তারাবীহ নামাযের ময়না তদন্ত

Gateway to Truth
Unity Inc
Published in
8 min readMay 7, 2019

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস স্বাক্ষ্য ফ্যাক্টস:

১. আল্লাহর নবী (সা.) জামাতবদ্ধ হয়ে তারাবীহ নামাজ মসজিদে আদায় করেছেন বা করার কোন নির্দেশও দিয়েছেন — আজ পর্যন্ত কোন তথাকথিত সহীহ হাদিস বা ইতিহাস গ্রন্থে এরকম কোন স্বাক্ষ্য নেই।

২. ঐতিহাসিক বাস্তবতা হলো: জামায়াতবদ্ধ বা সমবেত হয়ে তারাবীহ নামায আদায়ের ব্যাপারটি খলিফা ওমরের ব্যক্তিগত মত বা সিদ্ধান্ত বা independent reasoning.

৩. আহলে সুন্নাত গ্রন্থে এটিকে ‘বিদআতে হাসানাহ’ বা উত্তম বিদআত বলে উল্লেখ আছে। বিদআত হচ্ছে ঐ সমস্ত মত, বস্তু বা কর্মপ্রণালী যার অনুরূপ কিছু নবী (সা.) এর যুগে থাকার সর্বসম্মত কোন প্রমান পাওয়া যায় না।

৪. তারাবীহ বলতে কোন নামাযের নাম কোরআন ও তথাকথিত ‘সহীহ’ হাদীস গ্রন্থে পাওয়া ‍যায় না।

৫. ‘তারাবীহ’ শব্দটি ‘তারাবিহাতুন’ শব্দের বহুবচন যার মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ এবং বাংলা অর্থ আরাম বা বিশ্রাম। এই বিদআতি নামায অতি দীর্ঘ সময় ধরে আদায় করা হয় যার প্রতি চার রাকাত অন্তর কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়া হতো বলে এই নামকরণ।

৬. এই বিদআতি নামাযটি নবী (সা.) এর যুগে ছিলো না। এই প্র্যাক্টিস খলিফা আবু বকরের শাসন আমলে ছিলো না। এটি খলিফা ওমরের শাসনামলের প্রথম দিকেও ছিলো না, বরং শেষ দিকে চালু হয়।।

এই নামাযের প্রচলনকারী / নির্দেশদাতা খলিফা ওমর নিজেও কখনো এই তারাবীহ নামায পড়েননি।

৭. একদিন নবী (সা.) গভীর রাতে গৃহ থেকে বের হয়ে মসজিদে নামায আদায় করেন। কিছু সংখ্যক পুরুষ নবী (সা.) এর পেছনে নামায আদায় করেন। লোকেরা সকালে এ সম্পর্কে আলোচনা করলে দ্বিতীয় রাতে আরো অধিক সংখ্যক লোক সমবেত হয় এবং নবীর সঙ্গে সালাত করেন। তৃতীয় রাতে মুসল্লির সংখ্যা আরো বেড়ে যায়।

চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা এতো বেশি হলো যে স্থান সংকুলান হলো না। নবী (সা.) ঐ সময় আর বের না হয়ে ফযরের সময় বের হলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘শোন তোমাদের গতরাতের অবস্থান আমার অজানা ছিল না। কিন্তু আমি এ নামায তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করেছি বিধায় বের হই নি। কেননা তোমরা তা আদায় করতে অপারগত হয়ে পড়তে । রাসুল সা. এর ওফাত হল আর এই ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়।” — বুখারী, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ৩য় খন্ড, ৫ম সংস্করন, হাদীস নং ১৮৮৫

অর্থাৎ সমবেত হয়ে এই নামাযের ব্যাপারে নবী সা. এর আপত্তি বা Unapproval ছিল।

৮. ইবনে শিহাব বলেন, রাসুল (সা.) এর ওফাতের পরও তারাবীহর অবস্থা এরূপই ছিল। আবু বকর এর খিলাফাত কালে এবং উমর ইবনে খাত্তাবের শাসনামলের প্রথম দিকেও তারাবীর অবস্থা অনুরূপ ছিল। — মুয়াত্তা, ইমাম মালিক, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ১ম খন্ড, ৫ম সংস্করন, রমযানের নামাজ অধ্যায়, হাদিস নং ২

৯. ইসলামে তারাবীহ নামে কোন সালাত নেই। কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায় “কিয়ামুল লাইল” যার অর্থ রাতে ইবাদতের উদ্দেশ্যে দাড়ানো বা মনোযোগি হওয়া বা ধ্যানমগ্ন হওয়া — যা শেষ নবী মুহাম্মদ সা: রাতের শেষভাগে করতেন।

বিদআত হলেও এটি তো ইবাদত, সেটাতে সমস্যা কোথায়?

অনেকে বলতে পারেন: আচ্ছা বুঝলাম তারাবীহ নামাযটি খলিফা ওমর এর আমলে চালু হয়েছে। কিন্তু এটি কোন খারাপ কাজ নয়, বরং এটিতে অনেক মানুষ সমবেত হয়ে নফল এবাদতে যুক্ত হচ্ছে, স্রষ্টাকে স্বরণ করছে, কোরআন তেলাওয়াতে সামিল হচ্ছে। এতে আপনার এতো চুলকানী কেন? কেন তারাবীহ নামাযের পেছনে লাগছেন? যে মুসল্লী অন্য সময়ে মসজিদে আসতো না, তারাতো তারারীহ নামাযের জন্য দীর্ঘ সময়ে মসজিদে আসছেন, থাকছেন ও এবাদত করছেন। এটি নিশ্চই একটি উত্তম ব্যাপার!

সমস্যাটা ছোটখাট না, বিরাট!

সমস্যাটা আসলে কোরআনের কাছে উম্মতের আসা বনাম দূরে সরিয়ে রাখার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের

আমরা জানি যে রমজান মাসকে মহিমাময় করেছে যে বিষয়টি সেটি হলো এই মাসে পরম করুনাময় স্রষ্টা কুরআন নাজিল করেছেন।

রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। — সুরা বাকারা, ২:১৮৫

এই কুরআন কেন নাযিল করেছেন? কেবল তোতাপাখির মতো না বুঝে আওড়ানো বা ভারবাহী গাধার মতো এটিকে বহন করার জন্য কি? ঐ একই আয়াতে স্রষ্টা বলছেন যে কোরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হলো হেদায়াত বা পথ দেখানো, সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য।

কোরআনের অন্যান্য যায়গায় আল্লাহ কোরআনকে পথ প্রদর্শনের জন্য আলো (নুর), নির্দেশনা, সত্যের স্বাক্ষী, চূড়ান্ত কথন, পবিত্র জ্ঞান, সাবধানকারী বার্তা, সত্য মিথ্যার প্রভেদকারী ইত্যাদি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কোথায় এই একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আর কোথায় ধর্ম ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজী ও “খতমের” নামে প্রহসন!

উপরোল্লেখিত সবগুলো উদ্দেশ্যকেই ভন্ডুল করে দেয় যে কয়টা বিষয় তার একটি হলো শয়তানী শিক্ষা যে না বুঝে কুরআন তোতাপাখির মতো আওড়ানো। আর সেটারই চূড়ান্ত ইন্সটিটিউশনাল রূপ হলো রমযান মাসে তারাবীর নামে প্রহসন।

এই তাড়াহুড়ার নামাযের মধ্যে ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে যে তথাকথিত কোরআন খতমের প্রতিযোগিতা চলে সেটি সম্পর্কে একটু ভাবলে দেখা যাবে ইমাম সাহেব কি বলছেন খবর নাই মুসল্লির। যা পড়া হচ্ছে — তা বোঝা হচ্ছে না। যে গ্রন্থ পাঠানো হয়েছে যা থেকে পথ নির্দেশ নেওয়া হবে, সেটা যদি বোঝাই না হয়; তা হলে হেদায়াত কোথা থেকে আসবে?

এখানে অতি গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে যা, ইসলামে “তারাবীহ” নামের কোন নামাজ নেই। রাসূল সঃ এরূপ কোন সালাতের সংযোজন কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। (বোখারী-মুসলিম) খলিফা ওমর “বিদ্‌আত” বলে এটাকে চালু করে এ বলে যে, “যারা শেষ রাতে উঠে রমজানে তাহাজ্জুদ পড়বেনা, তারা রাত্রের প্রথমার্ধে হাট বাজারে আড্ডা না দিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে কোরআন শুনুক। তবে এটি একটি বিদ্‌আত”। রাসূল সঃ যা করেন নি, ধর্মে তা করাই বিদ্‌আত। ইসলামের Core প্রিন্সিপ্যাল হিসেবেই বিদ্‌আত দাঁড় করা / যা স্রষ্টার আদেশ নিষেধের বাইরে এরকম কিছুকে ধর্মের অনুশাসনে পরিণত করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

তারাবীহতে কি হয়?

ভাড়ায় খাঁটা (!)তথাকথিত কুরআনের হাফেজ ও বেতনভূক্ত তথাকথিত ইমাম কোরআন খতমের নামে ২০০ মাইল বেগে কোরআন পাঠ করেন যা পেছনে দাড়িয়ে থাকা মুসল্লীদের সিংহভাগই কিছু বোঝে না। আমাদের মাথায় ৫ টাকার বুদ্ধি থাকলে এই প্রহসনকে কেউ সমর্থন করতো না‌! এই তারাবীহর ধ্বজ্জাধারীদেরকেই তারাবীহ কি ৮ রাকাত নাকি ২০ নাকি ১২ এই অর্থহীন ঝগড়া নিয়েই মেতে থাকতে দেখা যায়। এর চেয়ে নিজের মাতৃভাষায় স্রষ্টা কি নাজিল করেছেন, কি নির্দেশ দিয়েছেন, কি নিষেধ করেছেন এবং কি করতে বলেছেন সেটা কোরআন থেকে বুঝে পড়া অনেক বেশি উপকারী। বুঝে পড়লে — সেটাকে “পড়া” বলা যাবে। না বুঝে ধ্বনি উচ্চারন করলে সেটা ‘পড়া’ বলা যায় না

তারাবীহতে যা হয় সেটা কোনভাবেই কোরআন নাজিলের স্পিরিটের সাথে সঙ্গতীপূর্ণ নয়। অথচ না বুঝলে সালাতের কাছে আসতেও মানা কুরআনে। অর্থাৎ সালাতে কি বলা হচ্ছে সেটা না বুঝে সালাতে অংশগ্রহন নিষেধ — দেখুন সুরা নিসা, ৪:৪৩ — “হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।”এখানে Context নেশা হলেও যেটা মূল কথা সেটা হলো Cognition / চেতনা বা বুঝ না থাকলে সালাতে অংশগ্রহন অর্থহীন।

কিন্তু রমজান মাসে মস্‌জিদ কমিটি চাঁদা তোলা ও হাফেজ ভাড়া করে অতিরিক্ত আয়ের ব্যবস্থা করতে এ বিদ্‌আতকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, তার চাপে মাহে রমজানে ক্বোরআন বুঝার ফরজই চাপা পড়ে হারিয়ে গেছে। তারাবীর তারাহুড়ায় হাফেজ, ইমাম ও মুসল্লী সবাই ক্বোরআন শুনে বুঝে, ক্বোরআনের গভীরে পৌঁছার সুযোগ চীরতরে হারিয়েছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাই হি রাজিউন।

তারাবীহর এই প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে প্রতিটি মুসলিমের যে বুঝে কুরআন পড়া, বুঝা এবং এই কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার কথা আল্লাহ বলেছেন তাকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিয়েছে।

এখন যেভাবে তথাকথিত কোরআন খতম হয়, এই খতম করতে করতে কোরআনকে মুসলিমদের অন্তর থেকে সম্পূর্ণ খতম করে নির্বাসিত করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং ভুল পথ থেকে ফিরে আসতে সাহায্য করুন। নিশ্চই তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি অসীম মেহেরবান এবং তওবা কবুলকারী।

আদতে রমযান মাসে কুরআন পড়ার মতো করে পড়ার যে সুযোগ ছিলো তারাবীতে না বুঝে অংশগ্রহনে সেটা আর হয়ে ওঠে না। এটাই মূল সমস্যা।

কোরআন না পড়ার ফলে যা হয়েছে মুসলিম উম্মাহর…

চোখে আঙ্গুল দিয়ে এটা আর না দেখালেও বোঝা যায় যে তিউনিসিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত মুসলিমদের যে করুণ অবস্থা, যার অন্যতম প্রধান কারনই হলো স্রস্টার নাজিল করার এই কোরআনকে পরিত্যাগ করা।

এই ক্ষেদেই কুরআনের বার্তা বাহক নবী সা. কেয়ামতের দিনে আর্তনাদ করে উঠবেন: — হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায় এই কোরআনকে পরিত্যাজ্য করেছে। — সুরা ফুরকান, ২৫:৩০

না বুঝে কোরআন পাঠকে কোরআন খতম নাম দেওয়া, বোঝার চেষ্টাকে সর্বাত্বকভাবে অনুৎসাহিত করা এবং “না বোঝাকেই” কমন মুসলিম কালচারে পরিনত করাই এখন স্বাভাবিক মেনে নেওয়া হয়েছে।

প্রচলিত ধর্মের ব্যবসায়ী ও মোল্লারা কোরআন বিরোধী প্রচুর যুক্তি দিয়ে মানুষকে কোরআন থেকে দূরে সরিয়ে রাখে যার কিছু উদাহরন এখানে দেওয়া হলো:

* আল্লাহ কোরআনে বলছেন যে “আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি”। ধর্ম ব্যবসায়ীদের দাবী যে কোরআন অনেক কঠিন, আম-জনতা এটা বুঝতে পারবে না। এটা বোঝার জন্য অনেক অনেক ডিগ্রি লাগে যে সার্টিফিকেট কেবল ধর্ম ব্যবসায়ীরাই দেওয়ার অধিকার রাখে।

* আল্লাহ কোরআনে বলছেন, এই কোরআন নাযিল করেছি পথ প্রদর্শনের জন্য - তাঁর নির্দেশ মতো জীবন যাপন করা এবং সেটাই সিরাতুল মুস্তাকিম এবং আমাদের আদি পিতার আদি বাসভূমি, অর্থাৎ জান্নাতের প্রবেশের জন্য আবশ্যকীয়। ধর্ম ব্যবসায়ীদের দাবী যে সহীহ ও শুদ্ধ করে (না বুঝে) তেলাওয়াত করে নেওয়াই স্বর্গের গ্যারান্টি। সহী ও শুদ্ধ করে কোরআন তেলাওয়াতের একটা ইন্ডাস্ট্রি আছে যার সাপ্লাই কমে যাবে অন্যথায়।

* যারা কিতাব পড়ে কিন্তু তা থেকে হেদায়াত নেয় না তাদেরকে আল্লাহ ভারবাহী গাধা বলেছে। আর ধর্ম ব্যবসায়ীরা এই গাধা তৈরীর ফ্যাক্টরির CEO / চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। তারা এটাকেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন যা স্রষ্টার কোরআন নাজিল করার উদ্দেশ্যের সাথে সংঘাতপূর্ণ। না বুঝে গড়গড়িয়ে আওড়ানো বনাম সত্যিকারের কোরআন পড়া ও সেই অনুসারে জীবনযাপন করা কখনোই এক নয়।

এরপরও কি ওরা কোরআন নিয়ে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে তা অন্তরে ধারণ করবে না? নাকি মনের দরজা বন্ধই করে রাখবে? — সুরা মুহাম্মদ, ৪৭, ২৪

রহমতের মাস যে কারনে রহমতের, সেই কোরআনকে পড়ার, বোঝার, চিন্তা করার সুযোগ সিস্টেম্যাটিকভাবে ধ্বংসের প্রধানতম বিদআত মার্কা প্র‍্যাক্টিস হলো তারাবীহ

করণীয়

প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করি আমি কি নিজের মাতৃভাষায় (ভাষায় বৈচিত্র্যকে আল্লাহ কোরআনে তার মহিমার নিদর্শন বলেছেন) প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কোরআন একবারও পড়েছি?

যদি উত্তর হয় “না” তা হলে এই রমযানে সেটাই হোক আপনার প্রথম টার্গেট।

নইলে স্রষ্টার আপনার জন্য, হ্যা আপনার জন্যই যে বাণীগুলো নাযিল করেছেন, যে পথ নির্দেশ দিয়েছেন — সেটা চিরদিন না জানাই থেকে যাবে! আপনি মোটামোটা রবীন্দ্র সমগ্র পড়েছেন, হাজার পৃষ্ঠার হুমায়ুন সমগ্র পড়েছেন, শত শত অন্যান্য উপন্যাস পড়েছেন কিন্তু একবারও পুরো কোরআন পড়েন নি অর্থ বুঝে! ভাবতে পারেন এই অবস্থার জন্য কে বা কারা দায়ী? মনে রাখবেন যারা এর পেছনে দায়ী তারা বুঝে বা না বুঝে শয়তানের কাজটাই করে যাচ্ছে আল্লার এই পৃথিবীতে! এরা তথাকথিত ধর্মের ঠিকাদারী ব্যবসায়ী।

করণীয় এটাই হোক যে নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে যেকোন একটি বাংলা অনুবাদের মাধ্যমে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কোরআনটি পড়ুন। শেষ হলে আবার প্রথম থেকে শুরু করুন।

হারাম খোর, সত্য কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেওয়া মোল্লা (যা কোরআনে নিষিদ্ধ; “হে নবী বলে দিন এ কাজের জন্য আমি কোন পারিশ্রমিক চাই না!” অথচ সুন্নাহ পালনের দাবীদাররা অল্প মূল্যের পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ধর্মকে জীবিকার পেশায় পরিনত করতে লজ্জা বোধ করে না), ধর্ম ব্যবসায়ী ও নষ্ট ধর্মের ফতোয়াবাজদের মুখে ছাই দিয়ে আজই নিজেই কোরআনকে নিজের ভাষায় পড়ার উদ্যোগ নিন। আপনার হাতের কাছে থাকা / স্ট্যান্ডার্ড একটি বাংলা অনুবাদ দিয়েই শুরু করুন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ অথবা আধুনিক সময়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অনুবাদ দিয়ে শুরু করতে পারে। অনলাইনে আছে: Quran.com যেখানে বাংলায়ও অনুবাদ রয়েছে।

আর এর পাশাপাশি রাতে মূল আরবীতে কোরআন পড়ুন এবং কিয়ামুল লাইলের যে স্বর্গীয় নির্দেশনা তা পালনে সচেষ্ট হোন (নিজের বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে দাড়িয়ে যান, তার প্রতি মনোযোগ দিয়ে তাঁকে ডাকুন, তাঁর বাণী পাঠ করুন, সেই বাণীকে হৃদয়ে ধারন করুন, তাঁর নির্দেশনাকেই জীবনের ধ্রুবতারা করার প্রচেষ্টায় নিমগ্ন হোন — মহান স্রষ্টা যেন আমাদের এই ধরনের বান্দাদের মধ্যে শামিল করেন!)। এটাই কোরআনের স্পিরিটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটাই যার হৃদয়ে কোরআন নাজিল হয়েছিল, স্বয়ং সেই নবী (সা.) এর প্র্যাক্টিস ছিলো।

স্রষ্টা নিজে যেখানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিঁনি কোরআনকে বোঝার জন্য সহজ করেছেন, তাঁর সেই সত্য প্রতিশ্রুতি অনুসারে কোরআন আপনার সাথে কথা বলবে, আপনার জীবনে পথ প্রদর্শন করবে এবং আপনার জন্য সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠবে — এই কামনায়, সালামুন আলাইকুম।

আমি কোরআনকে খুব সহজ করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা এর শিক্ষা মনে রাখতে পারো। (হে মানুষ!) তুমি কি এর শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করবে না? — সূরা কামার, ৫৪, আয়াত ২২

--

--

Gateway to Truth
Unity Inc

Freedom from sectarianism, schism, half-truth or distortions and journeying towards clarity and whole truth