ইউএক্স (UX) এর উৎপত্তি ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ইউএক্স এর উৎপত্তি মূলত আরগোনোমিক্স (Ergonomics) থেকে। আরগোনোমিক্স (আর্গন- কাজ এবং নমস- নীতি) হল মানুষের কর্মদক্ষতার সাথে কাজের পরিবেশ, কাজে ব্যবহৃত বস্তু সমুহের গঠন এবং সেই সাথে ব্যবহারকারীর ব্যবহার গবেষণা ও আলোচনা করা। বলে রাখা ভাল, হিউম্যান ফ্যাক্টরস ও আরগোনোমিক্সকে আমরা একই পাল্লায় মাপতে পারি।
প্রাচীন গ্রিসে সর্বপ্রথম আরগোনোমিকস এর চর্চা শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে গ্রিক সভ্যতায় আরগোনোমিক্সের নীতি মেনে তৈরি করা বিভিন্ন যন্ত্র, কাজ আর কর্মক্ষেত্রের বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। এর একটা চমৎকার উদাহরণ হল, সার্জনের কর্মক্ষেত্রের ডিজাইন কেমন হওয়া উচিত এবং তার কাজের যন্ত্রপাতি কিভাবে সাজিয়ে রাখা উচিত তা নিয়ে হিপোক্রেটিসের নির্দেশনা।
আমরা এবার সুদূর অতীত থেকে নিকট অতীতে আসি। ১৯০০ সালে উইনস্লো টেইলর “মডার্ণ অপ্টিমাইজেশন অব ওয়ার্ক” নীতিমালা প্রবর্তন করেন। এসময় তিনি কর্মী এবং তাদের ব্যবহৃত যন্ত্রের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া (interaction) গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরেন। সম্ভবত এটাই সিস্টেম্যাটিক ইউএক্স রিসার্চ ইতিহাসের প্রথম উদাহরণ।
এরই ধারাবাহিকতায়ে ১৯৪০ সালে টয়োটা তাদের বিখ্যাত “হিউম্যান সেন্টার্ড প্রোডাকশন সিস্টেম” নিয়ে আসে। কর্মীদের জন্য শ্রদ্ধাপূর্ণ ও সুবিধাজনক কর্মপরিবেশের মাধ্যমে দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটানোই ছিল এই পদ্ধতির লক্ষ্য। প্রায় একই সময়ে অ্যালান টুরিং সর্বপ্রথম থিউরিটিক্যাল কম্পিউটারের ধারনা দেন।
এরপর, ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন ক্ষেত্রে হিউম্যান ফ্যাক্টরস এর প্রভাব খুঁজতে শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে একজন ব্রিটিশ সাইকলোজিস্ট যুদ্ধলব্ধ শিক্ষাকে মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যে “আরগোনোমিক্স সোসাইটি” প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর দ্রুতই হিউম্যান ফ্যাক্টরস চর্চা প্রসার লাভ করে এবং বিভিন্ন বস্তুর সাথে মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা শুরু হয়।
১৯৫৫ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনার হেনরি ড্রিফাস “ডিজাইনিং ফর পিপল” নামে একটি বিখ্যাত বই লেখেন। এখানে তিনি মানুষ, তাদের অভিজ্ঞতা ও সফল প্রোডাক্ট ডিজাইনের মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরেন। এই বইকে আমরা ইউএক্সের একটি মাইলফলক হিসাবে ধরতে পারি।
সত্তরের দশকে পার্সোনাল কম্পিউটার প্রসার লাভ করতে থাকে এবং এক্ষেত্রে ডিজাইন জোরাল ভূমিকা রাখে। এসময় জেরক্স পার্ক নামের একটি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস, কম্পিউটার মাউস ইত্যাদি কনসেপ্টের মাধ্যমে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে ইঞ্জিনিয়ার ও সাইকোলজিস্টরা কাঁধে কাঁধ রেখে ব্যবহারকারীদেরকে চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য কাজ করেছেন।এর ফলশ্রুতিতে আশির দশকে পার্সোনাল কম্পিউটার একটি প্রতিশ্রুতিশীল পণ্যে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে আইবিএম এর অবদান অনস্বীকার্য।
অবশেষে ১৯৯৫ সালে, অ্যাপলে কাজ করার সময় বিখ্যাত কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট ও ডিজাইনার ডন নরম্যান “ইউজার এক্সপেরিয়েন্স” তথা “ইউএক্স” টার্মটি প্রথম ব্যবহার করেন। এরপর খুব তাড়াতাড়ি এই টার্ম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ডিজাইন-ডেভেলপমেন্টের অন্যান্য টার্মের মাঝে নিজের স্থান করে নেয়।
এরপরে দৃশ্যপটে মোবাইল ফোন, বিশেষ করে ২০০৭ সালে আইফোনের আবির্ভাব ঘটে এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর নতুন প্রায়োগিক ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এবং ১০ বছর পরে ২০১৭ সালে এন এন গ্রুপের একটি আর্টিকেল এ মোবাইল ইউএক্স মোটামুটি একটা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে এসেছে বলা হচ্ছে।
মূলত, বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউএক্স নিয়ে কাজ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ব্যবহারকারীদের যথাসম্ভব সুষ্ঠু এবং চমৎকার অভিজ্ঞতা দেবার লক্ষেই ইউএক্স ডিজাইন সংশ্লিষ্টদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সময় নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্য আরও কিছু আর্টিকেলের লিঙ্ক এখানে সংযুক্ত করছি–
Case study: UX process-driven redesign of a laundry service
কর্পোরেট ইউএক্স ম্যাচুরিটি — কি, কেন, কীভাবে? | by Shad Iqbal | Medium
ডিজাইনে ইউজারদের চাহিদার ক্রম বিশ্লেষণ | by Shad Iqbal | Medium
নেসলের জাপান জয় ও একজন বিতর্কিত মার্কেটিয়ার | by Shad Iqbal