জগন্নাথ মন্দিরের ইতিহাস
যিনি আছেন গভীর অন্ধকারে আবার যার বাস চোখ ঝলকানো দ্যুতিতেও, যিনি থাকেন ব্রহ্মাণ্ডের শুন্যতাই ও পৃথিবীর পরিপূর্ণতাই, যিনি থাকেন শিশুদের পুস্তকে এবং সন্যাসীদের রুদ্রাক্ষতে। অন্ধের চক্ষু তিনি আবার তিনিই প্রতিবন্ধীর বল ও ভরসা। জন্ম-মৃত্যু, জীবন-যৌবন, সূর্য-চন্দ্র, এই সংসার এর জীবন মৃতু চক্রে সদা সর্বত্র তিনিই বিদ্যমান, যোনি হলেন জগতের নাথ প্রভু শ্রী জগন্নাথ।
ভকেরতবর্ষের ওড়িশা নিজের জগন্নাথ মন্দিরের খ্যাতিতে গোটা বিশ্বের কাছে সুপরিচিত। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত সেখানে যান প্রভুর দর্শনের অভিলাষী হয়ে। প্রভু জগন্নাথ একমাত্র ভগবান যিনি জীবিত, প্রত্যেক উনিশ বছর পর পর ওড়িশাই হয় নবকলেবারা উৎসব এই উৎসবে প্রভুর বিগ্রহ পাল্টানো হয় কিন্তু যে জিনিসটি পুরোনো বিগ্রহ থেকে নতুন বিগ্রেহে স্থানান্তরিত করা হয় সেটি হলো ব্রহ্ম পদার্থ, ভক্তেরা একে বলে প্রভুর প্রাণ কিন্তু এই পদার্থ সাধারণ মানুষ এমন কি পুরোহিতরাও চোখে দেখেনি কারণ স্থানান্তরিত করার সময় পূজারীদের চোখ ও হাত লাল শালুতে মোড়ানো থাকে। কথিত আছে যে এই ব্রহ্ম পদার্থ আসলে হলো ভগবান শ্রী কৃষ্ণের হৃদয়, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে মা গান্ধারী একশত পুত্র হারানোর শোকে শ্রী কৃষ্ণকে অভিসাপ দেন, যেমন কৌরব বংশের নাশ হয়েছে ঠিক তেমনি ভাবেই যদু বংশেরও নাশ হবে আর তাই এক জঙ্গলে যখন শ্রী কৃষ্ণের তিরোধান হয়, তার শরীর বৈকুন্থলোকে চলে গেলেও থেকে যায় তাঁর হৃদয়, সেই হৃদয় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে এলো কি করে সেই ঘিরেই রয়েছে পুরীর ইতিহাস।
কিন্তু আপনি কি জানেন পুরীতে প্রভু শ্রী জগন্নাথ স্থাপনা কিকরে হয়েছিল? এর পিছনের ইতিহাস কি?
কথিত আছে মধ্যে ভারতে ইন্দ্রদ্যুম্ন নামক এক রাজা ছিলেন, তাঁর রাজধানীর নাম ছিল অবন্তী তিনি চিলেন ভগবান বিষ্ণুর বিরাট বোরো ভক্ত এবং সর্বক্ষণ তাঁর দর্শনাভিলাষী ছিলেন। একদিন এক ঋষির আগমন হয় তাঁর রাজপ্রাসাদে। তিনি মহারাজ কে খবর দিলেন যে ওড়িশাতে ভগবান বিষ্ণুর দিব্য রূপ নিলমাধবের পূজা হয়। কিন্তু সেই নির্দিষ্ট জায়গাটি ওড়িশার কোথায় অবস্থিতি সেটি তাঁকে খুঁজে বের করতে হবে। এই কথা শুনেই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে উঠলেন এবং তৎক্ষণাৎ প্রাসাদ এর সর্বোপরি পুরোহিতের ভাই বিদ্যাপতিকে আদেশ করলো যে সে যেন ওড়িশা যায় এবং নিলমাধবের সন্ধান করেন। রাজার আদেশ অনুযায়ী বিদ্যাপতি শীঘ্রই ওড়িশা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর যখন বিদ্যাপতি ওড়িশা পৌঁছালেন তখন কিছু গুপ্তচরের মাধ্যমে তিনি খবর পান বিশ্ববাসুর এবং সঙ্গে আরো জানতে পারেন যে তিনি এক গুপ্ত গুহায় নিলমাধবের পূজা করেন। খবর পাওয়া মাত্রই বিদ্যাপতি বিশ্ববাসুর সামনে গিয়ে তাকে অনর্গল অনুরোধ করতে থাকেন তাকে সেই গুপ্ত গুহার পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্যে, কিন্তু সর্দার এই বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তাকে না বলে দেয়। বিদ্যাপতি সেই গ্রামে কিছু দিন কাটানোর মনস্থির করেন, কিছুদিনের মধ্যেই তার বিশ্ববাসুর মেয়ে ললিতার সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং শিঘ্রই দুজনের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের কিছুদিন পর বিদ্যাপতি নিজের স্ত্রীকে নিলমাধবের একটিবার দর্শন করানোর জন্য তার বাবা কে অনুরোধ জানাতে বলেন। এবার বিস্বাবাসু পড়লেন মহা সমস্যা যতই হোক মেয়ের আপদারে যে আর আপত্তি করা যায় না। শেষ পর্যন্ত তিনি স্থির করলেন যে বিদ্যাপতি কে নিলমাধবের দর্শন করবেন কিন্তু তাকে গুপ্ত গুহার পথ জানাবেন না, তাই সে বিদ্যাপতির চোখে কাপড় বেঁধে সেই গুপ্ত গুহার পথে পারি দিলেন। কিন্তু বিদ্যাপতি ছিলেন অতি বুদ্ধিমান, তিনি তার সাথে কিছু সর্ষের দানা নিয়ে গেলেন এবং সারা রাস্তায় তা ছড়াতে ছড়াতে গেলেন।
পুরীর শ্রী জগন্নাথ দেব এর পূর্ণ ইতিহাস জানতে চোখ রাখুন পরবর্তী অংশে।
Check out Utsav App:
Download: