দেবাদিদেব মহাদেব
আদি কাল থেকে পূজিত দেবাদিদেব মহাদেব। কিন্তু অতীতেরও অতীত যিনি, সেই মহাদেব এর জন্ম হয় কেমন করে? একাধারে তিনি রক্ষক আর একদিকে তিনি সংহারক। রক্ষাকর্তা হিসেবে তাঁর উপস্থিতি এবং সংহারক হিসেবে তাঁর ধ্বংসের রূপ সত্যিই অবাক করে। তাই এই মহান এবং সর্ব মানুষের কাছে পূজ্য মহাদেবের জন্ম রহস্য অনেক পুরান কথাকারের মধ্যে আমরা পেয়েছি। হয়তো বিভিন্ন পুরান রচনাকার দের মধ্যে মতান্তর থাকতে পারে, কিন্তু তিনি যে আদিদেব এবং সৃষ্টির মূল উৎস সেকথা কে সকলেই স্বীকার করেছেন।
পুরান মতে, আদিদেব এর মধ্য থেকেই সৃষ্টি হয় ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর, অর্থাৎ, ত্রিশক্তির।
যদিও,
এই গল্পের কোনো সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়না।
মতান্তরে,
একদিন বিরোধ ঘটে শক্তির দুই পরম উৎস ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মাঝে। প্রশ্ন ওঠে, দুজনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? ঠিক তখনই, চোখ ধাঁ ধানো এক অকস্মাৎ রশ্মিতে চারিদিকে লাগে চমক। অদৃশ্য কোনো এক উৎস থেকে দৈব বাণী শোনা যায়। সেই বাণী অনুযায়ী প্রতিযোগিতা শুরু হয় ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মধ্যে,সেই দৈব বানীর উৎস ও অন্তিম খোঁজার।
ব্রহ্মা তৎক্ষণাৎ হংসের রূপ ধারণ করেন; ডানা মেলে তিনি উড়ান দেন উৎস খোঁজার লক্ষ্যে। অন্যদিকে বরাহের রূপ ধারণ করে বিষ্ণু এগিয়ে যান মাটির নিচে সেই বানীর রহস্য খোঁজার উদ্যেশ্যে।
খুঁজতে খুঁজতে সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, কিন্তু ব্যর্থ হন ব্রহ্মা ও বিষ্ণু উভয়ই। তাঁদের উপলব্ধি হয়, এই ব্রহ্মাণ্ডে তাঁরা ছাড়াও আছে এক পরম শক্তি, যিনি আছেন সবার শীর্ষে।
যিনি সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা, আবার ধ্বংসেরও মূল, তিনিই দেবাদিদেব মহাদেব।
কোনো শরীর থেকে না, শিবের জন্ম হয় এই ব্রহ্মাণ্ডের অনুকুলের স্বার্থে রহস্যের আভাস সঙ্গে রেখে। সর্বাধিক স্বীকৃত এই মত অনুযায়ী ই শিবের নাম হয় শম্ভু। সৃষ্টির সূচনা যখন কল্পনার অতীত, তখন আবির্ভূত হন মহাদেব। তাই তিনি আদিদেব।
ব্রহ্মাণ্ডতে যতবার নতুন সূচনার প্রয়োজন পড়েছে, ততবার পুরাতন পাপের কাল ধ্বংস করতে জন্ম নিয়েছেন মহাদেব। তিনি অন্যায়ের ধ্বংসকারী।
পুরাণ অনুসারে মহাদেব উনিশ বার মানব জন্ম নেন।
প্রথম জন্ম নেন পিপ্লাদ নামে, ঋষি দাধিচি ও তাঁর স্ত্রী স্বর্চা রূপে। জন্মের পরমুহূর্তেই ঋষি দোধিচি ও স্বর্চার পুত্র
পিতা ও মাতার মৃত্যুর জন্য দায়ী শনীদেব কে অভিশাপ দেন পিপ্লাদ যার ফল স্বরূপ শনিদেব মাটিতে পড়ে যান। পরবর্তীকালে দেবকুলের অনুরোধ মেনে পিপ্লাদ তাঁর অভিশাপ তুলে নেন। কিন্তু স্থীর হয়, শনী দেব ষোলো বছরের নিচে কারোর জীবনে বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। এই কারণ স্বরূপ আজ ও শনীর ফের থাকলে সকলে মহাদেবের অর্চনা করেন।
দ্বিতীয় জন্ম তিনি নেন নন্দী রূপে। ঋষি শীলাদা কঠিন তপস্যার মাধ্যমে শিবের কাছে বর চান এক অমর সন্তানের। ঋষি শিলাদার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব তার মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে তাঁর সন্তান রূপে জন্ম নেন নন্দী নামে। পরবর্তী কালে মহাদেবের এই রূপ ই হন কৈলাশ এর দ্বাররক্ষী।
মহাদেব তৃতীয় জন্ম নেন রুদ্ররূপি অবতার ভৈরব নামে। ভৈরব রূপে জন্মগ্রহণ এর কারণ ছিল লালসা, লোভ, কামলালসা, ও দম্ভ জড়িত পাপের বিনাশ করতে।
উনিশটি জন্মের মধ্যে অন্তিম জন্ম তিনি নেন অদ্ভুত রূপে, ইন্দ্রদেব এর দম্ভ ভঙ্গণ করতে।
সৃষ্টির অতীত তিনি, ধ্বংসের পরবর্তী ভবিষ্যতেও তিনি থাকবেন পরবর্তী যুগ সৃষ্টির কর্মে মগ্ন।
Visit us:
Thank You