃত পথনির্দেশ। সত্যজ্ঞান লাভের পর যদি তুমি ওদের ভ্রান্ত ধ্যানধারণার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহর হাত থেকে কেউ তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না, তোমার কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। আমি যাদের কিতাব দিয়েছি, তাদের মধ্যে যারা তা যথাযথভাবে পাঠ করে ও অনুসরণ করে তারাই সত্যিকারের বিশ্বাসী। আর যারা এ সত্যকে প্রত্যাখ্যাত করে তারা আসলেই ক্ষতিগ্রস্থ। — কুরাআন, বাকারা, ১১৯-১২১

বিশ্বের অভিন্ন, অবিভক্ত ও একান্ন আদম পরিবার মানবজাতির সেতু বন্ধনের মাস, রমজানে আল্লাহ তাঁর শেষ নবীর মাধ্যমে আমাদের সকলকে আদেশ করেন “তোমরা রাত্র অবধি সিয়ামকে পূর্ণ করবেই। ثُمَّ أَتِمُّ الْصِياَمَ إلَيْلِ (বাক্বারা-১৮৭)

আল ক্বোরআনে আল্লাহ বলেছেন সোবহে সাদেকের পূর্বে সেহরী শেষ করে রাত্রি পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করতে। তদ্রূপ আল ক্বোরআনে ফজর ও মাগরিবকে দিবসের দু’প্রান্ত “তারাফাঁইন নাহার”বলা হয়েছে। এশাকে বলা হয়েছে নিশার প্ররম্ভ বা “যুলাফাম মিনাললাইল”। অর্থাৎ ফজর যেমন রাত নয়, মাগরিবও রাত নয়। এশা শুরূ হলে রাত্রের আগমন ঘটে। তখন ইফতারের সময় হয়। মাগরিবের সময় নয়।

রাসূল সঃ অবশ্যই রাত্র পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করেছেন। “মাগরিব” অর্থাৎ সন্ধ্যা পর্যন্ত করেন নি। তার মৃত্যুর পর খলিফা উমর ও ওসমান রোজা অবস্থায় মাগরিব পড়ে রাতের অন্ধকারের অপেক্ষা করতো। তারপর এশার সালাত আদায় করে তারপরেই ইফতার করতো। ভাড়াটে মাওলানারা এটা জানলেও তারা সাম্প্রদায়িক কুশিক্ষার ফলে স্বেচ্ছায় অন্ধত্ববরণ করেছেন এবং বাকিদেরও অন্ধকারে রাখাই তাদের সাম্প্রদায়িক ধর্মের পুরহিততন্ত্রের পেশা।

وحَدَّثَنِى عَنْ مَالِكْ، عَنْ إبْن شِهَاب، عَنْ حَمِيْد بِنْ عَبْد الرَحْمَان، أنَّ عُمَر بْن الْخَطَّاب و عُثْمَان بْنَ عَفَّان كَانَا يُصَلِّيَانِ الْمَغْرِبَ، حِيْنَ ينظران إلى الليل الأسود، قبل أن يفطرا. ثم يفطران بعد الصلاة. وذالك في رمضان…

উমর ইবনুল খাত্তাব ও উসমান ইবন আফফান মাগরিবের সালাত পড়তো, তারপর তারা রাতের অন্ধকারের অপেক্ষা করতো, ইফতারের পূর্বে। অতঃপর তারা সালাতের পর ইফতার করতো। এবং অবশ্যই তা রমজান মাসে।

স্মর্তব্য, মুয়াত্তা মালিক সুন্নী সম্প্রদায়ের বোখারী ও মুসলিম থেকেও নির্ভর ও প্রাচীনতম হাদিস গ্রন্থ। খলিফা আলীর অনুসারী শিয়া সম্প্রদায় অদ্যবধি আল্লাহর হুকুম ও নবী সঃএর আচরণ অনুযায়ী এশার নামাজ পড়ে তারপর ইফতার করে।

মাগরিব পর্যন্ত রোজা যেরূপ আল ক্বোরআন ও রাসূলের আদর্শে নেই, ঠিক তদরূপ রমজান মাসে রাতের প্রথমার্ধে বিশ রাকাত তারাবীহ্ ক্বোরআন ও রাসূল সঃ এর জীবনীতে কোথাও নেই। বরং রাসূল সঃ রমজানে এশার পর রাতের প্রথমার্ধে কোন নামাজের সংযোজন কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। (বোখারী-মুসলিম)

নিছক ব্যক্তিগত খেয়াল-খুশীর উপর খলিফা উমর এ তারাবীর প্রচলন করে তাকে নিজেই “বিদআত” আখ্যায়িত করে নিরুৎসাহিত করেছে।

আরব সাম্রাজ্যবাদীরা আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে ইসলাম ও ইয়াহুদীবাদ উভয় বাদ দিয়ে একটি তৃতীয় শয়তানী চালু করে। অর্থাৎ শেষ রাত্র থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাত পর্যন্ত নয়। ইয়াহুদীরা লম্বা করে ফেলে, ওদের চাচাতো ভাই আরবরা রোজাকে খাটো করে মানব জাতিকে মাহে রমজানের বরকত ও রহমত থেকে বিচ্যুত করে।

ইফতারীর দোকানদাররা এটাকে লুফে নেয়। কারণ ইফতারের নামে মুসলিম বিশ্বে বাজারে অতিভোজ ও ভোগের জাহান্নাম শুরু হয়। দশ টাকার পেঁয়াজ বিশ টাকা হয়, পাঁচ টাকার বেগুন ষোল টাকা এবং এ হারে লুটের বাজার চালু হয়।

আর যদি ক্বোরআন ও রাসূল সঃ এর নির্দেশ অনুযায়ী ইফতার করা হয়, তা হলে ইসলামী সমাজ আসরের সময় থেকে মাগরিব ও মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত ঘরে ঘরে ক্বোরআন তেলাওয়াত ও শিক্ষার বেহেশ্‌তী সময় পায়। গৃহিণীরা দিবাভাগে রাতের খাবার পাকিয়ে ক্বোরআন শিক্ষায় স্বামী সন্তানদের সাথে শরীক হতে পারে। এশার আযানের পর যখন মানুষ রাতের খাবার খাবে, তখন তার সাথে পেয়াজী, বেগুনী, বুট, ভাজাপোড়া ও অন্যান্য রাক্ষুসে খাওয়া খাবে না। শুধু উপাদেয় সুপাচ্য সুষম খাদ্য খাবে। তাতে গৃহকর্তার অর্ধেক সাশ্রয় হবে। বাড়তি কামাই এর জন্য ঘুষ খেতে হবেনা। গৃহিনীর এতো কিছু পাকাতে গলদঘর্ম হতে হবেনা। এশা পড়ে ঘুমিয়ে আবার মধ্য রাতের পর ঘুম থেকে উঠে তৃপ্তিভরে তাহাজ্জুদ নামাজ ও ক্বোরআন তেলাওয়াত করতে পারবে।

আল ক্বোরআনে আল্লাহ যেভাবে ফজর ও মাগরিবকে দিবসের দু’আঁচল বলেছেন, রাত নয়, তদরূপ রাসূল সঃ বলেছেন মাগরিব হলো দিবসের বিতির, যেমন এশার পর রাতের বিতির হয়। তাহাবীতে আব্দুল্লাহ ইবন উমর এ হাদীস বর্ণনা করেছে, বিতিরের অধ্যায়ে। এ বর্ণনা যেহেতু ক্বোরআনের সাথে মিল, তাই তা গ্রহণীয়।

যারা মুসলিম উম্মার চরম দুর্দিনে সত্য ও নাজাতের পথ চায়, তাদের সঠিক বুঝের জন্য সিয়াম ও ইফতারের সঠিক সময় ক্বোরআন ও রাসূল সঃ এর শিক্ষা অনুযায়ী দেওয়া হলো। সহজভাবে বুঝার জন্য দিনরাত, দিনের আচল ও রাতের প্রারম্ভ সূচক অত্যন্ত সূক্ষ্ণ নির্দেশক চিত্র তুলে ধরা হলো।

সিয়াম সাধনার শুরু ও শেষ প্রাকৃতিক সময়ের সুষম বন্টনে অবস্থিত, জীবশ্রেষ্ঠ মানুষ মাহে রমজানে এক মাস নিশা- নিষ্কৃতির সুবহে সাদেক থেকে নিশা আগমনের এশার ওয়াক্ত শুরু পর্যন্ত সিয়াম পালনে আদিষ্ট

রাসূল সঃ বলেছেন, “তোমরা ঠিক সময়ে ইফতার করবে, ইয়াহুদীদের মত দেরী করবে না”। তাঁর এ আদেশ অবশ্যই ইয়াহুদীদের ২৪ ঘণ্টার উপবাসের বিরুদ্ধে। তদ্রূপ, তা বর্তমানে রমজানের প্রহসনকারী নামধারী মুসলমানদের বিরুদ্ধেও, যারা ইয়াহুদীদের পদাঙ্ক অনুসরণে সিয়ামকে খাটো না করে রাত না হতেই দিনের প্রান্তভাগে সন্ধ্যায় ইফতার করে। ইয়াহুদী খৃষ্টানদের ন্যায় এদেরও সিয়াম হয় না। এবং আল্লাহই চূড়ান্ত ফয়সালাকারী।

ঠিক যেরূপ সেহেরী খাওয়ার অনুমতি রয়েছে সুবেহ সাদিক পর্যন্ত, অর্থাৎ আলোর রেখা প্রকাশিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (যখনও সূর্য ওঠেনি)। ঠিক তেমনি সূর্য ডোবার পরে আলোর রেখার গমনের সময়ের পরেই রাত/ লাইল আসে এবং সেই রাত পর্যন্তই সিয়াম পূর্ণ করার নির্দেশ রয়েছে ক্বুরআনে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের সময়ের ব্যবধান যতখানি, সুর্যাস্ত থেকে রাত আসার সময়ের ব্যবধানও সমান। এটি আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টির এক লীলা, একটি আয়াত, সুবহানাল্লাহ!

তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত গ্রন্থ অবতীর্ন করেছেন? আমি যাদেরকে গ্রন্থ প্রদান করেছি, তারা নিশ্চিত জানে যে, এটি আপনার প্রতি পালকের পক্ষ থেকে সত্যসহ অবর্তীর্ন হয়েছে। অতএব, আপনি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।(আনআম ১১৪)

ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ

অতঃপর তোমরা রাত্র পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। (বাকারা-১৮৭)

وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ

সালাত কায়েম কর দিবসের দু’আচলে এবং রাতের প্রারম্ভেও। (হুদ-১১৪)

রাত হল যখন অন্ধকার হয় অর্থাৎ দিনের আলোকে যখন অন্ধকার আচ্ছন্ন করে (আল লাইল-০১)

আকাশে যতক্ষন লাল রঙ থাকবে অর্থাৎ লাল আভা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে সন্ধা বলে (আল ইনশিকাক-১৬)

সন্ধার পরে রাত হয়, মানে সন্ধা রাত্রিতে সমাবেশ বা দাখিল হয় (আল ইনশিকাক-১৭)

মাগরিবের সালাত আদায়ের পরে ইফতার করতে হবে। আগে ইফতার পরে সালাত, এমনটা নয়। হরযত আবু বকর, হযরত উসমান, হরযত ওমর মাগরিবের সালাতের পরে ইফতার করতেন (বোখারী, মুয়াত্তা)

এসো হে আল ক্বোরআনের অনুসারী নবী রাসূলদের সিয়াম পালনকারী আল্লাহর দাস দাসীরা! সঠিক সালাত ও সিয়াম পালন করে বিশ্বে পুনঃ মুস্‌লিম উম্মার পুনর্জাগরণের কাফেলায় শরীক হও।

Source: ইমামুদ্দীন মুহাম্মদ তোয়াহা বিন হাবীব — এর লেখনী হতে

--

--

Gateway to Truth
Unity Inc

Freedom from sectarianism, schism, half-truth or distortions and journeying towards clarity and whole truth